তুমিই আমার পূর্নতা পর্ব-০৫

0
902

#তুমিই আমার পূর্নতা — [৫]
#মুনিয়া_মিরাতুল_নিহা
___________________________

হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে প্রিয়তা! কালকে রাত্রে সাগর ফোন ধরার পর জানতে পারে প্রিয়তার নাকি এ’ক্সি’ডে’ন্ট হয়েছে। আশেপাশের লোকজনেরা মিলে হাসপাতালে ভর্তি করেছে। সাগর ফোন পাওয়া মাত্রই ছুটে আসে প্রিয়তার কাছে। ওই বাড়ি থেকে শুধু প্রিয়তার শশুড়মশাই আর সাগরই এসেছেন। সাগরের বাবা বয়স্ক মানুষ কারনে রাত্রে বাড়িতে চলে যায়। কিন্তু সাগর তার স্ত্রীর পাশেই বসে রাত্রি যাপন করে। যে লোকটি সাগরকে কল করেছিলো তিনি জানান প্রিয়তা অন্যমনষ্ক হয়ে মেইন রোড ধরে হাঁটছিলো আর তখুনি একটা গাড়ির সঙ্গে ধা’ক্কা খায় ভাগ্য ভালো তাই শুধু মা’থায় একটু চোট পেয়েছে।

ভোরের আলো এখনো চারিপাশে ভালো করে ফুটেনি। আবছা আবছা অন্ধকার আছে বাহিরে। প্রকৃতি শান্ত, নিশ্চুপ। মাঝে মাঝে কিছু মিষ্টি পাখির আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে মগ্ন হয়ে আছে প্রিয়তা, এই তো একটু আগে কি সুন্দর তাকিয়ে ছিলো খোলা সুন্দর আকাশের দিকে! এখন সেই আকাশে বোধহয় মেঘ করেছে। ব’জ্র’পা’তের আওয়াজ শোনা গেলো। মুহুর্তের মধ্যেই আকাশ ঝাপিয়ে বৃষ্টি আ’ছ’ড়ে পড়লো ধরনীর বুকে! টুপ টুপ করে বৃষ্টির ফোঁটা আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। কি সুন্দর স্নিগ্ধ শান্ত প্রকৃতি মুহুর্তের মধ্যেই কালো আধারে নিজেকে আবৃত করে ঝুমঝুমিয়ে বৃষ্টি এনে দিলো। কখন কি হয় আসলেই বোঝা দায়।
একটু আগেই ঘুম ভেঙে গেছে প্রিয়তার। ওঠে বসতে চাইলো কিন্তু মা’থায় একটু ব্যাথা পেলো তবুও ওঠে বসলো। পাশেই একটা চেয়ারে সাগরকে বসে থাকা দেখতে পেলো! মানে কালকে যখন প্রিয়তার জ্ঞান ফিরে সামনে সাগরকে দেখতে পায়। মনে পড়ে গেলো কালকের ঘটা ঘটনা। যেনো বে’হুঁ’শ হয়ে গেছিলো সাগর। কেমন অস্থির অস্থির দেখাচ্ছিলো! তখুনি ডাক্তার সাগরের উদ্দেশ্য কথা বলছিলো,

-‘ স্বামী হিসাবে এতো উদাসীন কেনো আপনি? আপনার স্ত্রী প্রতি? একটু খেয়াল রাখতে পারেন না নাকি? বল সন্ধ্যা বেলা রাস্তায় আনমনে হাঁটছিলো এবার তো বেঁচে গিয়েছে অল্পের উপর দিয়ে, যদি বেশি কিছু হতো তখন? তখন তো উনি আর উনার বা***

-‘ থামুন!’

ডাক্তারকে থামিয়ে দিলাম। আমি চাই না আমার ভেতরের আরেক অস্তিত্বের কথা সাগর জানতে পারুক। ও তো কলিকে বিয়ে করে এনেছে, আমি সেদিন কতো আগ্রহ নিয়ে রেখছিলাম সবটা জানাবো বলে কিন্তু সাগর আমাকে ধো’কা দিলো! ওর কোনো অধিকার নেই আমার সন্তান সম্পর্কে কিছু জানার।

-‘ কি হলো ডাক্তার সাহেব? আপনি চুপ হয়ে গেলেন কেনো? কি হয়েছে বলুন?’

-‘ ডাক্তার কি বলবে? যা বলার আমি বলছি আপনি শুনুন, কি হতো আর? ম’রে যেতাম আমি! এমন তো না যে আমি ম’রে গেলে আপনি চির কুমার থাকবেন। দিত্বীয় বিয়ে তো অলরেডিই করে ফেলেছেন তাই না? এখন তাকে নিয়ে সুখে থাকুন আর আমার চোখের সামনে থেকে চলে যান বলছি।’

প্রিয়তার উত্তেজনামূলক কথা শুনে সাগর স্থির থাকতে পারলো না চলে গেলো। সময়ের স্রোত তাকে এই জায়গায় এনে দাঁড় করিয়েছে। প্রিয়তার তার প্রতি রা’গ, অভিমান হওয়াই উচিত। সাগর এখনো অব্দি প্রিয়তার সঙ্গে ঠিক করে কথা বলেনি। কি জবাব দিবে সে? কিছুই তো বলতে পারবে না প্রিয়তাকে উল্টে দু’জনের মধ্যে ভূল বুঝাবুঝি বাড়বে। সাগর কেবিন থেকে চলে যায়, প্রিয়তা ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
——–

সকালের আলো হতে না হতেই কলি নিচে নেমে আসে। রত্না বেগম নামাজ পড়ে নিচে বসে ছিলো। তখুনি কলি উনার সামনে এসে দাঁড়ায়,

-‘ কিছু বলবে কি বউমা?’

-‘ হ্যাঁ বলি সকাল তো অনেক আগেই হয়েছে। আপনার বউমা তো মা’থা ফা’টি’য়ে হাসপাতালে আরামসে বসে আছে আর আপনিও তো কি আরাম করে এখানে বসে আছেন। বলি ক্ষিদেও তো পায় নাকি? যান নাস্তা করুন গিয়ে।’

-‘ আমি নাস্তা করবো?’

-‘ হ্যাঁ আপনি করবেন না তো কি আমি করবো? শুনুন আম্মা ভুলে যাবেন না আমার গর্ভে আপনাদের বংশধর আছে সুতরাং আমাকে না খাইয়ে রাখা মানে তারও অযত্ন করা। আর তাকে অযত্ন করলে বোধহয় খুব ভালো হবে না বলুন? তাহলে যান নাস্তা তৈরী করুন গিয়ে।’

কলি আবার উপরে চলে গেলো। তার নিজের কাছেও খারাপ লাগছে রত্না বেগমের সঙ্গে এরকম ব্যবহার করতে কিন্তু কলির সময় ও আর বেশিদিন নেই এই বাড়িতে যাবেই যখন যাবার আগে এই রত্না বেগমকে না হয় একটু বুঝিয়ে যাক।

-‘ নতুন বউমা আসা মাত্রই তো তাকে নিয়ে গদগদ হয়ে পড়েছিলো একেবারে। তার সৌন্দর্যে আত্নহারা হয়ে মা’থায় তুলে রেখেছো যাও এবার রান্নাঘরে গিয়ে কাজে লেগে পড়ো। বছর খানেক রান্নাঘরে না যেতে যেতে তোমার অভ্যাস বোধহয় বদলর গেছে যাও একটু অভ্যস করে আসো গিয়ে।’

সাগরের বাবা সোফায় বসে খবরের কাগজ পড়ছিলেন তখুনি কলি নিচে আসে, কলির সমস্ত কথা শুনেও যেনো তিনি শুনে নি এরকম ভাব নিয়ে ছিলেন এতোক্ষণ। রত্না বেগম এতোদিন প্রিয়তার আদরে যত্নে ছিলো বেশ আরাম আয়েশ করে। তবুও প্রিয়তার মর্ম বুঝেনি এখন নতুন বউমা এসেছে অবশ্য তারতো মনের মতন সুন্দরী বউমা এসেছে। এবার বুঝবে।
———————–

সাগরের ঘুম ভাঙে অবশেষে। এতোক্ষণ যে বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছিলো সে খেয়াল বোধহয় নেই তার। কালকে রাত্রেবেলা প্রিয়তার কথা শুনে কেবিন থেকে গেলেও কিছুক্ষণ পর বে’হা’য়ার মতন এসে আবারো প্রিয়তার কাছে এসে বসেছিলো সাগর। এক সময় প্রিয়তাকে দেখতে দেখতেই ঘুমিয়ে যায়। চোখ খুলে দেখে প্রিয়তা বেডে নেই! তৎক্ষনাৎ আবারো চিন্তিত হয়ে ওঠলো। ফ্রেশ হয়ে বাহিরে এসে জানতে পারলো প্রিয়তা না-কি বাড়ি চলে গেছে। অবশ্য কালকে ডাক্তার বলেছিলো আজকেই প্রিয়তাকে বাড়ি নিয়ে যেতে পারবে কিন্তু প্রিয়তা যে সাগরের জন্য অপেক্ষা না করেই চলে যাবে এটা সাগর বুঝে ওঠতে পারেনি। তড়িঘড়ি করে প্রিয়তার ফোনে কল লাগায়। দু তিন বার রিং হতেই পরের বার ফোন রিসিভ করলো প্রিয়তা।

-‘ তুমি কোথায় গেছো আমাকে না জানিয়ে? আমার কতো চিন্তা হচ্ছিলো জানো তুমি? কালকে রাস্তায় বেরোলে কখন কেনোই বা আনমনে হাঁটছিলে এসব তো কিচ্ছুই বললেনা অথচ আবার আজকে না জানিয়ে কোথায় যাচ্ছো?’

-‘ কলিকে যে বিয়ে করেছেন সেটা বুঝি আমাকে জানিয়েই করেছেন?’

এই একটি প্রশ্নে সাগর চুপ হয়ে গেলো। বলার মতন ভাষা রইলো না আর তার কাছে। কোনো জবাব নেই তার প্রিয়তাকে দেবার মতন।

-‘ আমার জন্য আপনার অতো চিন্তা না করলেও চলবে। আপনি কলিকে নিয়ে ভাবুন। আমি আমার মায়ের কাছে যাচ্ছি।’

প্রিয়তা ফোন রেখে দিলো। সাগর প্রিয়তার কথায় ভরসা করতে পারলো না, প্রিয়তার মা’ন’সি’ক পরিস্থিতি ভালো নেই। সে যদি মিথ্যা বলে তাকে? সাগর প্রিয়তার বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দিলো।
————-
সকাল থেকেই মায়ের কথা মনে পড়ছিলো বেশ করে মায়ের সঙ্গে দেখা করতে ইচ্ছে হচ্ছিলো সেই কারনেই বেড়িয়ে পড়েছি মাযের কাছে যাবার জন্য। হঠাৎ রাস্তা আট’কে দাঁড়ালেন রাজীব! এই লোকটি বিয়ের আগে আমাকে কম অশান্তি দেয়নি, এখন কেনো এসেছে এখানে? নতুন করে কোনো অ’শান্তি তৈরী করতে? আসুক না কোনো কিছু করতে এবার এমন থা’প্প’ড় মা’রবো যে কোনোদিনও আর আমার সামনে এসেে দাঁড়াবে না! একে তো আমার বড়ো ভাই বলতেও লজ্জা লাগে। ব’খা’টে ছেলেদের মতন সারাদিন ঘুরে। এর জন্য চাচ্চুকেও এলাকায় বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।

-‘ প্রিয়তা মনি? বাড়িতে যাচ্ছিস বোধহয় তাই না? সেই রাস্তা ধরেই তো এগোচ্ছিস দেখতে পাচ্ছি। তবে বাড়িতে গিয়ে কি বলবি তোর মা’কে? বলবি যে মা আমার স’তী’ন এসেছে আমি তাই জন্য এসে পড়েছি তোমার বাড়ি! তখন তোর মায়ের রিয়্যাকশন টা কি হবে বলতো? চল আমিও যাচ্ছি তোর সঙ্গে হেব্বি মজা লাগবে তখন।’

এই লোকটা এবার নিজের সীমানা পার করে গেছে! নিজ থেকে এসে বি’রক্ত করছে আমাকে! আমি রাজীবের সামনে যেয়ে যেই না হাত ওঠিয়েছি চ’ড় মা’রা’র জন্য ওমনি সে আমার হাত ধরে ফেললো!

-‘ প্রিয়তা বড্ড বেড়েছিস না তুই? সেই আগের স্বভাব দেখছি এখনো যায়নি। ভুল করছিস আগে তোকে পাবার আশায় সবটা সহ্য করতাম তবে এখন করবো না! আমি জানি সবটা তোর মনে এখন কি চলছে কেনো সাগর এরকম করলো, কেনোই বা তোর ননদ রুশাকে খোজ পাচ্ছিস না, কেনোই বা সাগর দিত্বীয় বিয়ে করা সত্বেও তোকে ছাড়ছে না সব জানি আমি!’

এক মুহুর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেলাম! এই লোকটা এতোকিছু জানে কি করে? তার মানে কি এই করেছে সবটা? তাহলে আমাকে এসব বলবে কেনো? নাকি এই রাজীব জানে সবটা!

#চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে