গল্পঃ #তিথির_প্রতিজ্ঞা ( দ্বিতীয় পর্ব )
মারিয়াকে উলঙ্গ করার জন্য সাদা কাপড়ের এক কোনো ধরে সৈন্যটা টান দিতেই সা সা করে বিদ্যুৎ গতিতে একটা তরবারী উড়ে এসে সৈন্যটার সেই হাতটা কেটে ফেললো যেই হাত দিয়ে কাপড় টেনে হাজার হাজার প্রজাদের সামনে মারিয়াকে উলঙ্গ করতে চেয়েছিল।
হাতটা ছিটকে একটু দূরে গিয়ে পড়লো আর তরবারীটা রাজা ফ্র্যাঙ্কের সামনে খাড়া হয়ে গেঁথে পড়লো। প্রজারা যেমন অবাক তারচে বেশী অবাক রাজা ফ্র্যাঙ্ক, কে সে যে এমন ভাবে তরবারী চালাতে সক্ষম?!
রাজপ্রাসাদের প্রধান ফটকে কালো ঘোড়ায় করে এক যুবক এসে ঘোড়ার পিঠ থেকে নেমে দাড়ালো।
রাজা ফ্র্যাঙ্ক হুঙ্কার দিয়ে বললো– তাহলে এতবড় স্পর্ধা তোমার?
যুবক রাজা ফ্র্যাঙ্ককে কুর্নিশ করে বললো– মহারাজ স্পর্ধার আড়ালের প্রতিভা নিশ্চয় আপনার দৃষ্টি এড়ায়নি।
মহারাজ ফ্র্যাঙ্ক সৈন্যদের হুকুম দিলেন, এই মুহূর্তে যুবকে ধরে হাত পা বেঁধে আমার পায়ের কাছে উপস্থিত করো।
সৈন্যরা এগিয়ে এসে যুবককে বেধে টানতে টানতে রাজা ফ্র্যাঙ্কের সামনে উপস্থিত করলো।
যুবকের গলায় তরবারী ধরে রাজা ফ্র্যাঙ্ক কর্কশ কণ্ঠে বললো– কে তুই?
যুবক বললো– মহারাজ ফ্র্যাঙ্ক, আমি নিলয়, মারিয়ার বাবার রাজ্য থেকে বিতাড়িত হয়ে দীর্ঘ কয়েকবছর দক্ষিণের বনে বনবাসে ছিলাম। যখন শুনলাম আপনি রাজা এসামের ছোট কন্যা মারিয়াকে বন্দী করেছেন তখন মনের আনন্দে আর বনে থাকতে পারলাম না।
: তুই যে সত্যি বলছিস তার প্রমাণ কি?
: মহারাজ আপনি এসামের রাজ্য গুপ্তচর পাঠিয়ে খবর নিন, যতক্ষণে আমার কথার সত্যতা প্রমাণিত না হয় আমাকে বন্দী করে রাখুন।
: তাই যদি হয় তাহলে মারিয়াকে উলঙ্গ করতে চাওয়া সৈন্যর হাতটা কাটলি কেন?
: মহারাজ আপনি বড়ো বোকা?
বোকা বলায় রাজা ফ্র্যাঙ্ক লাথি মেরে সিড়ি দিয়ে নিলয়কে নিচে ফেলে দিয়ে সৈন্যদের হুকুম দিলেন এক কো*পে নিলয়ের ঘাড় থেকে মস্তক ছিন্ন করার।
একজন সৈন্য এগিয়ে এসে তরবারী ধরে নিলয়ের ঘাড়ে কো*প দিবে এমন সময় নিলয় অট্টহাসি হেসে বললো– মহারাজ দেখলেন তো, অতি রাগের কারণে মানুষ অনেক কিছু হারায়। আপনি আমার ঘাড় থেকে মস্তক ছিন্ন করলে আমি আমার প্রাণ হারাবো। কিন্তু আপনি হারাবেন একজন প্রশিক্ষিত যোদ্ধা, একজন অনুগত সৈন্য যে আপনার হয়ে কাজ করতে চায়। আর আপনাকে বোকা বলার কারণটা তো অন্তত জেনে নিন মহারাজ।
ফ্র্যাঙ্ক এগিয়ে এসে নিলয়ের ঘাড় ধরে টেনে তুলে বললো– তাহলে কারণটা এবার বল।
নিলয় বললো– মহারাজ আপনি মারিয়ার ওপর যতই অত্যাচার করেন এখানে ওর আপন কেউ নেই যে ওর জন্য কষ্ট পাবে। বরং সবাই উপভোগ করবে। অত্যাচার করুন তার সামনে যে নিজের মেয়ের অত্যাচার সইতে না পেরে আপনার পা জড়িয়ে ধরে মেয়ের প্রাণ ভিক্ষা চাইবে। যুদ্ধ ছাড়া সিংহাসন ছেড়ে চলে যাবে, আর আপনি বিনাযুদ্ধে জয়লাভ করে আরও একটি রাজ্যের রাজা হবেন।
মারিয়াকে এভাবে নয়, ওর বাবাকে বন্দী করে এনে তারপর তার সামনে অত্যাচার করলে বুড়ো এসামের অহঙ্কার চুর্ণ হবে, আপনার সাথে করা গাদ্দারির সঠিক শিক্ষা পাবে। এটা ভেবে দেখেননি বলেই এই কারণে আপনাকে বোকা বলেছি। ক্ষমা করবেন আমায়।
নিলয়ের কথা ভীষণ ভালো লাগে রাজা ফ্র্যাঙ্কের। ঠিকই তো বলেছে এরকম তো ভেবে দেখা হয়নি।
নিলয়ের কাঁধে চাপড় দিয়ে রাজা ফ্র্যাঙ্ক বললো– তরবারীর মতো মস্তিষ্কও চালাতে পারো খুব দেখছি, আমি মুগ্ধ।
রাজা ফ্র্যাঙ্ক সৈন্যদের হুকুম দিলেন নিলয়ের হাতে পায়ের বাঁধন খুলে দিতে।
নিলয়ের হাতে পায়ের বাঁধন খুলে দেয়া হলো।
ফ্র্যাঙ্ক জিজ্ঞেস করলো– সত্যি যদি আমার অনুগত হও তবে আমার জন্য কি করতে পারবে?
নিলয় বললো– মহারাজ আপনার জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত, আপনার জন্য জীবন দিতে পারলেও এ জীবন ধন্য হবে মহারাজ।
দূরে বড়ো একটা কক্ষে শুয়ে আছে ফ্র্যাঙ্কের সেই ভয়ঙ্কর কালো চিতা দুটো। সেই কক্ষ দেখিয়ে ফ্র্যাঙ্ক নিলয়কে বললো– তবে যাও ঐ ক্ষুদার্ত চিতাদের কক্ষে প্রবেশ করো, যদি বেঁচে ফিরতে পারো তবে তোমাকে আমি আমার বিশেষ সৈন্যদলে সামিল করে নেবো।
চিতাদের চোখে চোখ পড়তেই নিলয়ের অবস্থা বেহাল, কি ভয়ংকর দেখতে চিতা দুটো, নিলয়কে পেলে ছিড়ে খেয়ে এক মিনিটে হজম করে ফেলবে মনে হচ্ছে। তবুও রাজা ফ্র্যাঙ্কের সামনে এসে যখন পড়েছে ফিরে যাবার রাস্তা নেই। ফিরতে হলে ফ্র্যাঙ্কের হাতে প্রাণ হারিয়ে সোজা পরপারে।
মনে মনে সৃষ্টিকর্তার নাম জপতে জপতে নিলয় এগিয়ে চললো চিতাদের সেই কক্ষের দিকে।
রাজা ফ্র্যাঙ্ক চুপচাপ দেখছে। কারণ ফ্র্যাঙ্ক জানে সে ইশারা করার আগপর্যন্ত চিতা দুটো নিলয়কে স্পর্শও করবেনা। নিলয় যদি সত্যি সত্যি চিতাদের কক্ষে ঢোকে তাহলে তাকে বিশ্বাস করা যায়।
নিলয় সৃষ্টিকর্তার নাম জপতে জপতে গিয়ে চিতাদের কক্ষে প্রবেশ করলো। কিন্তু চিতা দুটো নিজেদের স্থান থেকে একটু নাড়লোও না।
রাজা দূর থেকে উচ্চ স্বরে বললো– স্বাগতম নিলয়, তুমি পরিক্ষায় উত্তির্ন। কিন্তু এখন থেকে ততক্ষণ পর্যন্ত তুমি বন্দিশালায় বন্দী থাকবে যতক্ষণ না পর্যন্ত আমার গুপ্তচর তোমার সম্পর্কে বিস্তারিত থত্য না নিয়ে আসে। তথ্য অনুযায়ী তোমার কথা যদি সত্যি হয় তাহলে তোমাকে সৈন্য হিসেবে গ্রহণ করা হবে।
রাজা ফ্র্যাঙ্ক সৈন্যদের ডেকে হুকুম করলেন নিলয়কে আপাতত বন্দিশালায় বন্দী করে রাখতে।
তারপর গৃহপরিচারিকাদের ডেকে বললেন মারিয়াকে নিয়ে তাকে তার পোশাক পরিয়ে অন্ধকার কুঠুরিতে বন্দী করে রাখতে।
বুক পর্যন্ত সাদা কাপড়ে ঢাকা মারিয়া সৃষ্টিকর্তাকে অশেষ কৃতজ্ঞতা জানালো।
নিলয়কে মারিয়ার পাশ দিয়েই নিয়ে যাচ্ছে সৈন্যরা, সেদিকে তাকিয়ে নিলয়ের গলায় মারিয়া এমন একটা জিনিস দেখলো যে মারিয়া হতভম্ব, বিস্মিত, এটা কীভাবে সম্ভব?!
চলবে…
লেখকঃ নিলয় আহমেদ।