গল্পঃ #তিথির_প্রতিজ্ঞা ( ষষ্ঠ পর্ব )
তিথির বুকের ওপর থেকে কাপড় সরাবার জন্য তিথির বুকে হাত দিলো নিলয়। ওদিকে ব্যঙটা ফুলে ধীরে ধীরে বড়ো হচ্ছে দেখে সাপটা ব্যাঙের পেটে দাঁত বসিয়ে দিতেই হাওয়া বেরিয়ে ব্যাঙটা একেবারে ছোট হয়ে গেল, ব্যাঙের জিভ তিথির পা থেকে ছুটে এসে ব্যাঙের পেটে ঢুকে গেল। অমনি ব্যাঙটা লাফিয়ে শূন্যে উঠে হাওয়ায় মিলিয়ে গেল।
তিথির পা মুক্ত হয়ে যাওয়ায় তিথি পা ভাজ করে হাটু দিয়ে নিলয়ের পিঠে আঘাত করতেই নিলয় উল্টে পড়ে যেতেই তিথি উঠে দাড়িয়ে কোমরের ছোট্ট থলে থেকে একটা ছোট্ট কাচের বোতল বের করে সেই বোতল থেকে একফোঁটা পানির মতো তরল পদার্থ পান করতেই অদৃশ্য হয়ে গেল।
নিলয় উঠে দাড়িয়ে তো অবাক।
অদৃশ্য তিথি নিলয়কে বললো– তোমরা কি মনে হয়না তুমিই ভুল ছিলে? আমার বাবা সবসময় চেয়েছেন তার রাজ্যে তিল পরিমাণ অপরাধ থাকবে না। এতে যেমন রাজার সুনাম তেমনি প্রজাদেরও সুনাম। কিন্তু তোমার কারণে সেই সুনাম ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছিল বিধায় তোমাদের রাজ্য থেকে বের করে দেয়া হয়েছিল। তুমি জ্বীনদের পালক চুরি করে কি অন্যায় করোনি?
নিলয় চুপচাপ।
অদৃশ্য তিথি আবার বললো– অপরাধীকে শাস্তি এই জন্য দেয়া হয় যাতে সেই অপরাধ নতুন করে অন্য কেউ করার সাহস না পায়। এভাবেই অপরাধ দমন হয়। এখন তুমি অপরাধী হয়ে উল্টো তার ক্ষতি করতে চাইছো যে কিনা তার প্রজাদের মঙ্গলের কথা ভেবে অপরাধ দমনে সক্রিয় ছিল। এরকম হলে তো একসময় পৃথিবীতে অপরাধের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো কেউ থাকবে না। চুরি, হানাহানি, লুটপাট, খুন, ধর্ষণ হুহু করে বেড়ে যাবে। আর এসবের শিকার যে তোমার পরিবার হবেনা তার নিশ্চয়তা কি বলো।
তোমাকে সাজা দিয়ে যে তোমাকে শোধরাবার জন্য সুযোগ দিয়েছে সে ভুল, নাকি অপরাধ করে নিজেকে না শুধরে আবারও অপরাধ করতে যাওয়া তুমি ভুল? বলো।
তোমার যদি মনে হয় তুমি সঠিক তাহলে সমস্যা নেই আমাকে হত্যা করে নিজের মনোবাসনা পূর্ণ করো নিলয়।
তিথি দৃশ্যমান হয়ে নিলয়ের সামনে দাড়িয়ে নিলয়ের পায়ের কাছে পড়ে থাকা তলোয়ার তুলে হাতে নিয়ে নিলয়ের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো– নাও, যদি তোমার মনে হয় তুমি সঠিক তাহলে এই তলোয়ারের আঘাতে আমাকে হত্যা করো। তবে তোমার কথা দিতে হবে এটাই হবে তোমার প্রথম কাউকে হত্যা করা এবং এটাই শেষ। এবং রাজা ফ্র্যাঙ্কের হাত থেকে আমার বোন মারিয়াকে মুক্ত করে আমার বাবার বুকে ফিরিয়ে দেবে। কারণ আমি যে বাবাকে কথা দিয়ে এসেছি মারিয়াকে মুক্ত করে আনবোই। আমি আমার বাবার মুখের হাসিটা চিরতরে মুছে যেতে দিতে চাইনা।
নিলয় কিছুক্ষণ চুপ থেকে তলোয়ার হাত থেকে ফেলে দিয়ে বললো– আমারই ভুল রাজকুমারী, আমরা নিজেদের অপরাধ কক্ষনও শিকার করতে চাইনা বলেই অপরাধ বেঁচে থাকে আমাদের অন্তরে। আর অপরাধ যে পুষে রাখে সে কখনও মানুষ হতে পারেনা, অমানুষ থেকে যায়। আমায় ক্ষমা করে দিন।
তিথি বললো– নিজের ভুল বুঝতে পেরেছো এটাই বড়ো, এখন আর আমার হাতে অত সময় নেই। বেশি দেরি হয়ে গেলে রাজা ফ্র্যাঙ্ক হয়তো মারিয়ার সর্বনাশ করে ফেলবে।
কথা শেষ করে তিথি পা বাড়াতেই পেছন থেকে নিলয় হাত টেনে ধরে বললো– রাজা ফ্র্যাঙ্ক খুবই ভয়ঙ্কর মানুষ রাজকুমারী, এ যাত্রায় আমি আপনার সঙ্গী হয়ে আপনার সাথে মিলে রাজা ফ্র্যাঙ্ককে দমন করতে নিজের পাপ মোচন করতে চাই। দয়া করে আমাকে আপনার উপকার করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করবেননা।
তিথি ঘুরে দাড়িয়ে মুচকি হেসে বললো– যদি তাই হয় তবে আমিও কথা দিচ্ছি, আমরা জয়ী হয়ে ফিরতে পারলে তোমার পরিবারকে আবার সসম্মানে রাজ্যে ফিরিয়ে আনা হবে। এবং তুমি হবে রাজার প্রধান সেনাপতি।
এভাবেই পরিচয় হয়েছিল তিথি এবং নিলয়ের। এরপর দুজনে বিভিন্ন পরিকল্পনা করে সিদ্ধান্ত নেয় আগে নিলয় গিয়ে রাজা ফ্র্যাঙ্কের বিশ্বাস অর্জন করে রাজপ্রাসাদে প্রবেশ করবে।
এবং ছোটবেলায় তিথির বাবা দুই বোনকে যে মালা কিনে দিয়েছিল তার একটা তো মারিয়ার গলায়। তিথির গলারটা খুলে নিলয়ের গলায় পরিয়ে দেয় তিথি যেন মারিয়া দেখে সাহস পায় মনে যে তাকে উদ্ধার করার পরিকল্পনা চলছে।
এভাবেই নিলয় এসেছিল এবং ফ্র্যাঙ্কের মন জয় করে তার সৈন্য দলে যায়গা করে নিয়েছিল।
এদিকে নিলয়কে নিজ কক্ষে ডেকে নিলয়ের খুব প্রসংশা করে রাজা ফ্র্যাঙ্ক বললো– তাহলে এবার তোমার পরবর্তী পরিকল্পনা বলো।
নিলয় বললো– মহারাজ, আমি আপনার সৈন্যদলে নিযুক্ত হবার আগে আপনাকে একটা উপহার দিতে চাই যদি আপনি কবুল করেন।
ফ্র্যাঙ্ক বললো– বাহ বেশ তো, বলো কি উপহার।
নিলয় বললো– রাজা এসামের বড়ো কন্যা মীরা তিথি, রূপে গুণে আশেপাশের দশ রাজ্যে তার তুলনা সে নিজে। উপহার হিসেবে আমি তিথিকে আপনার শয্যায় তুলে দিতে চাই, তারপর আপনি আপনার দৈহিক তৃপ্তি মিটিয়ে দুই বোনের এমন হাল করবেন যেন রাজা এসাম ছুটে এসে আপনার পায়ে লুটিয়ে পড়তে বাধ্য হয়।
রাজার ঠোঁটে পৈশাচিক হাসির ঝিলিক। উঠে দাড়িয়ে নিলয়ের কাঁধে চাপড় দিয়ে বললো– যদি সেটা করতে পারো তবে তোমাকে আমি আমার প্রধান সেনাপতি করবো কথা দিলাম। আর হ্যা যাবার সময় সঙ্গে করে দুচারজন সৈন্য নিয়ে যেও।
নিলয় বুক ফুলিয়ে বললো– মহারাজ এই সামন্য কাজে যদি আরও দু-চারজন সৈন্য নিতে হয়, তাহলে নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দেবো কীভাবে!
নিলয়ের কথা শুনে রাজা ফ্র্যাঙ্ক তো মহা খুশি।
বিকেলে ঘোড়ায় চেপে নিলয় রওয়ানা করলো।
জঙ্গলে পৌঁছে তিথির সাথে দেখা করে নিলয় বললো– সমস্ত পরিকল্পনা সফল হবার পথে রাজকুমারী। মনে শক্তি ও আরও সাহসের সঞ্চার করুন। আমি প্রতিজ্ঞা করছি আমি বেঁচে থাকতে আপনার কোনো ক্ষতি হতে দেবনা।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে তিথি বললো– আমি আমার জীবন বাজি রাখতে প্রস্তুত নিলয়। কিন্তু যদি রাজা ফ্র্যাঙ্কের কাছে হেরে যাই, যদি এই শরীর সে ভোগ করায় সুযোগ পায় তাহলে আমার এ জন্ম বৃথা হয়ে যাবে যে। আমার স্বপ্ন ছিল তোমার মতো কোনো সাহসী যোদ্ধা হবে আমার জীবন সঙ্গী। তাই আমি তোমাকে স্বামী হিসেবে স্বীকার করে নিচ্ছি, কোনো অমানুষ জালিমের হাতে নিজের কুমারীত্ব নষ্ট হবার আগে এটাই উত্তম। তোমার মন যা চায় করতে পারো।
কথা শেষে তিথি নিলয়ের সামনে নিজের বুকের কাপড় খুলে নিচে ফেলে দিলো।
নিলয় এগিয়ে এসে কাপড়টা তুলে তিথির বুক ঢেকে দিয়ে তিথিকে বুকে টেনে বললো– আমি প্রতিজ্ঞা করছি রাজকুমারী, আমার জীবন থাকতে আপনার তিল পরিমাণ ক্ষতি হতে দেবনা। এবং এই যুদ্ধে আপনার তলোয়ার হয়ে আপনার প্রতিপক্ষকে পরাজিত করে আপনার মুখে বিজয়ের হাসি ফুটাবোই।
এরপর নিলয় ও তিথি ঘোড়ায় চেপে রওয়ানা হলো রাজা ফ্র্যাঙ্কের রাজপ্রাসাদের উদ্দেশ্যে।
রাজ প্রাসাদে পৌছানোর আগে আগে নিলয় তিথির দুই হাত ও মুখ কাপড় দিয়ে বেঁধে দিলো।
রাজপ্রাসাদে পৌঁছাতেই রাজা ফ্র্যাঙ্ক বেরিয়ে এলেন লোকবল নিয়ে। নিলয় তাহলে রাজকুমারী তিথিকে তুলে আনতে সফল হয়েছে। রাজা নিজ হাতে নিলয়ের গলায় মালা পরিয়ে দিয়ে নিলয়কে প্রধান সেনাপতি ঘোষণা করলেন।
তিথির মুখের ওপর থেকে কাপড় সরাতেই রাজা ফ্র্যাঙ্ক তিথির রূপে মুগ্ধ হয়ে গেল। রাজ দাসীদের ডেকে হুকুম দিলেন তিথিকে ভেতরে নিয়ে গোসল করিয়ে রাতে রাজার শয্যাসঙ্গী হবার জন্য প্রস্তুত করতে।
রাজার হুকুমে রাজপ্রাসাদে আনন্দ উল্লাস, কিন্তু তিথি ও নিলয়ের মনে উত্তেজনা ততই বাড়ছে সময় যত এগিয়ে চলছে।
দাসীরা তিথিকে রাজা ফ্র্যাঙ্কের কক্ষে রেখে চলে গেল।
কিছুক্ষণ পরে রাজা ফ্র্যাঙ্ক এসে কক্ষে প্রবেশ করে ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিয়ে এগিয়ে এসে টেবিলের ওপর থেকে মদের বোতল হাতে নিয়ে ডগডগ করে মদ গিলে তিথিকে বললো– উহু এখন আর ও শরীর কাপড়ে আবৃত থাকলে ঠিক জমবে না রাজকুমারী। ওসব খুলে ফ্যালো।
তিথি চুপচাপ বসে আছে পালঙ্কে।
রাজা ফ্র্যাঙ্ক এগিয়ে গিয়ে তিথির পরনের কাপড় খুলতে খুলতে…
চলবে…
লেখকঃ নিলয় আহমেদ।