তুমিই আমার পূর্নতা পর্ব-০৬

0
986

#তুমিই আমার পূর্নতা –[৬]
#মুনিয়া_মিরাতুল_নিহা
____________________________

-‘ আপনি কি জানেন রাজীব ভাইয়া? আমাকে খুলে বলুন সবটা।’

-‘ এখন তোর সবটা জানতে ইচ্ছে হচ্ছে তাই না প্রিয়তা মনি? যখন আমি তোর পিছু পিছু ঘুরতাম পা’গ’লের মতন, তোকে কতোবার বলেছি আমার হয়ে যা কই তখন তোর সবটা জানতে ইচ্ছে হয়নি কেনো?’

এই লোকটা ভালো কথা শুনবার নয়। যখুনি দেখা হবে সে এসব আবোল তাবোল মার্কা কথাবার্তা বলতেই থাকবে। এতেও যেনো শান্তি হচ্ছে না তার। এবার বিরক্তির জায়গায় রা’গ ওঠে গেলো চরম ভাবে! অনেকক্ষণ ধরে সহ্য করেছি আর নয়।

-‘ ভালোয় ভালোয় বলছি যদি কিছু বলার থাকে তো বলন নতুবা আমি চলে যাচ্ছি আর একবারো আমাকে বিরক্ত করবেন না।’

-‘ আরে না শোন তো বলছি আমি তোকে সবটা, শোন তোর স্বামী মানে সাগর কলি নামের মেয়েটিকে বিয়ে করেছে এমনি এমনি না কলির সঙ্গে তার অনেকদিনের সম্পর্ক ছিলো শুধু তাই নয় কলির সব সম্পত্তি নিজেন নামে করে নিতে সাগর কলিকে বিয়ে করেছে বুঝেছিস? এমন লোকের কাছে কেনো তুই থাকতে যাবি বলতো? ডির্বোস দিয়ে দে তুই সাগরকে। আমি জানি তুই আমাকে অনেক অপমান করেছিস, কিন্তু আমি তো তোকে ভালোবাসি বল? আমার তোকে গ্রহন করতে কোনো অসুবিধা নেই। শুধু তুই যদি রাজি হোস তো বল?’

আর সহ্য করতে পারলাম না! দুম করে একটা চঃড় বসিয়ে দিলাম রাজীবের গালে। ভেবেছে টা কি আমাকে যা বোঝাবে আমি তা-ই বুঝ মানবো? সাগরের সঙ্গে এতোদিন থেকেছি আমি ও কলিকে বিয়ে করেছে এটা যেমন সত্যি তেমনি সত্যি এটাও ওর কোনোদিনও কোনো কিছুর প্রতি কোনো লো’ভ ছিলো না, টাকা পয়সা বা সম্পত্তির জন্য তো না-ই। এই রাজীব যেই দেখেছে আমি এখন বিপদে পরেছি যা পারছে তাই বুঝিয়ে যাচ্ছে আমাকে। ওর আর দোষ কি? ভাগ্যই তো আমার সঙ্গে এরকম ছ’ল’নক করে চলেছে প্রতিনিয়ত। না জানি সামনে আর কতো কি দেখতে হবে। মায়ের কাছে গেলাম, মা আমাকে দেখতে পেয়েই আনন্দে উচ্ছসিত হয়ে গেছে একেবারে।

-‘ কিরে প্রিয়তা তোর এই অবস্থা কেনো মা’থায় ব্যা’ন্ডে’জ? কি হয়েছ কি? কোনো বি’পদে পড়েছিস নাকি বলতো? সবকিছু ঠিক আছ তো? ফোন কেনো করিস নি এই ক’দিন? ‘

একেই বোধহয় মা বলে। আমাকে এরকম দেখেই মায়ের না’জে’হাল অবস্থা হয়ে গেছে। আমি মা’কে আস্বস্ত করলাম আমার কিচ্ছু হয়নি কিন্তু মা তো বুঝবার পাত্রী নয় সে জোর করে আমাকে বসিয়ে ভাত খাইয়ে দিতে লাগলো। বাড়িতে ভাই ভাবী নেই, উনারা নাকি ডাক্তারের কাছে গেছে ভাবীর শরীর খারাপ নিয়ে। মা নিজের হাতে ভাত মেখে খাইয়ে দিচ্ছে আমিও বেশ তৃপ্তি সহকারেই খাচ্ছি। খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ হলে মায়ের কোলে কিছুক্ষণ মা’থা রাখলাম এতেই যেনো আমার স্বর্গ সুখ!
—————————-

এতোক্ষণ ধরে প্রিয়তাকে অনুসরন করে সবটা দেখে যাচ্ছিলো সাগর পিছন থেকে। এই অবস্থায় প্রিয়তাকে একা ছেড়ে দেবার সাহস হয়নি সাগরের সেজন্য প্রিয়তার কথা শুনে পিছু পিছু এসে দেখে প্রিয়তা রাজীবের সঙ্গে কথা বলছে। এই রাজীবকে সাগর একবার দেখেছিলো তারপরে আর দেখেনি। একবার দেখে এতোদিন পর চেহারা মনে রাখা বেশ কষ্টকর তবুও রাজীবকে সাগর মনে রেখেছে কারন রাজীব সাগরের সঙ্গে বেশ দুর্ব্যবহার করেছিলো যা সাগরের মনে দাগ কে’টে রয়েছে ফলস্বরূপ রাজীবকে একবার দেখা মাত্রই সাগর চিনে ফেলে। প্রিয়তা যখন কথা বলতে বলতে রাজীবকে চ’ড় মা’র’লো সেটা দেখেও সাগর সেখানে যায়নি কারন সাগর বেশ ভালো করেই জানে এই রাজীব সুবিধাজনক নয়, সে প্রিয়তাকে নিশ্চয়ই এমন কিছু বলেছে যার জন্য প্রিয়তা রাজীবকে মে’রে’ছে। ওদের দিকে নজর রাখতে রাখতে সাগরের রাজীবের হাতের দিকে চোখ পরলো! রাজীব হাতে কতোগুলো আংটি পড়ে আছে, এই আংটিগুলোকে সাগর আগেও যেনো কোথাও দেখেছে বলে মনে হচ্ছে কিন্তু কিছুতেই মনে করতে পারছে না ঠিক কোথায় দেখেছে।
——————-

কলি সকালবেলা রত্না বেগমকে দিয়ে নাস্তা তৈনী করে উনাকে বেশ না’জে’হাল করেছে। এটা করতেও কলির বেশ খারাপ লাগছে কিন্তু করতে তো হবেই। অপরদিকে রত্না বেগম কলির সব কথা মেনে নিচ্ছে তার বংশধরের কথা ভেবে। রত্না বেগম ভেবেছে প্রিয়তা হাসপাতাল থেকে এসে রান্না করবে তাই সে নিজে আরাম করে নিজের রুমে বসে ছিলো। ঠিক তখুনি কলির আগমন ঘটে তার রুমে।

-‘ বউমা কিছু বলবে? ‘

-‘ বলতেই তো এসেছি। নাস্তা বানিয়ে যে বসে রইলেন,? দুপুরের রান্না করবে কে আম্মা?’

-‘ আরে ও তুমি ভেবো না তো। প্রিয়তা এসে সব করে দিবে।’

-‘ আজ্ঞে না, সে এখন তার বাপের বাড়িতে গেছে, আপনার ছেলেকে কল করেছিলাম তখন জানতে পেরেছি।’

-‘ তাহলে এখন কি হবে বউমা?’

-‘ কি আর হবে? আপনি রান্না করবেন। যাই হোক না কেন আপনার বংশধরকে তো আর না খাইয়ে রাখতে পকরবেন না বলুন? উমম আজকে বরং মাছের কালিয়া, মাছের ভুনা, ডিমের কোরমা ব্যস এইগুলাই করুন। বেশি কিছু না।’

কলির কথা শুনে রত্না বেগমের চোখ দু’টো বড়ো বড়ো হয়ে গেলো! নাস্তা করতে গিয়েই তার যা অবস্থা হয়েছিলো এখন আবার রান্না করতে যেতে হবে শুনেই কেমন লাগছে! তার উপর আবার কলির বিভিন্ন পদের খাবারের আইটেমের ফরমায়েশ! নাহ্ এবার আর সহ্য করা যাচ্ছে না কলির কথাবার্তা!

-‘ শোনো বউমা, প্রিয়তা আমাকে কখনো এসব করাবে তো দূর বলেও নি, অথচ তুমি আসতে না আসতেই শুরু করে দিয়েছো এসব? তোমার এমন কোনো সময় হয়নি এখনো রান্না নিজেই রে নিতে পারবে বুঝলে?’

-‘ ভেবে বলছেন তো ঠিক বললেন? ভুলে যাবেন না আপনার ছেলে আমাকে নিজে দেখে পছন্দ করেছে আমি যা বলবো সে তা-ই করবে তাই আমি যদি এখন বলি আপনি আমাকে সকাল থেকে না খাইয়ে রেখেছেন দুপুরেও কিছু রান্না করেননি, ভাববেন না আমি বলবো যে আমি আম্মাকে বলেছিলাম একটু তরকারি কে’টে দিতে আমি রান্না করবো আর তাতেই উনি রে’গে গেছেন। এই এগুলা যদি বলি না? আপনার ছেলে আমাকেই বিশ্বাস করবে আর আমি যেহেতু প্রেগন্যান্ট আমাকে তো না খাইয়ে রাখবে না? আমরা বাহিরে গিয়ে খেয়ে আসবো, তারপর আপনি আর আপনার স্বামী দুজনে মিলে কি করবেন? আচ্ছা আমি যদি সাগরকে নিয়ে আলাদা হয়ে যাই তখন?’

রত্না বেগমের চোখে মুখে এবার রা’গের বদলে ভয় দেখতে পেলো কলি। যতোই যা হোক না কেন সাগরকে রত্না বেগম কিছুতেই কাছ ছাড়া করতে পারবেন না! সাগরকে তিনি বড্ড ভালোবাসেন। আরকলি যদি এসব বলে তো সাগর তো আর তার মা’য়ের কথা শুনবে না? রত্না বেগম আর কোনো উপায় দেখতে পেলেন না তিনি রান্না ঘরে চলে গেলেন রান্না করতে! ডিমের কোরমা করার জন্য যখন ডিমগুলো ভাজছিলো তখন গরম তেলের ছিটে এসে পড়লো তার গায়ে! গরম তেল হবার জন্য হাতে লাল হয়ে গেছে। পাশেই দেখতে পেলো কলি দাঁড়িয়ে আছে, রত্না বেগমের এই অবস্থায় কলি কোথায় তাকে সাহায্য করবে তা না করে দাঁড়িয়ে আছে!

-‘ আরে আম্মা কিচ্ছু হবে না তো, একটু ছিটেই তো পড়েছে হাতে। প্রিয়তা ভাবি যখন রান্না করতো এরকম কতো তেলের ছিটে এসে পড়তো তার হাতে! তখন তো আপনি বলতেন ওসব কিচ্ছু নয় সংসার করতে গেলে ওসব একটু আধটু হবেই তাই না? তাহলে এখন আপনি এভাবে দাঁড়িয়ে না থেকে তাড়াতাড়ি রান্না গুলো করে ফেলুন তো দেখি।’

-রত্না বেগম এবার অনুতপ্ত হলো নিজের মনে মনে! সত্যিই তো প্রিয়তার যখন হাতে তেল পড়তো কিংবা ছে’কা লাগতো তখন তো রত্না বেগম এগুলোই বলতেন? তবুও প্রিয়তা কিচ্ছু বলতো না, এখন নিজে বুঝতে পারছে ঠিক কিরকম লেগেছে প্রিয়তার! তবুও মেয়েটা বেশ চুপচাপ ছিলো সাত চ’ড়ে রা কাটতো না এরকম। এখন বেশ বুঝতে পারছে প্রিয়তা আর কলির পার্থক্য।

সাগরের মনে তো পড়ছিলো না কিন্তু সে কি বুঝে রাজীবের পিছু নিতে লাগলো। বাড়িতে গিয়েই বা কি করবে? এর চেয়ে রাজীবের পিছু গিয়ে যদি কিছু একটা সুরাহা করা যায় তো মন্দ কিসে?

#চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে