গল্পঃ #তিথির_প্রতিজ্ঞা ( সপ্তম পর্ব )
রাজা ফ্র্যাঙ্ক এগিয়ে গিয়ে তিথির পরনের কাপড় খুলতে খুলতে খুলতে বললো– জীবনে অনেক মানে অসংখ্য যুবতী আমার শয্যাসঙ্গী হয়েছে কিন্তু তোমার মতো অপরূপা এই প্রথম। আজকের রাতটা সত্যি আমার জন্য আলাদা। কোন মেয়েকে এক রাতের বেশি ভোগ করিনি, কিন্তু তোমাকে এতটাই মনে ধরেছে যে কথা দিচ্ছি সাত রাত তোমাকে আমার শয্যাসঙ্গী করবো।
খোলা বুকে তিথি দুই হাত দিয়ে ঢেকে রাখার চেষ্টা করছে তার স্তন যুগল।
তিথির কোমরের কাপড় টেনে খুলবে রাজা ফ্র্যাঙ্ক, এমন সময় নিচে থেকে সোরগোলের শব্দ ভেসে আসলো।
বাইরে কি হচ্ছে সেটা শোনার জন্য কান পাতলো রাজা ফ্র্যাঙ্ক। শুনে মনে হচ্ছে বড়সড় গন্ডগোল বেধেছে।
রাজা ফ্র্যাঙ্ক টেবিলের ওপর থেকে তরবারী হাতে নিয়ে দরজা খুলে বেরিয়ে গেল।
তিথি কাপড় টেনে নিজের বুক ঢেকে দৌড়ে বাইরে বেরোবে এমন সময় বাইরে থেকে রাজা ফ্র্যাঙ্ক দরজা টেনে বাইরে থেকে বন্ধ করে দিয়ে গেল।
তিথি মনে মনে ভাবছে ফিরে এলে নিশ্চয়ই ফ্র্যাঙ্ক তিথির দেহটা ছিড়েখুঁড়ে খাবে। কিন্তু সেই সুযোগ আর দেয়া যাবেনা। রাজা ফ্র্যাঙ্ক ফিরে আসলেই সুযোগ বুঝে তাকে ঘায়েল করতে হবে।
তিথি তার খোঁপায় গুঁজে রাখা ফুলটা শূন্যে ছুড়ে মেরে তুড়ি বাজাতেই ভীষণ অবাক হয়ে গেল। ফুলটা তলোয়ারে পরিনত না হয়ে ফুলই রইলো। তিথি বারবার চেষ্টা করলো কিন্তু ফলাফল একই।
এবার তিথি সেই পানি এক ফোটা পান করলো যেটা পান করলে অদৃশ্য হয়ে যায়। কিন্তু এটাও ব্যর্থ হলো। হঠাৎ এরকম হবার কারণ কী?
হতাশায় ভেঙে পড়লো তিথি, এই শক্তি ছাড়া যে তিথি রাজা ফ্র্যাঙ্কের সামনে দূর্বল, অসহায়। এবার কি হবে তাহলে?
আসলে রাজা ফ্র্যাঙ্কের রাজপ্রাসাদ কালো জাদু দ্বারা সুরক্ষিত। অন্য কোনো শক্তি এখানে অকার্যকর এবং মূল্যহীন।
তিথির মন প্রাণ অস্থির হয়ে উঠলো অজানা আশঙ্কায়। তাহলে কি সব পরিকল্পনা বৃথা যাবে। বাবাকে দেয়া কথা ও প্রতিঞ্জা অসম্পূর্ণ রয়ে যাবে? রাজা ফ্র্যাঙ্ককে কেউ দমন করতে পারবেনা তাহলে?
নানান প্রশ্নের আঘাতে জর্জরিত হতে লাগলো তিথির মন।
এদিকে রাজা ফ্র্যাঙ্ক নিচে এসে দেখলো কালো চিতা দুটো এদিক সেদিকে লাফালাফি করছে ছোটাছুটি করছে। সৈন্যদের ধাওয়া করছে এবং হামলা করছে। কয়েকজন সৈন্য আহত হয়ে মাটিতে পড়ে কাতরাচ্ছে।
রাজা হুঙ্কার ছেড়ে চিতাদের থামতে বলতেই চিতা দুটো ক্ষিপ্ত হয়ে রাজার দিকে ছুটে আসতে লাগলো। রাজা ফ্র্যাঙ্ক ভীষণ অবাক! এরকম তো আগে কোনদিন করেনি এরা, তাহলে আজ কি হলো!
কাছাকাছি এসে চিতা দুটো রাজা ফ্র্যাঙ্ককে লক্ষ্য করে শূন্যে লাফিয়ে উঠে রাজার দিকে ভেসে আসছে। একেবারে রাজার ওপর পড়বে এমন সময় চোখের পলকে রাজা ফ্র্যাঙ্ক হাতের কাছের একটা চেয়ার খপ করে টেনে হাতে নিয়ে দুই চিতার মাথায় দমাদম দুটো আঘাত করতেই চিতা দুটো দুইদিকে ছিটকে গিয়ে মাটিতে পড়ে গোঙ্গাতে লাগলো।
রাজা কিছুক্ষণ মনে মনে কি ভাবলো কে জানে!
এদিকে নিলয়ও রাজার পাশে এসে দাড়িয়েছে।
রাজা এগিয়ে গিয়ে একটা চিতার মুখ খুলে নাক দিয়ে ঘ্রাণ নিয়ে তারপর উঠে দাড়িয়ে বললো– চিতাদের খাবারে শাহি পালি ( এক ধরনের রাজকীয় মদ ) কে মিশিয়েছে।
সৈন্য এবং রাজদাসী সহ সবাই ভয়ে থরথর করে কাঁপছে ভয়ে। এতবড় সাহস আজ পর্যন্ত কারো হয়নি। কারণ সবাই জানে রাজা ফ্র্যাঙ্কের রাজ্যে তার বিরুদ্ধে সামান্য ষড়যন্ত্রের শাস্তিও মৃত্যুদণ্ড। সবাই থরালে কাঁপছে ভয়ে।
কেউ না কেউ তো চিতাদের খাবারে শাহী মদ মিশিয়েছে। এবার তাকে খুঁজে বের করার পালা।
রাজা হুঙ্কার ছেড়ে পুনরায় বললো– যে এই কাজ করেছে সময় থাকতে স্বীকার করো, এমনিতেই তার মৃত্যুদণ্ড ধার্য করা হয়েছে, আর যদি স্বীকার না করো তবে কিন্তু তিলে তিলে মারা হবে।
একজন দাস যে চিতাদের খাবারের দ্বায়িত্বে আছে সে কাঁপতে কাঁপতে রাজা ফ্র্যাঙ্কের পায়ে পড়ে বললো– মহারাজ আজকে দুপুরের আগে আগে আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম হঠাৎ, তাই খাবার দিতে ভুলে গিয়েছিলাম, আর যখন ঘুম ভাঙলো তখন তো দেখলাম চিতারা হুলস্থুল কান্ড বাধিয়ে দিয়েছে মহারাজ।
ঘাড় ধরে টেনে তুলে রাজা বললো– দোষী সাব্যস্ত হলে তোকে কে*টে টু*ক*রো করে চিতাদের খাওয়াবো।
কথা শেষ করে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিলো লোকটাকে।
সবাই উপস্থিত একজন বাদে, সে হলো রাজদাসী এলিসা। রাজার কক্ষে এলিসার যাতায়াত খাবার পরিবেশন করার জন্য। রাজার সন্দেহ হচ্ছে এটা এলিসার কাজ হবে। হয়তো সে নিজে করেছে নয়তো কারো প্ররোচনায়।
দুজন সৈন্যকে রাজা হুকুম দিলেন এলিসাকে ডেকে আনতে।
নিলয় হুট করে বললো– মহারাজ আমি ডেকে আনছি তাকে, আর দেখি মিষ্টি কথার ছলে সত্যটা সহজে বের করা যায় কিনা, এই বিশ্বাস তো আপনার আছে আমার ওপর।
রাজা ফ্র্যাঙ্ক সৈন্য দুজন থামিয়ে দিয়ে নিলয়কে যাবার জন্য অনুমতি দিলো।
নিলয় রাজপ্রাসাদে ভেতরের একটা কক্ষে এলিসাকে খুঁজে পেলো কান্নারত অবস্থায়। নিলয়কে দেখেই উঠে দাড়িয়ে এলিসা বললো– আপনি বলেছিলেন শাহি মদ খাবার স্বপ্ন আপনার দীর্ঘদিনের, তাই আমি আপনার জন্য এনেছিলাম, কিন্তু আপনি এ কি করলেন?
আসলে নিলয় এখানে আসার পরে নিলয়কে খুব মনে ধরে এলিসার, নিজের কাজ সহজ করতে নিলয়ও এলিসার সাথে সখ্যতা গড়ে তোলে। এবং এলিসাকে বারবার বলে শাহি মদের কথা।
নিলয়কে বিশ্বাস করে এলিসা বলেছিল তার মনের সব কথা, কি কারণে কোন উদ্দেশ্যে সে এখানে পড়ে আছে।
আসলে মেয়েরা যাকে একবার বিশ্বাস করে তার কাছে কোনকিছু লুকাতে পারেনা।
এলিসা বলেছিল তার বাবা মায়ের হত্যাকারীও এই রাজা ফ্র্যাঙ্ক। নিজ হাতে রাজাকে হত্যা করে মা বাবা হত্যার বদলা নিতে এলিসা এখানে পড়ে আছে।
এলিসার বাবা রাজা ফ্র্যাঙ্কের সৈন্যদলে ছিল। কিন্তু তিনি কখনোই মনে প্রাণে রাজা ফ্র্যাঙ্কের এসব অন্যায় মেনে নিতে পারতেন না। একবার এক শত্রুর বাচ্চা মেয়েকে রাজা ফ্র্যাঙ্ক ঠেলে দিয়েছিলেন চিতাদের মুখে, ছেলেটাকে বাঁচায় এলিসার বাবা এবং এমন ঘৃণ্য কাজের প্রতিবাদ করে রাজার চোখের বালিতে পরিনত হয়ে যান।
সেই দিন শেষে রাতে এলিসার বাবা মাকে তুলে আনে রাজা ফ্র্যাঙ্ক। এলিশার বাবাকে হাত পা বেঁধে ফেলে রাখা হয় রাজার কক্ষের সামনে, আর কক্ষের ভেতরে রাতভর ধর্ষণ করা হয় এলিসার মাকে।
তারপর সকালে দুজনকে হত্যা করে চিতাদের খাবারে পরিনত করা হয়। তখন এলিসার বয়স ছিল মাত্র ছয় বছর।
সেই কথাগুলো নিলয়কে বলার সময় সেদিন অঝোরে কাঁদছিল এলিসা। কিন্তু নিলয় সেদিন বলেনি যে সে-ও এখানে এসেছে রাজা ফ্র্যাঙ্ককে হত্যা করার জন্যই।
আজ এলিসার চোখের জল দেখা নিলয়ের মন আর মানলো না। এলিসার চোখের জল মুছে দিয়ে নিলয় বললো– এলিসা তুমি হত্যা করো বা আমি, কেউ একজন রাজা ফ্র্যাঙ্ককে হত্যা করতে পারলেই সেটা আমাদের বিজয়। আমি আর রাজকুমারী তিথি এখানে আসার কারণ রাজা ফ্র্যাঙ্ককে চিরতরে পৃথিবী থেকে সরিয়ে মারিয়া সহ সবাইকে মুক্তি দিতে।
আমি বলবো না সমস্ত দোষ নিজের ঘাড়ে নিয়ে প্রাণ বিসর্জন দাও। তবে রাজা ফ্র্যাঙ্ককে কুপকাত করতে আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই আনতে পারে আমাদের বিজয়।
নিলয়ের কথা শুনে এলিসা ভীষণ অবাক, চোখ মুখ থেকে সমস্ত ভয়ের ছাঁপ যেন মুহূর্তে মিলিয়ে গেল।
নিলয় আবার বললো– রাজা ফ্র্যাঙ্ক তোমার সাথে কি করে জানিনা, আমি তোমাকে যথাসাধ্য বাঁচিয়ে নেবার চেষ্টা করবো, কিন্তু বিষয় যদি জীবন মরণের হয়। তাহলে রাজাকে সত্যটা বলে নিজের জীবন রক্ষা করে নিয়ো।
কথা শেষে নিলয় এলিসার হাত ধরে টানতে টানতে রাজপ্রাসাদের বাইরে এনে রাজার সামনে দাড় করালো।
সবাই কোনকিছু বুঝে ওঠার আগেই রাজা চাবুক দিয়ে এলিসার পিঠে দুবার আঘাত করতেই এলিসা চিৎকার করে মাটিতে পড়ে গেল। কোমরের খাঁজ থেকে তরবারী টেনে বের করে এলিসার গলায় চেপে ধরে…
চলবে…
লেখকঃ নিলয় আহমেদ।