তুমিই_আমার_প্রথম_এবং_শেষ_ভালোবাসা পর্ব_১১
#মেঘ_বালিকা
.
.
আজ কয়েকদিন যাবত খেয়াল করছি তাসিন ফোনে লুকিয়ে লুকিয়ে কারো সাথে কথা বলে…আমাকে সামনে দেখলেই সেখান থেকে চলে যায়..ব্যাপারটায় আমার বেশ সন্দেহ হচ্ছে…ও আবার পরোকিয়া করছে না তো..যদি তাই হয় তাহলে ওর খবর আছে…
.
রাতে শুয়ে আছি তাসিন আমার পাশে..হঠাৎ ওর ফোন বেজে উঠায় ও ফোনটা নিয়ে ব্যালকনিতে চলে যায়..ওকে এভাবে যেতে দেখে একটু খটকা লাগে তাই আমিও ওর পিছু পিছু যাই..আর গিয়ে যা শুনি তার জন্যে আমি প্রস্তুত ছিলাম না..
.
তাসিন কারো সাথে জান জান বলে কথা বলছে..
-জান তুমি এতো রাত পর্যন্ত কেনো জেগে আছো তোমাকে না আমি বলেছি এতো রাত অব্দি জেগে থাকবে না..
-………………..
-জান তুমি একদম আমার কথা শুনো না..তুমি আসলে আমায় ভালোইবাসো না…
-…………
-হুম অনেক রাত হয়েছে এখন ঘুমিয়ে পরো জান..আর আমি রাখছি বুঝছো জান নাহলে দেখা যাবে কেউ কান পেতে আমাদের কথা শুনছে…
-………..
-I love u toooo jaan
.
আমি ওর এসব কথা শুনে থম মেরে দাড়িয়ে রইলাম..যা ভেবেছিলাম ঠিক তাই হলো…তাসিন অন্য কারো সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছে..তার মানে ও আমাকে আর ভালোবাসে না..নতুন কাউকে ও পেয়ে গেছে..এর জন্যেই এতো লুকোচুরি…
.
তাসিন দেখে ফেলার আগে তাড়াতাড়ি বিছানায় এসে শুয়ে পরলাম আর চোখের পানি ফেলতে লাগলাম..এদিকে তাসিন রুমে এসে শুয়ে পরেছে..হয়তো এতোক্ষনে ঘুমিয়েও পরেছে কিন্তু আমি ঘুমুতে পারছি না..কিভাবে ঘুমুবো যখন কোনো মেয়ে জানতে পারে তার স্বামী অন্য কোনো মেয়েতে আসক্ত হয়েছে তখন কোনো মেয়েই শান্তিতে ঘুমুতে পারে না…
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
সিদ্ধান্ত নিয়েছি এখানে আর থাকবো না..নিজের বাসায় চলে যাবো..আমি না থাকলেই হয়তো ও ভালো থাকবে..তাই চলে যাবো আমি..থাকবো না আর এখানে….
.
সকালে আমি ব্যাগ গুছাচ্ছি আর তাসিনের দিক বারবার তাকাচ্ছি..ভেবেছিলাম আমার ব্যাগ গুছানো দেখে ও নানা রকম প্রশ্ন করবে..কিন্তু না ও ওর কাজ নিয়েই ব্যস্ত..একবারও আমার দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না..এবার আমার কান্না পেয়ে যাচ্ছে..কারন আমি খুব করে চাচ্ছি ও আমাকে আটকাক..আমি যে ওকে ছাড়া একদম থাকতে পারবো না..এই কয়দিনে ও আমার অভ্যেসে পরিনত হয়েছে..ওকে ছাড়া আমি যে অচল..সেটা কি ও বুঝে না..তাই আর থাকতে না পেরে নিজেই বলে উঠলাম,,,
-আমি চলে যাচ্ছি….
ও আমার কথা শুনে একটুও অবাক হলো না..শুধু ছোট করে একবার ‘ওহ’ বললো তারপর আবার নিজের কাজের মধ্যে ডুব দিলো..এবার আমার প্রচুর রাগ হচ্ছে…
-আমি একেবারের জন্যেই চলে যাচ্ছি..আর এখানে ফিরে আসবো না..
বিনিয়ে এবার তাসিন ‘ওহ’-এর সাথে ‘আচ্ছা’ যোগ করলো…
মানে আমি চলে যাচ্ছি এতে ওর একটুও খারাপ লাগছে না..একবার তো বলতে পারতো যেও না..কিন্তু না এসব তো দুরে থাক এবার কারন তাও জিজ্ঞেস করলো না..ও আসলে চাইছেই আমি চলে যাই..আমি চলে গেলেই তো ওর ভালো হবে..নতুন একটারে বিয়ে করে আনতে পারবে..
যাবো না আমি..আমি কিছুতেই আমার জায়গা ছাড়বো না..আমি এখন চলে গেলেই আমার জায়গায় ভাগ বসানোর জন্যে অন্যকেউ চলে আসবে…
তারপর ব্যাগ থেকে জামা কাপড় গুলো বের করে আবার জায়গার জিনিস জায়গায় রেখে দিলাম..
.
আমাকে জামা-কাপড় রাখতে দেখে তাসিন বললো,,,
-যাবে না তুমি??
আমি দাঁতে দাঁত চেপে উত্তর দিলাম,,
-না..
-মাত্রই তো বললা চলে যাবে আর আসবে না..তাহলে এখন কি হলো..
-মজা করছিলাম এতোক্ষন..বুঝেছেন..আর কিছু জিজ্ঞেস করবেন….(রেগে)
-ওহহ তাই বলো..আমি আরো ভাবলাম তুমি চলে গেলে…..না থাক..এখন যখন যাচ্ছো না তাহলে আর এসব ভেবে লাভ কী…(মুখ গোমড়া করে)
ওর কথায় আমার রাগ আরো বাড়ছে…
– কি??? বলো আমি চলে গেলে কি করতা তুমি বলো????(চিল্লিয়ে বললাম)
-নাহ কিছু না তো…(জোরপূর্বক একটু হেসে)
.
আমি আর কথা বাড়ালাম না..ওর সাথে আর কিছুক্ষন কথা বললে আমার রাগটা আরো দ্বিগুন বেড়ে যেতো..তাই সেখান থেকে চলে আসলাম…
.
ভার্সিটিতে এসে অনেকক্ষন যাবত ফারিয়াকে খুজছি..কিন্তু কোথাও ফাজিলটাকে দেখতে পাচ্ছি না..কই থাকে কে জানে..শেষমেশ খুজে না পেয়ে ক্যান্টিনের দিকে হাঁটা দিলাম…
.
ক্যান্টিনে বসে আছি হঠাৎ ফারিয়া খুব দ্রুত দৌড়ে এসে আমার পাশে ধপ করে বসে পরলো..আর হাপাতে লাগলো..ওকে এভাবে দেখে জিজ্ঞেস করলাম,,,
-কিরে তোর আবার কবে থেকে হাপানি রোগ শুরু হলো!!
ও আমার দিকে তাকিয়ে বললো,,,
-আমার কথা শুনলে এবার তোর হাপানি শুরু হয়ে যাবে…
ওর কথা বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করলাম,,
-কেনো কি এমন বলবি যা শুনলে আমার হাপানি শুরু হবে??
তারপর ফারিয়া সোজা হয়ে বসে বললো,,,
-আমি একটু আগে দেখলাম ভাইয়া গাড়িতে করে একটা মেয়ের সাথে যাচ্ছে…যতোটুকু দেখতে পেয়েছি তাতে মনে হলো দুজনের মধ্যে কিছু একটা আছে..
ফারিয়ার কথা শুনে আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি মনে হচ্ছে..তাসিন আমার অবর্তমানে এসব করে বেরাচ্ছে..তার মানে সত্যিই ও অন্যে কারো সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছে..একসাথে ঘুরেও বেড়াচ্ছে..আচ্ছা ফারিয়া তো ভুলও দেখতে পারে..এমনও তো হতে পারে ওইটা অন্য কেউ ছিলো…
-তুই ভুল দেখছিস হয়তো বা..তাসিন কেনো অন্য কোনো মেয়ের সাথে ঘুরে বেড়াবে..ও ওইরকম টাইপ এর ছেলে না..তুই কি ওকে নতুন দেখছিস নাকি(নিজেকে স্বাভাবিক করে কথাটা বললাম)
-আমি একটুও ভুল দেখিনি আমি স্পস্ট দেখেছি ওইটা ভাইয়াই ছিলো..আমি জানি ভাইয়া এমন না কিন্তু এরকম হয়ে যায় রে..স্ত্রীর কাছ থেকে যখন কোনো পুরুষ ভালোবাসা না পায় তখন অন্য কারো থেকে সেই ভালোবাসা পাওয়ার আশায় অন্যেতে আসক্ত হয়ে পরে..
.
ওর কথায় আমি আবারও থম মেরে গেলাম..এবার চোখ দিয়ে দুফোটা পানি বেরিয়ে এলো..আমাদের সম্পর্কটা যদি স্বাভাবিক হতো তাহলে হয়তো আজ এমনটা হতো না..অতীতের কথা মনে পরে যাচ্ছে সেদিন যদি ভুল বুঝে তাসিনকে ছেড়ে চলে না আসতাম তাহলে আজ এমন কিছুই হতো না সব কিছুই অন্যরকম থাকতো..আমার জন্যেই এসব হয়েছে..নিজেকেই এখন এর জন্যে দায়ী মনে হচ্ছে…..
.
.
.
.
চলবে………