তুমিই আমার পূর্নতা পর্ব-০৭

0
1078

#তুমিই আমার পূর্নতা– [৭]
#মুনিয়া_মিরাতুল_নিহা
___________________________

সাগর রাজীবের পিছু যেতে যেতে এক চিকন সরু গলিতে এসে থামলো! এই জায়গাটা রাজীব দের বাড়ি ছেড়ে আধা ঘন্টার দুরত্বে একটা জায়গার। এখানে লোক যাতায়াত খুব একটা নেই বললেই চলে কারন জায়গাটা একটা জঙ্গল ছেড়ে একটা চিকুন রাস্তা ধরে আর একটু ভেতরে গিয়ে একটা বাড়ি আছে। এটা লোকালয় থেকে বেশ দূরে তাই তেমন মানুষজনের আনাগোনা নেই। সাগর রাজীবের পিছু যেতে যেতে সেই জায়গায় এসে থামলো। বাড়িটার বাহিরে থেকে তালা দেওয়া আছে। রাজীব সেই তালা টা খুললো খুলে দরজাটা ভিজিয়ে সে নিজে ও-ই রুমে ঢুকলো। সাগর সেই দরজার পিছু পিছু গিয়ে দাঁড়ালো। দরজা যেহেতু ভেজানো আছে সেই ক্ষেত্রে সাগর সেই ফাঁক দিয়ে ভেতরটা দেখতে পাচ্ছে! একটু উঁকি দিতেই সাগর দেখতে পেলো একজন বৃদ্ধ মহিলাকে আর একটি মেয়েকে! মেয়েটির মুখ ভালো করে দেখতে পেলো না কিন্তু বৃদ্ধ মহিলাকে চিনতে অসুবিধা হলো না এতো কলির মা! যে মায়ের জন্য কলি এতোকিছু করছে। তার মানে রাজীবই যতো নঃষ্টের মূল!

-‘ এখনো খাবার খাস নি কেন? মনে রাখিস তুই খেলেই তবে তোর বাচ্চা খেতে পাবে! নেহাত তুই কাঁদো কাঁদো স্বরে বলছিলিস তোর বাচ্চার জন্য যেনো তোকে ছেড়ে দিই কিন্তু আমি অতো মহান হতে পারলাম নারে তাই তোকে একটু খাতির করছি বলতে পারিস। ওই প্রিয়তাকে একটু খাঁ’টিয়ে মা’রি তারপর তোদের ছেড়ে দেবো। তোদের তো বলেইছি প্রিয়তাকে পাবার জন্য আমি এতোকিছু করছি। ও মেয়ে বড়ো ধেতা কতোবার বলেছি আমি তোকে কতো ভালোবাসি চলে আয় আমার কাছে, কিন্তু সে কথা শুনবার কোনো পাত্রই নয়। কিন্তু আমি যা চাই তা পেয়েই ছাড়ি সে যেভাবেই হোক! ব্যস একবার প্রিয়তাকে আমার হতে দে তারপর তোদের ছেড়ে দেবো আর ওই প্রিয়তাকেও বুঝিয়ে ছাড়বো আমাকে অগ্রাহ্য করার ফল কি হয়। আমি জানি প্রিয়তা এমনি এমনি আমার কাছে আসবে না এর জন্যই তো তোদের আট’কে রেখে ওই সাগরকে দিয়ে কলিকে দিত্বীয় বিয়ে করিয়েছি যাতে প্রিয়তা সবশেষে আমার কাছেই আসে বুজলি? এসব তো তোদের অজানা নয়। ব্যস প্রিয়তা চলে আসুক একবার আমার কাছে তো তোদেও আমি ছেড়ে দিবো পাক্কা!’

সাগর থ হয়ে শুনছে রাজীবের সব কথা! রাজীবকে প্রথম দেখায়ই সাগরের ভালো লাগেনি কিন্তু রাজীব যে এরকম ঘৃ’,ন্য একটা কাজ করবে নেটা তো সাগর কোনোদিনও জানতে পারতো না যদি না আজকে পিছু পিছু আসতো। এখন বেশ ভালো করেই মনে পড়ছে সাগরের এই রাজীব যখন সাগরের সঙ্গে দেখা করছিলো তখুনি রাজীবের হাতে অতোগুলো আংটি দেখে। ভাগ্যিস সাগর রাজীবের পিছু পিছু এসেছে নয়তো এসব তো কিছুই জানতে পারতো না। সাগরের একার সঙ্গে এতোকিছু করা সম্ভব নয় সে জন্য পুলিশকে ডেকে সব বলে দিলো। ততক্ষণে সে নিজে নজর রেখে চলেছে রাজীবের উপর!

-‘ দেখো বাবা জোর করে তো কোনো কিছু হয় না বলো? তোমাকে আমি সেই শুরু থেকে বলে আসছি। প্রিয়তার তোমাকে পছন্দ হয়নি তাই সে তোমাকে রিজেক্ট করেছে, প্রিয়তার নিজেরও সম্পূর্ন অধিকার আছে তার পছন্দ মতন বিয়ে করা। জোর করে কোনো কিছু হয় না রাজীব। তুমি আমাদের কে ছেড়ে দেও।’

উপরোক্ত কথাগুলো রাজীবের উদ্দেশ্য বলছিলো কলির মা! রাজীব সেই কথা শুনে রা’গের চো’টে রুশার জন্য আনা খাবারের প্লেট ফে’লে দিলো!

-‘ প্রিয়তার নিজের অধিকার আছে আমার নেই? আমার প্রিয়তাকে চাই মানে ব্যস চাই বুঝেছিস তোরা? আমাকে রিজেক্ট করা তাই না? এর ফল ওকে বুঝিয়ে দেবো আমি। তোদের খেতে বলেছি তো খাসনি এবার না খেয়ে থাক!’

রাজীব সেখান থেকে চলে গেলো। সাগর একটা মো’টা গাছের পিছনে গিয়ে লুকিয়ে পড়লো। রাজীব যাবার ঘড়ি ধরে দশ মিনিট পর ওদের কাছে পৌঁছালো সাগর বাড়ির তালা ভে’ঙে। সাগরকে দেখে রুশা কাঁদতে কাঁদতে উঠে দাঁড়ালো। বাড়ির ভেতরটায় ওদের আটকে রাখা হয়েছিলো শুধু একটা দরজা ছাড়া কিছুই ছিলো না। সাগর রুশাকে আস্বস্ত করে প্রিয়তাকে ফোন করলো আপাততো প্রিয়তা রাজীবকে ধরে রাখতে পারে।

-‘ প্রিয়তা তুমি কোথায়?’

-‘ আমি বাড়িতে যাচ্ছি। আর দশ মিনিটের ভেতর পৌঁছে যাবো।’

-‘ আচ্ছা শোনো,তুমি তোমার চাচাতো ভাই রাজীবকে কল করে বলো যাতে সে এক্ষুনি বাড়িতে যায় মানে আমাদের বাড়িতে। ভালো করে কথা বলবে যাতে সে এক্ষুনি আমাদের বাড়িতে আসে বুঝেছো? কোনো প্রশ্ন নয় যদি আমার ভালো চাও তো যা বললাম করো।’

সাগর প্রিয়তাকে কিচ্ছু না বলতে দিয়ে ফোন কে’টে দিলো। আপাততো তার যতো দ্রুত সম্ভব এই জঃঙ্গল থেকে বেরোতে হবে। সাগর ফোন করে পুলিশদের বাড়িতে যেতে বলে দিলো।

——————

-‘ কি শাশুড়ি আম্মা? সব রান্না কমপ্লিট তো আপনার?’

-‘ বউমা এই গরমের ভেতর এতো কষ্ট করে শুধু তোমার জন্য রান্না করেছি। প্রিয়তা আসা থেকে রান্নাঘরে যেয়েও দেখিনি সেখানে তোমার জন্য রান্না করছি।’

-‘ আচ্ছা খেয়ে দেখছি দাড়ান। ‘

কলি একটু খাবার মুখে নিতেই আবার মুখ থেকে ফেলে দিলো! রত্না বেগম হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে কলির দিকে। সে এই গরমের মধ্যে এতো কষ্ট করে রান্না করেছে অথচ কলি ফেলে দিলো!

-‘ ছিহ্! এটা কোনো রান্না হয়েছে? ঝা’লে পো’ড়া একেবারে! সামান্য রান্নাও করতে পারেন না নাকি আপনি? ‘

কলির কথা শুনে রত্না বেগম খাবার মুখে নিয়ে টেস্ট করলো কই ঝা’লের পরিমান তো ঠিকই আছে তাহলে কলি তার সঙ্গে এরকম করছে কেনো?

-‘ ঠিকই তো আছে এরকম করছো কেনো তুমি?’

কলি নিজেও জানে ঝাল ঠিকআছে কিন্তু সে আসা থেকে দেখেছে রত্না বেগম প্রিয়তার সঙ্গেও এরকম করতো সেটাই কলি রিপিট করছে শুধু। তাও যথেষ্ট কারন সহ!

-‘ এরকম ঠিক তো হবে না আম্মা! যান আবার গিয়ে রান্না করুন।’

এবার রত্না বেগম বেশ চ’টে গেলো! একে তো এই গ’রমের ভেতর রান্না করেছে তার উপর আবার রান্না করতে বলছে! মেয়েটা সপ্তাহ খানেক আসতে না আসতেই এরকম শুরু করে দিছে!

-‘ শোনো বউমা? তোমার মতন আমার প্রিয়তাও এই বাড়ির বউমা বরং সে তোমার মতন এতো আ’হ্লাদী পনা করে না বুঝছো? সে আমাকে রান্না করার কথা বলতে তো দূরের থাক উল্টে সে আমার সব কথা শুনতো তোমার মতন বে’য়া’দপ না। আমি আমার বংশধরের জন্য এতোকিছু করছিলাম কিন্তু এখন দেখছি তুমি মোটেও সুবিধার নয়! রূপ নয় গুনই সব যা আমি এখন তোমাকে দেখে হারে হারে বুঝছি। আর সেই গুন প্রিয়তার মধ্যে আছে যার ছিটেফোঁটাও তোমার মধ্যে নেই বুঝেছো?’

রত্না বেগম বেশ তেড়ে মে’রে চলে গেলেন নিজের রুমে! রত্না বেগমের কথা শুনে কলি হাসলো। তৃপ্তির হাসি হাসলো। এটাই তো চেয়েছিলো সে। রত্না বেগমের উপলব্ধি করাতে এবং তাতে সফলও হয়েছে আজকে। এবার শুধু তার মা’য়ের খোঁজ পাবার অপেক্ষা। তারপর সে নিজের মতন করে চলে যাবে। প্রিয়তা এতোদিন কলিকে দেখলেই চুপচাপ চলে যেতো কিন্তু একটা মেয়ে হিসাবে কলিও বুঝতে পারতো প্রিয়তার মনে কি চলছে। আর অল্প কদিন তারপর কলি তার নিজের নীড়ে ফিরবে। সাগর আর প্রিয়তা সুখে থাকবে। রত্না বেগমও আর এরকম করবে না। সবকিছু ঠিক হবে। এবার শুধু সেই কাঙ্ক্ষিত দিনের জন্য অপেক্ষা!
————————–

-‘ রাজীব ভাই শুনুন? আপনি এক্ষুনি আমাদের বাড়িতে আসবেন একটু কথা আছে। এক্ষুনি মানে এক্ষুনিই আসতে হবে আপনাকে বুঝলেন তো?’

-‘ কেনো প্রিয়তা মনি? অবশেষে বুঝলে তো যে তোমার জন্য এই রাজীব ছাড়া কোনো গতি নেই?’

প্রিয়তার ইচ্ছে করছে ফোনটি কে’টে দিতে কিন্তু সে সাগরের কথা শুনে তা আর করতে পারছে না! সাগর অতো সিরিয়াস ভাবে না বলে প্রিয়তা কখনোই রাজীবকে কল করে এই বাড়িতে আসতে বলতো না।

-‘ শোন, আমি এখন এটা জায়গায় যাচ্ছি ফিরতে দেরি হবে। আর তুই আমাকে ডাকবি এতো ভালো মেয়ে তুই নস। আমি সেটা এতদিনে বুঝেছি। নিশ্চয়ই কোনো কিছু আছে এর পেছনে। তোর সেই আশায় ছাই! আমি চলে যাচ্ছি নাগাল পাবি না আর আমার এতো সহজে।’

প্রিয়তা কি বলবে এখন সাগরকে? রাজীব তো বুঝে ফেলেছে প্রিয়তা সাগরের কথানুযায়ি কল করেছে! এখন কি করবে তাহলে প্রিয়তা? রাজীব তো আসবেই না! এখন কি করবে সাগর? কি করতে চেয়েছিলো রাজীবকে দিয়ে?

#চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে