#তুই_হবি_শুধু_আমার (২)💙
#সাইরাহ্_সীরাত
#পর্ব_১৪
গভীর রাত! ঝিঁঝিঁপোকার আওয়াজ ছাড়া আর কোনো শব্দ কানে আসছে না। রোজ ফোন গেমস খেলছে। ওর সামনে পড়ে আছে দুটো ছেলে। দুজনেই অজ্ঞান। রাত পার না করে জাগবে না তারা। পুরো দুটো দিন এখানে থেকে রোজ বুঝতে পেরেছে ফালাক কেন এতবছর চুপ ছিলো। ইরফান মাহতাব মঞ্জিল আর সুলেমান সাহেবদের ওপর কঠোর নজরদারি চালাচ্ছিলেন। রেণু এবং আনসারী সাহেবকেও আলাদা জায়গায় লুকিয়ে রাখা হয়েছিল। ফালাক শুধু চাচ্ছিলো তারা একত্রিত হোক। তারপর সে তাদের মুক্ত করবে। আনসারী সাহেব অথবা রেণু বিচ্ছিন্ন থাকলে একজনকে মুক্ত করতে গেলে আরেকজনকে মে’রে ফেলতো ইরফান। নিজের চাচা এতজঘন্য তা কল্পনা করতে গিয়েও শ্বাস রুদ্ধ হয়ে আসে ফালাকের। পাশাপাশি সুলেমান সাহেবদের এবং ওর পরিবারও ইরফানের ক্রোধের সম্মুখিন হতো। হয়তো সুযোগটা ফালাকের হাতে এবার এসেছে। এজন্যই সে আনসারী সাহেবদের মুক্ত করেছে দ্বিধাহীন হয়ে। ফালাককে এতগুলো বছর ভুল বুঝে ঠিক করেনি রোজ এটা বুঝতে পেরে অনুতপ্ত সে। শুভ্রমানব কখনও ভুল ছিলই না। সে সর্বদা তাঁর চাঁদের কথা ভেবেছে। চাঁদের খেয়াল রাখার চেষ্টা করেছে। এমন একটা মানুষকে রোজ দূরে ঠেলে দিচ্ছে? এটা ঠিক নয়। ফিরে গিয়ে রোজ এর জন্য নিশ্চই ক্ষমা চাইবে।
সকালে ইরফানরা ঘরে প্রবেশ করতেই ওদের পায়ে শ্যুট করে রোজ। ইরফানের হাতে থাকা গানগুলোও কেড়ে নেয়। সোহানা রক্তচক্ষু নিক্ষেপ করতেই পেছন থেকে ইরফানের লোক ছুটে আসে। কিন্তু ঘর অবধি তারা আসতে পারে না। রাতেই রোজ ফালাককে ফোনে নিজের অবস্থান জানিয়েছিলো।তাই ফালাক সকাল হতে না হতেই চলে এসেছে। বাইরে অপেক্ষা করছিল ফালাক ইরফানদের জন্য। আগেই ভেতরে ঢোকাটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না বলে ইরফানদের আসার পর এসেছে ওরা। রোজ কোনো কথা বলল না, কোনো কৈফিয়ত দিলো না। সোহানার বুক বরাবর গু’লি করার জন্য বন্দুক তুলতেই দেখলো ফালাকের সঙ্গে ভীরও এসেছে। বন্দুক নামিয়ে ফেলে রোজ। ছেলের সামনে মা’কে হত্যা করার মত জঘণ্য কাজটা করতে চায়না সে। ভীর সব জানে এখন, ও নিজেই ঠিক করুক ও কি চায়। যদি মায়ের মুক্তি চায় রোজ তা মঞ্জুর করবে। রোজ পিছিয়ে গেল। মুগ্ধতাও আসছে। মেয়েটাকে দেখে রোজের আজ রাগ হলো না। করুনা জাগছে মনে। এই মেয়েটা নিজের বাবাকে কত ভালোবাসে অথচ ওর বাবা? রোজ অভিও কনভারশেসন ফালাককে রাতেই পাঠিয়েছিল। ফালাক নিশ্চই শুনিয়েছে সব। রোজের মাথা ঘুরে উঠলো। দূর্বলতার কারনে, র’ক্তক্ষরণে হয়তো শরীরের শক্তি অনেকাংশই কমে গেছে। রোজ টলে উঠতেই ফালাক এসে রোজকে ধরে ফেললো।
-“ঠিক আছিস চাঁদ? ”
-“হুম। ওদের কেন আনলেন? কষ্ট পাবে তো। ”
-“আজ থেকে সবার কথা ভাবা বন্ধ তোর। শুধু নিজের কথা ভাববি। নিজের যত্ন নিবি। শরীরের কি হাল হয়েছে টের পাচ্ছিস? দাড়াতেও পারছিস না ঠিক করে। ”
-“যে নারীর জন্য কোনো পুরুষ এভাবে কাঁদে, এতটা ভালোবাসে সে নিঃসন্দেহে সৌভাগ্যবতী। আমাকে এমন সৌভাগ্য দেওয়ার পরিবর্তে আমি আপনাকে ভালো,, ”
গু’লির আওয়াজ শোনা গেল। ফালাক রোজ দুজনেই কেঁপে উঠলো। আরেকটা গু’লির শব্দ শোনা যেতেই ওরা পেছনে ফিরে তাকায়। মেহমেদ ইরফানের কপাল বরাবর গু’লি করেছে। আর ইরফানের হাতের ব’ন্দুকের গু’লি মুগ্ধতার বুকে। রোজ অবাক হয়ে তাকায়। রোজকে বাঁচানোর জন্য মুগ্ধতা নিজে ওদের সামনে আসলো? রোজ দূর্বল কন্ঠে বলে,
-“আমি ঠিক আছি শুভ্রমানব। মুগ্ধতাকে দেখুন। আমার জন্য যেন কারোর প্রাণ না যায় শুভ্রমানব। ”
বলতে বলতেই ফালাকের বুকে ঢলে পড়লো রোজ। বহু কষ্টে রাত জেগেছিলো। কিন্তু স্বস্তি আর শান্তিতে চোখ আর মেলে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। মেহমেদ মুগ্ধতাকে নিয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওনা দিতেই ফালাক ভীর ও সিয়ামের দিকে তাকালো। সিয়ামকে উদ্দেশ্য করে বলল,
-“চাচার লা’শটা দাফন করার ব্যবস্থা কর। বাকিদের পুলিশের হাতে তুলে দে। সাফোয়ান আঙ্কেল কেসটা হ্যান্ডেল করবে। ”
এরপর ভীরের দিকে তাকিয়ে বললো,
-“সব তো জানো। দেখ তোমার মা’কে কি করতে চাও। তুমি মায়ের মুক্তি চাইলে চাঁদ সেটাতেই মত দেবে। কিন্তু চাঁদের ওপর অন্যায় করা হবে। চাঁদকে, আঙ্কেল আন্টিদের এত কষ্ট দেওয়ার পরিবর্তের তাঁর কিছুটা শাস্তি পাওয়া দরকার ছিল। নাহলে নিজেকে শুধরাবেন না উনি।ওনার ভেতরের কুৎসিত ভ্রান্ত মনোভাব বদলাবে না। তোমার বউয়ের প্রতি যে অ’ত্যা’চার করেছে তাও ঠিক ছিল না। ”
-“আম্মা’কে ভালোবাসি আমি। কিন্তু তাঁর চরিত্রের সংশোধন প্রয়োজন। বাবা অনেক কষ্ট পেয়েছেন। তিনি হয়তো একসময় লোভ করেছিলেন কিন্তু পরবর্তীতে তিনিও আম্মাকে ভালোবেসে ফেলেছেন। আমাদের বিশ্বাস ভে’ঙে আম্মা এমন করবেন তা আমরা কল্পনাও করিনি। ছেলে হিসেবে তাঁর মুক্তি কামনা করলেও আমি বলবো, তোমাদের যেটা মন চায় সেটা করো। তবে তাকে কষ্ট কম দিও! প্লিজ।”
-“ওনাকে সংশোধনাগারে পাঠাতে বলবো। জেলে গেলে মস্তিষ্ক আরও বিকৃত হবে। আঙ্কেল চান উনি শুধু নিজেকে সংশোধন করুক। কারোর ওনার প্রতি কোনো অভিযোগ নেই আর। ওনাকে তুলে ধরো। সিয়াম নিয়ে যাবেন ওনাকে। ”
ভীর সোহানাকে ধরতে আসলে সোহানা ফোস করে উঠলেন,
-“ছোঁবে না। মায়ের বদলে যে ছেলে অন্যদের বিশ্বাস করে, অন্যের কথা শোনে তাঁর স্পর্শ চাই না আমি। ”
ভীর তাচ্ছিল্য হেসে বলে,
-“তুমি নিজেকে পরিবর্তন করো আম্মা। নাহলে বুঝবে না কারা তোমার বন্ধু আর কারা শত্রু। তুমি নিজের জেদ আর রাগটাকে বড় করে দেখছো। অপমানটাকে বেশি মূল্য দিয়েছ। যে লোকটা তোমাকে ভালোবাসেনি তাঁর সঙ্গে কি তুমি আদৌ ভালো থাকতে?তাকে যতটা ভালোবেসেছিলে, আমাদের যদি তাঁর একাংশও ভালোবাসতে তাহলে এমন করতে পারতে না। আমি বলছি না সাফোয়ান আঙ্কেলকে ভালোবেসে ভুল করেছ, তাকে ভালোবাসা ভুল নয়। আমি মানছি এটা। কিন্তু তোমার একগুয়ে স্বভাব ভুল ছিল। তাই তোমার সংশোধনের প্রয়োজন। সিয়াম নিয়ে যাও ওনাকে। ”
🍁🍁🍁
ঘুম ভাঙতেই রোজ নিজেকে ফালাকের ঘরে ফালাকের বিছানার ওপর দেখতে পেল। সামনেই আনসারী সাহেব ও রেণু বসে আছেন। ফালাক ব্যালকোনিতে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে। রোজ চারবছর পাঁচমাস পর আজ সশব্দে কেঁদে উঠলো। আনসারী সাহেব মৃদু হেসে বলে উঠলেন,
-“উহু! কাঁদে না। কাঁদলে কিন্তু বাবাই জড়িয়ে ধরতে দেবে না।”
রোজ অভিমানি দৃষ্টিপাত নিক্ষেপ করতেই দেখলো সারিম দরজার কোনায় দাঁড়িয়ে নাক টেনে কাঁদছে। রেণুও তাকালো দরজার কোনায়। সারিমকে দেখে রেণু রোজকে রেখে দ্রুত সারিমের কাছে গিয়ে সারিমকে জড়িয়ে ধরলেন। কিন্তু রোজ জানে এই কান্না মামনি থামাতে পারবে না। বাবাইও পারবে না। তাই সে হেসে বলল,
-“আপিয়ার কাছে নক্ষত্র কেন আসলো না? আপিয়া কিন্তু কষ্ট পাচ্ছে। ”
কথাটা শোনা মাত্র রেণুকে ছেড়ে সারিম দৌড়ে রোজের কোলের ওপর এসে পড়লো। রোজ সারিমের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
-“কি হয়েছে? কাঁদছো কেন? বাবাই মামনি তো ফিরে এসেছে। তারা আর তোমাকে একা রেখে কোথাও ঘুরতে যাবে না। তোমাকে সঙ্গে নিয়ে, মেঘের দেশ, পাহাড় সবজায়গায় ঘুরবে। ”
-“আপিয়া আমি কি এ্যাডোপ্টেড? আমি তোমাদের আপন নই? আমি কি খু’নির ছেলে? ”
রোজ চমকালো। আনসারী সাহেবরাও চমকালেন। এই কথা সারিমকে কে বলেছে? এজন্যই কি সারিম এখন আগের তুলনায় বেশি চুপচাপ?রোজ সারিমকে বুকে টেনে বলে,
-“কে বলেছে এসব মিথ্যে কথা? ”
-“ভীর ভাইয়ার আম্মু।উনি এসেছিলেন সেদিন তোমাকে খুজতে। বাড়িতে কেউ ছিল না। চাচ্চু অসুস্থ হয়ে গেলে বড়াম্মু তাকে নিয়ে হসপিটালে গিয়েছিল। তখন এসে উনি বললেন আমি নাকি তোমার ভাই না। বাবাই মামনি নাকি আমার বাবাই মামনি না। আমাকে নাকি রাস্তা থেকে তুলে এনেছ। আমি এ্যাডোপ্টেড মানে অন্যদের বাচ্চা। ”
রোজ সারিমের চোখের পানি মুছে বলল,
-“কোথাকার কে এসে তোমাকে মিথ্যে কথা বলে চলে গেল আর তুমি তা বিশ্বাস করে কাঁদছো? তোমার কি মনে হয় আমি তোমার আপিয়া না? বাবাই মামনি কি তোমার থেকে আমাকে বেশি ভালোবাসে? দেখো আমি কাঁদছি তাও মামনি আমাকে কিছু বলল না। তোমার কাছে চলে গেল। বাবাই তোমার পায়ের ব্যাথা জায়গায় হাত বুলিয়ে দিল। আমাকে কি দিয়েছে? আমাকে কি বলল? কাঁদলে নাকি সে আমাকে তাকে জড়িয়ে ধরতে দেবে না। তুমি আমার ভাই না হলে এমন বলত? ভেবে বলো। ”
সারিম ভাবুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে, “না তো। তাহলে আমি তোমার আপন ভাই বলো আপিয়া? বাবাই মামনি আমার বলো? শুধু আমার।”
-“হুম। সব তোমার, আমাকে টুকিয়ে এনেছে তাইনা? বাবাই মামনি আমারও বুঝলে? ”
-“না শুধু আমার। তোমাকে আমি আদরের ভাগ দেবো না। ” কাঁদার মধ্যে হেসে বলল।
-“আমি জোর করে নেবো। ”
-“তবুও দেবো না। ”
-“আমি তো নেবোই। দেখি কে আটকায়। মামনি বলো তুমি আমাকে আঁদর করবে না? ”
রেণু সারিমের দিকে তাকিয়ে বলল, “নক্ষত্র’কে জিজ্ঞেস কর। সে বললে করবো না হলে না। ”
রোজ দুঃখি মুখ করে বলে, “নক্ষত্র তো তোমাদের পেয়ে আমাকে ভুলেই গেছে। আমাকে আর ভালেবাসে না। ”
-“বাসি তো। ” আবারও কেঁদে ফেলল সারিম।
-“কোথায় বাসো? তখন থেকে আমার ভা’ঙা হাতের ওপর বসে আছো। তোমার মনেই নেই আপিয়া ব্যাথা পাচ্ছে।”
-“ব্যাথা পাচ্ছো তুমি? ”
-“হুম তো। ”
-“আমি ব্যথা দেবো না। আমি আমার বাবাইয়ের কোলে যাবো। ”
সারিম উঠে আনসারী সাহেবের কোলে বসল। রোজ মিটিমিটি হেসে বলে,
-“কখনও কারোর আজেবাজে কথা শুনে কাঁদবে না। তুমি আপিয়াকে বিশ্বাস করো না? “সারিম মাথা দুলায়।
-“বিশ্বাস করলে আমার কাছে এসে প্রশ্ন করবে। যত প্রশ্ন করবে তত জানতে পারবে। বুঝেছ? ”
-“হ্যাঁ। এবার আমি নিচে খেলতে যাই? ”
-“যাও। ”
সারিম চলে গেল। আনসারী সাহেব রোজের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
-“আমি জানতাম, আমরা না থাকলেও সারিম তোমার কাছে ভালো থাকবে। ”
-“সব ঠিক আছে। কিন্তু কোটি টাকার সম্পত্তি আমার নামে কেন করেছ? ”
-“কারন তুমি স্পেশাল মামনি। ”
-“সেটা তো ঠিক। কার মেয়ে দেখতে হবে না? “ভাব নিয়ে বলে।
-“তা তো বটেই। তোমাকে সবার সামনে কেন আনিনি? এই প্রশ্নের উত্তর নিশ্চই খুজে পেয়েছো।”
-“টাকা আমার নামে ছিল সেজন্য? ”
-“হুম। ইরফান প্রচন্ড স্বার্থপর। যদি তখন টাকাগুলো ভাগ ভাগ করে দিতাম তাহলে সবার প্রাণের ঝুঁকি থেকে যেত। তোমার বুদ্ধিমত্তা ও মানসিক শক্তি সম্পর্কে আমি অবগত ছিলাম। তাই টাকাগুলো তোমার নামে লিখে গিয়েছিলাম।”
-“কিন্তু দাদা এমন অন্যায় কাজ কেন করলেন? সবটা তোমার নামে দিয়ে, ”
-“আসলে বাবা পরীক্ষা করছিলেন তাঁর ছেলেমেয়েদের মন। আমাকে বলেই রেখেছিলেন সব ঠিক থাকলে আমি যেন সম্পত্তি আর টাকা ভাগবাটোয়ারা করে দেই।”
-“ওহ। দাদাও দেখছি তোমার মত ছিলেন। পরীক্ষাপ্রেমি মানুষ। যাই হোক, তোমাদের শরীরের কি অবস্থা সেটাই তো বললে না। ”
-“ফালাক দুদিন হাসপাতালে বন্ধ করে রেখেছিলো। তাই একদম সুস্থ আমরা। আমাদের চিন্তা করো না। তোমার ফালাক ভাইয়া তোমারও কম যত্ন করেনি। ভাইয়ার এই স্নেহপূর্ণ ভালোবাসা কখনও ভুলবে না। সবসময় সম্মান করবি। বুঝেছ? তোমাদের শত্রুতা ঝগড়াঝাঁটি সব বন্ধ।”
-“ভাইয়া? ”
-“হুম। ভাইয়াই তো, কেন? বিয়াই ভেবে ইয়ার্কি করা বন্ধ একদম। উনি তোমার ফুপাতো ভাই তাই সর্বদা সম্মান করবে। বড়ভাইয়ের নজরে দেখবে। ”
-“শুধু আমাকে বলছো কেন? তাকেও বলো সে যেন আমাকে বোনের নজরে দেখে। সে তো আমাকে অন্যকিছু ভাবে। ”
-“কি ভাবে? ”
-“জিজ্ঞেস করো তাকে। ”
আনসারী সাহেব ফালাককে ডাক দিতেই ফালাক এসে হাজির। সব কথাই শুনেছে সে। মামার সামনে এভাবে লজ্জায় ফেলার কোনো মানে হয়? ফালাক বিনম্র কন্ঠে বলল,
-“জি মামামনি। ”
-“তুমি নাকি রোজকে বোন ভাবো না। শুনেছি শত্রুতা করে বেরিয়েছ। এখন যখন সব মিটে গেছে তখন ওসব শত্রুতা বন্ধ। তোমার বোন তোমাকে যথাযথ সম্মান না দিলে আমাকে বলবে। ”
-“জি। ”
-“এই তো সব মিটে গেল। ”
-“সব মিটে গেল? কখন? কিভাবে? ” অবাক হয়ে বলল রোজ।
-“এই যে এইমাত্র। ”
-“তো ভাইয়াআআআআ! সব মিটে গেছে? আপনি আমাকে বোন ভাবতে প্রস্তুত? ”
ফালাক কেঁশে ওঠে। রোজ ঠোঁট টিপে হাসে। রেণু চোখ রাঙালো আনসারী সাহেবকে। তিনি অয়ন্তির মুখে সব শুনেছেন। কিন্তু তাঁর বর এখনও কিছু বুঝতে পারেনি বলে হতাশ হলেন। ফালাক দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। আনসারী সাহেব বললেন,
-“ওর আবার কি হলো? ”
রেণু দাঁতে দাঁত চেপে বলে, “তোমার বুঝতে হবেনা। মেয়ের বিয়ের ব্যবস্থা করো। ”
-“কার সাথে?মা তোমার কি কোনো পছন্দ আছে?ছেলে কি করে? বাবা-মা কে? কোথায় থাকে?”
-“মাথামোটা। ” রেণুর চাপা কন্ঠস্বর।
রোজ হেসে বলে,”তোমার বন্ধুর ছেলে পাত্র হলে আমার আপত্তি নেই বাবাই।”
আনসারী সাহেব এতক্ষণে বুঝলেন। চোখ পাঁকিয়ে তাকালেন। ঈষৎ রাগ দেখিয়ে বললেন,
-“ওদের গুষ্টির ছেলেরা কি দিন-দুনিয়ায় মেয়ে খুজে পায়না? বেঁছে বেঁছে আমার মেয়ে আর বোনদের পেছনে লাগে। আমি আগে টের পেলে খাল কেটে এমন কুমির আনতাম না। ”
-“আমার দোষ নেই। তোমার বন্ধুর ছেলেই আটবছর ধরে লাইন মা’রছে। আমি নিরীহ, অবলা মেয়ে শুধু তাঁর ধৈর্য, কষ্টকে সম্মান জানাচ্ছি। তবে হার আমি মানবো না। ওনাকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরাবো। ট্রাকের নাম্বার ভুল বলার কারনে।”
-“এই না হলে আমার মেয়ে? একদম ছাড় দিবি না। ”
রেণু চিমটি দিয়ে বলে, “কি শেখাচ্ছ মেয়েকে? চলো। এখান থেকে।”
-“কি শেখাচ্ছি মানে? আমাদের বংশের তিন তিনটে মেয়ে হাতিয়ে নিলো ওরা বাপ-ছেলে মিলে। এর মানে বোঝো? আমাদের ওপর দাসত্ব ফলানোর চেষ্টা। ফারিয়াকে কম জ্বালিয়েছে ফারদিন? অয়ন্তিকে কম জ্বালিয়েছে আরশান? আমার মেয়েকে যদি বিরক্ত করে আমি চুপ থাকবো? ”
-“এটা ওদের দুজনের ব্যাপার। তুমি বাপ হয়ে নাক গলাচ্ছ কেন? অদ্ভুত মানুষ! ”
রোজ শুয়ে পড়লো। বাবাই মামনির খুব জোর ঝগড়া লাগবে এবার। এরা জীবনের এতগুলো বছর পরও বাচ্চাদের মত ঝগড়া করে। মনে হয় সেই কুড়ি-পঁচিশে আটকে আছে তাদের বয়স। রেণুকে আবেগী এক কিশোরী মনে হয়, আনসারী সাহেবকে মনে হয় সদ্য প্রেমে পড়া এক যুবক। অথচ তাদের মেয়ে পাথর? এটা কি মেনে নেওয়া যায়?
চলবে?