গল্পঃ #তিথির_প্রতিজ্ঞা ( পঞ্চম পর্ব )
নিলয় বিদ্যুৎ গতিতে তিথির বুকের মাঝখান বরাবর তলোয়ার চালালো, তিথি সরে গিয়ে ঠাস করে নিলয়ের গালে চড় মেরে দিতেই গাল চেপে ধরে স্থির হয়ে নিলয় দাড়িয়ে বললো– এটা কি হলো?!
তিথি বললো– বুকে স্তন থাকে, যেই স্তনের দুধ পান করে শিশুরা বেড়ে ওঠে, নারীদের বুকে, পেটে ও চুল ধরে মারতে নেই এটুকুও জানোনা? নারীদের গায়ে যে পুরুষ হাত তোলে সে কখনও একজন উত্তম পুরুষ হতে পারেনা।
কাচুমাচু করে নিলয় বললো– দুঃখিত মিস মীরা তিথি, কিন্তু আমার হাতে যে আপনাকে মরতেই হবে, আপনাকে দিয়ে প্রতিশোধের পালা শুরু হোক।
কথা শেষ করেই নিলয় পুনরায় তিথির গলা বরাবর তলোয়ার চালাতেই তিথি একদিকে কাত হয়ে যায়, সেই সুযোগে নিলয় পা দিয়ে তিথির পায়ে আঘাত করতেই তিথি কাত হয়ে মাটিতে পড়ে যেতে যেতে খোঁপায় গুঁজে রাখা ফুলটা শূন্যে ছুড়ে মেরে মাটিতে পড়ার সাথে সাথে তুড়ি বাজায়, ফুলটা তলোয়ারে পরিনত হয়ে নিচের দিকে নেমে আসতেই তিথি উঠে দাড়িয়ে খপ করে তলোয়ার শক্ত করে ধরে নিলয়কে লক্ষ্য করে চালায়, নিলয় নুয়ে যায় কিন্তু ততক্ষণে তিথির তলোয়ারে নিলয়ের এক গোছা চুল কেটে মাটিতে পড়ে।
চুলগুলো তুলে হাতে নিয়ে নিলয় অবাক হয়ে তিথির দিকে তাকিয়ে বললো– বেশ বেশ, তলোয়ার পরিচালনায় বেশ পারদর্শী দেখছি, নারীদের থেকে এমনটা আশা করা যায়না। বেশ তৈরি হয়ে মাঠে নামেছেন দেখছি।
তিথি তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললো– পুরুষ সমাজ নারীদের থেকে বেশি কিছু আশা কোনদিন করতে পারেনি, তারা ভাবে নারী শয্যা সঙ্গী, গৃহস্থালি কাজ করবে, বাচ্চা জন্ম দেখে, আর রাত হলে কোমল নরম হাতে স্বামীর খেদমত করবে, স্বামীর ইচ্ছা হলে নিজের শরীরটা স্বামীর সামনে মেলে ধরবে। কিন্তু তোমরা জানোনা নারী যেমন মমতাময়ী, কঠিন রূপে নারী তার দ্বিগুণ ভয়ংকর।
নিলয় অবাক হয়ে শুনছে তিথির কথা।
তিথি তরোয়াল নিলয়ের দিকে তাক করে নিলয়ের চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে বললো– কিন্তু আফসোস, তোমরা আজও নারীদের ছোট করে দেখো। তোমরা আজও নারীকে তার প্রাপ্য সম্মানটুকু দিতে শেখনি। তোমরা এটা জানোনা নারী আসলে কী চায়?
ভ্রু কুঁচকে নিলয় বললো– এই যে, এমন ভাবে বলছেন যেন পৃথিবীর সমস্ত নারীদের আমিই ছোট করে দেখেছি।
তিথি বললো– মুর্খ এটা বিশেষ করে তোমাকেই বলিনি, যারা নারীদের সম্মান দেয়না তাদের উদ্দেশ্যে বলা।
নিলয় বললো– নারী সম্পর্কিত অত জ্ঞান আমার নেই, তবে চেষ্টা করবো প্রাপ্য সম্মান দিতে, কিন্তু তাই বলে আপনাকে ছাড়ছি না।
তিথি আবার বললো– তোমরা নারীদের ভেবেছো কি? কখনও গভীর ভাবে ভাবলে জানতে তোমরা নারীদের কাছ থেকে যা আশা না করো নারীরা তার থেকেই অনেক বেশি দিয়ে থাকে। এই যে পৃথিবীর আলো দেখছো সেটা একমাত্র কোনো নারী তোমাকে তার গর্ভে ধারণ করেছিল বলেই। জানো প্রসবকালীন ব্যথা একজন প্রসূতির জন্য তীব্র যন্ত্রণাময় একটি অভিজ্ঞতা কেননা মানব শিশু প্রসূতির যোনীপথে ভূমিষ্ঠ হয়ে থাকে এবং এর ফলে যোনীপথের যে সাময়িক প্রসারণ ঘটে তা স্নায়ুতন্ত্রের ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করে। অপ্রশস্ত যোনীপথের ক্ষেত্রে ব্যথার মাত্রা তীব্রতর হয়ে থাকে এবং যোনীপথ ছিঁড়ে যেতে পারে। মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে জেনেও জীবন বাজি রেখে একজন নারী বাচ্চা গর্ভে ধারণ করে এবং মৃত্যু সমতুল্য যন্ত্রণা সহ্য করে বাচ্চা প্রসব করে পৃথিবীর আলো দেখায়। সেই নারীদের যখন কেউ হেয় করতে পাগল হয়ে ওঠে তখন তার একবার গভীর ভাবে ভেবে নেয়া উচিৎ।
নারীদের যে মহাপুরুষেরা বুঝেছে তারা লিখে গেছে–
আমার চক্ষে পুরুষ-রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই! বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।
বিশ্বে যা কিছু এল পাপ তাপ বেদনা অশ্রুবারি, অর্ধেক তার আনিয়াছে নর অর্ধেক তার নারী।
নরক কুন্ড বলিয়া তোমা’ করে নারী হেয় জ্ঞান? তারে বল, আদি-পাপ নারী নহে, সে যে নর শয়তান।
অথবা পাপ যে-শয়তান যে-নর নহে নারী নহে, ক্লীব সে, তাই নর ও নারীতে সমান মিশিয়া রহে।
এ বিশ্বে যত ফুটিয়াছে ফুল, ফলিয়াছে যত ফল নারী দিল তাহে রূপ-রস-সূধা-গন্ধ সুনির্মল।
আরও বলেছেন–
চোখে চোখে আজ চাহিতে পারনা; হাতে রুলি,পায়ে মল,
মাথার ঘোমটা ছিঁড়ে ফেল নারী, ভেঙ্গে ফেল ও শিকল!
যে ঘোমটা তোমা করিয়াছে ভীরু ঊড়াও সে আবরণ!
দূর করে দাও দাসীর চিহ্ণ, ঐ যত আভরণ!
নিলয় তিথির জ্ঞানে ও গুণে মুগ্ধ কিন্তু প্রতিশোধের নেশাও মগজে চেপে বসেছে আজ। নিলয় বললো– নারী সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জন করা হলো আজ, আমি প্রতিজ্ঞা করছি সমস্ত নারীদের তার প্রাপ্য সম্মান দেবো শুধু আপনি ব্যতিত।
তিথি ভ্রু কুঁচকে বললো– মানে?
নিলয় বললো– মানে আপনাকে দিয়ে আমি আমার প্রতিশোধ নেবার প্রতিজ্ঞা পূরণের যাত্রা শুরু করতে চাই। আপনাকে হ*ত্যা করে তারপর একে একে আপনার পরিবারের সবাই হবে আমার শিকার।
তিথি বললো– ঘুরেফিরে আবার সেই একই স্থানে ফিরলে তো! ঠিক আছে তোমার মনের ইচ্ছা পূর্ণ হোক। তবে কার হাতে কার প্রাণ যাবে কে জানে!
তলোয়ার হাতে নিয়ে আবারও তিথির ওপর ঝাপিয়ে পড়লো নিলয়। কারো চেয়ে কেউ কম না।
লড়াই চলা অবস্থায় নিলয় বললো– তবে আপনাকে হ*ত্যা করার আগে আপনার এই রূপ যৌবনের স্বাদ গ্রহণ না করলে যে আপনার সাথে ঘোর অন্যায় হয়ে যাবে। প্রথমে আপনাকে ঘায়েল করে আপনার যৌবনের স্বাদ গ্রহণ করবো, তারপর আপনাকে নাহয় হ*ত্যা করবো।
তিথি বললো– বুদ্ধিমানরা কথা বলে কম, অবশ্য তুমি যে নির্বোধ তার প্রমাণ আগেই পেয়েছি। যুদ্ধ জয় করতে মুখ নয়, মস্তিষ্কের ব্যবহার জানতে হয়।
চলছে তলোয়ার যুদ্ধ সমান তালে। দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হবার পরেও তিথিকে ঘায়েল করতে পারছেনা দেখে যুদ্ধ চলমান অবস্থায় নিলয় ছোটু বলে ডাকলো।
কিছু দূরে সেই ছোট্ট ব্যঙটা দৃশ্যমান হলো, ব্যাঙটাকে ইশারায় তিথিকে দেখিয়ে দিলো নিলয়।
ব্যঙটা পেট ভরে শ্বাস নিয়ে আকারে বড়ো হয়ে জিভটা লম্বা করে ছুড়ে তিথির পায়ে পেচিয়ে হ্যাঁচকা টান দিতেই তিথি চিৎ হয়ে পড়ে গিয়ে কোমরে থলিতে রাখা সেই কুমড়ো বীজের মতো একটা বীজ ব্যাঙের দিকে ছুড়ে মারতেই সেটা গিয়ে ব্যাঙের ওপর পড়ে একটা সাপে পরিনত হয়ে ব্যাঙটাকে পেচিয়ে ফেললো। ব্যঙ যত ফুলে বড়ো হচ্ছে সাপও তত লম্বা হয়ে আরও শক্ত করে ব্যাঙকে পেচিয়ে ধরছে।
আর এদিকে নিলয় চিৎ হয়ে পড়া তিথির বুকের ওপর চেপে বসে এক হাত দিয়ে তিথির গলায় তলোয়ার ধরে অন্য হাতটা দিয়ে তিথির বুকের ওপর থেকে কাপড় সরাবার জন্য তিথির বুকে হাত দিলো…
চলবে…
লেখকঃ নিলয় আহমেদ।