#তুমিই_আমার_প্রথম_এবং_শেষ_ভালোবাসা #পর্ব_১৩
#মেঘ_বালিকা
.
.
.
তনু মুখ ফুলিয়ে চুপ করে বসে আছে..তার আর এখানে এক মুহুর্ত থাকতে ইচ্ছে করছে না..কেনই বা করবে..তাসিনের যে তার প্রতি কোনো খেয়ালই নেই..সে যে অন্য মেয়েতে আসক্ত হয়েছে..তনুর মতে দুনিয়ার যতো খারাপ কিছু আছে সব তার কপালেই জুটে…
.
তনু বসে বসে এসব ভাবছিলো তার ভাবনার মধ্যেই তাসিন হুট করে এসে সব ভাবনার সমাপ্তি ঘটিয়ে তনুর কোল জোড়া দখল করে নিলো..ঘটনার আকস্মিকতায় তনু অবাক হয়ে গেলো..সে এমন কিছু আশা করেনি..তাসিনকে সে এখন অব্দি বুঝে উঠতে পারেনি..তার মনে কখন কি চলে সবটাই তার অজানা..এই ভালো তো এই খারাপ..
.
তাসিনকে এভাবে কোলে শুতে দেখে কিছুটা বিরক্ত নিয়েই বললাম,,,
.
-আপনি আমার কোলে কেনো শুলেন..উঠুন এক্ষনি..
.
-প্লিজ তনু ডিস্টার্ব করো না…
.
-আজব তো..আপনি হুট করে এসে আমার কোলে শুয়ে পরলেন..এখন যখন আমি উঠতে বলছি উল্টে আমাকেই এখন বলছেন ডিস্টার্ব না করতে!!!মানে কি পেয়েছেন টা কি আপনি!হ্যা..যখন যা ইচ্ছে তাই করে যাবেন আপনি আর আমি কিছুই বলতে পারবো না..
.
এবার তাসিন তনুর কোল থেকে মাথাটা তুলে কিছুক্ষন অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে আবার মাথা দিয়ে শুয়ে পরলো..তারপর বললো,,,,
-কেশবতি…তোমার এই বকবক করার স্বভাবটা আর গেলো না..
.
ওর মুখে কেশবতি কথাটা শুনে যতোটা না অবাক হয়েছি তার থেকে বেশি অবাক হয়েছি আমার বকবক করার কথা শুনে..কতো বড় ফাজিল বলে কিনা আমি বকবক করি..আমি যতো দুর জানি আমি খুবই অল্প কথা বলি..কিন্তু তাসিন সেটা এক নিমিসেই পাল্টে দিয়ে আমাকে বকবক করার উপাধি দিয়ে দিলো…তাই হালকা রেগে বললাম,,,
-এই উঠুন তো আপনি..এক্ষনি উঠুন.. আপনার তো মানুষের অভাব নেই যান তাদের কাছে..আমাকে দয়া করে রেহাই দিন..
.
-হোয়াট ডু ইউ মিন??মানুষের অভাব নেই বলতে কি বুঝাতে চাইছো তুমি তনু?
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
-কিছুনা আপনি উঠুন তো..বিরক্ত লাগছে আমার..
.
এবার তাসিন কিছুটা গম্ভীর স্বরে বললো,,,
-হুম..এখন আমি নামক মানুষটাই তোমার কাছে বিরক্তির কারন হয়ে দাড়িয়েছি..
.
ওর এমন কথায় আমি চুপ হয়ে গেলাম..আমার হয়তো এভাবে বলা উচিত হয়নি..তাই আর কিছু না বলে চুপ করে রইলাম..
.
তাসিন আবার বলে উঠলো,,,
-তনু আমার মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দিবে প্লিজ..
.
ওর এমন আবদারে আমি আর না করতে পারলাম না হালকা হাতে আস্তে আস্তে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম…তাসিন ওর চোখটা বন্ধ করে নিলো..কিছুক্ষন এভাবেই নিরবতা চললো…তারপর তাসিন সকল নিরবতা ভেদ করে চোখ বন্ধ করেই বলে উঠলো,,,
-তনু বাইরে যাবে..খুব ইচ্ছে করছে এই ব্যস্ত শহরের রাতটাকে দেখতে..ইচ্ছে করছে ল্যামপোস্টের নিচ দিয়ে তোমার হাত ধরে হাঁটতে..যাবে তনু??আমার ইচ্ছেটা পূরন করতে?
.
ওর এমন কথায় এমন আবদারে আমি আবারও অবাক হতে বাধ্য হলাম..ওকে সত্যিই আমি বুঝে উঠতে পারিনা…তারপর বললাম,,,
-এই রাত ১টার সময় আপনার বাইরে হাটতে যেতে ইচ্ছে করছে!!!হাটতে ইচ্ছে করলে ঘর দিয়ে হাটুন..বাইরে যাওয়ার কি দরকার..আর তাছাড়া বাবা-মা জানতে পারলে রাগ করবে তো…
.
এবার তাসিন উঠে বসলো..তারপর আমার মুখোমুখি হয়ে বললো,,,
-কেউ কিচ্ছু বলবে না..আর বললেও তোমার এসব নিয়ে ভাবতে হবে না..আর ঘর দিয়ে হাঁটা আর বাইরে দিয়ে হাঁটা এক নয় বুঝলে কেশবতি… (আমার নাকটা হালকা টেনে)
.
আমি নাক দলতে দলতে বললাম,,,
-আমি যাবো না আপনি একাই যান..আমার রাত দুপুরে-এ বাইরে যাওয়ার ব্যারাম উঠে নাই..হুহহ
.
এবার তাসিন কিছুটা রেগে বললো,,,
-যাবে না তুমি??ফাইনাল?
-হ্যা(মুখ ঘুরিয়ে)
.
তাসিন এবার উঠে দাড়ালো..পরনে তার টি-শার্ট আর ট্রাউজার..আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে টি-শার্ট-এর হাতাটা কনুই পর্যন্ত ভাজ করতে লাগলো..আর আমি ওর দিকে ভ্রু-কুচকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করছি আসলে ও কি করতে চাইছে…
টি-শার্ট এর হাতা ভাজ করা হলে তাসিন আমাকে হুট করেই কোলে তুলে নেয়..তারপর হাঁটা শুরু করে..আজ ওর কাজ-কর্মে আমি বারবার অবাক হচ্ছি..আজ কি অবাক-ডে নাকি যে আমি শুধু অবাকই হচ্ছি কিছুই বুঝতে পারছি না আসলে আমার সাথে কি হচ্ছে..তাসিন একবারে মেইন দরজার বাইরে এসে আমাকে কোল থেকে নামিয়ে দিলো..এতোক্ষন আমি হা করে ওর দিকে তাকিয়ে ছিলাম..নামিয়ে দিয়ার ফলে আমার ঘোর কাটলো..
.
.
দুজনে পাশাপাশি হাঁটছি..কেউ কোনো কথা বলছি না..এই নিস্তব্ধতার আড়ালে একটা ভালো লাগা কাজ করছে..সেটাই হয়তো নিরব থেকে আমরা উপভোগ করছি..এভাবে রাতে হাঁটতে আমি আগে কখনোও বের হইনি..আজই প্রথম..খুবই ভালো লাগছে..না আসলে হয়তো মিস করতাম..এই ছোট ছোট জিনিসেই আজ সুখ খুজে পাচ্ছি আমি..তাসিন পাশে না থাকলে আমি কখনোও তা বুঝতে পারতাম না…
এভাবেই কিছুক্ষন হাঁটলাম আমরা..তারপর হঠাৎ তাসিন আমার হাতটা আলতো করে ধরে হাঁটতে লাগলো..ওর হাতের উষ্ম ছোঁয়া পেয়ে আমার শরীরে কেমন একটা শিহরন খেলে গেলো..ওর দিকে তাকিয়ে একটু মুচকি হেসে আবার ওর পায়ের সাথে তাল মিলিয়ে হাঁটতে লাগলাম..
.
জনমানবশুন্য রাস্তাটায় শুধু আমি আর তাসিন..সবাই সারাদিন খাটা খাটনি করে এখন নিশ্চিন্তে ঘুমুচ্ছে..রাস্তাটাও হয়তো খুব ক্লান্ত তাই সেও এখন নিশ্চন্তে ঘুমুচ্ছে..
.
কিছু দুর এসে আমরা একটা খোলা জায়গায় গিয়ে বসলাম..মাথার উপরে খোলা আকাশ সাথে থালার মতো বিশাল আকারের একটা চাঁদ..সেই চাঁদের আবছা আলোয় তাসিনকে খুব নিস্পাপ মনে হচ্ছে..হালকা বাতাসে ওর অবাদ্ধ চুলগুলো কপালে এসে পরছে..আর তাসিন বার বার চুলগুলো হালকা হাতে উপরে উঠিয়ে রাখছে..
.
এবার তাসিন আমার হাতটা শক্ত করে নিজের দুহাতের সাথে মুষ্টিবদ্ধ করে ধরলো তারপর আলতো করে ঠোঁট ছুঁয়িয়ে দিয়ে ওর বুকের সাথে চেপে ধরে রাখলো..ওর কাজে আমি কিছুটা কেঁপে উঠলাম..আজ নিজেকে পৃথিবীর সব থেকে সুখী মানুষ মনে হচ্ছে…
.
.
-আহহ!!!
হঠাৎ এমন শব্দে তাসিন পিছনে ঘুরে তাকালো..তনু মাটিতে পায়ে হাত দিয়ে বসে আছে..তনুকে এভাবে বসে থাকতে দেখে তাসিন দ্রুত তনুর কাছে গিয়ে হাটু ভাজ করে বসে ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলো,,,
-কি হয়েছে?পায়ে ব্যাথা পেয়েছো?ঠিক ভাবে হাটবে তো তনু..কিভাবে পরে গেলে!!দেখি কোথায় ব্যথা পেয়েছো দেখি…
.
-তেমন কিছু হয়নি..পা টা একটু মচকে গেছে হয়তো..
-আর ইউ ম্যাড??পা মচকে গেছে আর তুমি বলছো তেমন কিছু হয়নি!!
.
তনুর আর কোনো কথা না শুনেই তাসিন তনুকে কোলে তুলে নিলো..আর হাঁটতে শুরু করলো..তনু ইচ্ছে করেই এমনটা করেছে..ওর পায়ে আসলে কিছুই হয়নি..পুরাটাই নাটক ছিলো…
.
তাসিন হাঁটছে আর আমি ওর গলা জড়িয়ে ধরে আছি..ইচ্ছে করছে ওর গালদুটো টেনে দিতে কিন্তু পারছি না..যদি তাসিন রেগে আমাকে নামিয়ে দেয়..আমি তা একদম চাই না..আজ তাসিনের প্রতি আমার এক অন্যরকম ভালোবাসা জন্ম নিয়েছে…যার অনুভুতি প্রকাশ করার মতো নয়..
এসব ভাবতে ভাবতে নিজের অজান্তেই তাসিনের গালে আলতো করে ঠোঁট ছুয়িয়ে দিলাম..আমার এমন কাজে তাসিনের চোখ বড় বড় হয়ে গেলো..এবার আমার হুস এলো..লজ্জায় আমি তাড়াতাড়ি তাসিনের বুকে মুখ লুকালাম..
.
তনুকে লজ্জা পেতে দেখে তাসিন আর কিছু বললো না শুধু একটু মুচকি হাসলো…
.
.
.
.
.
চলবে…..