#তুমিই_আমার_পূর্ণতা
#মেহরাফ_মুন (ছদ্মনাম )
#পর্ব ৭
দেখতে দেখতে কেটে গেল বছর দুয়েক। দিন চলে যায় আপন গতিতে শুধু রয়ে যাই কিছু তিক্ত স্মৃতি। যে স্মৃতিগুলো মানুষকে এক বিষাক্ত যন্ত্রনার মধ্যে ফেলে রাখে।
এখন অফিস শেষেই সারা সময় রুমে একা একা বসে থাকে আদ্রাফ। জীবনটা ধীরে ধীরে কেমন যেন তিক্ত হয়ে উঠছে। আগের মত এখন আর কিছুই ভালো লাগে না।
আদ্রাফের বাবা আদ্রাফের রুমে ঢুকে ছেলের এই অবস্থা দেখে সিদ্ধান্ত নিলেন ছেলের বিয়ে দিবেন। দিন দুয়েক পরেই উনি প্রার্থী দেখার জন্য জোর করতে লাগলেন আদ্রাফকে। আদ্রাফ নির্বিকার থাকে । কিছু একটার চিন্তায় থাকে সবসময়। বাবাকে উত্তর দেয়,
-‘ বিয়ের কথা বলো না বাবা। আমার ইচ্ছে নেই।’
-‘এভাবে একা কতদিন থাকবি? বয়স তো হলো।’
-‘এই মুহূর্তে বিয়ে করতে প্রস্তুত নই আমি বাবা।’
-‘ সেই দুইবছর ধরে বলে আসছিস, তুই প্রস্তুত নেই। তোর প্রস্তুতিটা হবে কখন?’
-‘ বাবা এসব শুনতে আমার ভালো লাগছে না।’
-‘ বিয়ে কর। নতুন বউকে নিয়ে দেশ-বিদেশে ঘুরে বেড়াবি। ভালো লাগবে।’
-‘ বাবা প্লিজ, আমি ঘুমাবো।’
ছেলের রুম থেকে হতাশ মুখে বেরিয়ে গেল আদ্রাফের বাবা। আদ্রাফ রুম অন্ধকার করে বসে রইল। সন্ধ্যের পর একটু গিটার নিয়ে বসে। হয়তো গিটারের সুরে-ই কেউ একজনকে খুঁজে চলে। একাকিত্বরা চারিদিক থেকে এসে চেপে ধরে আদ্রাফকে।
জীবনটা তিক্ত হয়ে উঠছে দিনদিন। অফিস- বাড়ি এসবে বিরক্তি এসে গেছে আর ভালো লাগে না। সবকিছু ছেড়ে-ছুড়ে কোথাও যেন চলে যেতে ইচ্ছে করে। কোনো একটা অপরাধবোধ জেগে উঠে। এ অপরাধবোধ কীসের নিজেকে প্রশ্ন করতেই মুনের মুখ ভেসে উঠে চোখের সামনে। একটা নিষ্পাপ এতিম মেয়ে নিজের আপনজায়গা হারা আদ্রাফের জন্য। কত সুন্দর হাসি-খুশি ছিল মেয়েটা। ওর জীবন এক মুহূর্তের মধ্যে উলোট-পালোট করে দিয়েছিলো আদ্রাফ। ভেতরটা দগ্ধ হচ্ছে পুরোনো যন্ত্রনায়। তাঁর উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে।
নিজের ভুলের জন্যই নিজেকেই ধিক্কার জানাতে ইচ্ছে করছে। সময় ঠিক সময়েই তাঁর প্রতিশোধ নিয়ে নেয়। যেমন এখন নিজে নিজেই পুড়তে হচ্ছে।
আজকাল ঘুমের ঘোরে মুনের মুখচ্ছবি ভেসে উঠে। মেয়েটা কোথায় আছে কে জানে। কী নিষ্পাপ পবিত্র মুখ ছিল মেয়েটার। কত চঞ্চল, মিষ্টি ছিল। অথচ মেয়েটার সবকিছু উলোট পালোট করে দিয়েছে এই আদ্রাফ। ভাবতেই নিজেকে কেমন যেন স্বার্থপর মনে হয়। মুনের সাথে একবার দেখা করা দরকার। হয়তো ও এখন আর একা নেই, ওর জীবনে অন্য কেউ এসে গেছে। ‘অন্য কেউ এসে গেছে ‘ এটা ভাবতেই বুকটা মুচড়ে উঠলো আদ্রাফের। যদি এটা সত্যিও হয় তাহলে আদ্রাফ কীভাবে থাকবে ওকে ছাড়া। তবুও এটাই হয়তো আদ্রাফের শাস্তি হবে।
—————————–
মুনের জীবন এখানে ভালোই চলে। একবছর আগেই ও পড়াশোনার পাশাপাশি একটা পার্টটাইম জব নিয়েছিল। ঐটা দিয়েই এখন ও ওর পড়াশোনা চালিয়ে নেয়। অবশ্য আঙ্কেল, আন্টিদের অনেক আপত্তি এটা নিয়ে। উনারা বলেছেন মিমের মত করেই আমার সব দেখবে। এমনিতেও অনেক করেছেন এনারা আমার জন্য। অনেক করে বোঝানোর পর রাজী হয়েছেন। এমনি একসাথেই থাকি।
আজকে ক্লাসে প্ল্যান হয়েছিল কলেজ থেকে একটা ট্যুর দেওয়ার । ট্যুরের প্ল্যান হচ্ছে চট্টগ্রামের মহামায়া লেক। মিরসরাই উপজেলায় অবস্থিত এটা । রাঙামাটি কাপ্তায় লেকের পরে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম লেক এটা।
আঙ্কেল, আন্টিদের বলার পর প্রথমে রাজী হয়নি পরে বলেছেন সম্পূর্ণ যেন কলেজের আওতায় থাকি, এদিক ওদিক বেশি না যাই।
সামনের বিশতারিখ আমাদের ট্যুর। ওহ, হ্যাঁ বলতে ভুলেই গিয়েছি এখন আমরা তিন বেস্টফ্রেন্ড। দিমানের সাথে ঐদিনের পর থেকে ভালোই বন্ধত্ব হয়ে গিয়েছে।
-‘সব রেডি, এখন শুধু যাওয়ার পালা।’মিম বলে উঠলো।
শেষপর্যন্ত তাহলে যাচ্ছি আমরা।
—————————–
থাই গ্লাসের কাঁচ গলে সূর্যের রোদের আলো আদ্রাফের বিছানায় এসে ঘাফটি মেরে বসেছে। লেপের ভেতর থেকে মাথা বের করেই চোখ বন্ধ করেই আড়ামোড়া ভাঙে আদ্রাফ। আস্তে আস্তে চোখ খুলেই জানালার দিকে তাকিয়ে একটা হাই তুলে। কাল রাতে এসেই শুয়ে পড়েছিল। অনেক মাস পর শুভ্র আর বাকি বন্ধুরা একটা পার্টির আয়োজন করেছিল সেই সুবাদে ওখানে যাওয়া। জানালার পর্দাও দিতে মনে ছিল না। যার দরুন ঘরে সূর্যের আলো প্রবেশ করতে পেরেছে। অবশ্য এমন মিষ্টি রোদ আদ্রাফের খারাপ লাগছে না, বরং অলস্যকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। শীতের দিনে নরম বিছানা সঙ্গে এমন মিষ্টি রোদ! কারই বা উঠতে ইচ্ছে করবে এমন আরামের ঘুম ছেড়ে? তবে এখন অলস্যটাকে প্রধান্য দিলে চলবে না। শুভ্রদের সাথে দেখা করতে হবে। তারপর অফিসে অবশ্য অফিসে না গেলেও চলবে কিন্তু শুভ্রদের সাথে দেখা করতেই হবে, ওদের না-কি জরুরী কথা আছে। তাই অলস্যটাকে ত্যাগ করে আদ্রাফ উঠে পড়লো বিছানা ছেড়ে।
ফ্রেশ হয়ে একদম রেডি হয়েই অফিসের উদ্দেশ্য বেরিয়ে গেল আদ্রাফ। হাতঘড়িতে সময় দেখে নেয় অলরেডি দশমিনিট লেট্।
যেতে এখনো আরও বিশমিনিটের মত লাগবে। এর মাঝেই ট্রাফিক জ্যামে আটকে গেল। ট্রাফিক জ্যামে আশপাশটা দেখছিলো আদ্রাফ। হুট করেই ফুটফাটে চোখ পড়ল, মেয়েটা আগে আগে হাটছে আর ছেলেটা মেয়েটার পরেই দৌড়াচ্ছে। বোঝায় যাচ্ছে, মেয়েটা কোনোকিছু নিয়ে রাগ করেছে ওই ছেলেটার সাথে। মেয়েটা বোধহয় অনেক রাগী!এসব দেখতে দেখতেই আনমনে হেসে উঠলো আদ্রাফ।
আদ্রাফ রেস্টুরেন্টে ঢুকেই দেখতে পেলো ওর প্রায় বন্ধুরা হাজির। ওও একটা চেয়ার টেনে বসে পড়লো। শুভ্র ওকে দেখে বলল,
-‘মন খারাপ না কি তোর? ‘
-‘না, আমি ঠিক আছি। বল তোরা। কী এত জরুরী কথা?’
এটা শুনেই শুভ্র আবারও বলে উঠলো,
-‘দোস্ত, অনেকদিন হয় না কোথাও ট্যুর দেওয়া হয়নি। চল একটা ট্যুর দেওয়া যাক, তোর মাইন্ডও ফ্রেশ হবে।’
আদ্রাফ চেয়ারে বেঁকিয়ে বসেছিল। এই কথা শুনে সোজা হয়ে বসলো। ওর নিজেরও ইচ্ছে হলো ওদের সঙ্গ দেওয়ার। অন্তত মাইন্ডটা ফ্রেশ হবে আর মুনের ভুতও মাথা থেকে নামবে কিছু সময়ের জন্য হলেও। আদ্রাফও ওদের সম্মতি দিয়ে বলল,
-‘তা ঠিক বলেছিস। বল, ট্যুর এর প্ল্যান কোন জায়গায়?’
-‘অনেক জায়গায় তো ঘুরলাম। এবার না হয় চট্টগ্রামের কোথাও ট্যুর দিই?’ আহান উৎসুক হয়ে বলে উঠলো।
-‘হ্যাঁ, তা ঠিক বলেছিস, এবার চট্টগ্রামেই হয়ে যাক ট্যুর।’ মিলন বলে উঠলো।
-‘তা, চট্টগ্রামের কোন পিকনিক স্পটে ঘোরার প্ল্যান করেছিস?’ আদ্রাফ সম্মতি জানিয়ে বলে উঠলো।
-‘ চট্টগ্রামের মহামায়া লেকেই যাই এবার?’শুভ্র বলে উঠলো।
সবাই সম্মতি জানালো।
-‘ তাহলে উনিশ তারিখ রাতেই আমরা গাড়ি উঠছি। বিশ তারিখ ওখানে মহামায়া লেকে পারফেক্ট টাইমে পৌঁছে যাব।’ শুভ্র বলল।
সবাই সম্মতি জানিয়ে আড্ডা শুরু করে দিল। মূলত এই ট্যুরটা আদ্রাফের জন্যই করেছিল শুভ্র,যাতে করে আদ্রাফের মন মানসিকতা একটু ফ্রেশ হয়।
——————————-
উনিশ তারিখ যতাসময়ে আদ্রাফ, শুভ্র আর বাকিরা সবাই স্টেশনে পৌছালো। সকালেই পৌঁছে গেল ওরা সবাই চট্টগ্রামে। তারা সবাই গাড়ি থেকে নেমেই একটা রেস্টুরেন্ট থেকে নাস্তা সেড়ে হোটেলে গেল একটু ফ্রেশ হওয়ার জন্য। মূলত হোটেল অনলাইনে আগে থেকে বুক করে রেখেছিল শুভ্র। সবাই এক এক করে হোটেলে স্ব স্ব রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিল। তারপরই এক এক করে সঠিক টাইমে বের হয়ে এলো মহামায়া লেকের উদ্দেশ্যে।
——————————–
অন্যদিকে মুন আর মিম দুইজনেই অনেক এক্সাইটেড কারণ অবশেষে অনেকদিন পর তাঁদের স্বাদের দিনটা আসলো। মিম তো সেই খুশি। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় আঙ্কেল আর আন্টি বারবার করে বলে দিয়েছে যাতে করে আমরা যেন আজেবাজে কোনো জিনিস না খায় আর ওই এরিয়া থেকে যেন বের না হয় কলেজের আওতায় থাকি সবসময়। আর আমরাও হ্যাঁ বোধক মাথা নেড়ে সব বুঝে নিলাম। আর বেরিয়ে গেলাম। কারণ কলেজে বলে দিয়েছিল যাতে দেরি না করি।
অবশেষে মহামায়া লেকের উদ্দেশ্যে কলেজ গাড়ি ছেড়ে দিল। আহা কী এক অনুভূতি!
আর অন্যদিকে আদ্রাফরাও প্রায় কাছাকাছি চলে এলো মহামায়া লেকের।
#চলবে ইনশাআল্লাহ।
(আসসালামু আলাইকুম। আমি ভীষণ অসুস্থ তাই ঠিকমতো গল্প দিতে পারছি না এজন্য গল্পের পর্বটা হয়তো কিছুটা অগোছালো হয়েছে মাফ করবেন। )
দেখতে দেখতে কেটে গেল বছর দুয়েক। দিন চলে যায় আপন গতিতে শুধু রয়ে যাই কিছু তিক্ত স্মৃতি। যে স্মৃতিগুলো মানুষকে এক বিষাক্ত যন্ত্রনার মধ্যে ফেলে রাখে।
এখন অফিস শেষেই সারা সময় রুমে একা একা বসে থাকে আদ্রাফ। জীবনটা ধীরে ধীরে কেমন যেন তিক্ত হয়ে উঠছে। আগের মত এখন আর কিছুই ভালো লাগে না।
আদ্রাফের বাবা আদ্রাফের রুমে ঢুকে ছেলের এই অবস্থা দেখে সিদ্ধান্ত নিলেন ছেলের বিয়ে দিবেন। দিন দুয়েক পরেই উনি প্রার্থী দেখার জন্য জোর করতে লাগলেন আদ্রাফকে। আদ্রাফ নির্বিকার থাকে । কিছু একটার চিন্তায় থাকে সবসময়। বাবাকে উত্তর দেয়,
-‘ বিয়ের কথা বলো না বাবা। আমার ইচ্ছে নেই।’
-‘এভাবে একা কতদিন থাকবি? বয়স তো হলো।’
-‘এই মুহূর্তে বিয়ে করতে প্রস্তুত নই আমি বাবা।’
-‘ সেই দুইবছর ধরে বলে আসছিস, তুই প্রস্তুত নেই। তোর প্রস্তুতিটা হবে কখন?’
-‘ বাবা এসব শুনতে আমার ভালো লাগছে না।’
-‘ বিয়ে কর। নতুন বউকে নিয়ে দেশ-বিদেশে ঘুরে বেড়াবি। ভালো লাগবে।’
-‘ বাবা প্লিজ, আমি ঘুমাবো।’
ছেলের রুম থেকে হতাশ মুখে বেরিয়ে গেল আদ্রাফের বাবা। আদ্রাফ রুম অন্ধকার করে বসে রইল। সন্ধ্যের পর একটু গিটার নিয়ে বসে। হয়তো গিটারের সুরে-ই কেউ একজনকে খুঁজে চলে। একাকিত্বরা চারিদিক থেকে এসে চেপে ধরে আদ্রাফকে।
জীবনটা তিক্ত হয়ে উঠছে দিনদিন। অফিস- বাড়ি এসবে বিরক্তি এসে গেছে আর ভালো লাগে না। সবকিছু ছেড়ে-ছুড়ে কোথাও যেন চলে যেতে ইচ্ছে করে। কোনো একটা অপরাধবোধ জেগে উঠে। এ অপরাধবোধ কীসের নিজেকে প্রশ্ন করতেই মুনের মুখ ভেসে উঠে চোখের সামনে। একটা নিষ্পাপ এতিম মেয়ে নিজের আপনজায়গা হারা আদ্রাফের জন্য। কত সুন্দর হাসি-খুশি ছিল মেয়েটা। ওর জীবন এক মুহূর্তের মধ্যে উলোট-পালোট করে দিয়েছিলো আদ্রাফ। ভেতরটা দগ্ধ হচ্ছে পুরোনো যন্ত্রনায়। তাঁর উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে।
নিজের ভুলের জন্যই নিজেকেই ধিক্কার জানাতে ইচ্ছে করছে। সময় ঠিক সময়েই তাঁর প্রতিশোধ নিয়ে নেয়। যেমন এখন নিজে নিজেই পুড়তে হচ্ছে।
আজকাল ঘুমের ঘোরে মুনের মুখচ্ছবি ভেসে উঠে। মেয়েটা কোথায় আছে কে জানে। কী নিষ্পাপ পবিত্র মুখ ছিল মেয়েটার। কত চঞ্চল, মিষ্টি ছিল। অথচ মেয়েটার সবকিছু উলোট পালোট করে দিয়েছে এই আদ্রাফ। ভাবতেই নিজেকে কেমন যেন স্বার্থপর মনে হয়। মুনের সাথে একবার দেখা করা দরকার। হয়তো ও এখন আর একা নেই, ওর জীবনে অন্য কেউ এসে গেছে। ‘অন্য কেউ এসে গেছে ‘ এটা ভাবতেই বুকটা মুচড়ে উঠলো আদ্রাফের। যদি এটা সত্যিও হয় তাহলে আদ্রাফ কীভাবে থাকবে ওকে ছাড়া। তবুও এটাই হয়তো আদ্রাফের শাস্তি হবে।
—————————–
মুনের জীবন এখানে ভালোই চলে। একবছর আগেই ও পড়াশোনার পাশাপাশি একটা পার্টটাইম জব নিয়েছিল। ঐটা দিয়েই এখন ও ওর পড়াশোনা চালিয়ে নেয়। অবশ্য আঙ্কেল, আন্টিদের অনেক আপত্তি এটা নিয়ে। উনারা বলেছেন মিমের মত করেই আমার সব দেখবে। এমনিতেও অনেক করেছেন এনারা আমার জন্য। অনেক করে বোঝানোর পর রাজী হয়েছেন। এমনি একসাথেই থাকি।
আজকে ক্লাসে প্ল্যান হয়েছিল কলেজ থেকে একটা ট্যুর দেওয়ার । ট্যুরের প্ল্যান হচ্ছে চট্টগ্রামের মহামায়া লেক। মিরসরাই উপজেলায় অবস্থিত এটা । রাঙামাটি কাপ্তায় লেকের পরে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম লেক এটা।
আঙ্কেল, আন্টিদের বলার পর প্রথমে রাজী হয়নি পরে বলেছেন সম্পূর্ণ যেন কলেজের আওতায় থাকি, এদিক ওদিক বেশি না যাই।
সামনের বিশতারিখ আমাদের ট্যুর। ওহ, হ্যাঁ বলতে ভুলেই গিয়েছি এখন আমরা তিন বেস্টফ্রেন্ড। দিমানের সাথে ঐদিনের পর থেকে ভালোই বন্ধত্ব হয়ে গিয়েছে।
-‘সব রেডি, এখন শুধু যাওয়ার পালা।’মিম বলে উঠলো।
শেষপর্যন্ত তাহলে যাচ্ছি আমরা।
—————————–
থাই গ্লাসের কাঁচ গলে সূর্যের রোদের আলো আদ্রাফের বিছানায় এসে ঘাফটি মেরে বসেছে। লেপের ভেতর থেকে মাথা বের করেই চোখ বন্ধ করেই আড়ামোড়া ভাঙে আদ্রাফ। আস্তে আস্তে চোখ খুলেই জানালার দিকে তাকিয়ে একটা হাই তুলে। কাল রাতে এসেই শুয়ে পড়েছিল। অনেক মাস পর শুভ্র আর বাকি বন্ধুরা একটা পার্টির আয়োজন করেছিল সেই সুবাদে ওখানে যাওয়া। জানালার পর্দাও দিতে মনে ছিল না। যার দরুন ঘরে সূর্যের আলো প্রবেশ করতে পেরেছে। অবশ্য এমন মিষ্টি রোদ আদ্রাফের খারাপ লাগছে না, বরং অলস্যকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। শীতের দিনে নরম বিছানা সঙ্গে এমন মিষ্টি রোদ! কারই বা উঠতে ইচ্ছে করবে এমন আরামের ঘুম ছেড়ে? তবে এখন অলস্যটাকে প্রধান্য দিলে চলবে না। শুভ্রদের সাথে দেখা করতে হবে। তারপর অফিসে অবশ্য অফিসে না গেলেও চলবে কিন্তু শুভ্রদের সাথে দেখা করতেই হবে, ওদের না-কি জরুরী কথা আছে। তাই অলস্যটাকে ত্যাগ করে আদ্রাফ উঠে পড়লো বিছানা ছেড়ে।
ফ্রেশ হয়ে একদম রেডি হয়েই অফিসের উদ্দেশ্য বেরিয়ে গেল আদ্রাফ। হাতঘড়িতে সময় দেখে নেয় অলরেডি দশমিনিট লেট্।
যেতে এখনো আরও বিশমিনিটের মত লাগবে। এর মাঝেই ট্রাফিক জ্যামে আটকে গেল। ট্রাফিক জ্যামে আশপাশটা দেখছিলো আদ্রাফ। হুট করেই ফুটফাটে চোখ পড়ল, মেয়েটা আগে আগে হাটছে আর ছেলেটা মেয়েটার পরেই দৌড়াচ্ছে। বোঝায় যাচ্ছে, মেয়েটা কোনোকিছু নিয়ে রাগ করেছে ওই ছেলেটার সাথে। মেয়েটা বোধহয় অনেক রাগী!এসব দেখতে দেখতেই আনমনে হেসে উঠলো আদ্রাফ।
আদ্রাফ রেস্টুরেন্টে ঢুকেই দেখতে পেলো ওর প্রায় বন্ধুরা হাজির। ওও একটা চেয়ার টেনে বসে পড়লো। শুভ্র ওকে দেখে বলল,
-‘মন খারাপ না কি তোর? ‘
-‘না, আমি ঠিক আছি। বল তোরা। কী এত জরুরী কথা?’
এটা শুনেই শুভ্র আবারও বলে উঠলো,
-‘দোস্ত, অনেকদিন হয় না কোথাও ট্যুর দেওয়া হয়নি। চল একটা ট্যুর দেওয়া যাক, তোর মাইন্ডও ফ্রেশ হবে।’
আদ্রাফ চেয়ারে বেঁকিয়ে বসেছিল। এই কথা শুনে সোজা হয়ে বসলো। ওর নিজেরও ইচ্ছে হলো ওদের সঙ্গ দেওয়ার। অন্তত মাইন্ডটা ফ্রেশ হবে আর মুনের ভুতও মাথা থেকে নামবে কিছু সময়ের জন্য হলেও। আদ্রাফও ওদের সম্মতি দিয়ে বলল,
-‘তা ঠিক বলেছিস। বল, ট্যুর এর প্ল্যান কোন জায়গায়?’
-‘অনেক জায়গায় তো ঘুরলাম। এবার না হয় চট্টগ্রামের কোথাও ট্যুর দিই?’ আহান উৎসুক হয়ে বলে উঠলো।
-‘হ্যাঁ, তা ঠিক বলেছিস, এবার চট্টগ্রামেই হয়ে যাক ট্যুর।’ মিলন বলে উঠলো।
-‘তা, চট্টগ্রামের কোন পিকনিক স্পটে ঘোরার প্ল্যান করেছিস?’ আদ্রাফ সম্মতি জানিয়ে বলে উঠলো।
-‘ চট্টগ্রামের মহামায়া লেকেই যাই এবার?’শুভ্র বলে উঠলো।
সবাই সম্মতি জানালো।
-‘ তাহলে উনিশ তারিখ রাতেই আমরা গাড়ি উঠছি। বিশ তারিখ ওখানে মহামায়া লেকে পারফেক্ট টাইমে পৌঁছে যাব।’ শুভ্র বলল।
সবাই সম্মতি জানিয়ে আড্ডা শুরু করে দিল। মূলত এই ট্যুরটা আদ্রাফের জন্যই করেছিল শুভ্র,যাতে করে আদ্রাফের মন মানসিকতা একটু ফ্রেশ হয়।
——————————-
উনিশ তারিখ যতাসময়ে আদ্রাফ, শুভ্র আর বাকিরা সবাই স্টেশনে পৌছালো। সকালেই পৌঁছে গেল ওরা সবাই চট্টগ্রামে। তারা সবাই গাড়ি থেকে নেমেই একটা রেস্টুরেন্ট থেকে নাস্তা সেড়ে হোটেলে গেল একটু ফ্রেশ হওয়ার জন্য। মূলত হোটেল অনলাইনে আগে থেকে বুক করে রেখেছিল শুভ্র। সবাই এক এক করে হোটেলে স্ব স্ব রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিল। তারপরই এক এক করে সঠিক টাইমে বের হয়ে এলো মহামায়া লেকের উদ্দেশ্যে।
——————————–
অন্যদিকে মুন আর মিম দুইজনেই অনেক এক্সাইটেড কারণ অবশেষে অনেকদিন পর তাঁদের স্বাদের দিনটা আসলো। মিম তো সেই খুশি। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় আঙ্কেল আর আন্টি বারবার করে বলে দিয়েছে যাতে করে আমরা যেন আজেবাজে কোনো জিনিস না খায় আর ওই এরিয়া থেকে যেন বের না হয় কলেজের আওতায় থাকি সবসময়। আর আমরাও হ্যাঁ বোধক মাথা নেড়ে সব বুঝে নিলাম। আর বেরিয়ে গেলাম। কারণ কলেজে বলে দিয়েছিল যাতে দেরি না করি।
অবশেষে মহামায়া লেকের উদ্দেশ্যে কলেজ গাড়ি ছেড়ে দিল। আহা কী এক অনুভূতি!
আর অন্যদিকে আদ্রাফরাও প্রায় কাছাকাছি চলে এলো মহামায়া লেকের।
#চলবে ইনশাআল্লাহ।