#তুই_হবি_শুধু_আমার (২)💙
#সাইরাহ্_সীরাত
#সূচনা_পর্ব
-” অয়ন্তি ম্যাডাম প্রেগনেন্ট। এই যে তাঁর প্রেগনেন্সি রিপোর্ট। ম্যাম। দেখুন স্পষ্ট লেখা আছে রিপোর্ট পজিটিভ। আমি মিথ্যা বলছি না।” কোমল কন্ঠে বলল।
-“হীরামন অবিবাহিত। তাই ওর প্রেগনেন্ট হওয়ার প্রশ্নই আসে না। কার না কার রিপোর্ট দেখেছো, সেটা নিয়ে হম্বি-তম্বি না করে ওর রিপোর্ট খুজে বের কর। এ্যান্ড গেট লস্ট ফ্রম হেয়ার নাও! ফাস্ট। তোমাকে দেখলে রাগ হচ্ছে আমার। অকালকুষ্মাণ্ড ছেলে একটা। ”
হাতে থাকা কেস’ফাইলগুলো চেক করতে করতে বলে উঠলো রোজ। রোজের কথা শুনে সামনে দাড়িয়ে থাকা ইফতি পুনরায় ছুটলো হাসপাতালের উদ্দেশ্যে। অয়ন্তি রোজের বড় চাচ্চুর মেয়ে। রোজ তাকে হীরামন বলে ডাকে। ইফতি চলে যেতেই রোজ অয়ন্তিকে ফোন করে ওর হালচাল জিজ্ঞেস করল । গতকাল রাত থেকে অয়ন্তির পেটে ব্যাথা, বমি হচ্ছে। এখন কিছুটা ঠিক হয়েছে জেনে ফোনটা রেখে দিলো রোজ। আজ ভার্সিটিতে যাওয়ার দরকার। চান্স পাওয়ার পর থেকে আর কলেজে যাওয়ায়ই হয়নি। ভর্তিটাও হয়নি। আজ গিয়ে ভর্তি হয়ে আসতে হবে। হাতের ফাইলগুলো তাকের ওপর রেখে রোজ বাথরুমে ঢুকে যায়। নীলরঙা একটা থ্রিপিচ পড়ে চুলগুলো বেণী করে নিল সে।
🍁🍁🍁
স্কুটার কলেজের গ্যারাজে পার্ক করার পর থেকেই রোজ লক্ষ করছে ওকে কিছু ছেলে ফলো করছে। সেই কলেজ গেট থেকেই পিঁছু নিয়েছে। ভর্তির জন্য সবাই সবার ডিপার্টমেন্টের সামনে নতুবা ভেতরে আছে বলে রাস্তাটাও বেশ ফাঁকা। কিছুদূর যেতে না যেতেই পেছন থেকে কেউ ওর ওরনা টেনে ধরে। রোজ থমকে দাঁড়াল। চট করে পেছনে ফেরার অভ্যাস নেই ওর। রোজ বাহাতে ওরনা পেঁচিয়ে টান দিতেই পায়ে ব্যাথা অনুভব করে। টাল সামলাতে না পেরে রাস্তায় পড়ে গেল রোজ। এবার মেজাজ তুঙ্গে উঠে যায়। রোজ পেছনে ফিরেই দেখলো একটা ছেলে ওর ওরনা ধরে দাড়িয়ে আছে। পাশে দেখে কিছু ছেলে দৌড়ে যাচ্ছে। এরাই তো ওকে ফলো করে এতদূর এসেছে। রোজ সামনে দাড়িয়ে থাকা ছেলেটার হাত থেকে ওরনা কেড়ে নিয়ে সপাটে চর লাগাতেই ছেলেটার দৃষ্টি জ্বলে উঠলো। সে নিজেও রোজের গালে পাল্টা আঘাত ফিরিয়ে দেয়। স্তব্ধ রোজ বিস্ময় নিয়ে তাকায়। ছেলেটার পাশে আরও কিছু ছেলেপুলে চলে আসে। রোজ স্বল্পভাষী। তাই সংক্ষেপে বলে,
-“আমার গায়ে হাত তুলে ঠিক করেন নি। অসভ্যতামির একটা লিমিট আছে। যেটা ক্রস করে গেছেন। ”
ছেলেটার পাশে দাড়ানো ছেলেগুলোর মধ্যে একজন এগিয়ে আসতেই ছেলেটা বাঁধা দিলো। তিক্ত কন্ঠে বলে উঠলো,
-“তোমাকে বাঁচিয়ে যদি অসভ্যতামি করে থাকি তাহলে চরটা আমার প্রাপ্য ছিল।আর তুমি বিনা কারনে আমায় চর মেরেছো যার কারনে এই চরটা তোমার প্রাপ্য। ইডিয়েট গার্ল। ”
রোজ বুকের সামনে দু হাত গুজে দাঁড়ায়। ছেলেগুলোর দলবল চটে গেছে ভীষণভাবে। রোজকে তারা তোয়াক্কা করবে না তা তাদের হাবভাবেই বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু তা দেখেও রোজের বিন্দুমাত্র ভাবভঙ্গির পরিবর্তন হলো না। সে ব্যস্ত সামনে দাড়িয়ে থাকা পুরুষটিকে খুঁটিয়ে দেখতে। এর মাঝেই একটা মেয়ে এসে রোজের গালে থা’প্পড় দিয়ে বসে। রোজ হতভম্ব দাঁড়িয়ে বোঝার চেষ্টা করছে এই মেয়েটার কি সমস্যা? মেয়েটাকে কিছু বলার মত ভাষা খুজে পেল না রোজ। মেয়েটাই নিজে বলতে শুরু করে,
-“হাও ডেয়ার ইয়্যু? হও ডেয়ার ইয়্যু টু টাচ হিম? তোমার সাহস হলো কি করে ফালাককে মা’রার? ইয়্যু সিলি চিপ গার্ল। ”
ফালাক এবার কঠিন গলায় বলে,
-“এটা আমার পার্সোনাল ম্যাটার মুগ্ধতা। তুমি এর মধ্যে ঢুকছো কেন? কেউ এটার মধ্যে ঢুকবে না। দেখছো না আমি সবাইকে মানা করেছি। ”
-“শী হিট ইয়্যু ফালাক। তোমাকে মে’রেছে ও। তাও বিনা কারনে। তবুও আমি চুপ থাকবো?”
-“থাকবে। কারন আমার ওপর করা আঘাতের পাল্টা আঘাত আমি নিজেই করতে জানি। আমার তোমাদের সাহায্যের প্রয়োজন নেই। যাও এখান থেকে। ”
মুগ্ধতা ফালাকের কন্ঠে রাগের আভাস পেয়ে চলে যেতে শুরু করলে রোজ কোমল কন্ঠে ডাকলো,
-“এক মিনিট। ”
মুগ্ধতা পেছনে ঘুরে তাকায়। রোজ এগিয়ে গিয়ে বেশ জোরে একটা চর কষিয়ে বসালো মুগ্ধতার গালে। সবাই হা করে চেয়ে আছে। মুগ্ধতা রেগেমেগে একাকার। সেই দৃশ্য রোজ পুরোপুরি উপেক্ষা করে ফালাকের সামনে গিয়ে দাড়িয়ে বলল,
-“ঘরে মা বোন থাকলে কোনো মেয়ের সম্মান নিয়ে এই ধরনের ফালতু মজা করার কথা নয়। যদি আপনার বাড়িতে মা বোন না থাকে আমার বাড়িতে আসবেন। ভাইকে কিভাবে ট্রিট ও ট্রেনিং দিতে হয় তা হাতে কলমে শিখিয়ে দেবো। এবার যেতে পারেন আপনারা।”
রোজের বন্ধু রাইমা স্কুটার পার্ক করে ছুটে আসলো। সব ঘটনাই সচক্ষে দেখেছে সে। তাই সে জানে এখানে রোজ বা ফালাক কারোরই দোষ নেই। অথচ গুনে গুনে তিনটে থা’প্পড় তিনজনের গালে পড়লো। প্রথম ভুলটা রোজের, দ্বিতীয়টা ফালাকের, তৃতীয় এই পাগল মুগ্ধতার যে বিনা কারনে, বিনা উদ্দেশ্যে দুটো মানুষের মধ্যে ডান হাত, বা হাত চালান করে বেড়ায়। রাই সামনে আসতেই ফালাক গম্ভির চোখে রাইকে পর্যবেক্ষণ করলো। এরপর রাশভারি কন্ঠে বলল,
-“নিজের বন্ধুকে সামলাও, নাহলে বিপদে পড়ে যাবে। আমার এমন অপমান আমি সহ্য করবো না। এর শাস্তি ওকে পেতে হবে। ”
রাই পরিস্থিতির এবং পরিবেশের উত্তপ্ততা লক্ষ করে আকুতির স্বরে বলল,
-“প্লিজ ভাইয়া, এবারের মত মাফ করে দিন। ও নতুন, কিছু জানে না। তাই ভুল করে ফেলেছে। ”
ফালাকের পাশ থেকে অতিকষ্টে চুপ করে থাকা ছেলেটি বলে ওঠে,
-“ভাইয়ের কাছে মাফ চাইতে বলো। নাহলে তোমাদের এই কলেজে পড়া হারাম করে ছাড়বো। ”
রোজ ফোন বের করে দেখলো পাঁচটা মিসড কল। ইফতি কল দিয়েছে।এই অকর্মণ্য ছেলেটাকে নিয়ে আর পারা গেল না। কোনো কাজ ঢঙ করে করতে পারেনা। রোজ সাইডে এসে ফোন রিসিভ করে কথা বলতেই রাই হতবুদ্ধি হয়ে তাকালো।ফালাকসহ সবাই বেশ ক্ষেপেছে। কিন্তু তা প্রকাশ করলো না। আশেপাশে নানা কথা শুরু হয়েছে। বারুদের মত তিনথাপ্পড়ের কাহিনি প্রচার হয়ে গেলো। কিন্তু থাপ্পড় তো চারটা পড়েছে? রোজের গালে দুটো। আর সেই রোজই কিনা আরামসে পাশ কাটিয়ে নিজের কাজে ব্যস্ত। ফালাক চলে গেল ওখান থেকে। পেছন পেছন গেল ওর চ্যালারাও।
রাই এসে রোজের হাত টেনে ওকে ক্যান্টিনের দিকে নিয়ে যেতে লাগলো। রোজ বিরক্ত হয়ে হাত ছাড়িয়ে বেশ ঠান্ডা গলায় বলে,
-“আগে ভর্তি হয়ে নেই। তারপর ক্যান্টিনে যাবো। এখন ক্যান্টিন দেখে লাভ নেই। আজ বাইরে খাবো, ট্রিট আমি দিবো। ”
রাই উত্তেজিত কন্ঠে বলে,
-“তুই এত স্বাভাবিক কিভাবে আছিস? তোর পরাণে ভয় নেই? কাদের সঙ্গে পাঙ্গা নিয়েছিস জানিস? কলেজের টপ ক্রাশের একটা। জুনিওরদের চোখের মনি, স্যারদের প্রিয় ছাত্র। মেয়েদের কলিজার ক্রাশ। ”
-“সো?”
-“ওরা তোকে হ্যারাস করবে। ”
-“করুক। যখন করতে আসবে তখন তুই সুযোগ বুঝে কেটে পড়বি। ব্যাস ঝামেলা শেষ। ”
-“ফালাক ভাইকে স্যরি বলে দিলেই প্রবলেম সলভ। উনি তো তোর ভালোই চেয়েছে। বখাটেগুলো তোর ওরনা টেনে তোর ওপর হামলে পড়তে যাচ্ছিলো, উনি এসে সবটা সামলালো আর তুই ওনাকেই মা’রলি? ”
-“কারন সামলানোর নাম করে উনিও সেম কাজটাই করতে যাচ্ছিলেন। ”
-“উনি এরকম না। মেয়েদের সম্মান করতে জানেন। তুই ভুল বুঝেছিস। ”
-“বাঁচানোর হলে, ওরনা ধরে রাখতেন না। বাঁচানোর কাজ শেষ হতেই ছেড়ে দিতেই। উনি ওরনা ধরে ঘ্রাণ নিচ্ছিলো, এটা বাঁচানোর কোন স্বভাবে পড়ে? তোর এই নাকে কান্না বন্ধ কর। নাহলে এখানেই বুলেট তোর পেটে পাঠিয়ে দেবো। ”
রাই থেমে গেলো। ফালাকের রাগের কথা যেমন জানে ও তেমন রোজের রাগের কথাও জানে। কোনো অংশে কম না এরা। তাই কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ রোজের পিঁছু যেতে লাগলো রাই। রোজকে হাতছাড়া করা যাবে না। করলে পুরো দোষ আর জ্বালাগুলো ওর ঘাড়ে এসে বর্তাবে। দেখা গেল রোজকে না পেয়ে রাইয়ের ওপরেই প্রতিশোধ নিয়ে নিলো ওরা।রাই দ্রুত রোজের পাশে গিয়ে রোজের পাশাপাশি হাটতে শুরু করে। রোজ তা দেখে আবারও বিরক্তিতে চোখমুখ কুচকে ফেললো।
🍁🍁🍁
চার বোতল পানি পান করেও স্থির থাকতে পারছে না ফালাক।রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে।কোথাকার কোন মেয়ে এসে প্রথমদিনই ফালাককে মা’রলো? এটা সহ্যের সীমা অতিক্রম করার মত ভাবনা। যে ফালাককে একনজর দেখার জন্য মেয়েরা হা হুতাশ করে তাকে মা’রলো? রেগে চেয়ারে লা’থি দিল ফালাক। চেয়ার উল্টে পড়লো মেহমেদের সামনে। মেহমেদ চেয়ার ঠিক করে বলল,
-“কি হয়েছে? এমন করছিস কেন? এ্যাই ফালাকের কি হয়েছে রে? ” (সিয়ামকে উদ্দেশ্য করে)
পেছন থেকে সিয়াম এসে বলে,
-“ফার্স্ট ইয়ারের একটা মেয়ে এসে ভাইকে থা’প্পড় মে’রে ঠান্ডা মস্তিষ্কে কে’টে পড়েছে। ”
কি সাংঘাতিক কথা। মেহমেদ নিজেও এবার রেগে গেল। ওর বন্ধুকে মে’রে চলে যায় কোন মেয়ে? সেটা দেখা দরকার। কিন্তু আগে ফালাককে ঠান্ডা করতে হবে। যেভাবে রেগে গেছে তাতে আগ্নেয়গিরির লাভা ফুটতে ফুটতে যার তাঁর ওপর গিয়ে পড়বে। মেহমেদ এগিয়ে এসে বলে,
-“শান্ত হ। ওকে পানিশমেন্ট দেওয়া হবে। আমি দেখছি ব্যাপারটা। ”
-“আই ওয়ান্ট হার মেহমেদ। ওকে কেউ টাচ করবি না। ডেকে সোজা আমার সামনে নিয়ে আসবি। সেটা খুব দ্রুত। আই কান্ট কন্ট্রোল মাইসেল্ফ। কান্ট! ”
-“যদি না আসে, জোর করতে হবে তো। ”
-“ও আসবে। সি’জ ডিফরেন্ট ফ্রম অ্যানাদার গার্ল। ”
মেহমেদ কথা বাড়ালো না ফালাকের আত্মবিশ্বাস দেখে। মেয়েটা আসবে এটা ফালাক নিশ্চিত হয়ে কিভাবে বলে দিল? মেয়েটা কি ফালাকের পূর্বপরিচিত? না, তা হলে ফালাককে কেন মা’রবে? কিন্তু কিছু একটা তো আছেই। যাক আপাতত র্যাগিং করার জন্য কোনো একটা মুরগি তো পাওয়া গেল। প্রায় তিন বছর হয়ে গেলো কাউকে র্যাগিং করা হয় না।আজ সুযোগ এসেছে হাতে। এটাকে কাজে লাগাতে হবে।
চলবে।
তুই হবি শুধু আমার সিজন-০১ পড়তে লেখাটি উপর ক্লিক করুন।