#তুমিই আমার পূর্নতা –[৮]
#মুনিয়া_মিরাতুল_নিহা
______________________________
-‘ এতো বছর তো আমার পিছু পিছু ঘুরেছেন আমাকে বিয়ে করার জন্য অথচ আজকে যখন আমি আপনাকে বাড়িতে আসতে বলছি আসবেন না তো? ভেবে চিন্তে বলুন। সাগর তো এখন কলির ওর কোনো কথা আমি শুনবো কেনো? আমি নিজে আপনাকে ডেকেছিলাম এখানে। এবার আপনার বুঝ আপনি আসবেন কি আসবেন না।’
-‘ ঠিকআছে আমি আসছি। এতো করে যখন বলছিস।’
প্রিয়তা সাগরকে ফোন করে সবটা জানিয়ে দেয়। রুশা আর কলির মা’কে বাড়িতে নিয়ে রুমে বসিয়ে দেয়। রুশাকে এখন মুখ খুলতে বারন করেছে বিধায় সে চুপ করে রয়েছে। সাগরের মা আর প্রিয়তা ভাবছে রুশা বুঝি এখুনি ফিরলো ঢাকা থেকে। একটু পরই রাজীব চলে আসলো বাড়িতে। রাজীব আসা মাত্রই সাগর রাজীব ঠা’স করে পরপর কতোগুলো চ’ড় বসিয়ে দেয়! ড্রয়িং রুমে বসে থকা উপস্থিত কেউই কিচ্ছু বুঝতে পারছে না। রাজীব চ’ড় খেয়ে রা’গে ফুঁসছে!
-‘ সাগর? তোর হয়েছে কি? তুই বউমার ভাইকে এভাবে মা’র’ছিস কেনো? কি করেছে ও?’
-‘ ওকে চ’ড় মে’রে’ছি কিন্তু ও যা করেছে আমার সঙ্গে তার জন্য ওকে খু’ন করিনি এটাই ওর কপালের ভাগ্য!’
-‘ প্রিয়তা এসব হচ্ছে কি? তুই ডেকে এনে আমাকে অপ’মা’ন করছিস? আমি করেছি টা কি?’
-‘ হ্যাঁ সত্যিই তো আপনি রাজীব ভাইয়াকে কেনো মা’রছেন?’
সাগর এবার হাসতে লাগলো। রাজীব বুঝলো অবস্থা বেশি ভালো না, সেজন্য পালাতে যাচ্ছিলো তখনি পুলিশও বাড়িতে ঢুকে। বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে ছিলো! রাজীব দিশেহারা হয়ে যাচ্ছে, মনে স’ন্দেহ ঢুকে গেছে তাহলে কি সাগর সবটা জেনে গেলো? কিন্তু কি করে জানলো? সে তো খুব সর্তক ছিলো তাহলে?
-‘ কি রাজীব সাহেব? নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন না এগুলো কি হচ্ছে? বেশ তাহলে আমিই সবাইকে সবটা বলে দিই? প্রিয়তা এই যে তুমি কলিকে আমার স্ত্রী হিসাবে জানো? এটা পুরোটাই একটা নাটক! আর এই নাটকের রচয়িতা তোমার এই চাচাতো ভাই!’
সাগরের মুখের কথা শুনে সবাই অবাক দৃষ্টিতে রাজীবের দিকে তাকিয়ে আছে। সকলের চোখে মুখে অধীর আগ্রহ পরের খবর জানার জন্য।
-‘ কি বলছেন কি! খুলে বলুন? ‘
-‘ শোনো, তোমার এই গুনধর চাচাতো ভাই আমার বোনকে কি’ড’ন্যাপ করে রেখেছিলো। ও চেয়েছিলো আমি কলিকে বিয়ে করে তোমাকে স’তীনের য’ন্ত্রনা দিই। কিন্তু আমি যখন এটা করতে রাজি হয়নি তখন ও রুশাকে ধরে নিয়ে গিয়ে আ’ট’কে রাখে। আর কলি ছোটোবেলা থেকেই অনাথ কলিও এই কাজ করতে পারবে না এটা জেনেই এই রাজীব কলির মা আর রুশাকে দু’জনকে আট’কে রেখে আমাকে আর কলিকে ব্ল্যা’ক’মেইল করতে থাকে। তারপর ও রুশাকে নানা ভাবে কষ্ট দিতো শুধু তা-ই নয় সেটার ভিডিও ও করে পাঠাতো আমাকে। আমি বাধ্য হয়ে কলিকে বিয়ে করি, বিয়ে নয় বিয়ের নাটক করি যাতে ওই রাজীবের বিশ্বাস হয় আমি আর কলি বিয়ে করেছি।’,
-‘ এবার বাকিটা আমি বলছি।’
সাগরকে বলার মাঝ পথে থামিয়ে দিয়ে কলি বলতে শুরু করলো,
-‘ ওই লোকটা এইটুকুতে থেমে থাকেনি। এই বাড়িতে আসার পরের দিন ও আমাকে দেখার জন্য মানে আমি প্রিয়তাকে কষ্ট দিচ্ছি কি-না সেটা দেখার জন্য লোক পাঠিয়েছিলো! সেদিন ভেবেছি ওটা অন্য কেউ কিন্তু ওই লোকটাই যে এই রাজীব হবে সেটা বুঝিনি। ওকে দেখাতেই আমি তেল ফেলে মিথ্যা নাটক করি আর প্রিয়তা ভাবিকে সবার সামনে দোষী সাজাই। এভাবে ও আমাকে বলেছিলো প্রিয়তা ভাবিকে যেনো কষ্ট দেই। আর আমিও মা’র জন্য নিরুপায় হয়ে এতোদিন প্রিয়তা ভাবির সঙ্গে এতোকিছু করেছি।’
-‘ তাহলে আমার সঙ্গে এরকম করলে কেনো? এতো খারাপ ব্যাবহার করলে কেনো? আমার ছেলে যদি তোমাকে বিয়েই না করে তাহলে তুমি প্রেগন্যান্ট এটা কি করে বললে?’
একের পর এক প্রশ্ন ছুঁ’ড়ে দিলো রত্না বেগম কলির উদ্দেশ্য! কলিও উত্তর দেবার জন্য প্রস্তুত। সে জানতো এরকম একটি দিন আসবে। অবশেষে সেই দিনই এসেছে আজকে যে দিনের প্রতিক্ষা সে এতোদিন ধরে করেছিলো।
-‘ ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি আপনার কাছে ওরকম ব্যবহারের জন্য। মনে আছে কালকে কি বলেছিলেন আপনি? আমার মতন সুন্দরী বউ হলেই হয় না গুন দরকার ছিল যে প্রিয়তার মধ্যে আছে! এই কথাটুকুর উপলব্ধি করাতেই আমি এতোকিছু করেছি। আপনি তো প্রিয়তা ভাবির সঙ্গে খুব ভালো একটা ব্যবহার করতেন না, অথচ উনি আপনার জন্য কতো কি করতো বলুন তো? যখন যেটা ফরমায়েশ করেছেন সেটাই করেছে চুপ করে থেকেছে, কখনো আপনার মুখের উপর কথা বলেনি অথচ সেই প্রিয়তাকেই আপনি মেয়ের জায়গায় বসিয়ে একটু ভালোবাসতে পারেননি! আজকে যদি আমি আপনার সঙ্গে এরকম খারাপ ব্যবহার না করতাম আপনি আদৌ বুঝতেন প্রিয়তা ভাবির মর্ম? তাই বলতে পারেন সেজন্যই এসব করা। আমার জন্য তো ওই মানুষটা কম কষ্ট পায়নি আমার জন্য, তাই ভেবেছি যদি আপনাকে দিয়ে একটু উপলব্ধি করিয়ে প্রিয়তা ভাবিকে আপন করতে পারেন সেই প্রচেষ্টা টুকুই করেছি আমি।’
রত্না বেগম সত্যিই অনুতপ্ত হয়েছে তার আগের করা কাজের জন্য। সেটা তার চোখ মুখ দেখেই স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে! তবে কলি ভুল কিছু করেনি। তার ব্যবহারের জন্যই তো রত্না বেগম বুঝেছে প্রিয়তার মর্ম।
-‘ তুমি ঠিকই বলেছো কলি। কোনো ভূল কিছু করো নি সত্যিই তো তুমি যদি এসব না করতে তাহলে তো আমি প্রিয়তার উদ্দেশ্য এইরকম ভুল ধারনা নিয়েই থাকতাম। কখনো ওকে কাছে টে’নে নিতে পারতাম না। সে হিসাবে তুমি যা করেছো সবটাই ঠিক। কিন্তু ওই রাজীব এতোকিছু করলো কেনো বলতো?’
-‘ আমি বলছি মা! এই লোকটা আরো কয়েক বছর আগ থেকেই আমার পিছু লেগেছিলো। পড়াশোনাও করেনি ঠিকঠাক অব্দি। ব’খা’টে ছেলেদের মতন কাজ কর্ম সব উনার! স্কুল যাবার পথে বি’রক্ত করতো আমাকে প্রথমে পাত্তা না দিলেওক কলেজে ওঠার পর উনার আচরন যেনো কমার বদলে বাড়তেই থাকে। উনি মেনে নিতে পারছিলেন না যে কেউ উনার ডাকে সাড়া দেয়নি। উনি আমাকে বলতো উনার সঙ্গে সম্পর্ক করতে। উনি নাকি আমাকে ভালোবাসেন কিন্তু আমি প্রতিবারই উনাকে রিজেক্ট করে দিই। কতো চ’ড় থা’প্প’ড় মে’রে’ছি তবুও শোধারাই নি। অবশেষে আমার বিয়ে হয়েছে তারপরও এ থামে নি! কলি আর রুশাকে দিয়ে কি কান্ড করলো দেখুন?’
-‘ হ্যাঁ আমিই সব করেছি! আমিই করেছি। তোকে দেখতে তো অতো সুন্দর নয় তারপরও তোর কিসের এতো দে’মাগ? কেনো আমাকে বারবার রিজেক্ট করবি তুই? বরং তোর কপালের ভাগ্য যে তোকে আমি বিয়ে করতে চেয়েছিলাম অথচ তুই আমাকে ফিরিয়ে দিতিস?, আমি যেটা চাই সেটা চাই মানে চাই-ই বুঝেছিস? তুই এমনি ধরা দিস নি তো কি হয়েছে জোর করে হলেও আমি তোকে নিজের করবোই করবো কারন আমি তোকে চেয়েছি আর আমি যেটা চাই সেটা পেয়েই ছাড়ি বুঝেছিস?’
আর সহ্য করতে পারলাম না, এতোক্ষণ উনার সব কথা শুনলেও এবার ধৈর্য্য কুলোলো না! ঠা’স করে পরপর কতোগুলো চ’ড় মে’রে দিলাম উনার গালে!
-‘ এই এগুলোরই যোগ্য আপনি বুঝেছেন? এই এগুলোরই যোগ্য! আপনাকে আমার ভালো লাগে না ব্যস আর কি? আদৌ আপনাকে ভালো লাগবে যে ওই রকম কোনো বৈশিষ্ট্য আছে আপনার? একটা মেয়ে আপনাকে রিজেক্ট করেছে এটা সহজ ভাবে নিতে শিখুন? আপনার তাকে ভালো লেগেছে বলে যে সেই মেয়েটিরও আপনাকে ভালো লাগতে হবে এটা কোন ধরনের কথা? বাস্তব না মেনে আপনি এতোদিন আমাকে আমার পরিবারকে কষ্ট দিয়ে গেছেন! আপনার মতন মানুষ বেঁচে থাকাই মানে খারাপ কিছু ! ম’র’তে পারেন না কেনো আপনি? এবার ভাবুন আমার ধৈর্য কোথায় গেছে বলে আমি আপনাকে ম’র’তে বলছি! একবার ভাবুন! আপনার ছাঁয়াও দেখতে চাই না আমি!’
প্রিয়তা বেশ রে’গে গেছে! সাগর প্রিয়তাকে শান্ত করার চেষ্টা করছে। রাজীবকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে এরকম সময়ে রাজীব প্রিয়তার কাছে এসে দাঁড়ালো।
-‘ আর দেখতে হবে না তোকে আমার ছাঁয়া। ভালো থাকিস আর পারলে ক্ষমা করে দিস।’
রাজীবকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাবার সময় রাজীব কোনো কথা বলে নি আর হয়তো প্রিয়তার শেষোক্ত কথা শুনে নিজের ভূল বুঝতে পেরেছে। তবুও সে যা কিছু করেছে তার শাস্তি তো তাকে পেতেই হবে। অবশেষে রাজীব চলে গেলো!
-‘ রাজীব তো চলে গেছে। ওর সাজা ও পাবে। আমিও আমার মা’কে ফেরত পেয়েছি এবার চলে যাচ্ছি।’
-‘ যাওয়ার আগে বলি শোনো, নিজের একটা পরিচয় তৈরী করো জীবনে। আর নিজের মা’কে সাবধানে রেখো। সময় পেলে মাঝে মাঝে দেখা করে যেও।’
প্রিয়তার কথা শুনে কলি মুচকি হেঁসে চলে গেলো। সবকিছু ঠিকঠাক হয়েছে। সকল ঝ’ড়ের অবসান ঘটেছে আজকে। কলিও ফিরেছে নিজের জায়গা আর রাজীবও নিজের কর্মের ফল ভো’গ করছে।
-‘ বউমা সব তো ঠিকঠাক হয়েছে এবার তুমি যাও নিজের রুমে গিয়ে বিশ্রাম করো।’
প্রিয়তা শাশুড়ি মায়ের কথা শুনে রুমে গিয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলো। সাগর রুমে আসতে না আসতেই অফিস থেকে কল আসলো জরুরি কাজের জন্য যেতে হবে। সাগর বেরিয়ে পড়েছে। প্রিয়তা কিছুক্ষণ শুয়ে রইলো।
_______________
সন্ধ্যা নেমে এসেছে। সুন্দর একটা পরিবেশ তৈরী হয়েছে চারিদিকে। প্রিয়তার মনটা বেশ ফুরফুরে হয়ে আছে। অনেকদিন পর সে আজকে সাজবে নিজের জন্য! হ্যাঁ বহুদিন হয়ে গেলো সাগর কাজের জন্য বাহিরে ছিলো ফিরতেই রাজীবের জন্য অশান্তি। এখন সাগর বাড়িতে আছে সবকিছু ঠিকঠাক হয়েছে এখন একটু সময় দেওয়া যাক দু’জন দু’জনকে। প্রিয়তা সেই মোতাবেক লাল রঙের শাড়ি পড়ে তার সঙ্গে ম্যাচিং চুড়ি আর হালকা করে মুখে একটু মেক-আপ করেছে। চুলগুলো খোঁপা করে তাতে ফুল লাগিয়েছে। অপেক্ষায় আছে কখন সাগর আসবে। প্রিয়তা বারান্দায় গিয়ে বসে রইলো।সাগর অফিস থেকে বাড়িতে ফিরতেই প্রিয়তাকে কোথায় দেখতে পেলো না এদিকে অফিস থেকে এসে বেশ ক্লান্ত লাগছে সে জন্য ফ্রেশ হয়ে নিলো। প্রিয়তা বলে দু এক বার ডাক দিতেই প্রিয়তা বারান্দা থেকে রুমের ভেতর আসলো। প্রিয়তাকে দেখে সাগর কিছুক্ষণ মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে ছিলো প্রিয়তার দিকে। এই তো সেই আগের রূপ প্রিয়তার! হাসি খুশি মুখ, সুন্দর করে সাজ সব মিলিয়ে প্রিয়তাকে অপূর্ব লাগছে। সবকিছুর ভীড়েও সাগর যে প্রিয়তাকে এতোদিন কিচ্ছু জানায়নি সে জন্য অনুতপ্ত হচ্ছে সাগর।
-‘ প্রিয়তা আমি চেয়েও তোমাকে এতোদিন কিছু
আর কিছু বলতে পারলো না সাগর। প্রিয়তা সাগরের মুখে হাত দিয়ে কথা বলা বন্ধ করে দিলো।
-‘ আগের কোনো কথা নয়, ওসব বাদ দিন। আজকে থেকে আমার আর আপনার নতুন করে সবটা শুরু করার পালা। শুধু আমি আর আপনি নয় আপনার আর আমার অংশ যে আমার ভেতরে রয়েছে তাকে নিয়েই ভাবনার পালা শুধু বুঝেছেন?’
সাগর প্রিয়তার পে’টে হাত রাখলো। প্রিয়তা হেঁসে যাচ্ছে! সাগর খুশি ধরে রাখতে পারছে না আর! দিনশেষে আজকে যেনো সব খুশ উপচে পড়ছে।
-‘ মানে প্রিয়তা তুমি মা হতে চলেছো আর আমি বাবা?’
-‘ হ্যাঁ এবার ওসব পুরনো কথা বাদ দিয়ে চলুন তো আমাদের নতুন অতিথির কথা ভাবা যাক? যাকে নিয়ে আমাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে?’
-‘ হ্যাঁ আর শোনো, মা তো তোমাকে কোনকিছু বলবে না আর। তুমি নিজেও যেমন আছো তেমনই ভালো বুঝেচো? সে তুমি যেমনই হও না কেনো #তুমিই_আমার_পূর্নতা বুঝলে তো?’
-‘ হুম খুব করে বুঝেছি।’
সাগরও মুচকি হেঁসে প্রিয়তাকে কোলে তুলে নিয়ে ভেতরে চলে গেলো। সুন্দর একটা মুহুর্তের সাক্ষী হলো আকাশে থাকা চাঁদ আর অসংখ্য তারা! এভাবেই পূর্নতা পাক সকল ভালোবাসা!
——————————#সমাপ্ত———————–