তুই হবি শুধু আমার ২ পর্ব-০৪

0
1603

#তুই_হবি_শুধু_আমার (২)
#সাইরাহ্_সীরাত
#পর্ব_০৪

রাইয়ের পাশে ধপ করে বসে পড়লো রোজ। রাই ভয়ে কেঁপে ওঠে, রোজ মৃদু হেসে বলে, “এত ভয় কিসের তোর?” রাই উত্তর দিল না। মাঠের সবুজ ঘাসের ওপর আসন কেটে বসলো দুজনে। রোজের হাতে মুঠোফোন আর রাই ফোনে কারোর সঙ্গে কথা বলতে ব্যস্ত। ঠান্ডা শীতল বায়ু প্রবাহিত হচ্ছে। রাই মাঝে মাঝে সচেতন দৃষ্টিতে চারপাশে চোখ বুলাচ্ছে। তা দেখে রোজ ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসে। মেয়েটার ভয় যে সিনিওর সেই দলটাকে নিয়ে তা স্পষ্ট বুঝলো রোজ। দলটা বেশ পাঁকাপোক্ত। গতকাল খোজ নিয়ে জেনেছে রোজ, ওরা পলিটিক্স করে। ফালাক ওদের লিডার, ফালাকের পর মেহমেদ ও তারপর সিয়াম। মুগ্ধতা ফালাকের ‘ত’ বোন। কিন্তু ওটা শুধু শোনার বিষয়। জানায় বিষয় হচ্ছে ওদের দুজনের মধ্যে রসায়নজনিত কর্মকান্ড চলছে। মুগ্ধতার আচরণে রোজ বুঝেছিল যে মুগ্ধতা ফালাককে ভালোবাসে আর এখন নিশ্চিত হলো। এক সুস্থ স্বাভাবিক জুটির মাঝে এসে রোজ নিজেকে কাবাবের হাড্ডির সঙ্গেও তুলনা করে ফেললো। কিন্তু আদৌ কি সেই ধারনা ঠিক?

রোজরা বসেছে আমগাছের নিচে। পাঁকা আমের মধুর ঘ্রাণ নাকে বারি খাচ্ছে কিয়ৎক্ষণ পর পর। রোজ চোখ বন্ধ করে গাছের সঙ্গে মাথা লাগিয়ে দিলো।রাই নিজেও রোজের দেখাদেখি হেলান দিয়ে বসে।কিন্তু স্থির থাকতে পারে না।লালপিপড়া এসে ওর উরু বরাবর কামড় দিতেই রাই লাফ দিয়ে উঠে পড়ে। রাইয়ের লাফ দেখে হাসে রোজ। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময় দেখে নিজেও উঠে বসে। ক্লাসের সময় হয়েছে। রোজ রাই ব্যাগ তুলে ক্লাসের উদ্দেশ্যে যেতে শুরু করার এক পর্যায়ে মুগ্ধতা ও তাঁর সঙ্গীদের সামনে পড়লো ওরা। রোজের পাশে আসতেই মুগ্ধতা বেশ জোরে কাঁধ দিয়ে ধাক্কা দিলো রোজকে। রোজ নিজেকে সামলাতে পারলেও মুগ্ধতার ব্যাগের চেইনে লেগে রোজের হাতঘড়িটা পড়ে গেলো নিচে। রোজের চোখ লাল হয়ে উঠলো রাগে। রোজ টু শব্দ না করে ঝুঁকে ঘড়িটা নিতে গেলে মুগ্ধতা দ্রুত সেটা নিজের হাতে নিয়ে নিলো। রোজ দীর্ঘশ্বাস ফেলে রাগ নিয়ন্ত্রণ করে অনুরোধের সুরে বলল,

-“ঘড়িটা দাও আপু। ”

মুগ্ধতা ঘড়িটা নেড়ে চেড়ে দেখে।পুরোনো আমলের এক কালো চেইনের ঘড়ি।এমন ঘড়ি মুগ্ধতার বাড়ির কাজের লোকের বাচ্চারাও ব্যবহার করে না। কিন্তু রোজের এই ঘড়ির ওপর অনেক টান দেখে মুগ্ধতা ফিচেল হাসে। রোজ আবারও কিছুটা শব্দ করে বলে,

-“আপু আমার ঘড়িটা দাও। ”

রোজের উঁচু কন্ঠে মানুষ তাকিয়ে পড়লো ওদের দিকে। কয়েকজন এগিয়েও আসে। মুগ্ধতা ঘড়িটা ছুড়ে দিলো ওর বান্ধবির কাছে। এরপর বলল,

-“ওর কাছ থেকে নাও। ”

রোজ মুগ্ধতার বান্ধবি মিথিলার সামনে গিয়ে ঘড়িটা চাইতেই মিথিলা ঘড়িটা ছুড়ে দিল নিকিতার কাছে। রোজ হতাশ কন্ঠে বলে,

-“এমন কেন করছো? ঘড়িটা দাও প্লিজ। আমাকে ওটা আমার বাবাই দিয়েছিলো। প্লিজ দাও। ”

মুগ্ধতা ব্যঙ্গ করে বলে,
-“এত সস্তা ঘড়ি? তোমার বাবাকে বলবে নতুন একটা ভালো ঘড়ি কিনে দিতে,সে না পারলে আমি টাকা দিচ্ছি নিয়ে যাও।নতুন একটা ঘড়ি কিনে নিও।”

-“ওটা আমার দাদু বাবাইকে দিয়েছিলো আর বাবাই আমাকে উপহার দিয়েছিল, এর মূল্য টাকার পরিমানে হিসেব করা যাবে না আপু। আমার ফোন, চেইন যা ইচ্ছে নাও।কিন্তু ওটা দাও প্লিজ। ওটা ছাড়া আমার চলবে না।”

রোজের আকুতি মিশ্রিত মুগ্ধতার মেজাজ ঠান্ডা করে দিলো। গতকালের রাগটা একটু একটু কমছে। রোজকে টাইট দেওয়ার ভালো উপায় পেয়েছে। সবাই দাঁড়িয়ে মজা নিচ্ছে ঘটনাটির। ওদের ছুড়ে মা’রার খেলাটায় রোজ না চাইতেও ঢুকে গেলো। জড়িয়ে গেলো সে নতুন এক ঝামেলায়। যেটা সে একদমই চায়নি। সে চেয়েছিল ঠান্ডা, স্বাভাবিক একটা কলেজ লাইফ।গতকালের সেই মেজাজ আর সে দেখাতে চায়নি। কিন্তু এরা ছেড়ে দেবে না ওকে। ঘড়িটার জন্য রোজ প্রায় দশমানিট ছুটাছুটি করে। মুগ্ধতা বলে,

-“ছুঁয়াছুঁয়ি খেলা অনেক হয়েছে। এবার নতুন কোনো খেলা দেখতে চাই আমি। মিথি ঘড়িটা দে। ”

মিথিলা ঘড়িটা দিতেই মুগ্ধতা ঘড়িটা পাশের পুকুরের মাঝ বরাবর ফেলে দিলো। সঙ্গে সঙ্গে পুকুরে ঝাঁপ দিল রোজ। সবাই বিস্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ়। রাইয়ের হাতে রোজের ব্যাগ। সবাই স্তব্ধ নয়নে চেয়ে আছে পুকুরের দিকে।পাঁচমিনিট হয়ে গেল রোজ উঠছে না। সবাই ভয়ে চিন্তায় স্যারদের কাছে যাওয়ার পরিকল্পনা করলো। মুগ্ধতা ভয় পায় সেটা শুনে। প্রিনসিপ্যালের কানে এই কথাটা উঠলে জঘন্য একটা ব্যাপার রটে যাবে। মুগ্ধতা ফালাককে ফোন করে আর্জেন্ট ডাকলো। ফালাক মাঠে বসেছিল।ফোন পেয়ে সে দুমিনিটের মাথায় ছুটে আসে। মুগ্ধতা নিজের তরফ থেকে বানিয়ে বানিয়ে পুরো ঘটনা চক্র উল্টে পাল্টে বললো। রাই বাঁধা দিতে গেলে মিথিলা ভয় দেখালো। ভয়ে রাইও মুখ খুলতে পারলো না। রোজ উঠলো দশ মিনিট পর।চোখ মুখ লাল হয়ে আছে। হাতে ঘড়ি, পরনের সাদা জামা শরীরের সঙ্গে লেপ্টে আছে। ফালাক পলকহীন তাকিয়ে রইলো রোজের দিকে। এরপর মেহমেদকে কল করার জন্য কিছুটা দূরে সরে দাঁড়ালো। রোজ পুকুর থেকে উঠলো না। ছেলেরা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। কয়েকজন তো ভিডিও করছে। রোজ আবারও ডুব দিলো। সিয়াম মাঝ থেকে রাইকে টেনে নিয়ে রাইয়ের হাতে চাদর আর একটা নীল রঙা শাড়ি ধরিয়ে দেয়। রাই চোখ বড় বড় করে তাকায়। পেটিকোট, ব্লাউজও এনেছে। রাই ব্লাউজের দিকে সরু চোখে তাকায়। রোজের শরীরের মাপের ব্লাউজ। মাপ জানলো কি করে এরা? রাই পুকুরপাড়ে গিয়ে রোজকে ডেকে চাদর ছুড়ে দিলো। রোজ শরীরে চাদর পেঁচিয়ে ওঠার চিন্তা করছে এমন সময় ফালাক ধমকের স্বরে বলে,

-“মেহমেদ!যারা ভিডিও করছে,সবার ফোন কেড়ে রাখ। কারোর ফোন ফেরত দিবি না। কেউ কিছু বললে তাকে আমার কাছে আনবি। আমি শহীদ স্যারের কাছে যাচ্ছি।”

ফালাকের এক কথাতেই পুকুরপাড় ফাঁকা হয়ে গেলো। ফালাক মুগ্ধতাদের নিয়ে চলে যায়। রোজ উঠে ওদের ডিপার্টমেন্টের ওয়াসরুমে গেলো। শাড়িটা পড়ে সে চুলগুলো খুলে রাখলো। ফালাকের উদ্দেশ্য রোজকে সেফ করা ছিল। কিন্তু ফালাক এটা কেন করল? রোজ সেসব ভাবনাকে মাথা থেকে ফেলে ঘড়িটা নিয়ে বসে। ব্যাটারির সমস্যা নাকি পানি ঢুকে খারাপ হয়ে গেল? চলছে না কেন ঘড়িটা? ঠিক সে সময় ফালাকের কন্ঠ শুনতে পায় রোজ। ফালাক বলছে,

-“আমার কাছে দাও, আমি ঠিক করে তোমার কাছে পাঠিয়ে দেবো। ”

-“দরকার নেই। আর কাপড়ের জন্য ধন্যবাদ। শাড়ির বদলে পাঞ্জাবি কিনে পাঠিয়ে দেবো। কত টাকা লেগেছে শাড়িতে? ”

-“পাঞ্জাবি লাগবে না। শাড়িটাই ফেরত দিও। ”

-“ওকে। ”

-“মুগ্ধতার কাজের জন্য লজ্জিত আমি। ওকে মাফ করে দিও। ও আর এমন করবে না। ঘড়িটা দাও আমি ঠিক করে দেবো। ”

-“বললাম তো লাগবে না। কেন বিরক্ত করছেন? কি চান?আমি স্যরি বললে হবে? ওকে, বলছি। স্যরি, স্যরি, স্যরি। এবার রেহাই দেন। আমি একা থাকতে চাই। গো প্লিজ। ”

-“ইয়্যু আর ইনসাল্টিং মি নাও।”

-“অপমানবোধ থাকলে চলে যাচ্ছেন না কেন? কেন বিরক্ত করছেন? যান, এখান থেকে। আপনার প্রেমিকা মুগ্ধতাকে নিয়ে চিন্তায় আছেন তাইনা? ভাবছেন ওকে আমি এর জন্য কঠিন শাস্তি দেবো। তাহলে বলবো যেটা ভাবছেন সেটা একদম সঠিক। এই অন্যায়ের জন্য ওকে আমি কঠিন শাস্তি দিবো। তাই গিয়ে ওকে বাঁচানোর প্রস্তুতি নেন। ”

-“কি করবে তুমি? ”

-“ওর হাত কে’টে ফেলবো। এ্যান্ড আই মিন ইট। যাস্ট কে’টে ফেলবো হাতটা। জিভটা ছিড়ে ফেলবো কারন ওই জিভ,ঠোঁট,কন্ঠ দিয়ে সে আমার বাবাইয়ের প্রিয় জিনিসকে সস্তা বলেছে, টাকার খোঁটা দিয়েছে।”

-“ওর কিছু হলে, তোমাকে আমি আস্ত রাখবো ভেবেছ? ওকে কিছু করার কথা মাথা থেকে বের করে ফেলো। নাহলে ফালাকের রাগের শিকার হবে। ফালাকের রাগ কতটা ভয়ঙ্কর তা তুমি আন্দাজও করতে পারবে না। ”

-“চ্যালেঞ্জ এক্সেপ্টেড। আর রোজ কখনও বাজিতে হারে না। আপনার রাগের চেয়ে আমার জেদ অধিক ভয়ঙ্কর। এটার প্রমাণ শীগ্রহই পাবেন। গুড বাই। ”

বাড়ি ফেরার পথে একই রকম আরেকটা শাড়ি কিনলো রোজ। ফালাককে ফেরত দেওয়ার জন্য। পরনের শাড়ি সে ফেরত দেবে না। কারন রোজ নিজেকে এবং নিজের ব্যবহৃত জিনিস যাকে তাকে ছুঁতে দেয়না। বাড়ি পৌঁছে রোজ পরনের শাড়িটা খুলে দলামোচা করে আলামারির ভেতর ছুড়ে মা’রে। পাঁচ হাজার টাকার শাড়ি পোড়ানো ঠিক হবে না। কাউকে দিলে সে পড়তে পারবে।

🍁🍁🍁

ফারদিন মাহতাবের বড় ছেলে আরশান মাহতাব তৈমুর ও সুলেমান আহনাফের মেয়ে অয়ন্তি আহনাফ জুঁইয়ের বিবাহের তারিখ ঠিক করা হয়েছে। আজ দুজনের আংটি বদল হলো। সুলেমান সাহেব প্রথমে রোজের না থাকা নিয়ে ফোঁড়ন কাটলেও অবশেষে পাঁকাপাকি কথা বলা শেষ হয়েছে। যাওয়ার পথে আরশান অয়ন্তির জন্য আনা স্পেশাল গিফটটা সারিমের কাছে রেখে যায়। সারিম এখন সেটা নিয়ে লুকিয়েচুরিয়ে যাচ্ছে ওর হীরামনের ঘরের দিকে। পা টিপে টিপে হাটছে সারিম। রোজ শাওয়ার নিয়ে সবেমাত্র বেরিয়েছে। কাপড় নেড়ে দিয়ে সে সারিমকে পড়ার জন্য ডাকতে যাচ্ছিলো। কিন্তু করিডোরে সারিমকে চোরের মত হাটতে দেখে সে ভ্রু কুঁচকে ফেলে।অয়ন্তির ঘরে যাচ্ছে সে,হাতে গিফটবক্স। রোজ মৃদু হেসে বলে,

-“ভাই আমার পিয়নের কাজও করতে জানে?”

সারিমের ঘরে এসে টেবিলের ওপর খোলা বইখাতা ঠিক করে গুছিয়ে রাখার সময় রোজ খেয়াল করলো সারিমের খাতার ওপর গোটা অক্ষরে লেখা ””লিখে দাও””। রোজ খানিকক্ষণ খাতা ঘাটাঘাটি করেও কিছু পেলো না। আজকের নতুন টপিক পড়ানোর কথা ছিল। সারিম সেটাও বের করেনি, রোজ লিখতে বলেছিলো কিছু শব্দের অর্থ তাও লেখেনি। সারিম গিফটা দিয়ে ঘরে এসেই বলল,

-“হোমওয়ার্ক পেয়েছো? সবটুকু লেখা হয়েছে আপিয়া? কিছু বাদ যায় নি তো? ”

-“সব তো ফাঁকা নক্ষত্র! তুমি দিন দিন ফাঁকিবাজ হয়ে যাচ্ছো। লেখোনি কেন? ”

-“লিখতেই তো গিয়েছিলাম। বললামও তো লিখে দাও। লিখে দেয়নি? ”

-“তোমার পড়া কে লিখে দেবে? বাহানা করবে না, সব লিখবে এখন”

-“আমি কেন লিখবো? কতক্ষণ হয়ে গেলো, ওকে তো বলেছি লিখে দিতে। লেখেনি কেন? শুধু পড়বে নাকি? পড়া হচ্ছে কিনা লিখে দেখাবে না? ও লিখে না দিলে তুমি খাতা দেখে বুঝবা কি করে ও ঠিক লিখেছে কিনা?”

-“কে লিখে দেবে? কার কথা বলছো?”

-“কেন শয়তান! আজ সকালে আমার বন্ধু তামিমের মা এসেছিলো,আমাকে নিয়ে যেতে। তামিমের জন্মদিন ছিল বলে দুপুরে দাওয়াত ছিল না? হীরামন আর আমি গিয়েছিলাম। তারপর ওখানে গিয়ে তামিমের ঘরে বসি। তামিমের বই খোলা ছিল বলে আন্টি চিৎকার করে বলছিল। বই খোলা রাখলে শয়তানে পড়ে। তাই আমি বই খুলে রেখেছিলাম। যাতে ওরাও পড়তে পারে। কিন্তু শুধু পড়বে? ওদের তো লিখতেও ইচ্ছে করবে। তাই আমি খাতায় লিখে গেলাম লিখে দাও। যদি ওরা লজ্জা পায়, আমার খাতায় লিখতে, তাই। ওরা লিখলো না কেন আপিয়া? আমার খাতা কি ওদের পছন্দ হয়নি? তামিমের বই তো আরও ছেড়া, ওর বই পড়লে আমার নতুন বই পড়ে না কেন? ”

রোজ স্তব্ধচোখে তাকালো। সারিম দুঃখি মুখে উত্তরের প্রত্যাশায় চেয়ে আছে। এমন ধরনের কথা সারিম এই প্রথম শুনেছে তাই হয়তো বিশ্বাস করে ফেলেছে। ছোট্ট, অবুঝ এই ভাইটাকে নিয়ে কি করবে রোজ? এত কিউট করে গাল ফুলিয়ে রাখে সারিম যে রোজ শব্দ করে হেসে দেয়। রোজের হাসির ঝংকার শুনে সারিম চোখ তুলে তাকায়। আপিয়ার হাসি ওর বড্ড প্রিয়। প্রায় তিন বছর হলো ওর আপিয়া এভাবে হাসে না। সারিম মুগ্ধ নয়নে চেয়ে থেকে বলে,

-“তোমার হাসিটা অনেক সুন্দর আপিয়া। একদম বার্বিডলের মত লাগে। তুমি এখন আর হাসো না কেন?”

রোজ হাসি থামিয়ে বলে,
-“পড়া করো, কোনো শয়তান এসে তোমার পড়া করে দিয়ে যাবে না। এসব তামিমকে বকা দিতে বলেছেন আন্টি। এসব মিথ্যা কথা। বুঝেছ?”

-“সবাই মিথ্যা কথা বলে কেন? ”

রোজ প্রসঙ্গ পাল্টে বলে,
-“তোমার নাকি পায়ে ব্যাথা লেগেছে? কোথায় লেগেছে দেখি।”

তামিম প্যান্ট উঁচু করে ধরে। গোড়ালিতে ছিলে গেছে অনেকটা। রোজ মলম লাগিয়ে দিয়ে বলে,

-“ছুটাছুটি করবে, তবে সাবধানে। সামনে তোমার স্কুলে এ্যানুয়েল প্রোগ্রাম আছে না? তুমি কিসে কিসে নাম দিতে চাও আমাকে বলে দিও। আমি তোমার মিসকে বলে দেবো।

-“দৌড়, লাফ, ছবি আঁকা, অংক,সাতার,যেমন খুশি তেমন সাজো।”

-“এতো কিছু? আচ্ছা বলে দেবো। তা, যেমন খুশি তেমন সাজোতে কি সাঁজবে তুমি?”

-“দেশপ্রেমিক! মুক্তিযোদ্ধা। প্রথমে রাজকুমার সাজতে চেয়েছিলাম কিন্তু আমাদের দাদা মুক্তিযোদ্ধা ছিল তাই না? আমি দাদা সাঁজবো। আচ্ছা আপিয়া মুক্তিযোদ্ধা তো তাদের বলে যারা দেশের জন্য যুদ্ধ করেছে। আর যারা দেশকে ভালোবাসে তারা দেশপ্রেমিক। তাইনা?”

-“হুম। আজকের টপিক এটা। দেশ। সাধারণ জ্ঞান বইটা বের করো। ”

🍁🍁🍁

-“আমি তোমার কাছে আসছি 💙জিয়নকাঠি💙। তুমি যা চাও তাই হবে। তোমাকে না দেখে, তোমার কন্ঠ না শুনেই তোমাকে খুজে বের করবে তোমার প্রেমে পড়ে মুমূর্ষু অবস্থায় থাকা এই কাঙাল প্রেমিক।”

কথাগুলো বলে ব্যাগে পাসপোর্ট ও ভিসা ঢুকিয়ে নিল ছেলেটি।ঠোঁটে বিস্তর হাসির রেখা।চোখে প্রিয় মানুষটির খুব নিকটে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা। মনে, তাকে একবার ছুঁয়ে দেখার স্পৃহা। গন্তব্য বাংলাদেশ ও তাঁর রাজধানীর এক মিষ্টি বাসিন্দার সম্মুখদর্শন। ভারতের সীমানা পেরিয়ে আজ সে রওনা দেবে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে।সে কি খুজে পাবে নিজের “জিয়নকাঠি”কে? মনের আশঙ্কাকে দমন করে মেজাজটা ফুরফুরে করে সে চলল নিজের বাবা-মা’কে তাড়া দিতে।

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে