তিক্ত প্রতিশোধ পর্ব-১৮ এবং শেষ পর্ব

0
1008

#তিক্ত_প্রতিশোধ
#পর্ব ১৮ অন্তিম
#Raiha_Zubair_Ripte

শুভ্র অহনাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসে। সোজা জঙ্গলের পেছনে নিয়ে সেই ভয়ংকর ঢেরার ভেতর ঢুকে। অহনার হাত এখনো বাঁধা, অহনা বারবার শুভ্রর থেকে ছাড়া পাবার জন্য ছুটাছুটি করছে কিন্তু ডান হাতে গুলি লাগায় ব্যথা হাত নিয়ে কিছু করতেও পারছে না। ঢেরার ভেতর ঢুকে সামনে তাকাতেই অহনা দেখে তার বাবা মোশারফ হোসেন চেয়ারে বসে আছে। মোশারফ হোসেন কে দেখে অহনা খানিকের জন্য ভেবেছিলো তার বাবা নিশ্চয়ই তাকে সাহায্য করবে কিন্তু পরক্ষণে সেদিনের কথা মনে হতেই বুক চিঁড়ে কষ্ট গুলো যেনো বের হয়ে চলে আসবে। এই মানুষটা কখনোই তাকে সাহায্য তো দূরে থাক পারলে হয়তো পা’চার করে দিবে।

শুভ্র অহনাকে ধাক্কা মে’রে ফ্লোরে ফেলে দিয়ে বলে,,

” সরি টু সে মোশারফ হোসেন এই মেয়েকে আর আমি টলারেট করতে পারছি না। এতোদিন অনেক হয়েছে সংসার সংসার খেলা,আপনার মেয়েকে উপস সরি আপনার পালিতা মেয়েকে ইউস করা আমার শেষ,তাই এখন তাকে তার যোগ্য স্থানে পাঠাবো।

কথাটা অহনার কর্ণকুহর হতেই অহনা শুভ্রর দিকে তাকিয়ে বলে,,

” আমার যোগ্য স্থানে মানে কোথায় পাঠাতে চাইছো তুমি ছেড়ে দাও আমায়।

শুভ্র দু হাঁটু ভাজ করে অহনার সামনে বসে এক হাত দিয়ে অহনার থুতনি ধরে বলে,,

” আহারে আমার শোনা বউ টা, একটু ধৈর্য ধরো সব জানতে পারবা।

কথাটা বলে অহনার গালে ঠোঁট ছোঁয়াতে গেলে অহনা শুভ্রর মুখে থুথু ছিটিয়ে দেয়। মূহুর্তে শুভ্রর মুখ রাগে লাল হয়ে যায়, অহনার চুলের মুঠি ধরে পরপর তিনটে চড় বসিয়ে দেয় অহনার গালে। হুংকার দিয়ে বলে উঠে,,

” মা*গি তোর তেজ আমি কমায় দিবো,এই কে কোথায় আছিস এই বা’ন্দীর বাচ্চারে নিয়ে আটকে রাখ, যতোদিন না ওরে ওর জায়গায় পাঠাতে পারছি ততোদিন ভাত পানি কিছুই দিবি না।

মোশারফ হোসেন চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে শুভ্রর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলে,,

” আহ শুভ্র করছো টা কি এতোদিন না খাইয়ে রাখলে ও বাঁচবে না,ম’রেই যাবে। আর ভালো দাম ও পাবে না।

প্রথম কথাটা শুনে অহনা খানিক ইমোশনাল হয়ে গিয়েছিলো কিন্তু লাস্টের কথা শুনে অহনার ঘৃণায় ম’রে যেতে ইচ্ছে করছে।

দু জন ছেলে এসে অহনাকে অহনাকে ধরে নিয়ে একরা কক্ষে আটকে রাখে।

অন্ধকার রুম ছোট একটা জানালা তাও অনেক উপরে সেটা দিয়ে হালকা হালকা বাহিরের আলো আসতেছে। অহনা দাঁত দিয়ে বারবার হাতের বাঁধন খুলার ট্রাই করছে।

ওদিকে শামসুল আলম তন্ময়দের বাসয় আসে,এসে দেখে রিফাত বাড়ির মেন গেটে দাঁড়িয়ে আছে। শামসুল আলমকে দেখে রিফাত শামসুল আলমের কাছে এগিয়ে যায়। রিফাত শামসুল আলমের কাছে যেতেই শামসুল আলম বলে উঠে,,,

” রিফাত সায়েম কে ইমিডিয়েটলি ফোন করো আর জানাও শুভ্র অহনাকে ঠিক কোথায় নিয়ে যেতে পারে। সায়েম হয়তো বলতে পারবে কারন সায়েম এতোদিন অহনার সাথে ছিলো।

রিফাত পকেট থেকে ফোনটা বের করে সায়েম কে ফোন দেয়,সায়েমের সাথে কথা বলে ফোনটা পকেটে রেখে শামসুল আলম কে বলে,,

” স্যার সায়েম বললো, অহনার শশুর বাড়ির পেছনে জঙ্গলে একটা গুপ্ত দরজা আছে সেখানেই নাকি সব মেয়েদের তুলে আনা হয়।

” ইমিডিয়েটলি আমাদের ওখানে যেতে হবে,তুমি ফোন করে সবাইকে ওখানে চলে আসতে বলো।

” ঠিক আছে স্যার।

কথাটা বলে সবাইকে ওখানে আসতে বলে রিফাত আর শামসুল আলম বেরিয়ে পড়ে অহনাকে খোঁজার জন্য।

তৃষ্ণায় ধুঁকছে অহনা,কাল রাত থেকে পেটে কিচ্ছুটি পড়ে নি,তার উপর দাঁত দিয়ে হাতের বাঁধন খুলতে খুলতে অনেকটা হাপিয়ে গিয়েছে, পানির জন্য মনটা ছটফট করছে। অহনাকে গলা ছেড়ে এবার বলে উঠে,,

” কেউ কি আছো আমায় একটু পানি দাও।

হঠাৎ দরজা খোলার আওয়াজ আসতেই অহনা ফ্লোর থেকে দড়ি উঠিয়ে সেটা হাতে পেঁচিয়ে নেয়।

দরজা খুলে একটা বিশ বছরের ছেলে পানির জগ হাতে নিয়ে রুমে প্রবেশ করে। পানির জগটা ফ্লোরে রেখে বলে,,

” এই নিন পানি খেয়ে নিন, স্যার আপনায় পানি দিতে বলছে।

অহনা ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বলে,,

” আশ্চর্য আমি পানি খাবো কি করে গ্লাস কই,যাও গ্লাস নিয়ে আসো,গ্লাস ছাড়া আমি পানি খেতে পারি না।

ছেলেটা পেছন ঘুরে গ্লাসের জন্য বাহিরে বের হতে নিলে অহনা বসা থেকে উঠে পেছন থেকে কাঁচের জগ টা দিয়ে ছেলেটার মাথায় বাড়ি মা’রে। ছেলেটার পেছনে মাজার কাছে গুঁজে রাখা পিস্তল টা হাতে নিয়ে পিস্তটা টা দিয়ে আবার মাথায় বাড়ির মা’রে।

সাথে সাথে ছেলেটা ফ্লোরে পরে যায়,অহনা সেই সুযোগে চুপিচুপি ঘর থেকে বেরিয়ে পরে। ঘর থেকে বেরিয়ে আসতেই সামনে তাকিয়ে দেখে শুভ্র আর মোশারফ হোসেন বসে আছে তার পাশেই তিন থেকে চার জন চেলা দাঁড়িয়ে আছে। তাদের পাশে রনিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অহনা আড়ালে গিয়ে হাতের ইশারায় বারবার রনিকে ডাকার চেষ্টা করে।

রনি শুভ্রর সাথে কথা বলার সময় হঠাৎ ই বড় এক ড্রামের পেছনে চোখ যেতেই দেখে অহনা তাকে ডাকছে। অহনাকে এখানে দেখে বেশ অবাক হয় রনি।

শুভ্র কে পানি খাবার নাম করে রনি অহনার কাছে ড্রামের পেছনে চলে আসে।
অহনার সামনে দাঁড়িয়ে বলে,,

” কি ব্যাপার বোন তুমি এখানে কি করে।

” ভাইয়া শুভ্র আমায় ধরে নিয়ে এসেছে,ও আমাকেও পা’চার করে দিবে।

” কিহ! শুভ্র ভাইয়া তোমায় ধরে এনেছে, কবে?

” এই তো আজ সকালে,ভাই আমি আর শুভ্র কে ছেড়ে দিবো না, ও আমার ফ্রেন্ড তন্ময় আর ওর বৃদ্ধ মা কে খু’ন করেছে,তুমি আমায় সাহায্য করো।

” ঠিক আছে বলো কি কি করতে হবে।

” তুমি ওদের থেকে ওদের হাতের অস্ত্র গুলো সরিয়ে রাখো,আমি একা এতো জানের সাথে লড়তে পারবো না যদি ওদের হাতে অস্ত্র থাকে তো,

” সে না হয় আমি করলাম,এরপর?

” এরপরের টা তুমি আমার উপর ছেড়ে দাও।

” আচ্ছা ঠিক আছে,আমি সরিয়ে ফেলছি।

কথাটা বলে রনি শুভ্রর কাছে গিয়ে বলে,,

” ভাইয়া।

” হ্যাঁ বল।

” বলছিলাম কি আপনার পিস্তল টা একটু দিবেন,আমার টায় বুলেট শেষ হয়ে গেছে।

” এখন তুই পিস্তল দিয়ে কি করবি।

” আমি এক মিশনে নেমেছি।

” কিসের মিশন।

” ঐ যে মেয়ে ধরে আনার মিশনে।

” ওহ এই নে।

পেছনের পকেট থেকে পিস্তল বের করে রনির হাতে দেয়। আর বাকি তিন-চার জনের থেকে কৌশলে পিস্তল গুলো তে বুলেট আছে নাকি,সেটা চেক করার নাম করে সব পিস্তল নিয়ে যেখানে বুলেট রাখা আছে সেখানে নিয়ে যায়। অহনা আড়াল থেকে পিস্তল তাক করে এক চেলার গায়ের উপর শুট করে,সাথে সাথে শুভ্রর এক চেলা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।

শুভ্র বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়, আশেপাশে তাকিয়ে দেখে কোথায় থেকে গুলি ছোঁড়া হচ্ছে। এটা দেখার জন্য পাশে তাকাতেই আবার ও পরপর তিনটে গুলি শুভ্রর তিন চেলার উপর গিয়ে পরে।

মোশারফ হোসেন ভয় পেয়ে যায়। শুভ্রর হাত খামচি দিয়ে ধরে বলে,,

” এই শুভ্রর কে এভবে গুলি ছুঁড়ে মার’ছে এবার কি তোমার আর আমার উপর ও গুলি ছুঁড়ে মা’রবে।

” উফ আপনি চুপ করুন তো। এই কে লুকিয়ে লুকিয়ে গুলি ছুড়ছিস সামনে আয়,দেখি তোর বুকের পাটা কতো বড়।

অহনা ড্রামের পেছন থেকে বেরিয়ে এসে বলে,,

” নে দেখে নে তোর জম কে তুই।

অহনাকে দেখে বেশ চমকে যায় শুভ্র, ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে,,

” তুমি কি করে এখানে আসলে তোমার না হাত বাঁধা ছিলো।

শুভ্রর কথা শুনে অহনা স্মিত হেসে বলে,,

” আমার হাত বাঁধা ছিলো মুখ নয়,এতো দিন অনেক ছাড় দিয়েছি আমি তোকে কিন্তু আর না আজ এই তিক্ত প্রতিশোধের খেলা শেষ করতে চাই।

” আমাকে শেষ করা এতো সহজ নয়,পেছনে তাকিয়ে দেখ কে।

অহনা পেছনে ঘুরে তাকিয়ে দেখে রনি অহনার মাথায় বন্দুক তাক করে রেখেছে। অহনা খানিক হেঁসে ফেলে। অহনার এমন হাসি দেখে শুভ্রর ভ্রু কুঁচকে ফেলে।

” এভাবে হাসতেছো কেনো, আমি এক ইশারা করলেই ঐ বন্দুকের গুলি তোমার মাথা ভেদ করে বেরিয়ে যাবে।

” তো মিস্টার শুভ্র সেই সেম কাজ টা যদি আপনার সাথে হয় তখন!

” মানে?

” মানে এই যে, কথাটা বলেই রনির পায়ে লাথি মে’রে পিস্তল টা রনির থেকে কেঁড়ে নেয়,আর সোজা রনির কপাল বরাবর গুলি ছুঁড়ে মারে। শুভ্র অহনার এমন কান্ড দেখে বলে,,

” আজ তোকে আমি মে’রেই ফেলবো, কথাটা বলে অহনার কাছে আসার জন্য পা বাড়ালে অহনা বলে,,

” যেখানে দাঁড়ায় আছিস সেখানেই দাঁড়ায় থাক,কি মনে করেছিলি রনির চালাকি আমি বুঝবো না,ও আমায় সাহায্য করে তোকে মে’রে ফেলার পর এই সাম্রাজ্যের রাজা হতে চেয়েছিলো,রনি যখন পিস্তল গুলো নিয়ে যাচ্ছিলো তখন ওর বলা কথা গুলল আমি শুনে ফেলি,কারন ওর পিছু নিয়েছিলাম আমি ওকে কিছু কথা বলার জন্য,তুই আর এক পা এগোলেই তর ঐ বুকটা বন্দুকের গুলিতে ঝাঁজরা করে ফেলবো।

শুভ্র হেঁসে বলে,,

” বললাম না তুই আমার কিচ্ছুটি করতে পারবি না,কারন তুই আমায় মা’রতেই পারবি না। তুই না আমায় ভালোবাসিস।

ভালোবাসা কথাটা শুনে অহনা ঘর কাঁপিয়ে হেঁসে উঠে, হাসি থামিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,,

” কোন ভালোবাসার কথা বলিস তুই , তোর জন্য আমি আমার ফ্রেন্ড রিয়াকে হারিয়েছি,তন্ময়ের মতো ভাইকে মায়ের সমান আন্টিকে হারিয়েছে। আর তুই বলছিস ভালোবাসার কথা! একজন মানুষের ভিতরে যদি প্রতিশোধের আগুন শুরু হয় তাহলে সেই আগুন নিয়ন্ত্রণ করা খুবই কষ্টকর বুঝলি, কেউ কেউ তো এই প্রতিশোধের আগুন নিয়ন্ত্রণ করতেই পারে না,আমি পারবো না সেই আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে,এই আগুনেই তোদের পুড়িয়ে ছাড়বো।

কথাটা বলে অহনা শুভ্রর দু পায়ে গুলি ছুঁড়ে মারে। শুভ্র পা ধরে বসে পড়ে,সেটা দেখে মোশারফ হোসেন ভয়ে দু হাঁটু ভাজ করে বসে দু হাত তুলে বলে,,,

” অহনা মা আমায় ক্ষমা করে দে,আমায় মা’রিস না তুই,আমি তো তোর বাবা হই, তুই কি করে তোর বাবা কে মারবি।

” হাসলে আমায় মিস্টার মোশারফ হোসেন, কিসের বাবা তুমি,তুমি কি আদৌও বাবা হওয়ার যোগ্যতা রাখো,কি করে পারলে তুমি অন্যের বাবা মায়ের বুক খালি করে নিজেদের পকেট ভরতে। নাকি তোমার নিজের মেয়ে নেই দেখে তাদের কান্না ইমোশন তেমার হৃদয় কে স্পর্শ করতে পারে নি। তুমি আজ আসছো নিজের প্রান ভিক্ষা করার জন্য, আমি কেনো তোমায় ছেড়ে দিবো,তুমি তো আমার বাবা নও,আর না আমি তোমার মেয়ে সেদিনই তো বলে দিয়েছিলে,তুমি তোমার ব্যাবসার জন্য আমাকে বলি দিতেও পিছুপা হবে না,তাহলে আমি কেনো তোমায় শাস্তি দেওয়া থেকে পিছুপা হবো?

” তুই যদি আমায় না মারিস তাহলে আমি তোকে তোর আসল বাবার কথা বলবো,প্লিজ আমায় ছেড়ে দে।

” আমার আসল বাবা মানে,আবার মিথ্যা কথা বলে আমায় ভ্রষ্ট করার চেষ্টা করছো।

” না আমি সত্যি বলছি তোর বড় চাচা এখনো বেঁচে আছে।

” আমার বড় চাচা কে?

” ঐ যে খাবার নিয়ে আসে ঐ লোক, আমায় মা’রিস না তাহলে বলবো।

অহনা এবার জোরে হেঁসে উঠে বলে,,

” তুমি তো বলেই দিলে মিস্টার মোশারফ হোসেন, তোমায় আমি বাঁচতে দিবো না। কতো মেয়ের জীবন নষ্ট করেছো তুমি হিসেব আছে? আমি ছেড়ে দিলেও তাদের কান্নারত কন্ঠে বারবার মুক্তি চাওয়ার জন্য যেই আকুল আবেদন, অভিশাপ সেগুলো আমায় ভালো ভাবে বাঁচতে দিবে না।

কথাটা বলে অহনা সোজা মোশারফ হোসেনের বুক বরাবর গুলি ছুঁড়ে মারে,সাথে সাথে মোশারফ হোসেন মাটিতে লুটিয়ে পড়ে,অহনা চোখ বুজে ফেলে,মনে পড়ে যায় শৈশবে কাটানো বাবার সাথে কিছু মনোমুগ্ধকর দৃশ্য ,কান্না করলে যেই বাবা সারা এলাকা ঘুরিয়ে কান্না থামাতো,কোনো কিছুর জন্য মন খারাপ হলে সেটা যেই প্রান্তেই থাকুক না কেনো খুঁজে নিয়ে আসতো। মুখ ফুটে কিছু চাওয়ার সাথে সাথে সেটা চোখের সামনে হাজির হয়ে যেতো,সেই বাবাকেই আজ নিজের হাতে খু’ন করে ফেললো অহনা। আবার মূহুর্তে অহনার মায়ের কথা মনে পড়ে গেলো তার মা কি করে বাঁচবে, তা মা যে স্বামী অন্ত প্রান। চোখ দিয়ে আজ অজস্র ধারায় জল গড়িয়ে পরছে। চোখ খুলে চোখের পানি মুছে ফেলে শুভ্রর দিকে এগিয়ে গিয়ে কিছুটা দুরত্ব নিয়ে দাঁড়িয়ে বলে,,

” তোর কি এখনো মনে হয় আমি তোকে ছেড়ে দিবো,যেখানে ছোট বেলা থেকে জেনে এসেছু উনি আমার বাবা, এতো স্নেহ ভালোবাসতো তাকেই ছেড়ে দিলাম সেখানে তোকে কি দিবো আমি ছেড়ে? ভালোবেসেছিলাম তোকে আমি বাবার সাথে সাথে তুই ও ছিলি আমার এই ছোট্ট হৃদয় টা জুড়ে। কিন্তু কি করলি তুই আমায় ও তুই পা’চার করে দিতে চেয়েছিলি,একটু ও কি ভালেবাসিস নি আমায়,এই সাত মাস সংসার করেও কি তোর আমার প্রতি মায়া জন্মায় নি। আমাকে কেবল বিয়ে করছিস,আমি সুন্দরী ছিলাম বলে,একটা রাত উপভোগ করার জন্য, ছিঃ কতোটা জঘন্য তুই, নিজেকে কখনো নিজে প্রশ্ন করেছিস,টাকার জন্য এতো কিছু করলু,পরকালে গিয়ে ঐ আল্লাহর নিকট কি জবাব দিবি,কতো মেয়ের অভিশাপ তোর উপর তুই কি জানিস সেটা। কখনো তো নিজের মাকেও হয়তো ভালোবেসে দেখিস নি,আর তোর সৎ মা সে তো কম ভালো ছিলো না, তোর বাবা কি করলো তোর সৎ মা তোর বাবাকে এসব কাজে বাঁধা দিয়েছিলো বলে তাকে মে’রে হায়না দিয়ে খাওয়ালো।

শুভ্র এতোক্ষণ নিচু করে রাখা মাথাটা উচু করে বলে,,

” আমি বিশ্বাস করি না,উনি জঘন্য ধরনের মহিলা ছিলো,আমার বাবার সম্পত্তির লোভে আমার বাবাকে বিয়ে করোছিলো।

” তোর কি মনে হয় এইসব সম্পত্তি তোর বাবার,তের ধারনা ভুল তোর সৎ মা মোনালি বেগমের সম্পত্তি তোর বাবা নিজের নামে করে নিয়েছে কৌশলল,সম্পত্তির লোভেই তোর বাবা তাকে বিয়ে করেছিলো। আর যখন মোনালি বেগম সব জেনে তাকে বাঁধা দিলো আর তখনই তাকে সরিয়ে ফেললো। তুই তো তোর বাবারই সন্তান তুই ও তো আমায় পা’চার করে দিতে চাইছিলি। তোর ক্ষমা অন্তত আমার কাছে নেই,বলেছিলাম ফিরে আয় এই জগৎ থেকে চল দূরে পালিয়ে যাই সেখানে ছোট্ট সংসার পাতাবো কিন্তু তুই তো তোর সাম্রাজ্য ছেড়ে চলে আসবি না। তাহলে এখন আমার কি করনীয় বল,মেরে ফেলা তাইতো, তোর মতো কিট বেঁচে থাকলে হাজার ও বাবা মায়ের বুক খালি হবে,তাদের হাহাকার দিন দিন বৃদ্ধি পাবে। তাই তোর মৃ’ত্যুটাই শ্রেয়। কথাটা বলে অহনা চোখ বন্ধ করে গুলি তাক করতেই শুভ্রর ঠিক বুকের বা পাশটায় পরপর দুটি গুলি লেগে যায়। হঠাৎ গুলির আওয়াজ শুনে অহনা চোখ খুলে তাকায়,শুভ্রকে মাটিতে লুটিয়ে পড়তে দেখে হাতে থাকা গুলিটা ছুঁড়ে ফ্লোরে ফেলে দিয়ে শুভ্রকে জড়িয়ে ধরে।

” শুভ্র এই শুভ্র চোখ খুলো।

শুভ্র স্মিত হেঁসে বলে,,

” আমি বলেছিলাম না অহনা আমায় খু’ন করতে পারবে না,আমি যতোই খারাপ ব্যাবহার, খারাপ হই না কেনো,অহনা পারবে না আমায় মারতে। আমি বেঁচে থাকলে কখনোই এ পথ থেকে সরে আসতাম না,সে তুমি অহনা মর’লেও আমার কিচ্ছু যায় আসতো না আর বাঁচলেও তোমার প্রতি মায়া জন্মাতো না। আমার সাম্রাজ্য আমি কিছুতেই ছাড়তাম না।

” এখনো সাম্রাজ্য নিয়ে পড়ে আছো তুমি,তোমার শরীর কিসে গড়া বলোতো,আদৌও তুমি সুস্থ মানুষ নাকি সাইকো। তোমার নেশাতে পরিনত হয়েছে এই জগৎ।

” সে তুমি যাই ভাবো,আমি ম’রে গেলোও আমার সাম্রাজ্যকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য কেউ একজন আসবে,নিশ্চয়ই সে আসবে,আবার সে আমার এই সাম্রাজ্য কে জীবন্ত করে তুলবে,সেদিন আমি ফিরে আসবো তার মাঝে,আবার লোক দেখবে এক নতুন শুভ্র কে,ভালো থেকো আর পারলে বৃথা চেষ্টা করো তাকে আটকানোর। কথাটা বলেই শুভ্র চোখ বন্ধ করে ফেলে।

শুভ্রর চোখ বন্ধ করা দেখে অহনা একটা চিৎকার দিয়ে শুভ্রর নিথর দেহটি বুকের সাথে আগলে নিয়ে বলে,,

” কি দোষ করেছিলাম তোমায় ভালোবেসে কি অপরাধ করেছিলাম, তোমার মৃত্যুতেও আমার এতো কষ্ট কেনো হচ্ছে,ভালোবাসি বলে? কিন্তু তোমায় তো ঘৃণা করতে গিয়েও করতে পারছি না, তোমায় তো নিজের হাতেই মার’তে চেয়েছিলাম কিন্তু তোমায় আমি মারি নি শুভ্র।

শামসুল আলম, রিফাত এসে দেখে ডেরার মধ্যে লাশ পড়ে আছে,আর পাশেই শুভ্রর দেহটা জড়িয়ে ধরে বসে আছে অহনা, শামসুল আলম অহনার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে অহনার কাঁধে হাত রাখতেই অহনা শামসুল আলমের দিকে চেয়ে বলে,,

” স্যার শুভ্র আর নেই,কে যেনো মে’রে ফেলছে শুভ্রকে।

” তুমি মা’রো নি এদের।

” হ্যাঁ আমিই মে’রেছি কিন্তু শুভ্র কে মারতে গিয়ে আমি মার’তে পারি নি কোথা থেকে যেনো দুটো গুলি এসে শুভ্রর গায়ে লাগে।

শামসুল আলম পড়ে থাকা বন্দুক দেখিয়ে বলে,,

” এই পিস্তলই কি ব্যাবহার করেছিলে।

” হ্যাঁ।

” রিফত লা’শ গুলে নিয়ে যাও আর এই পিস্তল টা ল্যাবে পাঠিয়েছে দেখো তো এই বন্দুক থেকে গুলি শুভ্রর শরীরে লেগেছে নাকি।

” ঠিক আছে স্যার।

এর মধ্যে সারাদিন না খাওয়া তার উপর শুভ্রর লা’শ উঠিয়ে নিয়ে যেতেই অহনা উঠে দাঁড়াতেই জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যায় মাটিতে। শামসুল আলম অহনাকে ধরে ফেলে।
রিফাত বডি গুলো আর পিস্তল ল্যাবে পাঠায়।

অহনাকে নিয়ে হসপিটালে এডমিট করানো হয়। ডক্টর চেক-আপ করে জানায় অহনা প্রেগন্যান্ট দেড় মাসের।

কথাটা অহনার কর্ণকুহর হতেই,অহনা খুশি হবে নাকি আনন্দিত হবে বুঝতে পারছে না অহনা।

এর মধ্যে আরো একটি খবর আসে তা হলো অহনার পিস্তল থেকেই শুভ্রর শরীরের গুলি ছুঁড়ে মারা হয়েছে।

কিন্তু অহনার খেয়াল আছে তার পিস্তল থেকে গুলি বের হয় নি।

অহনাকে ধরে অহনার মায়ের কাছপ দিয়ে আসা হয় আর কয়েকদিনের জন্য রেস্ট নিতে বলা হয়।

অহনার মা কিছুতেই অহনাকে তার বাসায় থাকতে দিবে না,তার স্বামির মৃত্যুর জন্য অহনাকে দায় করছে।

শামসুল আলম উপায়ন্তর না পেয়ে অহনাকে নিজের সাথে করে নিয়ে যায়।।

পুরো দেশে এখন একটাই নিউজ গোয়েন্দা বিভাগের একজন অহনা নামের এক কর্মকর্তার হাতে নারী পা’চার কারি শুভ্র ওরফে অহনার স্বামি, বাবার মৃ’ত্যু হয়। নিউজ টা দেখে শামসুল আলম মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে,তারা তো এমন কোনো নিউজ মিডিয়ার কাছে জানায় নি বরং,অহানকে বাঁচানোর জন্য নিউজ টা তাদের মধ্যেই রেখেছে, ফাঁস হলো কিভাবে। উপর মহল থেকে চাপ দেওয়া হলো অহনাকে গ্রফতার করার জন্য, যতোই আইনের লোক হোক না কেনো অহনা নিজের হাতে আইন তুলে নিয়েছে,আমাদের অপরাধিকে আইনের হাতে হস্তান্তর করতে হয়,খু’ন না, অহনা প্রেগন্যান্ট তার উপর শরীর ভালো না তাই উপর মহল থেকে খানিক সময় চেয়ে নিয়ে তার তিনদিন পর অহনাকে জেলে ভরা হয়। অহনা জেলে এ কথা শুনে সায়েম তাড়াতড়ি করে চলে আসে অহনার সাথে দেখা করার জন্য,বড় বড় উকিল এনে অহনার জন্য লড়া হয়েছে কিন্তু সব প্রমান অহনার বিপক্ষে, কোর্টে প্রমান হয় সব খুন অহনার হাতে হয়েছে। কোর্ট অহনার শাস্তি খানিকটা লাঘব করতে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ঘোষণা করেন।

★ ★ ★ ★ ★

সেই থেকেই আমি এখানে। জেলে ঢোকার সাত মাস পর আমার কোল জুড়ে যখন সাফওয়ান এসেছিলো সেদিন হঠাৎ করেই শুভ্রর বলা সেই কথা মনে পড়ে গিয়েছিলো সেদিন সে বলেছিলো সে আবার ফিরে আসবে,কেউ তার সাম্রাজ্য কে আবার জীবন্ত করে তুলবে।

আমার সাফওয়ান যেনো কখনোই শুভ্রর ব্যাপারে জানতে না পারে তাই সেদিন দেড় মাসের বাচ্চা কে সায়েমের হাতে তুলে দেই সেই থেকেই সায়েম সাফওয়ানের বাবা,আর তানিয়া সায়েমের স্ত্রী সাফওয়ানের মা।

জেলে আসার কয়েকদিন পর জয়নাল চাচা এসে বলেছিলেন আমি তার ছোট ভাইয়ের মেয়ে, আমার আশে পাশে থাকার জন্যই রোজ ও বাড়িতে খাবার নিয়ে যেতো,আগেই থেকেই আমার বাবা, শশুর ওদের চিনতো, আমার জন্মদাত্রী মা মারা যাওয়ার কয়েক মাস পরই আমার আসল বাবা মা-রা যায় রোড এক্সিডেন্ট।

এই হলো আমার জীবনের কাহিনি। এতো গুলো বছর পর কেনো আপনি এগুলো শুনতে চাইছেন।

এনামুল হক চেয়ারে বসতে বসতে বলে,,

” আমি নতুন মাস কয়েক হলে এসেছি, আমি আবার পূনরায় আপনার কেইসটা অপেন করতে চাই তদনৃত করতে চাই কে শুভ্রকে মারলে।

অহনা স্মিত হেঁসে বলে,,

” আর আছেই তো আমার সাজার দু বছর, এখন এটা ঘেঁটে কি করবেন।

” তবুও চাইছি।

অহনা হেঁসে বলে,,

” আমার একটাই অনুরোধ আমার চাচা যেনো এই বয়সে এসে শাস্তি না পায়,তাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসুন।

” সে না হয় দিবো, কিন্তু,,

” কোনো কিন্তু নয়,আপনি আর এসব ঘেঁটে পুরোনো অতীত কে সামনে আনবেন না দয়া করে।

” ঠিক আছে আপনি যা মনে করেন।

কথাটা বলে এনামুল হক চলে যায়,জয়নাল মিয়া অহনাকে কিছু বলতে নিলে অহনা বলে উঠে,,

” চাচা আমার সাফওয়ান কেমন আছে।

” সাফওয়ান ঠিক কোন ধাঁচের মানুষ হইতাছে মা আমি বুঝতাছি না,কোনো কিছু সাথে সাথে চোখের সামনে না পাইলে জিনিসপত্র ভাঙ্গে। মানুষজন দেখতে পারে না,একা একা থাকে,রাগ উঠলে হাতের সামনে যা পায় তাই সায়েম বাবা,তানিয়া আম্মার দিকে ছুঁড়ে মারে,

এই তো সেদিন সামান্য নুডলস রান্না করতে দেরি হয়েছে বলে,গরম নুডলস সায়েম বাবার বাড়ির কামের বেডি ফজিলার পায়ের উপর ফালায় দেয়। ভয়ডর মায়া বলতে কিছুই নাই ওর মধ্যে। শুভ্র বাবার থেকেও রাগ বেশি এর। তুমি তাড়াতাড়ি জেল থিকা বাড়াইয়া তোমার ছেলের দায়িত্ব নাও,কন্ট্রোলে রাখো। তারা সাফওয়ান বাবার শরীরে হাত তুলতে গেলে দু বার ভাবে,তাকে মারছে এরা শুনলে তুমি কষ্ট পাইবা দেইখা।

” এই তো চাচা আর দু টো বছর,আমি আমার ছেলেকে কিছুতেই শুভ্রর মতো হতে দিবো না।

” তাই করো মা,আমি এনহ আসি।

কথাটা বলে জয়নাল মিয়া চলে যায়।

অহনা মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে।

” এ কোন দিকে মোড় নিয়ে আবার জীবন, আবার ও কি জীবন্ত হয়ে উঠবে তিক্ত প্রতিশোধের আগুন,আবার ও কি হবে ধ্বংসাত্মক। না এখনো সময় আছে সব ঠিক করার, সময়ের পরিবর্তনে ঠিক বদলিয়ে ফেলবো সব। শুধু দুটো বছরের অপেক্ষা।

#সমাপ্ত

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে