গল্পঃ #তিথির_প্রতিজ্ঞা ( ৮ম বা শেষ পর্ব )
সবাই কোনকিছু বুঝে ওঠার আগেই রাজা চাবুক দিয়ে এলিসার পিঠে দুবার আঘাত করতেই এলিসা চিৎকার করে মাটিতে পড়ে গেল। কোমরের খাঁজ থেকে তরবারী টেনে বের করে এলিসার গলায় চেপে ধরে রাজা ফ্র্যাঙ্ক বললো– সত্যি করে বল চিতাদের খাবারে কে মিশিয়েছে ওই মদ? নয়তো এই মুহূর্তে তোকে কেটে টু*করো টু*করো করে চিতাদের পরবর্তী খাবারে পরিবেশন করা হবে।
তলোয়ারের ধারালো পাশ ধীরে ধীরে ডেবে যাচ্ছে এলিসার গলায় আর রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। ভয়ে থরথর করে কাঁপছে এলিসার দেহ।
সমস্ত সৈন্যরা চুপচাপ দাড়িয়ে আছে চারিদিকে।
এলিসা নিরব।
এবার রাজা ফ্র্যাঙ্ক খপকরে এলিসার বুকের একটা স্তন ধরে তরোয়াল উচিয়ে বললো– চুপ করে যত থাকবি শরীরের একটা একটা অঙ্গ তত হারাবি।
কান্না ভেজা চোখে করুন দৃষ্টিতে নিলয়ের দিকে তাকালো এলিসা। এই মুহূর্তে যেন সৃষ্টিকর্তার পরে নিলয়ই এলিসার ভরসা। জলে টলমল তিথির চোখ যেন স্পষ্ট ভাবেই বলছে– এ যাত্রায় আমি রক্ষা না পেলেও আমার মা বাবার হত্যার বদলা যেন নেয়া হয়।
নিলয় ইশারায় স্বীকার করতে বললো এলিসাকে যে চিতাদের খাবারে শাহী মদ এলিসা মিশিয়েছিল।
এলিসা কাঁপা কণ্ঠে বললো– মহারাজ এই চিতা দুটো আমার ওপর একদিন আক্রমণ করেছিল সেই রাগেই আমি ওদের খাবারে শাহী মদ মিশিয়ে দিয়েছিলাম।
রাজা ফ্র্যাঙ্ক এলিসার চুল ধরে টেনে তুলে বললো– তোর মতো হাজার প্রাণের চেয়ে ঐ চিতা দুটো আমার অধিক প্রিয়। এরকম দুঃসাহসের একটাই পরিনাম, সে হলো মৃত্যু।
কথা শেষে রাজা ফ্র্যাঙ্ক এলিসার পেটে তলোয়ার ঢুকিয়ে দেবে এমন সময় নিলয় দৌড়ে এসে বললো– মহারাজ আবার আপনি ভুল করছেন, ওর শাস্তি এত সহজ হলে কীভাবে হবে।
রাজা বললেন– তাহলে?
নিলয় বললো– চিতা দুটো সুস্থ হলে এলিসাকে জ্যান্ত অবস্থায় ক্ষুদার্ত চিতাদের খাচায় ঢুকিয়ে দেয়া হবে যথাযোগ্য শাস্তি মহারাজ।
নিলয়ের কথা রাজার মনে ধরলো।
রাজা হুকুম দিলেন এলিসাকে অন্ধকার কুঠুরিতে বন্দি করে রাখার।
এদিকে রাজার কক্ষে তিথির পায়চারি, রাজা এসেই তো আবার দেহভোগের নেশায় মত্ত হয়ে উঠবে। আর এতক্ষণে তিথি এটা নিশ্চিত হতে পেরেছে যে রাজার এই শয়নকক্ষ কালো জাদুর সুরক্ষা বলয়ে ঘেরা। এখানে তিথির কোনো জাদুকরী শক্তি কাজ করবে না। রাজাকে যেভাবেই হোক ভুলিয়ে ভালিয়ে রাত গভীর পর্যন্ত নিয়ে যেতে হবে।
রাজা ফ্র্যাঙ্ক এসে কক্ষে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিয়ে সোজা পালঙ্কে এসে তিথির পরনের কাপড় খুলবে এমন সময় তিথি রাজার হাতটা ধরে উঠে বসে রাজা ফ্র্যাঙ্কের চোখে চোখ রেখে বললো– মহারাজ আপনি যোর করে নারীদেহ ভোগ করে এক মিথ্যা তৃপ্তি পেয়েছেন এযাবৎ, আর এভাবে চলতে থাকলে আপনি হয়তো সারাজীবন সেই সুখ থেকে বঞ্চিত থেকে যাবেন যেই সুখ জোর করে পাওয়া যায়না ভালোবেসে আদায় করে নিতে হয়।
রাজা ফ্র্যাঙ্ক তিথির কথায় ভীষণ অবাক, এরকম সাহস করে রাজার চোখে চোখ রেখে আজ পর্যন্ত কথা বলার সাহস পায়নি।
তিথির শরীর থেকে হাত সরিয়ে নিয়ে রাজা ফ্র্যাঙ্ক বললো– এই কথার মানে?
তিথি বললো– আপনি যখন জোরজবরদস্তি কিছু চাইবেন সেখানে ততটুকু পাবেন যতটুকু দিলে অন্তত আপনি শান্ত হবেন। কিন্তু সেটা ভালোবেসে আদায় করে নিতে জানলে যতটুকু চাইবেন তার থেকে দ্বিগুণ বেশি পাবেন।
রাজা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তিথির দিকে।
তিথি আবার বললো– আপনি নারীর শরীরে যে সুখ খুঁজে পেয়েছেন সেটা অতি সামান্য। যদি কোনদিন কোন নারী আপনাকে ভালোবেসে আপনার কাছে নিজেকে উন্মুক্ত করে উজাড় করে দেয় সেদিন বুঝবেন আমার কথার মানে।
এভাবে নিখুঁত বুদ্ধিতে সময় অতিবাহিত করতে লাগলো তিথি।
রাত গভীর, চারিদিকে শুনশান নীরবতা।
রাজাকে এত সময় নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলেও মদ খাবার পরে রাজা আর কিছু শোনার পাত্র নয়।
খপ করে তিথির চুল ধরে বললো– ভালোবাসা আমার কাছে হাস্যকর, জোর করে পায় কেবল শক্তিশালীরা।
কথা শেষে রাজা পালঙ্কে তিথিকে চেপে ধরে তিথির কাপড় টেনে খুলবে এমন সময় নিচে থেকে হৈহল্লা চিৎকারের আওয়াজ ভেসে আসলো।
আসলে হঠাৎ করে রাজ প্রাসাদের বাইরে থেকে শতশত জ্বলন্ত তীর ছুটে এসে রাজ প্রাসাদে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে।
যারা তীর ছুড়েছে তারা রাজা ফ্র্যাঙ্কের রাজ্যেরই লোক। কিন্তু মনে মনে তারাও চেয়েছিল রাজা ফ্র্যাঙ্কের পতন। তাই নিলয়ের কথায় তারা এই যুদ্ধে জীবন দিতেও প্রস্তুত।
রাজা ফ্র্যাঙ্ক বিদ্যুৎ গতিতে রাজ প্রাসাদের বাইরে এসে সৈন্যদের নিয়ে ঝাপিয়ে পড়লো আক্রমনকারীদের ওপর।
কিন্তু বিষয় হলো আক্রমণকারীদের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। রাজা ফ্র্যাঙ্ক কখনোই বোঝেনি যে নিজের প্রজাদের ওপর অত্যাচার একদিন নিজের পতন ডেকে আনবে।
সীমান্তে কড়া নিরপত্যা থাকলেও রাজা কোনদিন ভাবেনি রাজ্যের ভেতরেই এত মানুষ একদিন তার বিপক্ষে রুখে দাঁড়াবে। এবং আগেভাগে আলামত টের না পাওয়ায় রাজা ফ্র্যাঙ্কও তৈরী ছিলনা। রাজা ফ্র্যাঙ্কের চিতা দুটোও আজ দূর্বল হয়ে পড়ে আছে। মোটকথা পরিবেশ পরিস্থিতি সবকিছু যেন আজ একসাথে রাজার বিপক্ষে রুখে দাড়িয়েছে রাজার এত এত নিষ্ঠুরতা, অমানবিকতা ও পাপের বদলা নিতে।
তিথি মারিয়া এলিসা নিলয় সবাই আক্রমণকারীদের সঙ্গে মিলে প্রবল বেগে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে রাজার বিরুদ্ধে।
রাজা ফ্র্যাঙ্ক বুঝতে পেরে রেগে আগুন। তলোয়ার নিয়ে একাই ঝাপিয়ে পড়লো তিথি, নিলয়, মারিয়া, ও এলিসার ওপর। রাজার কৌশলের কাছে সবাই ধরাশায়ী প্রায়।
মারিয়াকে ধরে রাজা ফ্র্যাঙ্ক গলায় তলোয়ার চালাবে এমন সময় নিলয় দৌড়ে এসে রাজা ফ্র্যাঙ্কের পেট বরাবর লাথি মারতেই রাজা পড়ে গিয়ে সঙ্গে সঙ্গে নিলয়ের পায়ে লাথি মেরে তলোয়ার খাড়া করে ধরলো। লাথির আঘাতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নিলয় তলোয়ারের সোজা পড়বে এমন সময় সেই ছোট্ট ব্যঙটা দৃশ্যমান হয়ে জিভ লম্বা করে ছুড়ে নিলয়ের গলায় পেচিয়ে হ্যাঁচকা টানে নিলয়কে সরিয়ে নিলো।
রাজা উঠে এবার ঝাপিয়ে পড়লো তিথির ওপর। তরবারী যুদ্ধে রাজার তলোয়ারের সঙ্গে টিকতে না পেরে তিথির হাতের তলোয়ারটা ভেঙে ছিটকে গেল।
তিথির পেট বরাবর লাথি মারতেই তিথি চিৎ হয়ে পড়ে গেল। রাজা দুই হাতে শক্ত করে তলোয়ার ধরে তিথির বুক বরাবর লক্ষ করে ঝাপিয়ে পড়লো। তিথি খোঁপায় গুঁজে রাখা ফুলটা শূন্যে ছুড়ে মারতেই সেটা তলোয়ারে পরিনত হয়ে নিচে পড়তেই খপ করে ধরে ফেললো তিথি। রাজা তলোয়ার নিয়ে তিথির ওপর পাড়ার আগেই সাৎ করে বিদ্যুৎ গতিতে তিথি তার তলোয়ার চালিয়ে রাজার ঘাড় থেকে মাথাটা কেটে আলাদা করে ফেললো।
অবশেষে বিজয় হলো তিথির সেই সাথে প্রতিজ্ঞা পূর্ণ।
ছোটবোন মারিয়া ও নিলয়কে নিয়ে বাবার রাজ্যে ফিরে এলো তিথি। কথা মতো নিলয়কে নিযুক্ত করা হলো সেনাপতি হিসেবে।
তারপর তিথির বাবা নিলয়ের সাথে তিথির বিয়ে দিয়ে দেন। এবং সুখে দিন কাটতে থাকে সবার।
সমাপ্ত।
লেখকঃ নিলয় আহমেদ।