তিক্ত প্রতিশোধ পর্ব-১৪

0
668

#তিক্ত_প্রতিশোধ
#পর্ব ১৪
#Raiha_Zubair_Ripte

আজ হঠাৎ আলমারি থেকে জামা কাপড় বের করতে গিয়ে অহনার চোখ আটকে যায় শুভ্রর মেরুন রঙের একটি শার্টে। কৌতূহল নিয়ে শার্ট টা বের করে অহনা,শার্ট টা বের করতেই অহনা থমকে যায়,শুভ্রর শার্টে লিপস্টিকের দাগ!এটা কি করে সম্ভব অহনা তো কখনো বাসায় লিপস্টিক ব্যাবহার করে না আর না কখনো লিপস্টিক ব্যাবহার করে শুভ্রর সাথে ঘনিষ্ঠ হয়েছে,তাহলে এই দাগ কোথায় থেকে এলো?

সাথে রয়েছে অন্য রকম এক পারফিউমের ঘ্রাণ, এই সুগন্ধি পারফিউম কখনোই শুভ্র কে লাগাতে দেখে নি,অহনা শার্ট টা বিছানার উপর রেখে ড্রেসিং টেবিলের উপর রাখা সব পারফিউমের বোতল একটা একটা করে চেক করে দেখে,, না এই সুগন্ধি পারফিউমের কোনো সুগন্ধ এই পারফিউম গুলোর মধ্যে নেই,থাকবে কি করে এটা তো মেয়েলি পারফিউম।

শুভ্র কি তাহলে পরনারী তে আসক্ত হচ্ছে, নাকি সে অহনার অগোচরে কারো সাথে সম্পর্কে এগোচ্ছে। আরো এমন শত কল্পনা জল্পনা করলো অহনা।

শার্ট টা ধরে বিছানায় বসে একা একাই বলতে লাগলো,,,

” শুভ্র এলে আজ তাকে জিজ্ঞেস করতে হবে এই লিপস্টিকের দাগ আসলো কোথা থেকে।

শার্ট টা সুন্দর করে আলমারি তে তুলে রেখে অহনা আলমারি টা লাগিয়ে বিছানা থেকে ফোনটা নিয়ে সায়েম কে ফোন দেয়। ওপাশ থেকে সায়েম ফোন টা ধরলে অহনা বলে,,

” হ্যালো সায়েম তোমায় যেই ফাইল টা রেডি করতে বলেছিলাম সেটা তুমি রেডি করেছো।

” এখনো হয় নি দু চার দিন সময় লাগবে, এখানে অনেক কাজের চাপ।

” ওকে তাহলে ফাইল টা রেডি করে আমায় জানিয়ো।

” ঠিক আছে রাখি তাহলে।

” আচ্ছা রাখো।

কথাটা বলে অহনা ফোন রেখে দেয়। ফোনটা হাতে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে সিঁড়ির কাছে আসতেই অহনা শুনতে পায় আমজাদ হোসেন কারো সাথে ফোনে কথা বলছে। অহনা সিঁড়ির পাশে আড়াল হয়ে দাঁড়িয়ে সব কথা শুনে।

” ওদের দিয়ে একটা কাজ ও হয় না, ওখান থেকে মেয়ে গুলো পালালো কি করে,আজ ওদের রক্ষা নেই, সাখওয়াত আজ কিছুতেই ওদের ছেড়ে দিবে না। আজ ওদের জ্যান্ত পুঁ’তে ফেলবে। মেয়েগুলো কে আজ পাঠানোর কথা ছিলো,কতো বড় লস হলো তুই জানিস,এমনি তেই অহনার জন্য আমাদের কতো লস হচ্ছে, এমন টা হতে চললে আমাদের বাঁচা মুশকিল। আমি আসছি ফোন রাখ।

কথাটা বলেই আমজাদ হোসেন ফোন রেখে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।

শুভ্র যে বলেছিলো এসব কাজ সে তার বাবাকে করতে দিবে না তাহলে তার বাবা আজ কেনো এটা বললো,আর সাখওয়াত টাই বা কে? যে করেই হোক আমায় জানতে হবে।

কথাটা বলেই অহনা ও আমজাদ হোসেনের পেছন পেছন যায়।

আমজাদ হোসেন বাড়ি থেকে বের হয়ে গাড়িতে উঠার সময় একটা ফোন আসায় খানিক দূরে গিয়ে সরে দাঁড়ায়।

অহনা সেই সুযোগে গাড়ির পেছনের ডিকি তে উঠে পড়ে।

আমজাদ হোসেন ফোনে কথা বলে গাড়িতে উঠে গাড়ি চালাতে শুরু করে।

প্রায় তিন ঘন্টা পরে আমজাদ এক জঙ্গলের পাশে এনে গাড়ি দাঁড় করায়।

গাড়ি থেকে নেমে আমজাদ জঙ্গলের ভেতর হাঁটা শুরু করে।

গাড়ি থামানোর শব্দ পেয়ে অহনা আস্তে আস্তে করে ডিকি থেকে বেরিয়ে দেখে আমজাদ জঙ্গলের ভেতর হাঁটা দিচ্ছে।

অহনা আর সময় নষ্ট না করে আমজাদের পেছন পেছন হাঁটা ধরলে।

গহীন জঙ্গল অথচ হাঁটা এখনও থামছে না আমজাদের, এখন ও সে হেঁটেই চলছে।

অহনা হাঁটতে হাঁটতে হাপিয়ে গেছে দু হাটুতে ভর দিয়ে খানিক ঝুঁকে, আবার সোজা হয়ে দাঁড়াতেই দেখে সামনে আমজাদ হোসেন নেই।

অহনা এদিক ওদিক তাকিয়ে ও আমজাদ হোসেন কে দেখতে পায় না।

অহনা চারপাশে চেয়ে চেয়ে হাঁটতে থাকে কিছুটা সামনে এগোতেই দেখে নিচে খাদ আর অহনা উপরে। অহনা নিচের দিকে তাকাতেই দেখতে পায় আমজাদ হোসেন এক পুরনো বাড়ির মধ্যে ঢুকছে।

কিন্তু এই উপর থেকে নিচে কিভাবে নামে, নামার মতো কোনো জায়গা অহনা খুঁজে পাচ্ছে না।

কোনো তো এক রাস্তা আছেই এই নিচে নামার অহনা আশেপাশে ভালো করে খুঁজতে লাগলো রাস্তা।

বাম দিকে ঘুরে একটু এগোতেই অহনা দেখতে পেলো একটা ছোটখাটো সুরঙ্গ অহনা আর সময় ব্যায় না করে সুরঙ্গের ভেতর ঢুকে পরে।

মিনিট তিনেকের মধ্যে অহনা সুরঙ্গ থেকে বেরিয়ে দেখে এই সেই রাস্তা তাহলে যেটা দিয়ে অহনা নিচে নেমে এলো।

অহনা চোখ কান খোলা রেখে সতর্কতার সাথে এগোতে লাগলো। বাড়িটার সামনে এসে ভেতরে ঢুকে পড়ে। এমন ফটফটা দিনেও বাড়িটার মধ্যে আবছা অন্ধকার।

অহনা ভেতরে ঢুকে চারপাশ টা দেখতে দেখতে যায়। বাড়িটার মধ্যে ঢুকে খানিক এগোতেই কারো হাসির আওয়াজ শুনে দাঁড়িয়ে যায় অহনা, হাসির শব্দ অনুযায়ী অহনা সেদিকে এগোয়।

অহনা এগোতেই সামনে কয়েকজন লোক কে দেখতে পায়, তাদের মধ্যে এক লোক হুডি পড়ে দাঁড়িয়ে আছে আর দু জন আমজাদ আর মোশারফ আর তাদের সামনে দুজন লোক মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।

অহনা আড়াল থেকে দাঁড়িয়ে তাদের পর্যবেক্ষণ করতে থাকে।

আমজাদ হোসেন চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে মাথা নিচু করে রাখা দু ছেলের গালে ঠাস করে চ’র বসিয়ে দেয়।

চুলের মুঠো টেনে বলে,,

” তোরা সামন্য কাজ পারিস না, কি করে মেয়ে গুলো পালিয়ে গেলো বল।

ছেলে দুটো কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,,

” বস এবারের মতো ক্ষমা করে দিন এমন ভুল আর কোনো দিন হবে না। আমরা বুঝতে পারি নি মেয়ে দুটো পানি খাওয়ার নাম করে বাঁধন খুলে দিলে এভাবে মাথায় বাড়ি দিয়ে পালিয়ে যাবে।

” আমার ডিকশনারি তে ক্ষমা নামক শব্দ নেই তোরা জানিস না।

কথাটা বলতে বলতে হুডি পড়া লোকটা বসা থেকে উঠে ছেলে গুলোর সামনে দাঁড়ায়।

অহনার গলার আওয়াজ টা খুব চেনা চেনা লাগছে,কিন্তু কোথায় শুনেছে ঠিক মনে করতে পারছে না।

ছেলেগুলো লোকটার পা ধরে বলে,,

” বস দয়া করে এবার ছেড়ে দিন কথা দিচ্ছি আর এমন ভুল হবে না।

লোকটা খানিক সরে দাঁড়ায় পাশ থেকে ধারালো লম্বা ছুরি টা নিয়ে দুজনের মধ্যে থেকে একজনের মাথা এক কোপে শরীর থেকে আলাদা করে ফেলে। লা’শ টা ছটফট করতে থাকে।

এমন মর্মান্তিক মৃ’ত্যু দেখে অন্য ছেলটা লোকটা পা ধরে কেঁদে উঠে,কিছু বলার জন্য উদ্ধত হলে হুডি পড়া লোকটা বলে উঠে,,

” সাইফ একে সেই বন্দী করে রাখা হায়নার কাছে ছেড়ে আয়। আজ নিজ চোখে দেখবো ওর মৃ’ত্যু,দেখবো হায়না টা কিভাবে ওকে ছিঁড়ে ছিঁড়ে খায়।

ভেতর থেকে দুজন চব্বিশ কি পঁচিশ বছরের দুই ছেলে এসে সেই ছেলেটাকে ধরে নিয়ে যায়।

আমজাদ হোসেন কথাটা শুনে আধপাকা দাড়ি গুলোতে হাত বুলাতে বুলাতে বলে,,

” দেখলে তো মোশারফ মাই সাখওয়াত ইজ ব্যাক। সে তার আসল রূপে ফিরেছে।

মোশারফ আমজাদের দিকে তাকিয়ে বলে,,

” হ্যাঁ তাই তো দেখতে পাচ্ছি।

” তোমাদের কে বলেছে এখানে আসতে আমি বলেছিনা আমি না বললে এই জায়গায় আসবে না।কেনো এসেছো তোমরা এখনি চলে যাও।

হুডি পড়া লোকটা দাঁতে দাঁত চেপে কথা গুলো বললো।

” তো কি করতাম ঐ মূহুর্তে এমন একটা কথা শুনে কি না এসে থাকা যায়।

” নো মোর ওয়ার্ডস,আমি যখন বলেছি চলে যেতে তখন চলে যাবে।

আমজাদ আর মোশারফ কথা না বাড়িয়ে চলে যায়।

অহনা নিজেকে আরেকটু আড়াল করে নেয় যাতে আমজাদ আর মোশারফ না দেখতে পারে।

আমজাদ আর মোশারফ চলে গেলে হুডি পড়া লোকটা পেছন ঘুরে উপরে যেতে নিলে কোথায় থেকে এক মেয়ে এসে লোকটাকে জড়িয়ে ধরে।

লোকটা বিরক্তি নিয়ে বলে আহ সাইফা হচ্ছে টা কি যখন তখন এভাবে জড়িয়ে ধরো কেনো।

সাইফা নামটা শুনেই অহনা আকস্মিক চমকে উঠে, এ কোন সাইফা। সাইফা তো শুভ্রর সেই কাকির মেয়েটার নাম এ কি তাহলে সেই মেয়ে,কারোরই তো মুখ দেখা যাচ্ছে না।

তাই অহনা খানিক সামনে এগিয়ে গিয়ে দাঁড়ায়,মেয়েটার মুখ দেখে চমকে উঠে অহনা,আরে এটা তো সেই শুভ্রর কাকির মেয়ে সাইফা।

” আহ জান আমি তো তোমার বউ, তুমি কেনো আমার সামনে হুডি পড়ে থাকো।

মেয়েটা হুডি পড়া লোকটা কে টেনে সামনে এনে মুখের সামনে থেকে হুডিটা সরাতে সরাতে বলে।

মেয়েটা হুডি টা মুখের সামনে থেকে সরাতেই অহনা মাথায় যেন বিশাল আকাশ ভেঙে পড়ে, দু কদম পিছিয়ে যায় অহনা। অহনার হাত টা আপনা-আপনি অহনার মুখে চলে যায়। তার বিশ্বাসই হচ্ছে না এ তার শুভ্র।

তারমানে এতোদিন ধরে শুভ্র তাকে ঠকিয়ে এসেছে,আর মেয়েটা কি বললো মেয়েটা শুভ্রর বউ!

শুভ্র সাইফার হাত টা ঝটকা মেরে সরিয়ে দিয়ে বলে,,

” নিজের লিমিটে থাকো,একদম বাউ গিরি ফলাবে না,তোমায় বিয়ে করেছি তার পেছনের কারন টা হয়তো তুমি ভুলো নি।

সাইফা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,,

” সে যেই জন্যই আমায় বিয়ে করো না কেনো আমি তোমার প্রথম স্ত্রী,তোমার ঐ সো কোল্ড বউ অহনার থেকে অধিকার আমার বেশি।

সাইফার কথা শুনে শুভ্র চেয়ারে বসতে বসতে বলে,,

” অহনার সাথে নিজের তুলনা দিয়ে না তো,সে কোথায় আর তুমি কোথায়,তাকে বিয়ে করেছি আমি নিজে পছন্দ করে আর তোমায় করেছি নিজের সাম্রাজ্য টাকে আরো বিস্তার করার জন্য। সে আমার মনের রাণী তার যোগ্য তুমি নও।

শুভ্রর কথা শুনে সাইফা তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠে বলে,,

” আমায় তুমি ইনসাল্ট করছো শুভ্র, আমি চাইলেই কিন্তু তোমার সাম্রাজ্যে কে ধ্বংস করে দিতে পারি।

সাইফার কথা শুনে শুভ্র শব্দ করে হেঁসে উঠে,,

” হোয়াট অ্যা জোক্স সাইফা,তোমার কি মনে হয় সেই ক্ষমতা আদৌও তোমার আছে,তোমার সব পাওয়ার এখন আমার হাতের মুঠোয়,তুমি এখন চেয়েও কিছু করতে পারবে না,তোমার সেই ক্ষমতা আর নেই। তোমার সেই সাম্রাজ্য এখন আমার।

সাইফা শুভ্রর কথা শুনে বলে,,

” কিহ! আর ইউ জোক্স উইথ মি,এটা কখনোই পসিবল না।

” সাখওয়াত হোসেন শুভ্রর দ্বারা সবই পসিবল মাই বিউটি ওয়াইফ।

সাইফা ফোন টা নিয়ে তার মা’কে ফোন দিয়ে জানতে পারে তাদের সব প্রোপার্টি শুভ্রর নামে করা।

সাইফা তেড়ে এসে শুভ্র কে বলে,,

” তুমি আমাদের ঠকিয়েছো শুভ্র তোমার কি মনে হয় অহনা তোমার এই সব কুকর্মের কথা জানতে পারলে তোমার সাথে ও সংসার করবে,ও তো তোমায় ঘৃণা করবে।

সরসা শুভ্রর মনে ভয় ঢুকে যায়,সাইফা যেনো সেই ভয় টা বুঝতে না পারে তাই কাঠ কাঠ গলায় বলে,,

” অহনা কখনোই জানতে পারবে না আমার এই রূপ,আর না আমি কখনো জানতে দিবো তাকে।

শুভ্রর কথা শুনে সাইফা হেঁসে হেঁসে বলে,,

” ওহ মিস্টার সাখওয়াত হোসেন শুভ্র তোমার কি মনে হয় অহনা জানতে পারবে না,আমি এখনই গিয়ে তাকে জানাবো।

” যে অহনা কে আমার ব্যাপারে জানাতে যাবে আমি তাকেই এই দুনিয়া ছেড়ে উপরে পাঠিয়ে দিবো সেই তুমি বিউটিফুল মাই লাভলি ওয়াইফই হও না কেনো।

কথাটা বলতে বলতে কোমড়ে গোঁজা পিস্তল টা বের করে সাইফার দিকে তাক করে।

সাইফায় ভয়ে দু কদম পিছিয়ে যায়।

” শুভ্র এটা কিন্তু তুমি করতে পারো না,আমি তোমার স্ত্রী হই তুমি তোমার স্ত্রী কে হত্যা করবে।

” যে আমার পথের কাটা হতে চাইবে আমি তাঁকেই উপড়ে ফেলবো সে যেই হোক না কেনো।

কথাটা বলে গুলি ছুঁড়তে নিলে অহনা কাঁপা কাঁপা পায়ে ঢুলতে ঢুলতে শুভ্রর সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।

আকস্মিক অহনা কে এখানে দেখে চমকে যায় শুভ্র, পিস্তলটা শুভ্রর হাত থেকে পড়ে যায়। সেই সুযোগে সাইফা পালিয়ে যায়।

শুভ্র অহনার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলে,,

” অহনা তুমি এখানে!

কথাটা বলে অহনাকে ধরতে গেলে শুভ্রর গালে ঠাস করে পরপর কয়েকটা চ’ড় বসিয়ে দেয় অহনা।

শুভ্রর হুডির কলার চেপে ধরে বলে,,

” তুমি এটা কি করে করতে পারলে শুভ্র, এতোদিন ধরে আমার চোখে পট্টি বাঁধিয়ে রেখেছিলে তাহলে তুমি,আর ঐ সাইফা তোমার প্রথম স্ত্রী, এক স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও আমায় বিয়ে করলে। আমার সব টা দিয়ে তোমায় ভালোবাসলাম আর তুমি এভাবে আমায় ঠকালে, তাই তো বলি সেদিন এতো বলার পরেও কেনো তুমি আমায় থানায় তোমার বাবার নামে কেস করতে দিলে না। আর এতোদিন ধরে তুমি আমার সাথে ভালোবাসার নাটক করছিলে,আমার সামনে ভালো সাজার জন্য সেদিন তোমার মৃ’ত ভাইয়ের লা’শে আগুন ধরিয়ে দিলে।

তুমি কি আদৌ মানুষ, এতো টাকার নেশা তোমাদের যে এভাবে অন্য মা বাবার কোল খালি করে তাদের মেয়েদের তোমরা পা’চার করে দাও,তোমায় যে এতোদিন ধরে আমি ভালোবেসে এসেছি সেটা ভাবলেই আমার সারা শরীর ঘিনঘিন করছে।

শুভ্র নির্বাক এভাবে যে অহনার সামনে ধরা পড়ে যাবে বুঝতে পারে নি, শুভ্র অহনার হাত ধরে টেনে বসাতে নিলে অহনা ঝটকা মেরে হাত ছাড়িয়ে নেয়।

” একদম স্পর্শ করবে না আমায় তোমার ঐ নোংরা হাত দিয়ে। তোমায় দেখলেই আমার রাগ উঠছে তোমায় আমার নিজের হাতে খু’ন করতে ইচ্ছে করছে।

কথাটা বলেই অহনা নিচ থেকে পিস্তল টা উঠিয়ে শুভ্রর দিকে তাক করে।

শুভ্র আবেশে চোখ বুঝে ফেলে মুচকি হেঁসে বলে,,

” তুমি কি আদৌও পারবে আমায় মা’রতে উহু কখনোই পারবে না,আমি জানি অহনা তার শুভ্র কে কখনোই মে’রে ফেলতে পারবে না,তার হৃদয় বার বার কেঁপে উঠবে তার শ্বাস টাও ঘন ঘন পরবে আর হাত টা ক্ষনে ক্ষনে কেঁপে উঠবে।

শুভ্রর কথা গুলে শুনে অহনা অবাক হয়,সত্যি তার হাত কাঁপছে, শ্বাস টাও ঘন ঘন পরছে। অহনা তবুও নিজেকে কঠোর তম কঠোর রেখে জবাবা দেয়,,,

” অহনা যেমন ভালোবাসতে জানে সেভাবে শাস্তি ও দিতে জানে।

কথাটা বলতেই হুট করে শুভ্র অহনার ঠোঁটে ঠোঁট মিশিয়ে দেয়,অহনা বারবার ধাক্কা দিয়েও শুভ্র কে এক চুল ও সরাতে পারলো না।

শুভ্র অহনার ঠোঁটে প্রায় মিনিট পাঁচেকের মতো ডীপলি চুমু খেয়ে অহনা কে ছেড়ে দেয়।

” মিসেস অহনা তুমি হতে পারো গোয়েন্দা বিভাগের একজন, কিন্তু এই শুভ্র কে মা’রার মতো এবেলিটি এখনো তোমার হয় নি।

আকস্মিক চমকে উঠে অহনা। অহনার চমকানো দেখে শুভ্র স্নান হেঁসে বলে,,

” চমকানোর কিছু হয় নি,তোমার কি মনে হয় এই শুভ্র জানতে পারবে না তার স্ত্রী কি করে কোথায় কখন যায়! শুরু থেকেই তোমার প্রতিটি কার্যকলাপ আমার নজরে থাকতো,তুমি কবে কোথায় কার সাথে দেখা করেছো সব জানি। চাইলেই তোমায় বাঁধা বা আটকে ফেলতে পারতাম।

” সব জেনেও তাহলে কেনো আটকালেন না আমায়,তাহলে তো এই সত্যি আমার সম্মুখে এসে এতো বড় আঘাত দিতো না।

” তুমি সব জানলেও আমার সমস্যা নেই সমস্যা শুধু ছিলো আমার ব্যাপারে যেনো না জানো তুমি ,কিন্তু জেনে গেলে, যাই হোক তোমায় তো আর নিজের হাতে মার’তে পারি না।

” তাহলে কি তোমার সেই হায়না টাকে দিয়ে মে’রে ফেলতে চাও নাকি মাথা থেকে পুরো শরীর টা আলাদা করে ফেলতে চাও।

” যেখানে তোমার কোমড়ে সেদিন ঐ কু*ত্তার বাচ্চা টাচ করেছিলো বলে টলারেট করতে না পেরে ওরে ভয়াবহ মৃ’ত্যু দিলাম আর সেখানে এই সাখওয়াত হোসেন শুভ্র কি-না অন্য কাউকে বলবে তার প্রিয়াকে মে’রে ফেলতে।

অহনা হাতের পিস্তল টা নিচে ফেলে দিয়ে শুভ্রর হাত ধরে বলে,,

” শুভ্র ফিরে আসো না এই জগৎ থেকে,এই জগত থেকে শুধু তো টাকাই পাবে,লাইফে তো টাকা টাই বড় নয়,চলো না আমরা দূরে গিয়ে সংসার করি।

” সংসার তো করছিই আমরা,তবে এই সাম্রাজ্য ছেড়ে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না। এই জগতে ঢুকেছিই মৃত্যু কে হাতে নিয়ে, এই জগতে ঢোকার আগে নিজেকে নিজে শপথ করেছিলাম,

“মৃত্যুকে দিয়েছিলাম কথা,

মৃত্যু তুমি যখনই আসোনা কেন
আমি তোমাকে গ্রহণ করবো।

তোমার হাতে হাত রেখে নিরূদ্দেশে যেতে আমার ক্ষীণ আপত্তি থাকবে না
এমনকি প্রিয়তমর ঠোঁটে ঠোঁট মেলাবার সময় ও যদি তুমি আসো,
আমি সব ভুলে কেবল তোমাকেই গ্রহণ করবো।”

অহনা তৎক্ষনাৎ শুভ্রর হাত ছেড়ে দেয়, শুভ্র সেটা দেখে হেঁসে পকেট থেকে ইনজেকশন বের করে অহনার ঘাড়ে পুশ করে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে অহনা অজ্ঞান হয়ে যায়। ঢুলে পড়ে যেতে নিলে শুভ্র অহনাকে ধরে পাঁজা কোলে নিয়ে উপরে উঠে সিঁড়ি বেয়ে চলে যায়।

# চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে