তুই হবি শুধু আমার পর্ব-০৭

0
1615

#তুই হবি শুধু আমার
#সাইরাহ্_সীরাত
#পর্ব_সাত

অয়ন্তির মুখের ওপর ঝুঁকে প্রায় পনেরো মিনিট দাঁড়িয়ে আছে আরশান। অস্বস্তিতে অয়ন্তি নড়তেও পারছে না। নড়লেই এই লোক বলেছে,ঘটনা একটা ঘটিয়ে ফেলবে। না জানি কি করে বসে লোকটা। কিন্তু এভাবে তাকায় কেন? পলকহীন নীলচোখগুলো ‘খেয়ে ফেলবো’ টাইপ দৃষ্টি দিয়ে গিলে ফেলছে অয়ন্তিকে। অয়ন্তির দুপাশে হাত রেখে বন্ধন তৈরি করে রেখেছে আরশান। কিন্তু তা বেশিক্ষণ টিকলো না। রোজ এসে, খুক খুক করে কেঁশে সংকেত দিল প্রিনসিপ্যাল স্যারের আগমনের। আরশান রোজকে দেখে অপ্রস্তুত হয়ে সরে দাঁড়ালো। অয়ন্তি ভ্রু কুঁচকে তাকায়। আরশানকে ভীত দেখাচ্ছে, ঘাবড়ে সে শার্টের কলার ঠিক করছে। লোকটা ভয়ও পায় নাকি? রোজকে চেনে না অয়ন্তি তাই সেও কিছুটা বিব্রতবোধ করে বলল,
-তুমি কে?

রোজ অয়ন্তির দিকে ফিরল। মেয়েটা একদম পুতুলের মত সুন্দর। কি মিষ্টি আরশানের কুসুম। এজন্যই বোধ হয় আরশান সব ছেড়ে কুসুমের পেছনে পড়ে ছিল।ইশ! মেয়েটা দারুন ভাগ্যবতী। রোজ নিজের সূদর্শনা হাসি ঠোঁটে বজায় রেখে বলল,
-হাই, আমি সাইরাহ্ এ রোজা! আরশানের বন্ধু তবে বন্ধু কম বোন বেশি। তাই তুমি আমাকে ননদ ভাবতে পারো কুসুম। বাই দ্যা ওয়ে আমরা সেম ব্যাচ, সাইন্স থেকে এক্সাম দিলাম, তুমি তো হিউম্যানিটিস ছিলে। তাই না?

-হুম। তোমাকে কখনও দেখিনি কলেজে।

-আমি ট্রান্সফার নিয়ে সেকেন্ড ইয়ারে এসেছিলাম তাই দেখোনি। তোমাদের আর আমাদের ক্লাস টাইম আলাদা ছিল সেজন্য তো আরও কম দেখা হয়েছে। তুমি ভারি মিষ্টি ভাবি!

-তোমার কন্ঠ চেনা চেনা লাগছে! আগে শুনেছি বলে তো মনে পড়ছে না।

রোজ অপ্রস্তুত হয়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করার উদ্দেশ্যে বলে,
-দাদাই আমি বাড়িতে ফিরছি। তুমি ভাবিকে নিয়ে কি ঘুরতে যাবে? অবশ্যই ফার্মহাউজ’টা ঘুরিয়ে দেখাবে। ওকে?

আরশান গলা পরিষ্কার করল। লজ্জায় কথা বলতে না পারায় রোজ বিজ্ঞ কন্ঠে বলল,
-লজ্জা পেতে হবে না। আমি কিছু দেখিনি। বাই ভাবি আবার দেখা হবে।

অয়ন্তি কিছু বলবে তার আগেই রোজ চলে গেল। ভারি অদ্ভুত মেয়ে তো অয়ন্তিকে কথা বলর সুযোগই দিলো না। আরশানের তো কোনো বোন নেই, ওরা তো দু ভাই। তাহলে এই বোন কোথ থেকে আসলো? পরে ভাবলো বোন নয় তো, বন্ধু। বন্ধুকে বোনের মত ভাবে আরশান। অয়ন্তি শুকনো ঢোক গিলে বলল,
-এবার বাড়ি যাই?

-না। ফার্মহাউজে যাবো। শুনলে না, বেবি যেতে বলল। আর বেবির কথা অমান্য করার সাধ্য নেই আমার। সো চলো মাই লাভ, চেনাজানার প্রথম ধাপ ফেলা যাক। তুমি আমাকে যতটা চাও চিনে নিতে পারবে এবার।

রোজের কথা শুনে অয়ন্তির মনে হুট করে হিংসার আবির্ভাব হলো। মেয়েটার মূল্য আরশানের জীবনে এত যে ওর সামান্য একটা বাক্যও অক্ষরে অক্ষরে পূরণ করতে হবে? কে ও? অয়ন্তির মনটা আবারও বিষিয়ে উঠল।মেয়ে যখন একটা হাতেই আছে তাহলে অয়ন্তির পেছনে পড়ে আছে কেন? ক্যারেক্টারলেস আরশান। অয়ন্তিকে ভাবনার সাগরে ডুব দিতে দেখে আরশান ওর নাকের সামনে তুরি মেরে বলল,
-আবার কোন ভাবনায় ডুব দিলে জান?
-রোজা কে আরশান?
-বেবি তো বলল’ই, আমার বন্ধু। কিন্তু বন্ধু কম বোন বেশি।
-বোন বা বন্ধুর কথা মানার জন্য এতটা ব্যাকুল হতে আমি তো কখনও কাউকে দেখিনি।
-আর ইয়্যু জেলাস?
-নো।
-ওকে। জেলাস না হলে জেলাসি মেটানোর কোনো প্রয়োজন নেই। আর পূর্বে যদি দেখে না থাকো এখন দেখে নাও।
-ক্যারেক্টারলেস!
-কে তুমি? জানি তো। নতুন করে বলতে না। যে মেয়ের হাজার হাজার বয়ফ্রেন্ড সে ক্যারেক্টারলেস হবে এটা স্বাভাবিক। আর আমার হৃদয়টা এতটাই সুবিশাল যে তোমার এই বড় অন্যায়টা’কেও মাফ করে দিয়েছি।

অয়ন্তি কথা বাড়ালো না। আরশান মৃদু স্বরে বলল,
-বেবি আমার বোনের থেকেও বেশি কুসুম। তুমি যেমন আমার প্রেমময়ী ভালোবাসা, বেবি হচ্ছে স্নেহময়ী ভালোবাসা। ওকে হিংসে করা মানে আমার ভালোবাসা অসম্মান করা। এটা তুমি করতে পারো না। বুঝেছো?

-আমার তো অন্যচক্কর মনে হচ্ছে।

আরশান চকিত দৃষ্টিতে তাকালো। মনে মনে বলল,’শুধু তুমি না, সবারই এমন মনে হয়। ‘ কিন্তু মুখে বলল,
-প্রেমের পড়ার কয়েকটা স্টেপের মধ্যে এটা একটা। সন্দেহ! ভালো ভালো, সন্দেহ না করলে মাঝে মাঝে সম্পর্ক নড়বড়ে হয়ে যায়। সম্পর্কে খুঁনসুটির প্রয়োজন আছে।

-যাবেন?

-যাওয়ার জন্য বেশি ব্যস্ত? কি মতলব আটছো বলো তো? দেখো আমি কিন্তু একদম পিউর ভোলাভালা এক অবুঝ পুরুষ। আড়ালে নিয়ে আমার সতীত্বহরণ করবে না তো?

-ছেলেদের সতীত্ব থাকে?

-মেয়েদের থাকলে ছেলেদের কেন থাকবে না? সবখানে বৈষম্য মেটানোর স্লোগান চলছে আর তুমি সেসব পাত্তা না দিয়ে ভেদাভেদ করার চিন্তায় আছো। এটা ঠিক না।

-গিরগিটি! আপনার মত এত রঙ গিরগিটিও পাল্টায় না।

-কারন গিরগিটির এত রঙ নেই। যতটা ভালোবাসায় আছে। আর ভালোবাসার রঙে যে রঙিন হয় তার রঙের হিসাব একমাত্র সে করতে পারে যে ভালোবাসে। তুমি তো ভালোবাসা কি জানোই না, রঙের হিসেব কি করে করবে? যাই হোক, চলো। আমার শো আছে দুপুরে।

__________________

ফার্মহাউজটা সুবিশাল দৈর্ঘ্যপ্রস্থে নির্মিত। জঙ্গলের বিপরীতে ছোটখাট মাঠের পাশে। গাড়ির হর্ন বাজাতেই দারোয়ান দরজা খুলে দিল। আরশান গাড়ি নিয়ে ঢুকে দারোয়ানের সঙ্গে হেসে কথা বলতে বলতে নামলো। অয়ন্তি চারপাশটা দেখছে। বাড়ির সামনে ঝরণার ফোয়ারা! ডান পাশে বাগানের মত, বাপাশে ফুলের রাজ্য মনে হচ্ছে। অয়ন্তি সেসব দেখতে দেখতে এগিয়ে গেল। আরশান দারোয়ানকে খাবার আনতে বলে পেছন পেছন আসলো।
-দারুন জায়গা তো।
-দারুন? বাসরের প্লানিং এখানে করলে কেমন হবে?
-একদম বাজে।
আরশান মুচকি হাসে।

বাড়ির ভেতরটা চকচক করছে। প্রতিনিয়ত পরিষ্কার করা হয়, তা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। আরশান বলতে শুরু করলো,
-আমার জীবনের অনেকটা সময় এখানেই কেটেছে। এখানে পিকনিকে আসতাম। এই ফার্মহাউজের প্রতিটা দেওয়ালে, মেঝেতে আমাদের চিত্রকর্ম আছে। আমার বাচ্চাদেরও এখানে আনবো আমি। তুমি আসবে তো?

-না।

-তুলে আনবো!আসবে না মানে, তুমি না আসলে আমার বাচ্চাদের দেখে রাখবে কে?(উচ্চস্বরে বলল)

অয়ন্তি ভয়ে কেঁপে উঠে বুকে থুতু দিল। আরশান সেটা দেখে হাসতে হাসতে কিচেনের দিকে চলে যায়। অয়ন্তি পুরো বাড়ি ঘুরে ঘুরে দেখছে। তিনতলার একটা ঘর খোলা। অয়ন্তি কৌতুহলী হয়ে ঘরে প্রবেশ করতেই ওর চোখ পড়লে ঘরের একটা দেওয়াল জুড়ে টানানো বিশাল একটা স্কেচ করা ছবিতে। লম্বা থেকে খাটো হয়ে আসা ছবিটা দারুন লাগছে দেখছে। চেহারা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। তবে যেটুকু বোঝা যাচ্ছে তা হলো, বাম পাশে সবথেকে লম্বা ছেলেটা, তারপর আরেকটা ছেলে, তারপর আরেকটা ছেলে আর তিন নম্বর ছেলেটার হাত ধরে চোখ টিপে দাঁত বের করে হাসা এক বাচ্চা মেয়ে। তিনম্বর ছেলেটা মেয়েটার দিকেই তাকানো। স্কেচে ভারি মিষ্টি লাগছে দুজনকে। কারা ওরা? আরশান অয়ন্তিকে খুজতে খুজতে উপরে আসল। অয়ন্তি একধ্যানে ছবিটার দিকে চেয়ে আছে দেখে আরশান হেসে বলে,

-আমাদের ছোটবেলার ছবি। আন্টি স্কেচ করিয়েছিলেন। আরসালান ভাই, আমি, বেবি। বেবিকে কেমন দুষ্টু দুষ্টু লাগছে তাইনা? ছোট থেকে ভারি দুষ্টু ও। একবার কি হয়েছিল জানো? আমি যখন প্রথম ওদের বাড়িতে যাই, তখন কিছু চিনতাম না। বাবারা ওদের বাড়িতে ঢুকে পড়েছিল, আর আমি গাড়ি থেকে নামছিলাম। গাড়ি থেকে নামতেই ও আমার ওপর গোবরের পানি ছুড়ে মা’রলো। আমি তব্দা খেয়ে দাড়িয়ে ছিলাম। আরসালান ভাই হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছিল। আমি তো রেগে মেগে একাকার। বাড়ি ঢুকবো না, চলে যাবো এমন জেদ ধরে গাড়ির ভেতর গিয়ে বসতেই ঝপাত করে আরসালান ভাইয়ের গায়ের ওপর পানি পড়ার শব্দ পেলাম। ভাই হাসি থামিয়ে আমার দিকে ভড়কে তাকালো। তাঁর ওই অদ্ভুত চেহারা দেখে আমি হাসতে হাসতে রাগের কথা ভুলেই গেলাম। তখন পিচ্চিটা এসে কোমরে হাত গুজে বলে, ‘তালা তোমলা?’ আড়াই বছরের পিচ্চি, আর তাঁর এহানো কাজে ভাই আমি দুজনেই কুপোকাত। পরে বুঝলাম পানিগুলো ও নয়। অন্য একজন মে’রেছে। যে একসময় বেবির প্রতিটা কথা শুনতো। কিন্তু বুদ্ধিগুলো তো বেবিরই।
-বেবির প্রশংসায় পঞ্চমুখ!
আরশান থেমে গেল। অয়ন্তি কৌতুহলী কন্ঠে বলল,
-রোজার হাত ধরে আছে ওটা আপনি? আরসালান ভাই বোধ হয় সবথেকে লম্বাজন।
-ওটা না, আমি আরসালান ভাইয়ের পাশেরজন।
-তাহলে ওটা কে? রোজার দিকে দারুনভাবে তাকিয়ে আছে। আপনাদের বন্ধু নাকি?
-হ্যাঁ।
-কি নাম?
-দুপুর হয়ে এলো। চলো খেতে হবে। তুমি এত বকবক করো কেন?

আরশানের এড়িয়ে যাওয়াটা বেশ বুঝলো অয়ন্তি। মনে প্রশ্নটা চাপা দিয়ে আরশানের পিঁছু পিঁছু আসলো সে। কারন আরশানের খপ্পর থেকে বাঁচা মুশকিল। বাড়ির যা অবস্থা তাতে বিয়েটাও ভা’ঙা অসম্ভব। তাই বিয়েটা যখন হবেই, অয়ন্তির উচিত আরশানের সম্পর্কে জানা। খাবার টেবিলে বসে অয়ন্তি প্রশ্ন করে,
-আপনার পুরো নাম?
-আরশান খাঁন তৈমুর।
-বয়স?
-তেত্রিশে পড়েছে।
-কি?
-কি?
-আমার থেকে পনেরো বছরের বড় আপনি? হোয়াট দ্যা! এত বয়স্ক মানুষের সাথে আমার বিয়ে ঠিক করল কি করে বাবা? আজব তো!
-আমাকে দেখে বয়স্ক মনে হয়?
-মনে না হলেও, বয়স্ক তো। এইজ ডিফারেন্স এত নিয়ে কাউকে মানা যায় না। লজ্জা করে না নিজের থেকে এত ছোট একটা মেয়ের পেছনে হাত ধুয়ে পড়ে থাকতে।
-না।
-লজ্জা থাকলে তো লাগবে। নির্লজ্জ।
-বিয়ের প্রস্তাব তোমার বাবা পাঠিয়েছে। আমাকে এসব বলছো কেন? নিজের বাবাকে গিয়ে বলো।
-বলা যাবে না। তারপর বলুন আপনার ইনকাম কত?
-তোমার যত টাকা লাগবে তা তৎক্ষনাৎ পাবে। তাই এই হিসেব তোমাকে রাখতে হবে না।
-খাঁটাশ।
-ধন্যবাদ।
-কি করেন?
-বউয়ের সেবা। আর তাঁর কটুক্তি শোনাই আমার কাজ। পারিশ্রমিক পাইনা, তবে আশা করছি তাকে পরিশ্রমিক হিসেবে পাবো।
-সোজা কথা সোজা করে বলতে পারেন না?
-সোজা বললে বুঝবে না। নেক্সট কুয়েশ্চন?
-বাড়িতে কে কে আছে?
-বাবা, ভাই, রজনী ভাবি, ভাইয়ের তিন ছেলেমেয়ে অভী অয়ন আর রোশনি।
-কি পছন্দ করেন?
– লিস্ট করে তোমার বাড়িতে পাঠিয়ে দেবো।
-বেয়াবদ একটা।
-তোমার লজ্জা করেনা? পনেরো বছর বড় একজনকে বেয়াদব, অসভ্য, নির্লজ্জ, অভদ্র বলতে? এসব বলার উপযুক্ত কারন এখনও দেখাইনি আমি। যদি রেগে গিয়ে দেখাই? তখন কি করবে? আমার রাগ বাড়ছে কুসুম।
-সময় লাগবে ভাবতে।
-ওকে।
-আর’জে রোজের সঙ্গে আমার দেখা করিয়ে দেবেন? যাস্ট একবার, আর কখনও কোনো অনুরোধ করবো না। প্লিজ!
-কেন?
-কিছু প্রশ্নের উত্তর চাই আমার।
-সে তোমার প্রশ্নের উত্তর দেবে না। আর’জে রোজ অতি চুপচাপ থাকা একজন! প্রয়োজন ছাড়া কথা বলেনা। তোমার সঙ্গে তো তাঁর অফিসিয়ালি পরিচয়ও নেই। তাই সে মিটিংটা এ্যাটেন্ড নাও করতে পারে।
-সেটা আমি বুঝে নেবো।
-ওকে। সোমবার সকাল ন’টায় তৈরি থেকো।

_______________

রোজের সামনে বসে কফিমগে চুঁমুক দিয়ে আরশান বলে উঠল,
-তুই গতকাল জ্বরের ঘোরে ওর নাম নিচ্ছিলি বেবি।
-কার নাম?
-ওনাকে এনে দাও, আই হেইট ইয়্যু, ইউ নেভার লাভ মি আই নেভার লাভ ইয়্যু! তোমার কাছে ফিরবো না।

রোজের মনে পড়লো ঘটনাটি। তারপর আলতো হেসে বলল,
-পুরোনো অভ্যাস। তাই হয়তো বলে ফেলেছি। সিরিয়াস কিছু না। কিছু কিছু মানুষ চলে গেলেও তাদের স্মৃতির রেশ রেখে যায়। উনি তেমনই একজন। আর আমি তো বলেছিই আমি কাউকে ভালোবাসিনা, বাসবো না।তাকে তো একদমই না। মায়া জমে ছিল বলে তার নাম জপ করেছি। নাথিং এল্স দাদাই।

-সিরিয়াসলি? তুই বলছিলি ওর জন্য তোর কষ্ট হয়। বাবা আমাকে এই নিয়ে অনেক কথা শোনালো। আমিও প্রথমে যখন গাড়িতে বসে শুনলাম, অপরাধবোধে তো প্রায় কেঁদেই ফেলেছিলাম।

-ধ্যাত! কিসের অপরাধবোধ?আঙ্কেলকে আমি বুঝিয়ে বলবো। আর তোমরা সবাই তো জানো জ্বর হলে আমি আধা মাতাল আর আধা পাগল থাকি। সব কথা ধরতে আছে নাকি? যা যা বলেছি, ভুলে যাও। আর উনি নয় ও, ওকে আমি ঘৃণা করি। বুঝেছ? যে আমার মর্ম বোঝে না তাঁর মর্ম বুঝে লাভ নেই আমার।

-বাঁচালি। কিন্তু কাল তোর অভিমান হয়েছিল কি নিয়ে? কুসুমের আরশান আছে, তোর কেউ নেই। এটার মানে কি হ্যাঁ? জামাই লাগলে বল, আমার ছোট ভাইব্রাদাররা তো তোর উপ্রে ফিদা! ইশারা দিলেই লাইন লেগে যাবে।

-আমার বয়স মাত্র আঠারো! একুশ পার হোক। লাইন তখন লাগিও। এখন লাগবে না।

-কুসুম তোকে সন্দেহ করছিল। সবাই করে, কাহিনি কি বুঝলাম না। আমাদের দেখলে কোন এঙ্গেলে প্রেমিক প্রেমিকা টাইপ লাগে?

-কি জানি! হয়তো আমরা দুজন দুজনকে গুরুত্ব দেই, কদর বুঝি, কেয়ার করি, এসবেই। বাট সেগুলো তো ভাই-বোন হিসেবে।শুধু কি প্রেমিক-প্রেমিকা’রাই ওভাবে কথা বলে? ভাইবোন’রা বলতে পারে না?

-গুড আন্সার।চলার মত! বাট সত্যি করে বল তো বেবি! আমার ওপর তুই ক্রাশড না? তোর উপ্রে কিন্তু আমি বাচ্চাকাল থেকে ক্রাশড। শুধু আমার ঘুড়ির নাটাই কুসুমের হাতে বলে,,

-ক্রাশ নয় ভালোবাসা। ভালোবাসা হলে হ্যাঁ! আমি তোমাকে ভালোবাসি। শুধু তোমাকে না পৃথিবির সকল কিছুকে ভালোবাসি। সকল সৃষ্টিকে। বাট তোমার কুসুমের যে হাল শুনলাম! তোমাকে বিয়ে করে কিনা দেখো। বুইড়া জামাই তো ওর পছন্দ না।

-বিয়ে না করে যাবে কই? তুলে আনবো না। আরশানকে বারো বছর ঘুরিয়ে যেতে পারবে?

রোজকে বোঝানোর জন্য এটা বললেও আরশান স্বস্তি পেলনা। কারন সে অয়ন্তির আজকের কথাগুলো সারা দিন ভেবেছে। সত্যিই কি ওদের এক হওয়া সম্ভব নয়? অয়ন্তি কি ওকে মেনে নিতে পারবে না? আরশানকে মুডে থাকতে দেখে রোজ রসিকতা করে বলে,

-সমস্যা নেই। যদি কুসুম না হয়, বেবি দিয়ে কাজ চালাবে। এমনিতেই তো সবাই ভাবে আমাদের মধ্যে চক্কর আছে। কুসুম ছ্যাকা দিলে আমি মলম লাগিয়ে দেবো। নো প্রবলেম। আমার মনটা আবার সমুদ্রসমান বড়।বুঝলে, নিজে কষ্ট পাবো, কিন্তু তোমাকে তোমাদের কষ্ট পেতে দেবো না।

-তুই আর মলম? তুই তো কা’টা ঘায়ে নুন, লঙ্কার ছিটে দিতে আসবি। বজ্জাত মেয়ে!

রোজ হেসে বলল,
-হতেও পারে! আমাকে দিয়ে নিশ্চয়তা নেই। এখন যাও, পড়তে দাও আমাকে। আর হ্যাঁ, যাওয়ার সময় গেট টেনে দিও। আমি বাইরে যাবো, তখন তালা দেবো।

আরশান যেতে যেতে ভাবলো রোজ কি ওকে সত্যিই মলমের কথা বলল? নাকি পুরোটাই মজা? রোজ তো এমন মজা করেনা। তারপরই ভাবে, ধুর কি ভাবছে ও? রোজ ওকে ভালোবাসবে কি করে? রোজ তো এসব বোঝেইনা। হয়তো আরশান ক্রাশের কথা তোলার জন্য রোজ মশকরা করেছে। হ্যাঁ! এটাই হবে।

ওদিকে রোজ আরশানের দিকে তাকিয়ে বলল,
-ভালোবাসা বুঝি আমি। ভালোওবাসি। কিন্তু বলার জো নেই বলে বলিনা। তোমাদের বুঝতে দেইনা। ওনার কথা তোমরা কেন মনে করিয়ে দাও? তোমরা কি একদমই বোঝো না?ওনার কথা শুনলে আমার কষ্ট হয়। বুকের ভেতরটা পুড়তে শুরু করে। জমে থাকা কয়লা জ্বলতে শুরু করে। আজ তো কথার জালে সবটা চাপা দিলাম। ভবিষ্যতে কি করবো? জ্বর আসলে তেমাদের সামনে যাবোই না, তাহলে ওনার কথা মা-বাবার কথাও ঘোরের মধ্যে বলবো না। তোমরাও তাহলে বুঝবে না দাদাই।

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে