#তিক্ত_প্রতিশোধ
#পর্ব ১৩
#Raiha_Zubair_Ripte
এক গ্লাস পানি অহনার সামনে রাখা হয়, অহনা ঢকঢক করে সম্পূর্ণ পানি টুকু খেয়ে শেষ করে। বা হাত দিয়ে মুখে লেগে থাকা পানি টুকু মুছে চেয়ারে গা এলিয়ে দিতে পুলিশ অফিসার এনামুল বলে উঠে,,
” আমি যতোদূর জানি আপনি তো গোয়েন্দা বিভাগের আন্ডারে কাজ করতেন তাহলে অভ্র যখন আপনায় ধর্ষণ করলো আপনি কিছুই করতে পারলেন না, গোয়েন্দা বিভাগে জয়েন হবার আগে ট্রেনিং তো অবশ্যই করেছিলেন আপনার তো জানা কথা কিভাবে কখন কোথায় তাকে আঘাত করতে হয়।
অহনা অফিসার এনামুলের দিকে তাকিয়ে বলে,,
” এটা কে সমস্যা বলে নাকি কি বলে আমার জানা নেই তবে আমি হুটহাট করে কিছু করতে পারি না, এই ধরুন কেউ আমায় আঘাত করতে আসলে আমি সাথে সাথে রুখে দাঁড়াতে পারি না, আমার মাইন্ড তখন কাজ করা বন্ধ করে দেয়,আর ঐ সময়ে আমার মাথা ঠিক ছিলো না, বুদ্ধি খাঁটিয়ে কৌশলে ছাড়া পাবার আগেই হয়ে গেলো যা হবার তাই।
” সে না হয় বুঝলাম আপনি ও ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন তারপর কি করলেন,আর সায়েম কে যে বলেছিলেন আপনার বাসার সামনে দাঁড়াতে তার কি হলো,আর সাখওয়াতের ব্যাপারে সম্পূর্ণ টা বলুন।
অহনা তপ্ত শ্বাস ফেলে, আজ পাঁচ বছর হলো অহনা জেলের চার দেওয়ালের মধ্যে বন্দী, পাঁচ বছরে কতো কিছু বদলে গেছে,সাথে চেনা মুখ গুলোও অচেনা হয়ে গেছে,অহনা নিজেকে ধাতস্থ করে আবার বলতে শুরু করে,,,
সেদিন এলোমেলো পায়ে ঘর থেকে বেরিয়ে সোজা নিজের ঘরে চলে গিয়েছিলাম, ওয়াশরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে নিজেকে নিজেই আঘাত করেছিলাম, শুভ্র আসলে তার সামনে কিভাবে দাঁড়াবো কোন মুখে তার সামনে গিয়ে চোখে চোখ রেখে তার দিকে তাকাবো।
নাহ আমি পারবে না, আচ্ছা শুভ্র কিভাবে আমায় মেনে নিবে শুভ্র ও কি আমায় ঘৃণা করবে নাকি আমার পরিস্থিতি টা বুঝবে,নাকি নিজের ভাইয়ের মৃ’ত্যুর জন্য আমায় ছেড়ে দিবে?আরো কতো কল্পনা জল্পনা।
এর মধ্যে আমজাদ হোসেন, অভ্রর ফাইল আনতে দেরি হচ্ছিলো বলে সে নিজের দরজা ঠেলে ভেতরে এসে ফ্লোরে অভ্রর এমন বিভৎস র’ক্তে ভেজা খণ্ডিত লা’শ দেখে আমজাদ হোসেনের মাথা চক্কর দিয়ে উঠে।
দৌড়ে ছেলের লা’শের কাছে এসে ছেলের লা’শ ধরে চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠে।
অহনা ওয়াশরুমে পানির কলের নিচে বসে আমজাদ হোসেনের এমন চিৎকার শুনে শত কষ্টের মাঝেও হেঁসে ফেলে।
আমজাদ খানের এমন চিৎকার শুনে ভেতর থেকে মোশারফ হোসেন ও চলে আসে।
ফ্লোরের দিকে তাকাতেই মোশারফ হোসেনের সারা শরীর কেঁপে উঠে। যেই ছেলে মানুষ কে এভাবে কে’টে নির্মম ভাবে হ’ত্যা করতো আজ তারই এমন মৃ’ত্যু দেখে ভয়ে দু কদম পিছিয়ে যায় মোশারফ।
মোশারফ কে দেখেই আমজাদ বলে উঠে,,
” মোশারফ দেখো না আমার ছেলেটার এমন অবস্থা কে করলো,যে করেছে তাকে আমি কিছুতেই ছাড়বো না। তুমি শুভ্র কে ফোন করে তাড়াতাড়ি আসতে বলো এখানে।
মোশারফ কাঁপা কাঁপা হাতে পকেট থেকে ফোন বের করে শুভ্র কে ফোনে সব জানিয়ে তাড়াতাড়ি বাংলাদেশে ব্যাক করতে বলে।
* * * পরের দিন সকাল দশটা
ড্রয়িং রুমে অভ্রর লা’শ আনা হয়। লা’শের সামনে দাঁড়িয়ে আছে শুভ্র, অহনা,মোশারফ, আমজাদ।
সবার দৃষ্টি অহনার দিকে। নীরবতা ভেঙে এবার আমজাদ বলে,,
” শুভ্র দেখ ফুটেজে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে এই মেয়েই অভ্র কে মে’রেছে, তুই ওঁকে একদম ছেড়ে দিবি না,আর যদি ছেড়েও দিস তাহলে আমি কিন্তু ছেড়ে দিবো না।
শুভ্র একবার আমজাদ হোসেনের দিকে চেয়ে আবার দৃষ্টি অহনার দিকে ফেরায়। পায়ের উপর পা তুলে হাত মুঠোবন্দি করে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,,
” আমি যা দেখলাম সেটা কি সঠিক দেখছি অহনা,তুমিই অভ্র কে মে’রেছো।
অহনা দু কদম এগিয়ে এসে শুভ্রর সোজাসুজি দাঁড়িয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়,,
” ওখানে দেখা যাচ্ছে আমি অভ্র কে মে’রেছি, কিন্তু কিসের জন্য মা’রলাম সেটা কেনো তোমার বাবা দেখালো না,কেনো সেই ঘটনা টুকু হাইড করে পরের ঘটনা টা দেখালো তোমায়?
আমজাদ হোসেন আমতাআমতা করে বলে,,
” মানে কি বলছো তুমি হ্যাঁ, একে তো আমার ছেলে টাকে মে’রেছো তার উপরে গলা উঁচু করে কথা বলছো।
” আপনি ভালো করেই জানেন আমি ঠিক কোন কথাটা বলছি,আর শুভ্র আমিই তোমার এই জানো’য়ার নামক ভাই টাকে মে’রেছি।
শুভ্র বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলে,,
” তুমি ঠিক করো নি অহনা। আব্বা কেরোসিন তেল আর কাঠি ম্যাচ টা নিয়ে আসো তো। শাস্তি টা ভালো করে দেই।
আমজাদ হোসেন তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে কেরোসিনের তেল আর কাঠি ম্যাচ টা এনে শুভ্রর হাতে ধরিয়ে দেয়।
মোশারফ হোসেনের মনে ভয় ঢুকে যায়,শুভ্র কি তাহলে অহনাকে পুড়ি’য়ে দিবে আগুনে,যতোই মুখে বলুক না কেনো আগে অহনাকে অনেক স্নেহ করতো মোশারফ, সাময়িক সময়ে হয়তো স্নেহের গভীরতা কমে গেছে কিন্তু কখনো অহনার ক্ষতি হোক এমন কিছু চায় নি।
সেদিন তো অভ্রর খেপা দৃষ্টি থেকে আর এসবের থেকে দূরে সরানোর জন্য অহনার সাথে বাজে বিহেভিয়ার করেছিলো,আর ঘর বন্দী করেছিলো যাতে এসবে জড়িয়ে নিজের ক্ষতি না করে। কিন্তু মেয়েটা এসবে ঢুকেই পড়লো। না হোক নিজের মেয়ে অহনা তাই বলে নিজের চোখের সামনে এমনটা দেখবে কখনো ভাবতেই পারে নি।
মোশাররফ এক ঢোক গিলে শুভ্রর সামনে দাঁড়িয়ে বলে,,
” বলছিলাম কি শুভ্র আগে অহনার সব কথাটা তো শুনো,,,
শুভ্র এক আঙুল নিজের ঠোঁটের সামনে এনে বলে,,,
” হুসস নো মোর ওয়ার্ডস,আমায় আমার কাজ করতে দিন।
” এই মোশারফ শুভ্র কে শুভ্রর কাজ করতে দাও সরে আসো।
কথাটা বলেই আমজাদ মোশারফ কে টেনে সাইডে নিয়ে যায়।
” তা কি বলছিলে অহনা আমার ভাই জানো’য়ার, সে তোমার সাথে জানো’য়ারের মতো ব্যাবহার করেছিলো ।
কথাটা বলতে বলতে কেরোসিনের বোতল টা নিয়ে এক পা এক পা করে অহনার দিকে এগোয়।
অহনা ঘৃণায় দৃষ্টি সরিয়ে নেয়।
” আমার বলতেও রুচিতে বাজছে, আপনা ভাই ছিঃ,,
” ওহ আচ্ছা,তাহলে দেখার জন্য রেডি হও।
কথাটা বলে শুভ্র কেরোসিনের বোতল টা উপর করে ঢালতে নিলে অহনা চোখ বুজে ফেলে,অহনার চোখ বুজা দেখে শুভ্র রাগে কেরোসিন তেল পুরো টা অভ্রের মৃ’ত লা’শের উপর ঢেলে দেয়। টি-টেবিল থেকে কাঠি ম্যাচ নিয়ে অভ্রর মৃ’ত লা’শটায় আগুন ধরিয়ে দেয়।
অহনা পিটপিট করে চোখ খুলে অভ্রর লা’শ জ্বলতে দেখে শুভ্রর পানে চায়।
আকস্মিক এমন ঘটনায় আমজাদ হোসেন অবাক হয়ে যায় দৌড়ে এসে বলে,,
” এটা কি করলি তুই শুভ্র তোর ভাইকে এই মেয়ে মে’রেছে আর তুই তাকে কিছু না করে আমার ছেলের মৃ’ত দেহটায় আবার আগুন জ্বালিয়ে দিলি।
শুভ্র ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,,
” তোমার ছেলে ভাগ্য ভালো যে ওর মৃ’ত্যু টা আমার হাতে হয় নি,আমি আসা অব্দি যদি ও বেঁচে থাকতো তাহলে এর চাইতেও ভয়ানক মৃ’ত্যু দিতাম ওরে। অহনা তো বেশি কিছু করতে পারলো না আমি থাকলে এতো সহজে ওরে মা’রতাম না ধুঁকে ধুঁকে ম’রন যন্ত্রণা দিতাম। অহনা রুমে চলো। আর কেউ যদি এই লা’শের আগুন নিভাও তো তার যে কি করবো আমি নিজেও জানি না।
কথাটা বলেই অহনার হাত ধরে রুমে নিয়ে যায়। ফ্যালফ্যাল দৃষ্টি নিয়ে আমজাদ আর মোশারফ শুভ্রর যাওয়ার পানে চায়,এ তারা কোন শুভ্র কে দেখছে।
ঘরে এসে নিজের রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে শুভ্র কিন্তু কিছুতেই পারছে না কমাতে।
নিজের রাগ কমাতে শুভ্র ঘরে থাকা ড্রেসিং টেবিলে সজোরে লা’ত্থি মারে। চিৎকার করে বলে উঠে,,
” কু’ত্তার বাচ্চার সাহস হয় কিভাবে আমার বউয়ের গায়ে হাত দেবার ও জ্যান্ত বেঁচে থাকলে ওরে জ্যান্ত কবর দিতাম আমি, মা*দা**দের বাচ্চা।
অহনা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে শুভ্রর দিকে,কাঁপা কাঁপা পায়ে শুভ্রর দিকে এগিয়ে গিয়ে শুভ্রর বা হাত টা নিজের হাতের মধ্যে দিয়ে বলে,,
” তুমি আমায় কিছু বললে না,তুমি কি আমায় ছেড়ে দিবা,আমি অনেক চেষ্টা করছি নিজেকে বাঁচানোর জন্য কিন্তু পারি নি।
কথাটা বলতে গিয়ে অহনা কেঁদে উঠে ।
শুভ্র তড়িৎ গতিতে অহনার থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে দু হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে, অহনার মাথার সাথে শুভ্র থুতনি লাগিয়ে বলে,,
” হুসস এ কথা আর কখনোই মুখ দিয়ে বের করবে না,সারাজীবন আমি তোমার পাশে আছি,সে যাই হয়ে যাক না কেনো ভালোবাসি তোমায় এই সামান্য ঠুনকো ঘটনার জন্য তোমার হাত ছাড়তে আমি রাজি নই।
” এতো ভালোবাসো কেনো আমায়,আমি কি আদৌও তোমার এই ভালোবাসার যোগ্য, এখন তো আমি একজন ধ’র্ষি,,,
আচমকা অহনা কে ছেড়ে দিয়ে অহনার ঠোঁটে নিজের হাত রাখে,,
” তুমি যখনই আসোনা কেন, আর যেই পরিস্থিতিতেরই শিকার হও না কেনো,,
আমি তোমাকে গ্রহণ করবো।
” তুমি কি জানো তোমার বাবা কিসব করে বেড়ায়।
” হুম সব জানি তুমি চিন্তা করো না আমি সবটা সামলে নিবো, তুমি আর পেছনের কথা মনে করো না, আমি চাই না সেসব মনে করে তুমি নিজেকে কষ্ট দাও, দোষ দাও।
” চাইলেই কি ভোলা যায় শুভ্র, মুখে তো খুব সহজে বলা যায় কিন্তু যার সাথে ঘটে সেই তো জানে।
” তবুও আমি চাই তুমি সব ভুলে যাও। আচ্ছা তুমি রেস্ট নাও আমি আসছি।
কথাটা বলে শুভ্র বেড়িয়ে যায় ঘর থেকে। অহনা এক দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বেলকনিতে চলে যায়।
কেটে যায় বিশ দিন,এই দশদিনে কতো কিছু বদলে গেলো, আজ পনেরো দিন হলো অহনা জানতে পেরেছে সায়েম ট্রান্সফার হয়ে চট্টগ্রাম গেছে,এখন অহনা পুরো একা কিন্তু আজকাল শুভ্র হয়ে উঠেছে অহনারর সহযোগী।
এই তো সেদিন এক রাতে ছাঁদে বসে অহনা শুভ্র কে সব বলেছে কি কি ঘটেছে তার সাথে ঐ কয়েকদিন আর কি কি দেখেছে।
সব শুনে অহনা শুভ্র অহনার কাপলে চুমু খেয়ে বলে,,
” চিন্তা করো না এখন থেকে আমি তোমার পাশে আছি,দুজনে মিলে সবাইকে শাস্তি দিবো,শুধু সঠিক সময়ের অপেক্ষা।
সেদিন কথাটা শুনে অহনা মনে মনে নিজেকে খুব ভাগ্যবতী মনে করে,, হ্যাঁ তার জীবনে সঠিক মানুষই এসেছে,যে তাকে প্রতিটি পদক্ষেপে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিবে পাশে পাশে থাকবে কিন্তু,,,,,
#চলবে