তুমিই_আমার_প্রথম_এবং_শেষ_ভালোবাসা পর্ব_১০

0
2018

তুমিই_আমার_প্রথম_এবং_শেষ_ভালোবাসা
পর্ব_১০
#মেঘ_বালিকা
.
.
আজ কয়েকদিন যাবত বাইরের খাবার খেতে খেতে এখন মুখটাই নষ্ট হয়ে গেছে.. তাই ভাবলাম ইউটিউব দেখে কিছু একটা রান্না করবো বাট কি রান্না করা যায়..হ্যা চিকেন বিরিয়ানি…
.
আজ ছুটির দিন তাসিন বাসায়..ও খাবার আনতে চেয়েছিলো ওকে না করে দিয়েছি..ও আমার রান্না করার ব্যাপারটায় রাজি হয়নি..ওর ধারনা আমি রান্না করতে পারবো না তারপর শেষমেশ আমাদের না খেয়েই থাকতে হবে…কিন্তু আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি আজ আমি রান্না করবোই…
.
মাথা নিচু করে চুপচাপ দাড়িয়ে আছি আমি আর তাসিন আমার দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে..তার কারন হলো বিরিয়ানিতে বেশি মশলা দিয়ার ফলে তেতো হয়ে গেছে.. যা মুখে দেওয়ার অযোগ্য..
-রান্না করতে না করেছিলাম তো তোমাকে তারপরও জেদ করে রান্না করলে আমাকে খাবার আনতে দিলে না..এখন কি হলো!!যেটা পারো না সেটা কেনো করতে যাও তুমি হ্যা?আর যদি এতোই করার ইচ্ছা তাহলে সহজ কিছু করতে!তা না..বিরিয়ানি রান্না করতে গেলে..এখন খাও তোমার স্পেশাল বিরিয়ানি.. (রেগে তাসিন কথাটা বললো)
.
তাসিনের কথায় ভীষন কষ্ট পেলাম..চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পরতে লাগলো গাল বেয়ে..তারপর কিছু না বলেই আর এক মুহুর্ত না দাড়িয়ে সেখান থেকে চলে আসলাম..আর কিছুক্ষন দাঁড়ালে হয়তো
আরও কিছু কথা শুনতে হতো..
.
এদিকে তাসিন তনুর চোখে পানি দেখে একটু কষ্ট পেলো..তনুকে একটু বেশিই কথা শুনিয়ে ফেলেছে সে..কিন্তু সে ইচ্ছা করেই এসব করেছে..যাতে তনু কষ্ট পায়..কিন্তু এখন তার কষ্ট হচ্ছে..তনু কতো কষ্ট করে আজ রান্না করলো আর সে কিনা তাকে এতো কথা শুনালো..তারপর সে ওই তেতো বিরিয়ানি টাই নিয়ে খেতে শুরু করলো..ভালোবাসার মানুষগুলোর খারাপ জিনিসগুলোও যেন খুব ভালো লাগে..তাসিন খুব তৃপ্তি করেই খেলো..তারপর উঠে বাইরে চলে গেলো..তনুর জন্যে খাবার আনতে..তনু এই খাবার খেতে পারবে না..
.
রুমে বসে চোখের পানি ফেলছি..তাসিনের উপর রাগও হচ্ছে আাবার খারাপও লাগছে..তার জন্যে তাসিনের খাওয়া হলো না..দোষটা হয়তো আমারই আমি যদি রান্না করতে না যেতাম তাহলে আর না খেয়ে থাকতে হতো না..
.
একটু পর তাসিন রুমে এলো..ওকে দেখে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বসে রইলাম..কথা বলবো না ওর সাথে সিদ্ধান্ত নিয়েছি..তাসিন আমার সামনে খাবারের প্লেটটা এনে রাখলো..তার মানে ও বাইরে গিয়েছিলো খাবার আনতে…ভালো হইছে আমার কি আমি তো খাবো না..ওর ইচ্ছা হলে ও খাক..
তারপর তাসিন বললো,,,
-তনু খাবারটা খেয়ে নেও..
-………..
-আমি তোমাকে কিছু বলছি তনু!তুমি কি শুনতে পাচ্ছো না?খেয়ে নেও…
-খাবো না আমি..ক্ষিধে নেই আমার..
-ক্ষিধে না থাকলেও খেতে হবে তোমার খেয়ে নেও..
-এখন কি জোর করে খাওয়াবেন আমাকে..বলছি না খাবো না আমি..আপনার খেতে ইচ্ছে করলে আপনি খান…
তাসিন বুঝতে পারলো এভাবে বলে ওকে খাওয়ানো যাবে না..তাই ও নিজেই খাবার নিয়ে তনুর মুখে পুরে দিলো..আর তনু মুখে খাবার নিয়ে তাসিনের দিকে হা করে তাকিয়ে রইলো…
-চুপচাপ খেয়ে নেও..এতোক্ষন ভালো ভাবে বলছি শুনোনি..এখন খাইয়ে দিচ্ছি তারপরেও যদি কোনো রকম তেড়ামি করো তাহলে খবর আছে(রাগি চোখে তাকিয়ে)
তাসিনের রাগি চোখে তাকাতে দেখে তনু চুপসে গেলো তাই আর কোনো কথা বারালো না..চুপ করে পুরোটা খাবার খেয়ে নিলো..
খাওয়ানো শেষ হলে তাসিন তনুর কপালে আলতো করে একটা চুমু এঁকে দেয়..তারপর উঠে চলে যায়…
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
সকাল থেকে আজকে বৃষ্টি নামছে..বেশ ভালোই লাগছে..বৃষ্টিতে ভিজতে পারলে আরও ভালো লাগবে এই ভেবে ছাদে চলে গেলাম..আজ বৃষ্টিতে ভিজবো অনেক দিন হলো ভিজি না..আম্মু কখনোও ভিজতে দিতো না..কারন বৃষ্টিতে ভিজলেই আমার জ্বর আসে…
.
প্রায় আধ ঘন্টার মতো ভিজার পর খেয়াল করলাম শীত শীত লাগছে আমার..আর ভিজা উচিত হবে না..তাই নিচে নেমে আসার জন্যে দরজার কাছে গেলাম..কিন্তু একি দরজা আটকানো কেনো!!!দরজা কে আটকালো!!!এবার জোরে জোরে দরজা ধাক্কাতে লাগলাম…কিন্ত কেউ শুনছে বলে মনে হলো না..তাই নিজের সব টুকু শক্তি দিয়ে দরজা ধাক্কাতে লাগলাম আর তাসিনকে ডাকতে লাগলাম..কিন্তু না কেউ দরজা খুলছে না..এদিকে বেশি ভিজার ফলে আমি রীতিমতো কাঁপছি..হাত পা আমার ঠান্ডা হয়ে আসছে..আমার মুখ দিয়ে আর কোনো আওয়াজই বের হচ্ছে না..দরজা ধাক্কানোর শক্তিটুকুও আর পাচ্ছি না..আমি নিচে বসে পরলাম..আমার চারপাশের সবকিছু আস্তে আস্তে অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে..মনে হচ্ছে আমি অন্ধকারের মধ্যে তলিয়ে যাচ্ছি..
.
চোখ খুলে দেখি আমার পাশে তাসিন বসে আমার মাথায় জ্বর পত্তি দিচ্ছে..ওর চোখ-মুখ কেমন ফোলা ফোলা লাগছে..মনে হচ্ছে কান্না করেছে..কিন্তু কেনো!!..আর আমারই বা কি হয়েছে..আমি তো ছাদে ছিলাম বৃষ্টিতে ভিজছিলাম..তারপর কিভাবে যেনো দরজা আটকে গেলো আর আমি আমি নাহ আর কিছু মনে পরছে না..মাথাটা ঝিম ঝিম করছে…উঠে বসতে চাইলাম কিন্তু তাসিন উঠতে না করলো..
.
এতোক্ষন আমার কিছু মনে না পরলেও এখন আমার সব মনে পরে গেছে..আর আমি জানি কেউ ইচ্ছা করে ছাদের দরজাটা আটকিয়ে দিয়েছিলো..সেটা আর কেউ না তাসিন..ও ইচ্ছা করেই এমনটা করেছে…এতোদিন আমি ওর সব অত্যাচার সহ্য করলেও আজকে যেটা ও করেছে তার জন্যে ওকে আমি ক্ষমা করবো না…
.
১সপ্তাহ কেটে গেছে আমিও এখন সুস্থ..বাবা-মাও বাসায় চলে এসেছে..বাসাটা এখন পরিপূর্ণ লাগছে..এই এক সপ্তাহ আমি তাসিনের সাথে কোনো রকম কথা বলিনি..ও বলার চেষ্টা করেছে কিন্তু আমি বলিনি..ওকে এড়িয়ে চলছি..২দিন আমি জ্বরে ভু্গছি..ও অবশ্য এই কয়েকদিন আমার খেয়াল রাখছে তবুও ওর উপর থেকে রাগটা আমার কমেনি…
.
রাতে বসে বসে টিভি দেখছি..এখন এই টিভি দেখা ছাড়া আমার আর কোনো কাজ নেই…ফোনটাও তাসিন ভেঙ্গে ফেলছে..অনেকক্ষন টিভি দেখছি এখন আর ভালো লাগছে না..তাই উঠে রুমে চলে এলাম..রুমে এসে যেই বিছানায় বসতে যাব তখন চোখ পরলো বিছানার উপর একটা নতুন ফোন রাখা..ফোনটা দেখেই খুশি হয়ে গেলাম..ফোনটা কি তাসিন আমার জন্যে এনেছে!!তখনই তাসিন কোথা থেকে এসে বলে উঠলো,,,
-হ্যা তোমার জন্যেই এনেছি…(মুচকি হেসে)
.
যাক বাবা ও বুঝলো কিভাবে!!!
ভেবেছিলাম ফোনটা নিবো না পরে ভেবে দেখলাম রাগ আমার তাসিনের উপর তাই ফোনের উপর রাগ দেখিয়ে লাভ নেই..আর তাছাড়া ফোনটা ও ভেঙ্গেছে তাই ও ফোনটা কিনে দিয়েছে…ওর কথার কোনো উত্তর দিলাম না..মুখ ভেংচি দিয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখতে লাগলাম..আর তাসিন আমার মুখ ভেংচি দিয়া দেখে হেসে দিলো..আমি বিনিময়ে আর একটা মুখ ভেংচি দিলাম..
.
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি তাসিন আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে..এমন ভাবে জড়িয়ে ধরেছে যে আমি নরতেই পারছি না..ওকে দেখে একদম নিষ্পাপ বাচ্চা মনে হচ্ছে..কিন্তু আসলে তো ও একটা বদের হাড্ডি…তারপর ওকে একটা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম..ধাক্কা দিয়ার ফলে ওর ঘুম ভেঙ্গে যায়..কিছুক্ষন ওর দিকে তাকিয়ে থেকে যেই উঠতে যাবো আর ওমনি ও আমার হাত ধরে টান দিয়ে আমাকে একদম বিছানার সাথে মিশিয়ে দেয়..তারপর আমার গায়ে উপর উঠে আমার দুই হাত বিছানার সাথে চেপে ধরে..ওর এমন কাজে আমার খুব বিরক্ত লাগছে ছুটার জন্যে ক্রমাগত চেষ্টা চালিয়ে বার বার ব্যর্থ হচ্ছি…কিন্তু ওর মধ্যে কোনো হেরফের নেই..ও আমাকে একইভাবে চেপে ধরে আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে..আমি ওর চোখের দিকে তাকাতে পারছি না কেনো যেনো ওকে এভাবে তাকাতে দেখলে আমার বেশ অস্বস্তি লাগে…কিছুক্ষন ওর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে উঠলো,,,,
-আমাকে ধাক্কা কেনো দিলে?
-ওভাবে সাপের মতো পেচিয়ে থাকলে ধাক্কা দিবো না তো কি করবো(বিরক্ত নিয়ে কথাটা বললাম)
-কি বললে???আমি সাপের মতো পেচিয়ে ছিলাম!!(রেগে)
-কোনো সন্দেহ আছে?
এবার তাসিন বেশ রেগে গেলো আর আমাকে আরও জোরে চেপে ধরলো..এবার আমার দম বের হয়ে যাওয়ার উপক্রম..আমি বার বার তাসিনকে ছেড়ে দিতে বলছি কিন্তু সে আমাকে কিছুতেই ছাড়ছে না..তারপর শর্ত দিলো তাকে সরি বলতে হবে কিন্তু আমি এমন কিছু বলিনি বা করিনি যে আমাকে সরি বলতে হবে..আমি কিছুতেই সরি বলবো না..কিন্তু ছাড়া পাওয়ার কোনো লক্ষন না দেখে শেষমেশ বাধ্য হয়েই সরি বলতে হলো..তারপর তাসিন আমার ঠোঁটে আলতো স্পর্শ করে আমাকে ছেড়ে দিলো..ছাড়া পেয়ে তাড়াতাড়ি উঠে দাড়ালাম..মেজাজ পুরাই খারাপ হয়ে গেছে…বিড়বিড় করে ওকে গালি গালাজ করছি..আমাকে বিড়বিড় করতে দেখে ও মুচকি মুচকি হাসছে..ওকে হাসতে দেখে আরও মেজাজ খারাপ হলো তাই সেখান থেকে চলে আসলাম..
.
মা একটা কফির কাপ ধরিয়ে দিয়ে বললো তাসিনকে দিয়ে আসতে..আমিও চুপচাপ বাধ্য মেয়ের মতো কফিটা নিয়ে রুমে চলে এলাম..রুমে তাসিনকে দেখতে পেলাম না..ওয়াশরুম থেকে পানির শব্দ শুনা যাচ্ছে মনে হয় শাওয়ার নিচ্ছে তাই কফিটা বেড সাইড টেবিলটায় রেখে বসে রইলাম..হঠাৎ দরজা খুলার শব্দে পিছন ঘুরে তাকালাম..তাসিন খালি গায়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো..ওকে দেখেই আমার চোখ উল্টে যাওয়ার উপক্রম.. এভাবে উন্মুক্ত শরীরে ওকে কখনো দেখিনি আমি…তাই নির্লজ্জের মতো হা করে তাকিয়ে রইলাম ওর দিকে..ও ওর চুল মুছতে মুছতে আমার দিকে তাকিয়ে ভ্রু-কুচকে জিজ্ঞেস করলো,,,
-এভাবে হা করে কি দেখছো!!
ওর কথায় ঘোর কাটলো আমার..হায়রে আমি এতো নির্লজ্জ কবে থেকে হলাম..ছি কি ভাবলো তাসিন!!একটা মেয়ে হয়ে এভাবে দেখছিলাম ওকে…
তাসিন আমার সামনে একটা তুড়ি বাজিয়ে বলে,,,
-কী ব্যাপার বলো তো!!এতোক্ষন তো আমাকে চোখ দিয়ে গিলছিলে আর এখন আবার কি বিড়বিড় করছো!!
.
ওর কথা শুনে এবার বেশ লজ্জা পেলাম..তাড়াতাড়ি সেখান থেকে চলে আসলাম….এই মুহুর্তে আর লজ্জার মুখোমুখি হতে চাচ্ছি না আমি…
.
.
.
.
চলবে……..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে