তুমিই_আমার_প্রথম_এবং_শেষ_ভালোবাসা
পর্ব_১২
#মেঘ_বালিকা
.
.
.
তাসিন অন্য কারো সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছে এটা কিছুতেই তনু মেনে নিতে পারছে না..তার বিশ্বাসই হচ্ছে না ব্যাপারটা..তনুর মনে হচ্ছে সে কোনো দুঃস্বপ্ন দেখছে..ঘুম ভেঙ্গে গেলে আবার সব আগের মতো হয়ে যাবে…কিন্তু এটা কোনো দুঃস্বপ্ন না..এটা বাস্তব..আর যা তনুকে প্রতিটা মুহুর্তে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে..সে না পারছে এসব নিয়ে তাসিনকে কিছু বলতে আর না পারছে চুপ করে থাকতে…তনু কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না..সে একবার ভুল বুঝে তাসিনকে হারিয়েছে এবার সে কিছুতেই তাসিনকে হারাতে পারবে না..কোনো কিছুর বিনিময়েও না…
.
.
তনু বসে আছে তাসিনের অপেক্ষায়..কখন সে অফিস থেকে বাসায় আসবে..আজকাল সে একটু লেট করেই আসে বাসায়..তনুর ব্যাপারটা খারাপ লাগলেও মুখ ফুটে কিছু বলতে পারে না..
.
.
তাসিন একটু আগে বাসায় এসেছে..ওকে দেখে আজকে বেশ খুশি খুশি লাগছে..খুশি তো লাগবেই নতুন একজন পাইছে না..কিন্তু এই খুশি বেশিক্ষন থাকবে না..আজকে আমি কিছু একটা করবোই..বাসায় বউ রেখে বাইরে গিয়ে প্রেম করা আমি বের করছি…
.
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
তাসিন ওয়াশরুমে গেছে এই ফাকে আমি ওর ফোনটা সরিয়ে ফেলি..তারপর দৌড়ে ছাদে চলে যাই..ওখানে থেকে কিছু করা যাবে না..
ছাদে এসে তাসিনের ফোনের কল লিস্ট চেক করে একটা নাম্বার পেলাম..যাতে আজকে প্রায় ৫০বার এর উপরে কথা হয়েছে..নাম্বারটা টুশি নামে সেভ করা..বুঝতে আর বাকি রইলো না এই সেই ডাইনি যে আমার সতীন হওয়ার জন্যে উঠে পরে লেগেছে…তাসিনের ফোন থেকে নিজের ফোনে নাম্বারটা উঠিয়ে নিলাম..এর ব্যবস্থা পরে করবো আগে এই ফোনের ব্যবস্থা করি..তারপর ফোনটা অফ করে খুব সাবধানে ফোনটা লুকিয়ে রেখে রুমে চলে এলাম..
.
.
তাসিন ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসেছে..আমি চুপ করে নিজের ফোন টিপছি..কিছুক্ষন পর মনে হলো ও কিছু খুজছে বুঝতে পারলাম ফোন খুজছে..আজকাল ফোন ছাড়া সে এক মুহুর্ত থাকতে পারে না…
.
.
অনেক খুজেও যখন ফোনটা পেলো না তখন তার নজর আমার উপর পরলো..আমি চুপচাপ ফোনে গেম খেলছি ভাব খানা এমন যেন আমি কিছুই জানি না..কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে তাসিন প্রশ্ন জুড়ে দিলো,,,
-তনু তুমি কি আমার ফোনটা নিয়েছো?
ওর কথায় থতমত খেয়ে গেলাম..দেখেছি কিনা জিজ্ঞেস করতে পারে তা না সোজা নিয়েছি কিনা জিজ্ঞস করছে..তারপর নিজেকে সামলিয়ে বললাম,,,,
-আমার নিজের ফোন থাকতে আমি আপনার ফোন কেনো নিতে যাবো..আর যদি নিয়ার হতো অবশ্যেই আপনাকে বলেই নিতাম..(ডাহা মিথ্যা কথা বলে দিলাম)
-তুমি ছাড়া তো এই রুমে আর কেউ নেই..তাই সন্দেহ টা তোমার দিকেই যাচ্ছে(তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে)
ওকে এভাবে তাকাতে দেখে আমার কথা জড়িয়ে গেলো,,,
-শ..শুনুন আমি আপনার ফো…ফোন নিইনি..আ..আপনি ভালো মতো খুজে দেখুন আশে পাশেই হ..হয়তো বা আছে…
আমার কথা ওর বিশ্বাস হলো বলে মনে হলো না..তাই সেখান থেকে চলে আসলাম..নিচে এসে রহিমা খালার সাথে টেবিলে খাবার সাজাতে ব্যস্ত হয়ে পরলাম…
.
.
.
ফোনটা হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছি..নাম্বারটায় ফোন দিবো কি দিবো না সেটাই ভাবছি..কেমন একটা সংকোচ বোধ হচ্ছে..কিন্তু ফোন আমাকে দিতেই হবে..আমার পাশে ফারিয়া দাড়িয়ে আছে আর আমাকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষন করছে..তার আমাকে এভাবে পর্যবেক্ষন করার কারনটা আমার জানা নেই..আজকাল ফারিয়াকে নিয়ে আমার মনে হাজারও সন্দেহ ঘুরপাক খাচ্ছে..তার যথেষ্ট কারণ আছে..যে কিনা কয়েকদিন আগ পর্যন্ত আমার কাছে তাসিনের হাজারও প্রশংসা করেছে বলেছে তাসিন আমাকে অনেক ভালোবাসে..আমি ছাড়া ওর জীবনে আর কারো অস্তিত্ব নেই..সে কিনা এখন আমাকে তাসিনের বিরোদ্ধে রীতিমতো উসকিয়ে দিচ্ছে..এর কারনটা অবশ্যে আমার জানা নেই..হয়তো তার মত বদলে গেছে তাসিনকে নিয়ে..নয়তো অন্য কোনো ব্যাপার আছে..আপাততো ফারিয়ার ব্যাপার টা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেললাম কারন এখন আমাকে ওই টুশি নামের ব্যক্তিটাকে শায়েস্তা করতে হবে…
.
.
ফোন হাতে নিয়ে ফোন দিবো কি দিবো না ভাবতে ভাবতে ফোন দিয়েই বসলাম..প্রথমবার রিং হয়ে ফোনটা কেটে গেলো..দ্বিতীয় বারে ফোনটা রিসিভ হলো…তারপর ফোনের ওপাশ থেকে একটা সুমধুর কন্ঠে এক নারীর কথা ভেসে আসলো আমার কানে..খুবই সুন্দর তার কন্ঠস্বর..তার কন্ঠ যে কোনো ছেলের মন কেড়ে নিয়ার জন্যে যথেষ্ট..কিন্তু আশ্চর্য ব্যাপার হলো এই কন্ঠটা আমার খুবই পরিচিতো লাগছে..মনে হচ্ছে এই কন্ঠটা আমি আগে কোথাও শুনেছি…
.
.
-আসসালামু আলাইকুম কে বলছেন?(ফোনের ওপাশ থেকে)
-ওয়ালাইকুম আসসালাম..আপনি কি টুশি বলছেন?
.
আমার মুখে টুশি নামটা শুনে মনে হলো মেয়েটা ঘাবড়ে গেলো..তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে উত্তর দিলো,,,
-জ্বী আমি টুশি.. আপনি কে বলছেন?
-আমি কে সেটা জেনে কি হবে!!আর আপনার কথা শুনে তো মনে হচ্ছে আপনি একটা ভদ্র ঘরের মেয়ে তাহলে আপনার স্বভাব-চরিত্র এতো কুৎসিত কেনো?
-জ্বী মানে আমি আপনার কথা কিছুই বুঝতে পারছি না..আপনি একটু ক্লিয়ার করবেন ব্যাপারটা!
-ওই কি ক্লিয়ার করবো রে?কি ক্লিয়ার করবো?বুঝোস না কিছু!না??আমার ঘরে আগুন লাগায় এখন সাধু সাজা হয়তেছে?তুই জানোস আমি কে??এর আগে তিন-চারটা ছেলের হাত-পা ভাঙ্গছি আমি..এইবার তোরটা ভাঙ্গবো..তোরে শুধু আমি একবার সামনে পাই…(রাগের মাথায় কি দিয়ে কি বলছি আমি নিজেও জানিনা..সম্পূর্ন দাহা মিথ্যা কথা..আমি ভাঙ্গবো ছেলেদের হাত-পা..ভাবা যায়)
.
এদিকে মেয়েটা আমাকে অনেকক্ষন ধরে থামানোর চেষ্টা করে চলেছে..কিন্তু আমি কিছুতেই থামবো না আজকে..মেয়েরা সব সহ্য করতে পারে কিন্তু নিজের স্বামীর সাথে অন্য কোনো মেয়েকে কিছুতেই সহ্য করতে পারে না…
.
আমি আবার রেগে বলতে শুরু করলাম,,,
-ওই শোন তুই যদি নেক্সট টাইম আমার হাজব্যান্ড এর সাথে কোনো রকম যোগাযোগ করার চেষ্টা করিস তাহলে তোর খবর আছে..
.
তারপর ফোনটা কেটে দিলাম..এতোক্ষন চিল্লিয়ে আমার অবস্থা কাহিল..এতোক্ষন আশেপাশের কিছুই খেয়াল না করলেও এবার আমার খেয়াল হলো..সবাই আমার দিকে কেমন ভাবে তাকিয়ে আছে..এমনকি ফারিয়াও আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে..বুঝতে পারলাম একটু বেশি জোরে চিল্লিয়ে ফেলেছি..তাই সেখান থেকে তাড়াতাড়ি কেটে পরলাম..ফারিয়াও আমার পিছ পিছ ছুটে আসলো…
.
.
ক্লাসে এসে ঢক ঢক করে পুরো এক বোতল পানি সাভার করে দিলাম..আজকের ব্যাপারটায় আমি নিজেই অবাক..আমি কারো সাথে এভাবে ফোনে কথা বলছি ভাবতেই কেমন একটা লাগছে..আমি কখনোও এভাবে কারো সাথে কথা বলিনি..সত্যিই বিষয়টা আমার কাছে অবিশ্বাস্য..আমার থেকে কয়েকগুন বেশি অবাক হয়েছে ফারিয়া সেও আমার এমন আচরনে হতবাক..
.
.
.
বাসায় এসে তাসিনকে রুমে দেখতে পেয়ে একটু অবাক হলাম..কারন গত কয়েকদিনে সে অনেক রাত করে বাসায় ফিরতো..কিন্তু আজ এতো তাড়াতাড়ি বাসায় আসার কারনটা বুঝতে পারলাম না..ল্যাপটপে খুব মনোযোগ দিয়ে কিছু একটা করছে তাসিন..আমাকে আসতে দেখে আমার দিকে একটু চোখ বুলিয়ে আবার নিজের কাজে মগ্ন হয়ে গেলো..আমিও ব্যাপারটায় পাত্তা না দিয়ে ফ্রেশ হওয়ার জন্যে ওয়াশরুমে চলে গেলাম এবং ভিতরে ঢুকে ভালো ভাবে দরজাটা লাগিয়ে দিলাম..সেদিনের ঘটনাটা আর রিপিট করতে চাই না আমি..
.
.
বিছানায় পা গুটিয়ে বসে আছি আমি…আর আমার থেকে কিছুটা দুরে বসে তাসিন ফোনে কথা বলছে..ওর যে এক্সট্রা একটা ফোন ছিলো তা আমার জানা ছিলো না..শুধু শুধুই ফোনটা লুকিয়ে রাখলাম আমি..এখন ভাবছি জায়গার জিনিস জায়গায় রেখে দিবো..
.
কি সুন্দর হেসে হেসে কথা বলছে..বিয়ের পর আমার সাথেও এভাবে কথা বলেনি..অথচ এই টুশি ডাইনিটার সাথে কি হেসেই না কথা বলছে..শুধু হাসছেই না রীতিমতো গড়াগড়িও খাচ্ছে..এতোদিন লুকিয়ে কথা বললেও আজ একদম আমার মুখমুখি বসে জানু সোনা ময়না পাখি আরও কি কি আছে সব একদম উজাড় করে বলছে…আমি যে ওর সামনে বসে রাগে ফুসছি সেদিকে তার কোনো খেয়াল নেই..ভাবখানা এমন যেন এই রুমে ও ছাড়া আর কেউই নেই..
.
অনেক হয়েছে এবার আমার ধৈর্য্যর বাধ ভেঙ্গে যাচ্ছে..মেয়েটা যে এতো বেহায়া আমার জানা ছিলো না..এতো কিছু বলার পরেও সে আবার তাসিনের সাথে যোগাযোগ করছে..আর তাসিনকে আমার কিছুই বলার নাই..এসব ভাবতে ভাবতে উঠে দাড়ালাম..তারপর তাসিনের সামনা সামনি দাড়িয়ে ফোনটা ওর হাত থেকে কেড়ে নিয়ে দিলাম এক আছাড়..এক আছাড়েই ফোনটা ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে একাক খন্ড একাক দিকে ছিটকে পরলো..তাসিন আমার কার্যকলাপে অবাক চোখে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে কিছু বলতে যাবে তখনই ওর কোলে বসে ওর ঠোঁট জোড়া নিজের ঠোঁটের দখলে নিয়ে নিলাম..তাসিন এবার অবাকের চরম পর্যায়ে অবস্থান করছে..তার চোখগুলো রসগোল্লার মতো বড় বড় হয়ে গেছে..সেদিকে আমার কোনো খেয়াল নেই আমি আমার মতো কিছুক্ষন কিস করে শেষ ওর ঠোঁটে একটা কামড় বসিয়ে দিই..যতো রাগ ছিলো এই কামড় দিয়ার ফলে তা নিমিসেই পানি হয়ে গেলো..আমার কামড়ে তাসিন আস্তে আহ করে একটু শব্দ করে উঠলো..তারপর ওকে ছেড়ে দিয়ে হনহন করতে করতে সেখান থেকে চলে আসলাম..ওখানে থাকা এখন আর আমার উচিত হবে না..এতোক্ষন লজ্জা না পেলেও এবার নিজের কাজে নিজেই লজ্জা পাচ্ছি..রাগের বসে কাজটা করে ফেলেছি..তাই তাড়াতাড়ি সেখান থেকে চলে আসলাম…
.
তাসিন তনুর এমন কান্ডে থম মেরে বসে রইলো..সে বিশ্বাস করতে পারছে না তনু এমনটা করেছে..তার কাছে ব্যাপারটা স্বপ্নের মতো লাগছে….
.
.
.
.
.
.
চলবে…..