#তুই হবি শুধু আমার
#সাইরাহ্_সীরাত
#পর্ব_ছয়
অয়ন্তিকে পৌঁছে দিয়ে বাড়ি ফিরছিল আরশান। রাস্তায় রোজকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে সে দ্রুত গাড়ি থামালো। ওটা রোজ কিনা বোঝা যাচ্ছে না তাই সে গাড়ি থেকে নেমে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করতে থাকলো কালো থ্রিপিচের ওপর কালো লেদারের জ্যাকেট পড়া বাচ্চার মত দেখতে ছোটখাট মেয়েটিকে। মেয়েটি বিরক্তি নিয়ে ফোনে কাউকে অনবরত কল করছে। ওপর পাশ থেকে হয়ত রিসিভ হচ্ছে না। চট করে আরশান নিজের বাম পকেটে থাকা ফোনটা বের করল। সাইলেন্ট করা ফোনে বিশটারও বেশি মিস কল। উপরে জ্বলজ্বল করছে ‘বেবি’ নামটা। আরশান দ্রুত ফোন রিসিভ করে ‘হ্যালো’ বলতেই ওপর পাশ থেকে ভারি দীর্ঘশ্বাস শোনা গেল। আরশান দেখলো দূরে দাড়ানো মেয়েটাও কানে ফোন নিয়ে দাড়িয়ে আছে। আরশান আবারও ডাকে,
-বেবি! কোথায় তুই?
-রোডে! বৃষ্টির জন্য গাড়ি পাইনি। তুমি কি আমাকে একটু পৌঁছে দেবে দাদাই?
-কালো থ্রিপিচ পড়েছিস? আমার জ্যাকেটসহ!
-কোথায় তুমি?
-আরে তোর সামনেই।সামনের গাড়ির কাছে চলে আয়। আর স্যরি, রিয়েলি ভেরি স্যরি! ফোনটা সাইলেন্ট ছিল তাই রিসিভ করতে পারিনি।
-বুঝেছি। তোমার কুসুম সঙ্গে থাকলে তোমার কি আর কারোর কথা মনে থাকে? রাখো আসছি আমি।
-অভিমানি কন্ঠস্বর! হয়েছে কি?
-কিছু না।
-তোদের মেয়েদের এই ‘কিছু না’ শব্দের মধ্যে অনেক কিছু থাকে। আমাকে বোঝাতে আসিস না, কি হয়েছে সেটা বল।
-চলে যাবো? এত জেরা ভালো লাগছে না।
-এই না, না আয়। পাগলি!
গাড়ির সামনে এসে রোজ দাড়িয়ে রইল। আরশান মৃদু হেসে উঠে গিয়ে গাড়ির দরজা খুলে হাত মেলে রোজকে বসতে বলল। রোজ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বসে। মনটা আজ বড্ড বিক্ষিপ্ত। একশ দুই জ্বর নিয়ে টানা দেড় ঘন্টা শো করে, কিছু খারাপ ভালো গল্প শুনে বড্ড ক্লান্ত সে।চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। জানালার কাঁচ বন্ধ করে রোজ মাথা সীটে লাগিয়ে দিল। মৃদু ভলিয়মে এখনও রেডিও বেজে চলেছে। রোজ বিরক্ত হয়, কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। কিন্তু রেডিওর শব্দে মাথা ধরে যাচ্ছে। তাই অনেক কষ্টে ভগ্নস্বরে বলে,
-ওফ ইট দাদাই।
আরশান ভ্রু কুঁচকে তাকাল। রোজের ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত চেহারা দেখে বুকের ভেতর ছ্যাত করে উঠলো। রোজের যে জ্বর সেটা তো ওর খেয়ালই ছিল না। টেক্সটাও নিচে পড়ে গিয়েছিল বলে ভালো করে দেখা হয়নি। মেয়েটা কি সেজন্য দুঃখ পেয়েছে? আরশান গাড়ি থামিয়ে ডান হাত রোজের মাথায় ছোঁয়াতেই শিউরে উঠলো। উত্তাপে হাত জ্বলে উঠল মনে হয়। আরশান রোজের মাথায় পুরো হাত রেখে বলল,
-কষ্ট হচ্ছে অনেক?
রোজের সরল স্বীকারক্তি,
-হুম।আজ কেমন জানি মনে হচ্ছে, সত্যিই আমার কেউ নেই। পৃথিবিতে আমি একা। সবাই চলে গেল, তাহলে আমায় রেখে গেল কেন? দাদাই। কার ভরসায়?
-আমি স্যরি বললাম তো।
-স্যরি শুনতে চেয়েছি? আর যাকে তাকে স্যরি বলার অভ্যাস বদলাও।
-তার মানে শুধু অভিমান না, রাগও হয়েছিস আমার ওপর।
-না।
-বললেই হলো? আমি বুঝি না? জ্যাকেটটা খুলে রাখ।
-উহু ঠান্ডা।
-আরে জ্যাকেটে পানি জমেছে। ওতে ঠান্ডা বেশি লাগবে। কুসুমের ওরনা আছে ওটা পেঁচিয়ে নে।
-লাগবে না।
-আবার রাগ হচ্ছিস? তুই বড্ড জ্বালাচ্ছিস বেবি! এটা একদমই ঠিক না।
-ছুটি চেয়েছিলাম তোমার বাপ দেয়নি কেন? এটা ঠিক?
-তোর শো কে করবে? তোকে ছাড়া ওটা করা অসম্ভব। সবাই তোকে চায়, বুঝিস না কেন?
-তোমার মত একজন প্রয়োজন আমার। কুসুমের যেমন আরশান আছে, রোজের তেমন কোনো মানুষ নেই কেন দাদাই?
-চোখ বুজে রাখ। কথা বলবি না আর।
রোজ কথা বাড়ালো না। চোখ বুজে রইলো। আরশানের দৃষ্টি সামনে থাকলেও মন পড়ে রইল পাশের রমনীটির কাছে। যে মেয়েটা সবার সব সমস্যা মেটায়, সবাইকে হাসায় তাঁর মনের দুঃখ মেটানো এতটা কষ্টসাধ্য কেন? মাঝে মাঝে আরশানের নিজেকে অপরাধি মনে হয়। ওর জন্যই বোধ হয় রোজের আজ এমন অবস্থা। যদি সময় থাকতে মানুষ মূল্য দিতে জানতো, বুঝতে জানতো। তাহলে হয়তো আজ পরিস্থিতি অন্যরকম হত। বুক চিরে এক দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসতেই আরশান বুঝলো রোজ ঘুমিয়ে পড়েছে। ভারি নিঃশ্বাস আছড়ে পড়ছে, হাত সীট থেকে নিচে পড়ে গেছে। এলোমেলো হয়ে সিটের মাঝে শুয়ে পড়ার চেষ্টা করছে। আরশান সীটবেল্ট খুলে রোজের মাথা নিজের কোলের ওপর রেখে অয়ন্তির ওরনা দিয়ে সীটের সঙ্গে ওর কোমর বেঁধে দিল যেন ধাক্কায় পড়ে না যায়। রোজ ঘুমের মধ্যেই বিরবির করে বলল,
-আই হেইট ইয়্যু! আই যাস্ট হেইট ইয়্যু। ইউ নেভার লাভ মি। আই নেভার লাভ ইয়্যু। আমি কখনও তোমার কাছে যাবো না। তুমি ভালোবাসা দেখালেও না। কারন আমি তোমাকে ঘৃণা করি, শুধু ঘৃণা।
আরশানের চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো রোজের চেহারার ওপর। উষ্ণ তরল পদার্থ টের পেতেই রোজ বা হাতে মুখ চুলকালো। আরশান তা দেখে সযত্নে সে পানি নিজের রুমাল দিয়ে মুছে দিল।রোজ চায়না ওর বিরুদ্ধে ওর অবচেতনায় কোনো পুরুষের ছোঁয়া পেতে। তাই আরশান রোজের সেই চাওয়ার বিরুদ্ধে যেতে পারে না। সজাগ থাকলে সে অবশ্যই হাত দিয়েই রোজের চেহারা মুছে দিত। আরশান নিজের বাড়িতেই রোজকে নিয়ে আসলো। গাড়ি গ্যারাজে রেখে সে রোজকে ডাক দিল। প্রথম ডাকে সাড়া পেল না, পরে আরও তিন-চারবার ডাকতেই রোজ উঠে বসলো। জ্বরের ঘোরে বাচ্চাদের মত করে বলল,
-স্যরি, কষ্ট হলো নাকি তোমার? পায়ে ব্যাথা পেয়েছ?
-থাপড়ে গাল লাল করে দেবো। নিজে অসুস্থ হয়ে পড়ে আছিস, আর আমাকে নিয়ে চিন্তা! নিজের কথা ভাব। আমি নিজে স্যুপ বানিয়ে দেবো তোকে, ঘরে গিয়ে সেটা খেয়ে ঘুমাবি। বাড়তি কোনো কথা না, ওকে?
-তুমি আমাকে বকছো দাদাই?
-বকবো না? কোনো কথা শুনিস তুই? নাম, আমাকে ধরে হাট।
-আমি তো একা হাটতে পারবো।
-ধরে হাটবি নাকি কোলে নেবো?
-ধরে হাটছি। হাত কই তোমার? আমি দেখতে পাচ্ছিনা।
-চোখ তো খেয়ে ফেলেছিস। কাঁনা! এই নে ধর।
আরশান রোজের হাত ধরতেই রোজ আরশানের হাত চেপে ধরলো। বাড়ির ভেতরে ঢুকতেই আরসালান ভাই ও তাঁর স্ত্রী রজনী ভাবি এগিয়ে আসলেন। রজনী ভাবি উতলা কন্ঠে শুধালেন,
-পিচ্চিটার হলো কি? টলছে কেন? আরশান ওকে ধরে সোফায় বসাও। জ্বর নাকি? মেয়েটা একদম কথা শোনে না। পঁচা মেয়ে।
রোজ অভিমানি গলায় বলে,
-দাদাই আমাকে আমার বাড়িতে রেখে আসো। আমি তো পঁচা। থাকবো না এখানে।
-থাকবো না বললেই হলো? আরশান পানি আনো। ওর গলা শুকিয়ে আসছে। অভীর বাবা ডাক্তারকে ডাকো। মেয়েটার গা তো জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে।
আরসালান ফোন নিয়ে দূরে গিয়ে দাঁড়লো। এত রাতে ডাক্তার বাড়িতে আসতে পারবে না, কিন্তু মেডিসিনের নাম নিশ্চই বলতে পারবে। ড্রইংরুমে চেঁচামিচি হতেই আরশানের বাবা আমীর সাহেব চোখে চশমা পড়তে পড়তে নিচে নামলেন। সবাইকে একসঙ্গে নিচে দেখে তিনি বিচলিত কন্ঠে প্রশ্ন করে,
-কি হয়েছে? লাইট জ্বালানো দেখে নামতে হলো।
রজনী জবাব দিল,
-রোজের অনেক জ্বর বাবা। আরশান নিয়ে আসলো।
-সেকি! জ্বর কমেনি? আমি যে আসার সময় মেডিসিন দিয়ে আসলাম। নিশ্চই খায়নি। এই মেয়েটা এত জেদি! আরসালান এ্যান্টিবায়োটিক আন। ওর সিম্পিলে কাজ হয় না।
বাবার আদেশ পেতে আরসালান নিজের ঘরে গিয়ে এ্যান্টিবায়োটিক নিয়ে আসলো। আরশান স্যুপ বানিয়ে এনেছে। আমীর সাহেব নিজ হাতে রোজকে স্যুপ খাইয়ে দিলেন এরপর ঔষধ রোজের মুখের সামনে তুলতেই রোজ বমি করার ভাব নিয়ে বলে,
-ছি! তুমি তো জানো, এসব খাই না আমি। এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবো।
-খেতে হবে না। গিলতে হবে। চুপচাপ গিলে ফেল। মানা শুনবো না আমি।
-তুমি পঁচা। তোমরা সবাই পঁচা।
-ঠিক আছে। তুই একা ভালো। তাই ভালো মেয়ের মতো ঔষধটা খেয়ে নে মা।
-খেলে কি দিবা?
-কি চাই?
রোজ ঠোঁট উল্টিয়ে বলে,
-ওনাকে ফিরিয়ে দাও। আমার একা খুব কষ্ট হয়। কষ্ট হয় অনেক। ফিরিয়ে দাও না ওনাকে।
আমীর সাহবে ছেলেদের দিকে তাকিয়ে রজনীর পানে চাইলেন। সবাই অসহায় দৃষ্টিপাত নিক্ষেপ করে আছে। সব থেকে করুন চেহারা আরশানের। আমীর সাহেব হাসার চেষ্টা করে বললেন,
-আচ্ছা। আগে খেয়ে নে, তারপর তোর ওনাকে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করছি।
রোজ কাঁদো কাঁদো চেহারায় বলে,
-সত্যি তো?
-হুম।
-তিন সত্যি?
-আগে খেয়ে নে। না খেলে কোনো উনি টুনি আনবো না। আমার মেয়ে কি ফেলনা নাকি, যে ছেড়ে যায় তাকে ডেকে আনবো কেন? সে বুঝুক হীরার আর কাঁচের কি তফাৎ।
-আমি তো তাও না। পায়ের ধুলো, তাই পিসে মাড়িয়ে চলে গেল।
-রোজ! (ধমক দিলেন)
-খাচ্ছি তো। কিন্তু তিতা লাগবে।
-আরশান ফ্রিজ থেকে আইসক্রিম, ফালুদা, কাস্টার্ড, মিষ্টি সব এনে দে। এবার খা মা, আরশান চকলেটও আনছে। ঔষধ খেয়ে ওসব খা, দেখবি তিতা লাগবে না।
-ঠিক আছে।
রোজ ঔষধ খেতে খেতেই রজনীর কোলের ওপর শুয়ে পড়লো। আমীর সাহেব হতাশ চোখে চাইলেন। মেয়েটা কত আশা নিয়ে নিজের একটা ইচ্ছে প্রকাশ করল। আর তারা সেটাও পূরণ করতে পারবে কিনা জানেন না। আরশান বাবার দিকে ফিরে বলল,
-ওকে একা রাখা ঠিক হবেনা। কিছুদিন এখানে থাকুক।
-হ্যাঁ।
-তুমি কি আমার ওপর এখনও রেগে আছো বাবা?
-না।
-তাহলে এভাবে কথা বলছো কেন? সব তো স্বাভাবিক হয়ে গেছে। তবুও,
-কারন রোজের এমন অবস্থা হওয়ার পেছনে তোমারও হাত আছে। তুমিও অপরাধি, অন্যায় তুমিও করেছ।
-বাবাহ্!!
-যতদিন না রোজ ঠিক হয়। সুস্থ হয়, আমাকে বাবা ডাকবে না তুমি।
-ঠিক আছে। আমিও দেখবো বেবি কতদিন আমাকে অপরাধি বানিয়ে রাখে। আমার জন্য হলেও ওকে সুস্থ হতে হবে।
-কে তুমি? ওর জীবনে তোমার ভূমিকা কি যে তোমার জন্য ও সুস্থ হবে? পারলে নিজের ভুল শুধরাও। নাহলে,
-নাহলে?
-বলে কি লাভ?তুমি শোনার মত ছেলে? দায়িত্বজ্ঞানহীন মানুষ।
কথাগুলো বেশ রেগে বললেন আমীর সাহেব।যার দরুন রোজ ঘুমের ঘোরেও চিৎকার শুনে বলল,
-ঝগড়া করেনা। ঝগড়া ভালো না।
আমীর সাহেব রোজের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
-তোর এত ভালো হওয়া উচিত ছিল না মা। তোর কঠিন হওয়া উচিত ছিল।
সকালে ঘুম ভাঙতেই কাউকে কিছু না বলে বেরিয়ে গেল রোজ। গন্তব্য লাইব্ররি। কিছু বই কালেক্ট করতে হবে। পড়া বাকি অনেক। অনেক কিছু জানা বাকি। সব জানতে হবে তো।
___________
খাবার টেবিলে অয়ন্তি আসামাত্র আশরাফ মীর্জা গলা পরিষ্কার করে কিছু একটা বলার প্রস্তুতি নিলেন। অয়ন্তি বুঝলো বিয়ের ব্যাপার এটা।তাই মেজাজ আগে থেকেই গরম হয়ে গেল। আশরাফ মীর্জা ভণিতা না করেই বলে উঠলেন,
-আমীর খাঁন বলছিলেন, আগামী মাসের শেষের দিকে যদি বিয়েটা।
-আরশানকে চিনি না আমি। চিনতে, জানতে সময় লাগবে। তারপর আলোচনা। অপরিচিত একজনকে হুট করে বিয়ে কিভাবে করবো?
-আচ্ছা।
খাওয়া শেষে অয়ন্তি তৈরি হয়ে নিল। প্রাপ্তকে একবার দেখতে যাওয়া উচিত। কিন্তু আরশান? সে যদি কোনো ভাবে ধরে ফেলে তাহলে তাঁর অদ্ভুত কাজের শুরু হয়ে যাবে। যেটা অয়ন্তি চায়না। লোকটা একটা মহাঅসভ্য। কখন কি করে বসে বলা যায়না। তার থেকে লাইব্ররিতে গিয়ে জার্নালিজমের কিছু বই এনে পড়লে কেমন হয়? কিছুদিন পরই রেজাল্ট দেবে। তারপর সে জার্নালিজমে ভর্তি হয়ে অনার স্বপ্ন পূরণ করবে।যেই ভাবা সেই কাজ। অয়ন্তি গুছিয়ে ড্রাইভারকে সঙ্গে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লো। লিস্টও করেছে কি কি বই আনবে। কিন্তু লাইব্রেরিতে এসে হতাশ হতে হলো।লিস্টের একটা বই’ও নেই। কেউ নিয়ে গেছে। এটা কোনো কথা? বিরক্ত, বিষাদগ্রস্ত চিত্তে বারান্দা দিয়ে হাটতেই অয়ন্তির নজর আটকালো সামনেই ধূসররঙা শার্ট পড়া পুরুষটির দিকে। অয়ন্তি ভালো করে চাইল। আরশানের মত লাগছে। কিন্তু আরশান এখানে কি করবে?তাছাড়া ওর তো শো চলছে এখন। অয়ন্তি মনের ভুল ভেবে পাশ কাটিয়ে যেতেই আরশান অয়ন্তিকে ডাক দিল,
-এই কুসুম তুমি এখানে?
অয়ন্তি দাঁড়ালো না। আরশান অয়ন্তির পেছনে পেছনে এসে গম্ভির কন্ঠে বলল,
-ডাকছি তো।
-আপনি? আমি তো হ্যালুসিনেশন ভেবেছিলাম।
-আমাকে নিয়ে তাহলে কল্পনাও হয়? ভালো ভালো। তা কি কি কল্পনা করেছো?বাচ্চা অবধি পৌঁছেছে কল্পনা?
-অসভ্য।
-ওহ হ্যাঁ। গতকাল তো এটার অর্থ বলতেই গিয়েছিলাম। বলা হয়নি। চলো আজ বলে দেই।
-কি?
-অসভ্যতার সংজ্ঞা। তাও প্রাকটিক্যালে।
বলেই অয়ন্তিকে টেনে লাইব্রেরির মধ্যে নিয়ে গেল আরশান। অয়ন্তি চিৎকার দিতে যাচ্ছিল তখনই ওর মুখ চেপে ধরলো আরশান। ফিসফিসিয়ে বলল,
-লাইব্রেরি এটা। চেঁচিয়ে সবাইকে বিরক্ত করবে না কুসুম।
রোজ গাড়িতে বই রেখে আবারও লাইব্রেরিতে আসে। ভুল করে লাইব্রেরি কার্ড ফেলে গেছে সে। সেটা নিতেই এসেছিল। কিন্তু আরশান আর অয়ন্তিকে দেখে সে দ্রুত চারপাশে নজর বুলালো। এটা প্রেম করার জায়গা?এরা আর বদলালো না। দরজার সামনে দিয়েই একজন স্যার আসছিলেন। রোজ চোখ বড় বড় করে একবার স্যারের দিকে আর একবার আরশানদের দিকে তাকাল। স্যার দরজার কাছে আসতেই রোজ একগাল হেসে এগিয়ে গেল,
-আসসালামু আলাইকুম স্যার। কেমন আছেন? শরীর ভালো তো?
-আরে রোজ! হ্যাঁ ভালো আছি। তোমার কি খবর?কতদিন পর এলে, তা হঠাৎ কি মনে করে?
-ভালো।কি মনে করে মানে? পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়ে গেছি বলে কলেজে আসা বারণ তা তো কোথাও লেখা দেখলাম না। আপনাদের ব্যানার বা পোস্টার লাগিয়ে নিষেধাজ্ঞা বলে দেওয়া উচিত ছিল।
-তাই? দুষ্টুমি দেখছি আগের থেকেও বেড়েছে।
-আমি দুষ্টু না।
-হুম, দুষ্টু না মহাদুষ্টু। তারপর বলো লাইব্রেরিতে কি মনে করে? এডমিশনের পড়া কেমন চলছে? মেডিকেল নেবে তো?
-চলছে মোটামুটি। আর মেডিকেল না, জার্নালিজম।
-সেকি! ব্রাইট স্টুডেন্ট তুমি। মেডিকেলের জন্য রাতদিন পরিশ্রম করলে। ওসব জার্নালিস্ট হতে হবে না। প্রচন্ড রিস্ক ওতে। পরিশ্রমও অনেক। তোমার স্যার হিসেবে বলছি, মেডিকেলে ট্রাই করো। সরকারিতে চান্স পেয়ে যাবে।
-জি স্যার! মাথায় রাখবো। তো কোথায় যাচ্ছিলেন?
-লাইব্রেরিতে। নোটস দিতে।
-আমিও যাচ্ছি। আমার কাছে দিন, জমা দিয়ে দেবো।
-আচ্ছা।
স্যার চলে যেতেই হাফ ছেড়ে বাঁচলো রোজ। উঁকি দিয়ে দেখলো আরশান অয়ন্তিকে জোর করে আটকে রেখেছে। অয়ন্তির লজ্জায় রক্তিম হয়ে যাওয়া মুখটা দেখে স্মিত হাসে রোজ। প্রয়োজনের অধিক কথা বলা রোজের পছন্দ নয়। আগে ছিল কিন্তু ইদানিং কথা বলতে ইচ্ছে করেনা। তবুও এদের জন্য কতকিছু বলতে হলো। নোটস অবধি বগলদাবা করে ছুটতে হচ্ছে। আর এদের দেখো। দিন-দুনিয়া ভুলে প্রেমে মশগুল।
চলবে?