তিক্ত প্রতিশোধ পর্ব-১৩

0
702

#তিক্ত_প্রতিশোধ
#পর্ব ১২
#Raiha_Zubair_Ripte

আজ চার দিন হয়ে গেলো অহনা ঘর বন্দী, কোনো মতেই এই চার দেওয়ালের বাহিরে বের হতে পারছে না। অহনাকে সারাদিনে এক বেলা খাবার দেওয়া হয় তাও সেটা দুপুরে, আর বাকিটা বেলা ওয়াশরুমের কল থেকে আনা পানি খেয়ে কাটাতে হয়।

ফোনটাও নিয়ে গেছে অভ্র, উপায়ন্তর না পেয়ে অহনা এখন নীরব,সে বুঝে গেছে চিৎকার চেঁচামেচি করে কোনো লাভ নেই।

অহনা আস্তেধীরে বিছানা থেকে উঠে বেলকনিতে আসে যদি কাউকে দেখতে পারে আর সাহায্য চাইতে পারে সে আশায়।

কিন্তু না কেউ নেই,অহনা বেলকনির রেলিং ঘেঁষে মাথা ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।

আচমকা মাথা ঘুরাতেই দেখতে পায় সেই বৃদ্ধ চাচাকে। এক ফালি আলো সঞ্চার হয় অহনার মনে। অহনা খুবই সতর্কতার সাথে বৃদ্ধ কে ডাকে,,

” চাচা ও চাচা।

বৃদ্ধ লোকটি খাবার নিয়ে আসছিলো, আকস্মিক এমন ডাক শুনে দাঁড়িয়ে যায় বৃদ্ধ।

ডানে বামে ঘুরে কাউকে দেখতে না পেয়ে আবার হাঁটতে শুরু করলে আবার ও সেম ডাক শুনতে পায়।

অহনা বেলকনি থেকে এবার খানিক আওয়াজ টেনে বলে,,

” চাচা এই দিকে তাকান আপনার ডানে বেলকনিতে।

বৃদ্ধ লোকটি আওয়াজ শুনতে পেয়ে সেই অনুসারে তাকিয়ে দেখে বেলকনিতে অহনা।

বৃদ্ধ লোকটি বাড়ির মেন গেটে ঢুকে অহনার বেলনির নিচ বরাবর দাঁড়ায়, খাবারের বক্স টা পাশে রেখে বলে,,

” আম্মা আফনে কবে আইছেন?

” কবে আসছি মানে কি চাচা?

” ও মা আফনে তো বাড়ি আছিলেন না অভ্র বাবায় তো কইলো আফনে বেড়ায়তে গেছেন।

” না চাচা আমি বেড়াতে যাই নি,অভ্র আর শশুর মশাই আর আমার বাবা আমায় এখনে আটকে রেখেছে।

” সে-কি, আফনেরে আটকায় রাখবো কেন।

” চাচা দয়া করে আমায় মুক্ত করুন এখান থেকে, আমি তারপর আপনায় সব বলছি।

” কিন্তু আম্মা আমি কেমনে আফনেরে মুক্ত করমু,তারা জানলে তো আমায় ছাইড়া দিবো না।

” চাচ তারা কেউ বাসায় নেই,আমি শুনেছি তারা আজ কোথাও গিয়েছে ডিল করতে,দয়া করে চাচা আমায় মুক্ত করার ব্যাবস্থা করুন।

” আচ্ছা দাঁড়ান দেহি কি করা পারি।

বৃদ্ধ লোকটা খানিক এদিক ওদিক পায়চারি করে বলে,,

” আম্মা সদর দরজা তো তালা মারা আমি ঢুকুম কেমনে।

” চাচা কিছু একটা দিয়ে তালা টা ভাঙুন না।

বৃদ্ধ লোকটা এদিক ওদিক চেয়ে বড় একটা পাথরের টুকরো নিয়ে সদর দরজার কাছে যায়, দশ মিনিটের মতো তালায় আঘাত করেও তালা ভাঙতে পারলো না।

বয়স হয়েছে অল্পতেই হাঁপিয়ে যায়,উপায়ন্তর না পেয়ে দরজার কাছে বসে পরে, খানিকক্ষণ জিরিয়ে বসা থেকে উঠে আবার জোরে করে একটা বারি মারে তালাতে, সঙ্গে সঙ্গে তালা খুলে যায়। বৃদ্ধ লোকটি তাড়াতাড়ি করে ঘরে ঢুকে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে অহনার রুমের সিটকানি খুলে দেয়।

অহনা ঘরের দরজা খুলার আওয়াজ পেয়ে বেলকনি থেকে রুমে চলে আসে।

বৃদ্ধ লোকটাকে দরজার সামনে দেখে অহনা লোকটার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে,,

” চাচা আপনি যে আমার কি বড় উপকার করলেন বলে বোঝাতে পারবো না,ধন্যবাদ জানালেও সেটা কম হয়ে যাবে।

” আম্মা এসব কথা রাখেন তো, আফনে বরং আমাগো বাসায় চলেন।

” না চাচা আপনার বাসায় গেলে তারা আমায় ঠিক খুঁজে বের করবে। চাচা আপনি তো অনেক কিছু জানেন এই বাড়িরর ফ্যামিলির মানুষদের সম্পর্কে, আমায় বলুন না।

” আফনে বরং ঐ বন্ধ করা ঘরটায় যান, ওখানেই আফনের সব উত্তর আছে।

” চাচা আমি সেদিন গিয়েছিলাম ঐ রুমে কিন্তু ঐ রুমে ঢোকার সাথে সাথে আমার কেমন যেনো একটা লাগছিলো।

” হ বুঝছি আম্মা আফনে ঐ ঘরে ঢুকার আগে কানে কিছু একটা গুঁজে যান,কারন ঐ ঘরে কি জানি একটা যন্ত্র লাগাইছে তাঁরা, যে ঐ ঘরে ঢুকে তারেই ঐ যন্ত্রের মাধ্যমে হিপনোটিজম না কি যেনো কয় ঐ টা করে,ঐ রুমে ঢোকার সাথে সাথে তারা কিছুক্ষণ আগের ঘটা সব ভুলে যায়,সে কি করে নিজেও সেটা বুঝতে পারে না যতোক্ষণ না তার সাথে চমকে যাওয়া কোনো ঘটনা না ঘটবে।

” ধন্যবাদ চাচা অনেক উপকার করলেন,এবার আমি আসি দেখি যদি কোনো সূত্র পাই।

” চিন্তা কইরো না পাইয়া যাইয়া সূত্র, আমি এহন যাই বুঝলা,আমি আর এই এলাকায় থাকমু না, আমার বউ নিয়ে অন্য কোথাও চইলা যামু,এইখানে থাকা মানেই এহন মৃ’ত্যু।

কথাটা বলে লোকটা চলে যায়। অহনা রুম থেকে বের হবার আগে আলমারি থেকে সেই চাবির ডুপ্লিকেট চাবি টা বের করে।

সেদিন অভ্রর রুম থেকে চাবি টা এবে সাবানে ছাপ দিয়ে রেখেছিলো, কয়েকদিন আগেই সেটার চাবি বানিয়ে আনে অহনা।

কারন সবসময় চাবি না-ও জোগাড় করতে পারে তাই নিজেই বানিয়ে আনে।

অহনা চাবিটা নিয়ে রুম থেকে বের হয়। কিন্তু কানে কি গুঁজবে। সারা ঘর খুঁজেও কিছু পেলো না,বিছানার পাশে থাকা তুলো নিয়ে সেটা কানে গুঁজে নেয়,যতোটুকু কভার করা যায়।

অহনা তালা খুলে ঐ রুমে ঢুকে পড়ে, কোনো দিকে না চেয়ে আগে আলমারির কাছে চলে যায়। আলমারি খুলে নিচে থাকা এক কালো ব্যাগ বের করে।

এটা আজ নতুন দেখছে অহনা,সেদিন এই ব্যাগটা দেখে নি।

অহনা ব্যাগ টা খুলে দেখে অনেক কাগজপত্রে ভরা ব্যাগটা, অহনা একটা একটা করে কাগজ ঘেটে ঘেটে দেখে।

এর মধ্যেই অহনা কিছু খোলার শব্দ শুনতে পায়, আওয়াজটা ঘর থেকেই আসছে। অহনা বামে ঘুরে তাকাতেই দেখতে পায়, সেদিনের দেখা সেই আয়না টা ঠেলে অভ্র আসছে।

অভ্র কে দেখে অহনা দু কদম পিছিয়ে যায়। তার মানে এটা দেখতে আয়নার মতো কিন্তু আয়না না এটা দরজা!

অভ্র অহনাকে এ ঘরে দেখে চমকে উঠে,সাথে রাগ ও হয়। পাশেই তাঁরা ডিল করছিলো,অভ্র একটা ফাইলের জন্য এ ঘরে এসেছিলো কিন্তু অহনাকে দেখে অহনার দিকে এগোতে থাকে হিংস্রাত্মক চাহনি নিয়ে।

অহনা কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না, দৌড়ে দরজা দিয়ে বের হতে নিলে অভ্র এসে হাত ধরে ফেলে।

অহনার হাত ধরে টেনে নিয়ে অহনাকে বিছানায় ফেলে দেয় অভ্র, শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে অভ্র বলে,,

” অনেক বার বেড়েছিস তুই,এবার তোর এমন অবস্থা করবো আয়নার নিজের মুখ দেখলে নিজেকে দেখে নিজেই ভয় পাবি।

কথাটা বলে অভ্র অহনার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, বুকের সামনে থেকে কাপড় এক টানে সরিয়ে ফেলে,অহনা বারবার ধাক্কা দিয়েও সরাতে পারছে না,এমন শক্তিশালী দেহের সাথে অহনা কিছুতেই পেরে উঠে না, দু চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ে জল, চিৎকার করে অহনা শুভ্র কে ডাকতে থাকে,কিন্তু তার শুভ্র আসে না। আসবে কি করে তার শুভ্র থাকলে তো তার শব্দ তার কানে যাবে।

অহনা শত চেষ্টা করেও পারলো না নিজেকে বাঁচাতে, ধ’র্ষণ হলো নিজ দেবর অভ্রর হাতে,হিংস্র পশুর মতো খুবলে খেলো অহনাকে।

নিজের চাহিদা মিটিয়ে অহনাকে ছেড়ে বিছানা থেকে উঠে শার্ট পড়তে পড়তে অভ্র বলে উঠে,,

” বলেছিলাম বেশি বাড় না বাড়তে, শুনিস নি আমাদের কথা,এবার তুই নিজেকে নিজেই ঘৃনা করবি।

কথাটা বলে শাড়ি টা অহনার দিকে ছুঁড়ে মারে।

অহনা নির্বাক,অহনা মানতেই পারছে না এটা আদৌও তার সাথে হয়েছে,এতোকাল খবরের কাগজে,টেলিভিশনে শুনে এসেছে আর আজ তার সাথেই এ ঘটনা ঘটেছে।

অহনার কিসের উপর রাগ হচ্ছে নিজের উপর, কেনো সে এসব ঘাঁটতে গেলো নাকি পশু নামক মানুষ গুলোর প্রতি।

অভ্র একবার অহনাকে পর্যবেক্ষণ করে আলমারি থেকে ফাইল নিয়ে চলে যেতে নিলে আকস্মিক মাথায় খুব জোরে আঘাত পাওয়ায় মাথায় হাত দিয়ে পেছন ঘুরে দেখে অহনা রণমুর্তি রূপ ধারন করে আছে,হাতে তার ধারালো তলোয়ার,অহনার চোখ দিয়ে যেনো আগুন ঝলসে পড়ছে, সেই আগুনে নির্ঘাত অভ্র ভস্ম হয়ে যাবে।

অভ্র অহনাকে ধরতে গেলে অহনা বাম পা দিয়ে অভ্রর পেট বরাবর লা’ত্থি মারে যার ফলে অভ্র ফ্লোরে পড়ে যায়।

অহনা তলোয়ার টা অভ্রর পেট বরাবর ঢুকিয়ে দেয় প্রচন্ড খোব নিয়ে ঘৃণার স্বরে বলে,,

” কু’ত্তার বাচ্চা তুই আমার চরিত্রে কলঙ্কের দাগ দিলি,তোরে আজ টুকরো টুকরো করে কা’টলেও আমার মনের আক্ষেপ মিটবে না। তোদের এই সামান্য মৃত্যুতে হবে না

কথাটা বলেই অহনা ধারালো তলোয়ার টা দিয়ে পাগলের মতো একের পর এক কোপ বসায় অভ্রর শরীরে,অভ্রর পুরো শরীর রক্তে ভিজে চুপ চুপ হয়ে গেছে।

অহনার এখনো রাগ কমছে না,তলোয়ার টা দিয়ে এক কোপ দিয়ে মাথা থেকে পুরো শরীর আলাদা করে দেয় অভ্রের।

তলোয়ার টা ছুঁড়ে নিচে ফেলে দিয়ে এলোমেলো পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায় অহনা।

**********

তাহলে আপনি আপনার দেবর অভ্র হাতে ধ’র্ষিত হয়েছিলেন, তাকে মেরেছেন সে আপনায় ধ’র্ষণ করেছিলো সাথে মেশে পা’চার ও করতো, কিন্তু আপনি সাখাওয়াত কে কেনো হ’ত্যা করলেন,তাকে মারতে কি আপনার হাত কাঁপলো না।

অতীত থেকে বের হয় অহনা অফিসারের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে,,,

” যারা যারা অন্যায় করবে তাদের পরিনতি এমন টাই হবে,সে যতোই আমার কাছের মানুষ হোক না কেনো।

লাস্টের কথাটা বলতে গিয়ে অহনার গলা কেঁপে উঠে।

” তাহলে সাখাওয়াত ও কি এই সব কাজের সাথে যুক্ত ছিলো।

অহনা দৃষ্টি নত করে ফেলে নিজের ভাগ্য নিয়ে আজ খুব আফসোস হচ্ছে, যাকে নিজের সবটা উজাড় করে এতো ভালোবাসলো তাকে চিনতেই সে এতো বড় ভুল করলো, নিয়তি বড় নিষ্ঠুর,আজ-কাল লোক চেনা বড় দায়,মুখোশের আড়ালেও মানুষ তাদের অন্য রূপ অতি যত্নে লুকিয়ে রাখে।

” কি হলো আপনি বলছেন না কেনো সাখওয়াত ও কি এই সব কাজে জড়িত ছিলো।

অহনা তপ্ত শ্বাস ফেলে অফিসারের কাছে এক গ্লাস পানি চায়,এতোক্ষণ ধরে এতো কথা বলতে বলতে অহনার গলা শুখিয়ে গেছে।

অফিসার তার এক সহকারী কে বলে এক গ্লাস পানি আনতে।

#চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে