তিক্ত প্রতিশোধ পর্ব-১৬

0
761

#তিক্ত_প্রতিশোধ
#পর্ব ১৬
#Raiha_Zubair_Ripte

দু তলা এক ভবনের চারদিক ঘেরাও করে রাখা হয়েছে,এক পা এক পা করে বাড়িটির ভেতর খুবই সতর্কতার সাথে ঢুকে রিফাত,তন্ময়, অহনা সহ আরো তিনজন সহকারী। ভবনটির ভেতরে ঘুটঘুটে অন্ধকার তন্ময় ফোন বের করে ফোনের টর্চ অন করে। এক এক করে পুরো ভবন খুঁজেও কিচ্ছুটি তারা পায় না। হয়তো আগে থেকেই তারা বুঝতে পেরেছিলো। অতঃপর কিছু না পেয়ে তারা বেরিয়ে আসে ভবন টি থেকে।

রাত প্রায় ১১ টা বেজে দশ মিনিট,ভবন থেকে বেরিয়ে পাশে থাকা টঙের দোকানে বসে দোকানদার কে ছয় কাপ চা দিতে বলে রিফাত।

দোকানদার চা বানিয়ে তাদের দিতেই অহনা বলে উঠে,,

” আচ্ছা চাচা আপনি এই দোকান টা কতোক্ষণ পর্যন্ত খোলা রাখেন।

” এই তো সাড়ে এগারো টা বাজলেই দোকান বন্ধ করে ফেলবো কেনো বলেন তো।

” না এমনি তা চাচা কতো দিন হলো আপনার এই দোকানের।

” উমমম হবে সাত কি আট বছর।

” তাহলে আপনি তো প্রায় সবই জানবেন তাহলে এখানে কখন কি ঘটে না ঘটে।

” হ্যাঁ তা তো মোটামুটি জানি সব।

” তাহলে চাচা একটা কথা বলুন তো।

” কি কথা?

” এই যে আপনার দোকান থেকে সোজা তিন বিল্ডিং এর পরে যে দু তলা হলুদ রং উঠে যাওয়া বিল্ডিং টা দেখা যাচ্ছে সেখানে নাকি আজকাল কিসব উল্টাপাল্টা কাজকর্ম ঘটছে।

কথাটা শোনামাত্রই লোকটা ঘামতে শুরু করলো,অহবা চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে আবার বলে উঠলো,,

” আহ আজকাল যেই গরম পড়ছে চাচা তো ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গেছে,একটা ঠান্ডা আনি চাচা।

” আ.. আপনারা ক.. কে বলুন তো।

অহনারা সবাই নরমাল পোশাক পড়ে আছে বিধায় লোকটা বুঝতে পরে নি।

” সে আমরা যেই হই না কেনো আপনি বলুন ওখানে কি হয় কখন কি ঘটে।

” আমি জানি না,আপনারা আসুন আমি দোকান বন্ধ করবো।

” আপনি তো এখন দোকান বন্ধ করতে পারবেন না,আপনি যদি চান আপনার কোনো ক্ষতি না হোক তাহলে আমরা যা জিজ্ঞেস করছি সব বলে দিন।

” আমি সত্যি জানি না ওখানে কি হয় না হয়।

” তার মানে আপনি ভালোমতো বলবেন না,রিফাত উনাকে নিয়ে চলো।

বেঞ্চ থেকে উঠতে উঠতে কথাটা বলে তন্ময়। তন্ময়ের কথাটা শুনে লোকটা ঘাবড়িয়ে গিয়ে বলে,,

” আপনারা আমায় কোথায় নিয়ে যাবেন।

” কোথায় আবার আপনায় আদর যত্নের খাতির করতে।

” মানে,,

” কোনো মানে টানে নেই লাঠির দু এক ঘা পিঠে পড়লে সব গড়গড় করে বলে দিবে।

” চাচা ভালো মতো আপনায় জিজ্ঞেস করা হচ্ছে বলে দিলেই তো পারেন,আমরা গোয়েন্দা এখন আপনি বলুন আপনি আমাদের সাহায্য করবেন কি করবেন না।

” আচ্ছা বলছি বলছি,দয়া করে আমায় নিয়ে যাবেন না। ঐ বাড়িতে রোজ বুধবার আর শনিবার আড্ডা বসে রাত এগারো টার পরে।

” আপনি সত্যি বলছেন তো।

” হ্যাঁ সত্যি বলছি আজ তো মঙ্গলবার কালই তো বুধবার কাল রাতে এগারোটার পরে আসলেই দেখতে পারবেন। দয়া করে আর কিছু জিজ্ঞেস করবেন না আমি আর কিছু জানি না।

” ঠিক আছে চাচা, আমরা যে আপনার কাছে এসেছিলাম বা জিজ্ঞেস করছিলাম এ বিষয় টা যেনো কেউ জানতে না পারে।

” সে আপনি বললেও আমি কাউকে বলবো না আর না বললেও বলবো না।

তন্ময় রিফাত সহ বাকিরা দোকান থেকে উঠে গাড়িতে গিয়ে বসে। অহনা গাড়ির দরজাটা টান দিয়ে খুলে ঢুকতে নেবার সময় হঠাৎ মুঠো ফোন টায় কল আসে। অহনা ফোনটার স্কিনে তাকিয়ে দেখে শামসুল আলম ফোন দিয়েছে।

অহনা গাড়িতে আর না ঢুকে গাড়ি থেকে খানিকটা দূরে গিয়ে ফোন রিসিভ করে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে শামসুল আলম বলে উঠে,,

” অহনা এটা আমি কি শুনলাম তোমার দেবরের নাকি মৃ’ত্যু হয়েছে।

” হুমম স্যার কেনো বলুন তো।

” তোমার দেবর অভ্র কে তো কেউ হ’ত্যা করেছে।

” হুমম শুভ্র করেছে।

” আর ইউ শিওর।

” হ্যাঁ স্যার শিউর।

* * * *

” আপনি মিথ্যা কেনো বলেছিলেন সেদিন আপনার হেড কে,আজও তো আপনি মিথ্যা বলছেন।

অফিসার এনামুলের কথাটা শুনে চমকে উঠে অহনা, আমতাআমতা করে শুধায়,,

” আ..আমি ক..কোনো মিথ্যা কথা বলিনি।

এনামুল হক টেবিলের উপর এক হাত রেখে ভর দিয়ে অহনার দিকে ঝুঁকে বলে,,

” আলবাত আপনি মিথ্যা বলছেন,না আপনি সেদিন আপনার দেবরের হাতে ধর্ষ’ণ হয়েছিলেন আর না তাকে আপনি মে’রেছিলেন।

কথাটা শোনামাত্রই অহনার মনে ভয়েরা এসো হানা দেয়। এই পাঁচ টা বছর ধরে যেই সত্যি টাকে লুকিয়ে এসেছে আজ কেনো সেটা সম্মুখে আসতে চাইছে। অহনা নিজেকে সামলে জবাব দেয়,,

” আপনার মাথাটা নিশ্চয়ই খারাপ হয়ে গেছে,আমি তো জেলের মধ্যেই আছি এখন তাহলে আমি মিথ্যা কেনো বলতে যাবো।

” আর ইউ শিওর মিসেস অহনা আপনি মিথ্যা বলছেন না,আমি যদি সত্যি টাকে সামনে আনি তাহলে।

” আপনার সত্যি আপনার সামনেই বসে আছে,আপনার কি আমার কথা বিশ্বাস হচ্ছে না।

” আপনি তো এতোক্ষণ ধরে এতো কথা বললেন আমি কি বলেছি আপনি মিথ্যা বলেছেন,আপনি যেখানটায় ভুল বলেছেন আমি সেখানটা তুলে ধরলাম।

” না আমি কোনো মিথ্যা বলি নি।

” আচ্ছা আপনার কথাই না হয় মানলাম, তা মিসেস অহনা কাইন্ডলি একটু জানাবেন আপনার স্বামীর বাসায় যে খাবার নিয়ে আসতো তার সাথে আপনার কিসের সম্পর্ক।

অহনা যেটার ভয় পাচ্ছিলো ঠিক সেটাই ঘটলো।

” তার সাথে আবার আমার কিসের সম্পর্ক, সে কেবলই ও বাড়িতে খাবার দিয়ে যেতো।

” তার মানে বলতে চাইছেন উনার সাথে আপনার কোনো সম্পর্ক নেই।

” না নেই।

” বেশ, খালেক উনাকে নিয়ে আসো তো।

লোকটা যেনো তার আদেশেরই অপেক্ষায় ছিলো,আদেশ পাবার সাথে সাথে লোকটা কাউকে এনে অহনার সামনে দাঁড় করায়।

অহনা মাথা উঁচু করে লোকটার দিকে তাকাতেই বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। অহনা দাঁতে দাঁত চেপে অফিসার এনামুল হকের দিকে তাকিয়ে বলে,,

” আপনি এখানে ওনাকে কেনো নিয়ে এসেছেন।

” সত্যি টা সামনে আনার জন্য ওনাকে এখানে নিয়ে আসা হয়েছে।

” তখন থেকে কোন সত্যি মিথ্যার কথা বলছেন হ্যাঁ, আমি বলেছিনা আমি মে’রে ছিলাম অভ্র কে।

কথাটা চিৎকার করে বলে উঠে অহনা।

এনামুল হোক অহনার দিকে তাকিয়ে হুংকার দিয়ে বলে,,

” গলা নামিয়ে কথা বলুন,আপনার কথা শুনে আমার চলতে হবে নাকি,আমি কখন কাকে নিয়ে আসবো না আসবো সেটা আমার মর্জি। এই সেই লোক যে কি-না সম্পর্কে আপনার আপন চাচা লাগে,আই মিন আপনার জন্মদাতা পিতার বড় ভাই।

” সেসব পুরোনো কথা কেনো টানছেন আপনি?

” আপনি আমার কথার জবাব দিন উনি আপনার চাচা কি না।

” হ্যাঁ উনি আমার চাচা তো?

” তো কিছুই না, এবার যা বলার আপনার চাচাই বলবে।

কথাটা কর্ণকুহর হতেই অহনা ভ্রু কুঁচকে ফেলে,এনামুল হক সেটা দেখে জয়নাল মিয়াকে বলে,,

” তা জয়নাল মিয়া আপনিই বলুন সেদিন কি করেছিলেন আপনি।

জয়নাল মিয়া তার শুষ্ক ঠোঁট টা জিহবা দিয়ে ভিজিয়ে একবার অহনার দিকে তাকাতেই অহনা ইশারায় তাকে মানা করছে যেনো সে সত্যি টা না বলে।

জয়নাল মিয়া অহনার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে এনামুল হকের দিকে তাকিয়ে বলে,,

” সেদিন যখন আমি অহনা রে ঐ ঘরের কথা বলে বাড়ির দিকে যাওয়নের লাইগা ও বাড়ি থেকে বের হমু তখন সদর দরজা দিয়ে বাইর হইতেই মনে হইলো বাগানে আমি ভাতের বাটি গুলান রাইখা আইছি তাই সেগুলা নেওয়নের লাইগা বাগানে যাইয়া ভাতের বাটি গুলান নিয়ে বাড়ির ভেতরে সোফার সামনে রাইখা বের হইতে নিলে হঠাৎ অহনার চিৎকার শুইনা থাইমা যাই,মাইয়া যে কোনো একটা বিপদে পড়ছে তা আমি ভালো কইরাই বুঝবার পারছিলাম।

তাই তাড়াতাড়ি কইরা সিঁড়ি বাইয়া উপরে উইঠা ঐ ঘরের সামনে যাইয়া দরজা ফাঁক কইরা দেখতেই দেহি অভ্র ব’জ্জাতে অহনারে উপরে উইঠা জোরজবরদস্তি করতাছে, আমি দেখ বেদিক ভুইলা ঘরে ঢুইকা ফুলদানি টা নিয়া অভ্রর মাথায় বাড়ি দেই।

হঠাৎ এমন আক্রমণে অভ্র মাথয় হাত চেপে পেছনে ঘুরে দেখে জয়নাল মিয়া। বৃদ্ধ মানুষ খুব একটা শক্তি প্রয়োগ করে অভ্র কে সেভাবে শক্ত করে আঘাত করতে পারে নি।

অভ্র সোজা গিয়ে জয়নালের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, অহনা সেটা দেখে শুয়া থেকে উঠে দাঁড়িয়ে অভ্র কে জয়নালের থেকে ছাড়াতে ব্যাস্ত হয়। অভ্র এক হাত দিয়ে অহনাকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিয়ে বৃদ্ধ জয়নালের গলা চেপে ধরে। অহনা এদিক ওদিক চেয়ে কিছু একটা খুঁজতে থাকে,খাটের নিচে একটা তলোয়ার দেখে সেটা বের করে অভ্রর পিঠে কোপ বসায়।

এমন আক্রমণে অভ্র জয়নাল কে ছেড়ে দিয়ে পিঠে হাত দিয়ে ব্যাথায় চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে,অহনা সেই সুযোগ নিয়ে অভ্র কে ধাক্কা মেরে ফ্লোরে ফেলে দিয়ে বৃদ্ধ জয়নালের হাত ধরে ঘর থেকে বের হতে নিলে পেছন থেকে অহনার পা টেনে ধরে অভ্র।

অহনা পা দিয়ে লা’থি মেরেও পারছে না অভ্রর হাত থেকে নিজের পা ছাড়াতে। অভ্র হঠাৎ পা ধরে টান দিতেই উল্টো হয়ে ফ্লোরে পড়ে যায় অহনা,যার দরুন মাথায় আঘাত পেয়ে র’ক্ত বের হয়।

অভ্রর পাশে পড়া ফুলদানি টা উঠিয়ে অহনার মুখ বরাবর আঘাত করতে নিলে পাশ থেকে ধারালো তলোয়ার টা নিয়ে এক কোপ দিয়ে মাথা থেকে পুরো শরীর আলাদা করে ফেলে জয়নাল।

জয়নালের এমন কান্ড দেখে অহনা আঁতকে উঠে,অনেক কষ্টে ব্যাথযুক্ত শরীর নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে জয়নালের হাত টা ধরে বলে,,

” চাচা এটা আপনি কি করলেন।

” চিন্তা কইরো না মা যা করছি ভালাই করছি,হা’রামজাদার এমনই হওয়া উচিত।

” তাই বলে আপনি মে’রে ফেলবেন চাচা,ওরা জানতে পারলে আপনার কি অবস্থা করবে আপনি ভাবতে পারছেন।

” আমার চিন্তা বাদ দেও কয়দিন ই আর বাঁচুম,মই’রা যাওয়ার আগে পাপি ডারে শাস্তি তো দিবার পারছি। হা’রামজাদার সাহস হয় কেমনে,আমার বংশের মাইয়ার দিকে খারাপ নজরে হাত দেওয়ানের।

” আপনার বংশের মেয়ে মানে চাচা,আপনি কি বলছেন।

” ও কিছু না তুমি বরং এইহান থে পালাইয়া যাও আমি দেখতাছি এই দিক টা।

” মাথা খারাপ নাকি, আমি আপনায় একা ফেলে যেতে পারবো না, আপনি বরং বাসায় চলে যান, বাকিটা আমি সামলে নিবো।

” তুমি সামলাইতে পারবা না।

” চাচা আমি পারবো আপনি যান। আর আজকের এই কথাটা কখনো কাউকে বলবেন না।

” কি কও মা, হেরা এমনিতেই জাইনা যাইবো গা।

” না চাচা তারা জানবে না আমি জানতে দিবো না,আপনি বরং তাড়াতাড়ি চলে যান।

কথাটা বলেই ঠেলেঠুলে জয়নাল মিয়া কে বাসা থেকে বের করে দেয় অহান। ঘরে ঢুকে অভ্রর লা’শ টার দিকে চেয়ে নিচ থেকে তলোয়ার টা নিয়ে অভ্রর পে’টের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়।

বেডের পাশে উপরে তাকাতেই সিসিটিভি ক্যামেরা দেখে সেটার ফুটেজ মাঝ খান থেকে ডিলেট করে দেয় অহনা।

” কিন্তু অহনা যখন আমজাদ হোসেন কে বলছিলো ফুটেজ সব টুকু দেখানোর কথা,তখন তাহলে আমজাদ হোসেন ভয় পেয়ে গিয়েছিলো কেনো।

” সিসি টিভি ফুটেজে আমজাদ হোসেনের কুকীর্তি ছিলো তাই সে ভয় পেয়ে গিয়েছিলো।

” মানে কেমন কুকীর্তি ছিলো?

” ঐ ঘরের মধ্যে বিছানার তলে ড্রাগ ছিলো যা শুভ্রর অগোচরে তারা সাপ্লাই দিতো,আমি সেটা বিছানার তলা থেকে বের করেছিলাম।

” ওহ তার মানে আপনি ড্রাগের সিন টুকু আর আপনার হাতে অভ্রকে মা’রার সিন টুকু রেখে বাকি টুকু ডিলেট করে দিয়েছিলেন।

অহনা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানায়।

# চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে