#তুই_হবি_শুধু_আমার (২)💙
#সাইরাহ্_সীরাত
#পর্ব_০৭
লাইব্রেরিতে বসে একধ্যানে বইয়ের দিকে চেয়ে আছে রাই। স্যারের লেকচারের মাথামুন্ডু কিছুই বুঝতে পারছে না। কঠিন ইংরেজিতে কিসব লিখে গেছে! রাইয়ের মন চাচ্ছে স্যারের টাক মাথায় ঢিল মেরে আলু গজানোর সুযোগ করে দিতে। ঠিক সে সময় রাইয়ের ফোনের রিং বেজে ওঠে। রোজ ফোন করেছে। রাই ফোনটা রিসিভ করে নিজের অবস্থান জানিয়ে ফোনটা রেখে দেবে ঠিক তখনই ওর চোখ পড়লো এক পরিচিত নোটিফিকেশনে। যেটার আশা করা সে ছেড়ে দিয়েছিল। রাই ম্যাসেজটা সীন করে। অনন্যসুলভ এক ফন্টে লেখা তাঁর বাক্যগুলো,
“আমি বাংলাদেশে এসেছি জিয়নকাঠি। তোমাকে আমি ঠিক খুজে বের করবো। নতুন একটা গান বের হয়েছে শুনেছো? আরমান মালিকের। গানটা আমি বাংলায় অনুবাদ করে গাইবো, শুধু তোমার জন্য। তুমি শুনবে তো? দেড় বছর হয়ে গেল তোমার সঙ্গে যোগাযোগ নেই। আইডিতে এসেও আমার সঙ্গে কথা বলো না। তাই ভেবেছিলাম একেবারে দেশে ফিরে, তোমাকে খুজে বের করে,আমার সামনে তোমাকে দাঁড় করিয়ে কথা বলবো। আজ সকালেই এসেছি, অল্পকিছুদিনেই তোমাকে খুজে পেয়ে যাবো।সামনে এলে তোমার উত্তরটা জানাবে তো? আর লিরিকটা দেখ, খানিকটা এমন। তবে সংযোজন বিয়োজন করে পরে শব্দগুলো বদলাবো। এবার নিশ্চই বলবে না এটা ভালোবাসা নয়, এটাই ভালোবাসা। তুমি বুঝবে সেটা মনিমালা।
এসে ছিলে এভাবে তুমি
যেন নতুন এক স্বপ্ন হয়ে
শুধু স্মৃতি রয়ে গেল দেখো
যেটা আগে আমাদের ছিল না যে
হুহু,, প্রশ্ন করি নিজেকে
কেন দূরে আছি
তোমার থেকে
যেতে যেতে শুনে যাও সেটা…
অঁধরে তোমার নাম
হৃদয়ে তোমার স্মৃতি
তুমি আমার হলে না তাতে কি?
তবুও আমার জান তুমি…. 💙💙 [অনুবাদ হয়না জানি তবুও গানের সুরটা মিলিয়ে অনুবাদ করলাম। গানটি বাস্তবেই রোজের বড্ড প্রিয়। ]
রাইয়ের হাত থেকে ফোনটা নিচে পড়ে গেল।সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে। ভীর এসেছে দেশে? সত্যিই এসেছে? ভীর যদি রাইয়ের খোঁজ পেয়ে যায়? কি করবে রাই? রোজ এসে চেয়ার টেনে রাইয়ের পাশে বসলো। রাইয়ের দিকে ওর মনোযোগ নেই। খাতা টেনে সে নোটস করতে শুরু করে দিয়েছে। রাইয়ের সাড়া-শব্দ না পেয়ে রোজ পাশ ফিরে তাকায়। রাইয়ের চোখে পানি, মেঝেতে ফোন পড়ে আছে। স্ক্রীন ফেটে কাঁচও ছড়িয়েছে আশেপাশে। রোজ সন্দিগ্ধ চোখে তাকিয়ে রাইকে প্রশ্ন করে,
-“কি হয়েছে? কাঁপছিস কেন? আর ইয়্যু ওকে রাই? ”
রাই উত্তর দিতে পারলো না। রোজ নিচ থেকে ফোনটা তুলে ফোনের উপরের গ্লাসটা খুলে ফেলে দিল। এরপর ফোন অন করল। ভীরের ম্যাসেজটা দেখে রোজের কপালে ভাঁজ পড়ে। রাইয়ের ভেতরের ঝড়টাও উপলব্ধি করে। রোজ ফোন রেখে বলল,
-“ভালো তো! আসতে দে। চিনে নিক সে নিজের প্রিয় জিয়নকাঠিকে। আমিও কেমিস্ট্রিটা দেখতে চাই। এমন প্রেমিক সচারচর পাওয়া যায়না বুঝলি! দেশ পাড়ি দিয়ে প্রেমিকার টানে আসছে। গুড, ভেরি গুড। ”
-“তুই স্বাভাবিক কি করে আছিস রোজ, বুঝতে পারছিস কি হতে চলেছে?ভীর দেশে চলে এসেছে। যে ছেলে এত দূর আসতে পারে সে কতটা ডেসপারেট মনিমালার জন্য, টের পাচ্ছিস? হী লাভস হিজ জিয়নকাঠি।”
-“তো আমার কি করা উচিত? সে এসেছে এটা ঢাকঢোল পিটিয়ে সবাইকে বলে বেড়াবো? নাকি তোর মত হাত পা ছড়িয়ে ম’রাকান্না জুড়ে দেবো? টেক ইট ইজি রাই। বি নরমাল, ঢাকা শহরে হাজার হাজার মেয়ে। তাদের মাঝ থেকে সে এত সহজে খুজে পাবে না মনিমালাকে। কারন মনিমালা না চাইলে তাকে পাওয়া অসম্ভব। তবে জিয়নকাঠির কথা আলাদা! ”
-“ও ঠিক আসবে। ”
-“আসলে কি হয়, দেখা যাবে। এবার কান্না থামা আর পড়ায় মনোযোগ দে। ”
রাই বইখাতা তড়িঘড়ি করে গুছিয়ে বেরিয়ে গেল।রোজ হাতে থাকা রাইয়ের ফোনটার দিকে চেয়ে রাইকে ডাকে, রাই শুনলো না সে ডাক। অদ্ভুত! ফোনটা তো নিয়ে যাবে। রোজ ফোনটা অন করে কনভারশেসন পুনরায় পড়লো। হিন্দি গানটা তাঁরও বেশ প্রিয়। ভীর বাংলায় ট্রান্সলেট করেছে। বাংলায় কেমন লাগবে প্রিয় গানটি?রোজ নিজেই গুনগুনিয়ে ওঠে, লিরিকগুলো পড়ে। তখনই ফালাক এসে রোজের পাশের চেয়ারটা টেনে বসলো। রোজ একনজর ফালাকের দিকে চেয়ে খাতার দিকে তাকালো। ফালাক উপেক্ষাটি মেনে নিতে পারলো না। সে স্বল্প আওয়াজে বলে,
-“কি সমস্যা তোমার? ”
-“শাড়ি পেয়েছেন? মুগ্ধতার চেয়ারের নিচেই ছিল। ”
-“ওটা সেই শাড়ি নয়,সেটা আমি তোমাকে দিয়েছিলাম। আমি আমার শাড়িটা চাই। ”
-“দুঃখিত! রোজ নিজের ব্যবহৃত জিনিস কাউকে দেয় না। বিশেষ করে আপনাকে তো দেওয়াই যাবে না। ”
-“কেন? ”
-“কারন জানতে চান? ” সকৌতুকে বলল।
-“হ্যাঁ।” স্পষ্ট উত্তর।
-“আপনার গার্লফ্রেন্ড আছে ভাইয়া। তবুও আমার পেছনে কেন পড়ে আছেন? আমি আপনার টাইপের নই। ইউজ করে ফেলা দেওয়া বস্তুসম নই। আপনি বরং নতুন কোনো মেয়ের সামনে গিয়ে নিজের এই আলগা পিরিত দেখান। ”
-“কারন বলো। ” গঠিন গলায় প্রশ্ন করে।
-“ওকে ফাইন। আপনি আমার শরীরের ঘ্রাণ পছন্দ করেন। সেজন্য ওই শাড়িটা চাচ্ছেন। যেটা দিতে, আমি চাচ্ছি না। কলেজের প্রথম দিন আপনি আমার ওরনা থেকেও ঘ্রাণ নিচ্ছিলেন। কাজগুলো অদ্ভুত নয়? ”
-“বুঝেছ তাহলে। ”
-“আমাকে বোকা মনে করলে সেটা আপনার ভুল। তবে এই ধরনের নোংরামি আমার সঙ্গে করতে আসবেন না।”
-“নোংরামি? ” রেগে চিল্লিয়ে।
-“আস্তে কথা বলুন। এটা লাইব্রেরি। আর হ্যাঁ নোংরামি। এসব নোংরা কাজ।আপনি নোংরা মানুষ। যে গার্লফ্রেন্ড থাকতেও অন্য মেয়ের কাছে আসার চেষ্টা করে তাকে ভালো মানুষ মনে করিনা আমি।কজ, আমি বৈধ সম্পর্ক পছন্দ করি।”
-“ওকে ফাইন। চলো বিয়ে করবো। ”
রোজ খাতায় মনোযোগ দিয়ে ফিচেল হাসে। ফালাক রেগে বলল, “কি হলো ওঠো। ”
-“আপনি আমার যোগ্য নন। ”
-“কি বললে? ”
-“বললাম আপনি আমার যোগ্য নন। তাছাড়া আমি এই বিয়েশাদীতে আগ্রহী নই। অল সো আমি ওয়াইফ অর গার্লফ্রেন্ড ম্যাটেরিয়ালও না। আপনি যদি ফিজিক্যাল রিলেশনশিপ করার কথা বলেন, তাহলে বললো আমি সেসবেও আগ্রহী নই। আশা করি বুঝেছেন। ”
অপমানে থমথমে হয়ে গেল ফালাকের মুখ। অতি কষ্টে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করে বলে,
-“কাজটা ঠিক করলে না। আমি তোমাকে সম্মান দিতে চেয়েছিলাম।কিন্তু তুমি আমাকে অপমান করলে! ”
-“আপনার কাছে কি আমি সম্মান চেয়েছি? যেচে পড়ে সম্মান দিতে এসেছেন কেন? আত্মসম্মান নেই নাকি? এত গায়ে পড়া কেন আপনি? যান এখান থেকে। ”
ফালাক রেগেমেগে উঠে গেল। চেহারা লাল হয়ে আছে রাগে।চোখজোড়া যেন অগ্নিকুণ্ড। রোজ ফিরেও তাকাল না ফালাকের যাওয়ার পথে। খাতায় মনোযোগ দিয়ে সে লিখতে ব্যস্ত। ফালাক লাইব্রেরির বাইরে পা রাখতেই রোজ নিজের ডায়েরি খুলে নীলরঙা জেলপেন দিয়ে গোটা অক্ষরে লেখে।
“এই রাজত্বের উপযুক্ত রাজা সে। তবে অতিধূর্ততার পাশাপাশি কিছুটা বোকাও।”
🍁🍁🍁
অয়ন্তির বিয়ের দিন! রোজ কালো ল্যাহেঙ্গা পড়েছে। সারা বাড়ি জুড়ে মেহমান, ডেকোরেটর, পার্লারের লোকজন। রোজের হাতে ফুলের ঝুড়ি। সে ফুলগুলো নিয়ে সিড়ি দিয়ে নিচে নামছিল। এমন সময় সে প্রকান্ড এক শক্ত পিলারে ধাক্কা খেয়ে ল্যাহেঙ্গায় বেঁধে পড়ে যেতে লাগলো। কিন্তু পড়ে যাওয়ার আগেই পিলারটা তাঁর একহাতে রোজের কোমর পেঁচিয়ে ধরে ফেললো। রোজ চোখ-মুখ খিচে ঝুড়িটা শক্ত করে চেপে ধরে আছে। তবুও ঝাঁকুনিতে কিছুটা ফুল উপরের দিকে ছড়িয়ে ওদের মুখের ওপর এসে পড়লো। রোজ দ্রুতই চেহারা স্বাভাবিক করে সামনে তাকায়। দুটি যুগল নেত্র একত্রিত হতেই রোজ স্তব্ধ হয়ে যায়। ছেলেটির ঠোঁটের কোনায় মিষ্টি লাজুক হাসি। শ্যামবর্ণের ছেলেটার চেহারার সবথেকে আকর্ষনীয় সৌন্দর্য রোজ মুহূর্তেই আবিষ্কার করে ফেলে। ছেলেটা হেসে রোজের গলার দিকে চোখ দিয়ে ইশারা করলো।রোজ বিরক্তচোখে গলার দিকটা দেখার চেষ্টা করতেই ছেলেটা ফু দিয়ে গলার ওপর লেগে থাকা পাপড়িটা ফেলে দিল। রোজ আবারও বিরক্তবোধ করে বলে ওঠে,
-“এটা কোনো রোম্যান্টিক সিনেমা না। যে এভাবে চেপে ধরে ঘন্টার পর ঘন্টা পার করবেন মিস্টার…? ”
-“শাহজাহান, মাই ডিয়ার মমতাজ। ”
-“তাজমহল বানিয়ে তারপর শাহজাহান হতে আসবেন ইডিয়েট পিলার। সরুন.. ”
রোজ ছেলেটার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে চলে যেতে লাগলে ছেলেটা হেসে বলে,
-“বন্ধুর শালিকা এত রুড? বাই দ্যা ওয়ে, আমার নামই শাহজাহান। শাহ্ভীর শাহজাহান। তুমি আমাকে ভীর ডাকতে পারো। ওটা আমার নিক নেম। ”
রোজ ফিচেল হেসে ভীরের কাছে আসলো। এরপর ভীরের দিকে ঝুঁকে হুইস্কি গলায় বলে,
-“আমার সঙ্গে ফ্লাটিং করার উপযুক্ত স্কিল আপনার নেই গায়কসাহেব। কারন আপনি ফ্লাটিংয়ে যে স্কুলের ছাত্র আমি সেখানকার হেডমিস্ট্রেস! আমি যদি এক বার ফ্লাটিং শুরু করি, দিন-দুনিয়া ভুলে যাবেন। সো স্টে এ্যা ওয়ে ফ্রম মি। আমার থেকে দূরে থাকুন। বাড়িতে আমার, হীরামনের অনেক বান্ধবি আছে। ওদের সঙ্গে লাইন মা’রার ট্রাই করুন। কাজে দেবে। ”
-“কিন্তু আমার মন তো তোমাকে পছন্দ করে। তাহলে ওদেরকে কেন পটানোর চেষ্টা করবো? মানুষের উচিত মনের কথা শোনা। আমি তো শুনেছি, এবার তোমার পালা। ”
-“শুনলাম প্রেমিকার টানে এদেশে এসেছেন। তো তাকে বাদ দিয়ে হঠাৎ আমাকে প্রেমের আবেগী লাইন বলছেন কেন? কয়টা লাগে? ”
-“শীট! শীট! শীট! জেনে ফেলেছ? এখানটা জ্বলে উঠল ভীষণভাবে। বুঝলে?” বুকের বাম’পাশে হাত ঠেকিয়ে ইশারা করে বলল।
-“কানে ভেসে আসলো শব্দ গুলো তাই শুনে ফেলেছি। জানলাম তো এই মাত্র, আর আপনার কথাতেই নিশ্চিত হলাম। ”
-“সবাই তোমার ব্যাপারে যা বলল, আর যা জানলাম তা যথার্থই ছিল।” বাঁকা হেসে।
-“আমার ব্যাপারে অতিরিক্ত জানার চেষ্টা করবেন না। কারন জানতে জানতে কি জেনে ফেলবেন, তাতে নিজে এবং নিজের অনুভূতি দুটোই বিপদে পড়ে যাবেন।”চলে যেতে যেতে বলল রোজ।
-“মানে? ”
-“রোজ কাউকে মানে বোঝাতে অভ্যস্ত নয়। নিজে খুজে বের করুন মানের… মানে…”
রোজ ঝুড়ি নিয়ে চলে যেতেই ভীর বেরিয়ে গেল বাড়ি থেকে। সে হলুদ দিতে এসেছিল। আরশানের শালিকা আছে শুনে রোজকে দেখতে এসেছি ভীর। কিন্তু এমন শালি? ওর জন্য ভীরের বিয়েবাড়ির পুরো আনন্দটাই মাটি হয়ে গেল।
চলবে?
[রিচেইক করিনি, ব্যস্ততা নিয়েই লিখেছি তাই ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]