#তিক্ত_প্রতিশোধ
#পর্ব ১০
#Raiha_Zubair_Ripte
অহনা সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে আসে,ডাইনিং টেবিলের নিচ থেকে উঠে টেবিলের নিচ পিঠে হাত দিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দেয়। অহনার এখনো শরীর হাত পা কাঁপছে, কি ভয়ংকর ভয়াবহ জায়গা। অহনা আর দেরি না করে নিজের ঘরে চলে যায়,ওয়াশরুমে ঢুকে অনেকটা সময় নিয়ে গোসল করে। গোসল শেষে অহনা ওয়াশরুম থেকে বেরোতেই দেখে বিছানায় শুভ্র বসে আছে।
শুভ্র কে বিছানায় দেখে অহনা চমকে উঠে,মাথা মুছতে মুছতে শুভ্রর সামনে দাঁড়িয়ে বলে,,
” তুমি ভেতরে আসলে কিভাবে দরজা তো আমি বন্ধ করে রেখেছি ভেতর থেকে।
শুভ্র অহনার দিকে তাকিয়ে ফোঁস করে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,,
” ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে ঢুকেছি বাসায়। তুমি খেয়েছো।
” না খাই নি, তুমি খাবে তো, আমি খাবার গরম করছি তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো।
কথাটা বলে অহনা নিচে নেমে এসে ফ্রিজ থেকে খাবার বের করে সেটা গরম করে।
খাবার গরম হলে ডাইনিং টেবিলে এনে খাবার সার্ভ করতে থাকে।
খাবার সার্ভ করা কালিন পিছনে ঘুরতে আচমকা অভ্র কে দেখে অহনা ভয়ে ছিটকে দূরে সরে যায়। মনে পড়ে যায় সেই ঘটনা,রুমের মধ্যে এই অভ্র কেই দেখেছিলো,কিভাবে হিংস্র জন্তুর মতো চাহনি ছিলো অভ্রর।
অভ্র টেবিল থেকে একটা আপলে নিয়ে সেটায় কামড় বসিয়ে বলে,,
” কি ব্যাপার ভাবি ভয় পেলে মনে হয়। কিছু হয়েছে?
অভ্রের কথায় ধ্যান ভাঙে অহনার,অহনা নিজেকে ঠিক করে জবাব দেয়,,
” না না কি আবার হবে কিছুই হয় নি,আচমকা তোমায় দেখলাম তাই আর কি ভরকে গিয়েছিলাম।
” ওহ তাহলে ঠিক আছে, খাবার দাও তো ভাবি খিদে পেয়েছে।
অহনা অভ্র কে খাবার দিতেই শুভ্র ও চলে আসে। অভ্র কে খাবার দিয়ে শুভ্র কে খাবার বেরে দেয় অহনা।
শুভ্র খাবারের প্লেট না নিয়ে বলে,,
” অহনা তুমিও তো খাওনি, তুমি বরং আমাদের সাথে বসে খেয়ে নাও।
” না আমি পরেই খেয়ে নিবো তোমরা আগে খাও।
” উফ বসো তো আমি খাইয়ে দিচ্ছি।
কথাটা বলেই শুভ্র অহনাকে খাইয়ে দেয় সেটা দেখে অভ্র তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে,মনে মনে বলে,,
” এদের ঢং দেখলে বাঁচি না, ভালোবাসা একেবারে উতলে পরছে।
কথাটা বলেই অর্ধেক খাবার খেয়ে অভ্র উঠে চলে যায়।
অহনা, শুভ্র সেদিকে একবার চেয়ে তাদের খাওয়ায় মনোযোগ দেয়। খাবারের এক পর্যায়ে অহনা বলে উঠে,,
” আচ্ছা শুভ্র তোমাদের কিসের ব্যাবসা।
শুভ্র মুখে ভাত নিতে নিতে বলে,,
” কেনো বলতো?
” না এমনি,বিয়ে হয়েছে অথচ জানিই না আমার স্বামীর কিসের ব্যাবসা।
” আমাদের পোষাকের ব্যাবসা।
” ওহ আচ্ছা।
খাওয়া দাওয়া শেষ করে থালাবাটি ধুয়ে ডাইনিং টেবিলে রেখে ঘরে চলে যায় অহনা।শুভ্র খেয়ে চলে গেছে খানিক আগেই।
অহনা ঘরে এসে দেখে শুভ্র শুয়ে পড়ছে। অহনা আর ঘরের ভেতর না ঢুকে ছাঁদে চলে যায়।
শীতল ঠান্ডা বাতাস বইছে ছাঁদে, অহনার বিষন্ন মনে বয়ে যাচ্ছে এক অজনা ভয়। ছাঁদের ওয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আকাশ পানে চেয়ে অহনা বলে,,
” তোমাদের এই বাড়িতে অনেক রহস্য জানো তো শুভ্র, আচ্ছা তুমিও কি এসবের সাথে জড়িত। আজ যখন তোমার ভাই এর সেই ভয়ংকর রূপ দেখলাম আমি আমার চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।
এই টুকু বুঝে গেছি তোমার ভাই বড় কোনো ক্রাইমের সাথে জড়িত। আচ্ছা শুভ্র তুমি কি জানো তোমাদের বাসার নিচে এসব ঘটছে,নাকি জানো সব তুমি। তুমি ও যদি এসবের পেছনে থাকো তাহলে তোমাকে শাস্তি দিতে আমার হাত কাঁপবে না।
কথাগুলে বলতেই হঠাৎ গাড়ির আওয়াজে অহনার ভাবনায় ছেদ ঘটে। আওয়াজ টা কোথায় থেকে আসছে সেটা জানার জন্য অহনা এদিক ওদিক তাকাতেই অহনার চোখ যায় বাড়ির পেছনে মধ্য জঙ্গলে গাড়ির লাইট জ্বলছে।
এতো রাতে জঙ্গলে এতো বড় ট্রাক দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেলে অহনা।
ছাঁদ থেকে নেমে সদর দরজায় আসতেই দেখে সদর দরজা খোলা। আশ্চর্য অহনা তো লাগিয়েছিলো দরজা তাহলে কে বাহিরে গেলো?
অহনা আর না ভেবে সদর দরজা দিয়ে বেরিয়ে দরজাটা চাপিয়ে বাড়ির পেছনের জঙ্গলে হাঁটা দেয়।
একটু এগোতেই কয়েক জনের হাসির শব্দে অহনা হাঁটা থামিয়ে দেয়।
হাসির শব্দ টা অহনার খুব চেনা চেনা লাগছে।
হাসির শব্দ শুনে এগিয়ে গাড়ির সামনের দিকটায় যায় অহনা,
ঝোপঝাড়ের কাছে গিয়ে আড়াল হয়ে দেখতে থাকে। একটা ট্রাক গাড়ি সেখান থেকে তিন-চার জন লোক বড় বড় ড্রাম নামাচ্ছে, তার পাশেই উল্টো হয়ে তিনজন লোক দাঁড়িয়ে আছে।
অহনা চেয়েও পারছে না তাদের মুখ দেখতে,তাই ঘুরে বামে থাকা এক ঝোপের নিচে গিয়ে লুকায়। এখনো তাদের মুখ স্পষ্ট নয়।
এর মধ্যে এক লেবার ভুল বসত তার হাত থেকে ড্রাম পড়ে যেতে নিলে তিনজন লোকের মধ্যে এক লোক হুংকার দিয়ে বলে উঠে,,
” এই সাবধানে নাও এসব, একটার ও যেনো কোনো ক্ষতি না হয়, এদের বেছে বেছে আনা হয়েছে।
কথাটা শুনে অহনা বারবার মনে করার চেষ্টা করছে এই কন্ঠ টা কার হতে পারে।
” আহ মিস্টার আমজাদ ডোন্ট ওয়ারি,ক্ষতি হলে সেগুলো না হয় আমাদের কাজে ব্যাবহার করবো কি বলেন।
কথাটা বলতে বলতে সোজা হয়ে ঘুরে দাঁড়ায় মোশাররফ হোসেন।
নিজের বাবা কে এখানে দেখে অহনা দু কদম পিছিয়ে যায়। অহনার আদৌও বিশ্বাস হচ্ছে না এটা তার বাবা,বার কয়েকবার চোখ ডলে নেয়,হয়তো এটা তার ভ্রম কিন্তু না সে ঠিকই দেখছে এটা তার বাবা-ই।
অহনার আপনা-আপনি চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ে জল। এতোদিন যেই বাবাকে নিষ্ঠার সাথে কাজ করতে দেখেছে,নিজের একজন আইডল হিসেবে যাকে এতোদিন উপস্থাপনা করে এসেছে সেই বাবা-ই কি-না এতোদিন ধরে তাদের ঠকালো।
এর মধ্যে অভ্র এগিয়ে এসে বলে,,
” আঙ্কেল দেখেন তো আমার বাপ জানটা শুধুই প্যারা নেয়। আরে বাবা দু একটার ক্ষতি হলে তো আমরাই নিজেরা করতে পারি তাই না আঙ্কেল।
” হ্যাঁ ঠিক বলছো অভ্র, তোমার বাবা একটু বেশি ওভার থিংকিং করে।
চলো ভেতরে যাই দেখি সব ঠিকঠাক আছে কি-না কালই তো ক্লায়েন্ট আসবে নিতে।
কথাাট বলেই তিনজন গাড়ির সাইডে রাখা এক কেঁচি গেটের ভেতর দিয়ে ঢুকে পড়ে।
অহনা মাটিতে বসে পড়ে,খানিক কেঁদেও নেয়,মাথায় কিছুই ঢুকছে না,তারা বাবা কিভাবে এসবে যুক্ত হলো,এমন পরিবারেই বা কেনো বিয়ে দিলো অহনাকে, সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে কিছুতেই কিছুর হিসেব মিলছে না।
অহনা ধির পায়ে ঝোপ থেকে বের হয়। ততক্ষণে গাড়ি চলে গেছে, অহনা কেঁচি গেটের ভেতরে ঢুকে দেখে দশ থেকে বারোজন লোক,আর আমজাদ হোসেন ড্রাম গুলোর মুখ একটা একটা করে খুলে দেখছে।
ড্রামের মুখ খুলতেই অহনা থমকে যায়,মুখে টেপ বাঁধা মেয়েলি মুখ দেখা যাচ্ছে।
অভ্র এগিয়ে এসে বলে,,
” বাবা জানো তো আজকাল শুভ্রর বউকে দেখলে না আমার কেমন জানি লাগে।
” কেমন লাগে তোর আবার।
” তুমি কেনো শুভ্রর সাথে ওর বিয়ে দিলে আমাকে কি তোমার চোখে পড়ে নি। আমাকে রেখে শুভ্র কে ওমন সুন্দর রমণীর সাথে দিলে বিয়ে।
” এসব কি বলিস হ্যাঁ অহনা তোর ভাবি লাগে আর শুভ্র এসব জানতে পারলে তোর কি অবস্থা করবে ভাবতে পারছিস তুই।
” তোমার ঐ বোকা ছেলে জানবে না এসব বুঝলে।
” আমার মেয়ের দিকে নজর দিবে না অভ্র বলে রাখলাম।
মোশারফ হোসেনের কথা শুনে অভ্র উচ্চস্বরে হেঁসে বলে,,
” বাহ! ভূতের মুখে রাম রাম।
অহনা আর ভেতরে ঢুকে না,কারন ভেতরে ঢুকলে ধরা পড়ে যাবার চান্স আছল,তাই কেঁচি গেট থেকে তাদের এসব কথপোকথন শুনে অহনা বাড়ির পথে ফিরে,অহনা যে একা কিছু করতে পারবে না সেটা অহনা ভালো করে জানে।
অহনা বাড়ির কাছে আসতেই শুভ্রর কথা মনে পড়ে,তখন তো তারা বলেছিলো শুভ্র এসবের কিছু জানে না,তাহলে কি শুভ্রকে এসবের কথা বললে ও আমায় বিশ্বাস করবে? না আমায় আগে শুভ্র কে জানাতে হবে।
অহনা তড়িঘড়ি করে বাড়ির ভেতরে এসে দেখে ড্রয়িং রুমের সোফায় আমজাদ হোসেন আর অভ্র বসে আছে পাশেই কপালে হাত ঠেকিয়ে বসে আছে শুভ্র।
আশ্চর্য অভ্র আর আমজাদ হোসেন কিভাবে এখানে এলো,এতো তাড়াতাড়ি তো আসা পসিবল নয়, তাহলে কোথা থেকে আসলো তারা এই ঘরে?
অহনা আমজাদ হোসেন আর অভ্রর দিকে চেয়ে চেয়ে ভেতরে ঢুকে।
অভ্র অহনা কে দেখে বলে,,
” ভাইয়া দেখো ঐ যে ভাবি এসেছে। ভাবি কোথায় চলে গেছিলে তুমি?
অহনা অভ্রর দিকে কড়া চাহনি নিক্ষেপ করে বলে,,
” কোথায় গিয়েছিলাম সেটা কি তোমায় বলতে হবে। তুমি কোথায় গিয়েছিলে?
” আমি কোথায় গিয়েছিলাম মানে? মাথাটা কি খারাপ হয়ে গেছে তোমার।
” মাথা আমার খারাপ হয়েছে,,
” এনাফ অহনা কতোটা চিন্তা হচ্ছিলো আমার জানো তুমি তোমায় না দেখতে পেয়ে,কোথায় গিয়েছিলে তুমি।
” শুভ্র রুমে চলো প্লিজ তোমার সাথে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।
” ভাবি কি বলবেন আমাদের সামনে বলুন।
” স্বামী স্ত্রীর ব্যাপার কি এখন ড্রয়িং রুমে সবার সামনে বলতে হবে!
” আচ্ছা আসো রুমে, আমি যাচ্ছি।
কথাটা বলে শুভ্র বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে রুমে চলে যায়।
শুভ্র চলে যেতেই অভ্র সোফা থেকে উঠে অহানর সামনে দাঁড়িয়ে বলে,,
” নিজেকে খুব চালাক মনে করো তুমি! তোমার মতো এমন কতো চুনোপুঁটি মেয়েকে রাস্তা থেকে নিরবে সরিয়ে দিলাম,আর তুমি তো কোন ছার। তুমি কি ভেবেছো তুমি আমাদের বাসায় থেকে আমাদেরই রহস্য খুঁজবে আর আমরা জানবে না! বোকা মেয়ে তুমি আজ কি কি করেছো সব জানি আমরা,এসব শুভ্র কে বললে শুভ্র কখনোই বিশ্বাস করবে না,কারন সে অভ্র আর বাবা বলতে পা’গল।
অভ্রর কথা শুনে আকস্মিক চমকে উঠে অহনা,অভ্র কিভাবে জানলো এসব?
” তোমার লজ্জা করে না জোড় গলায় আবার কথা বলছো। শুভ্র কেনো বিশ্বাস করবে না,আমি শুধু মুখে নয় প্রমান ও দেখাবো।
অহনার কথা শুনে অভ্র খানিক হেঁসে বলে,,
” প্রমাণ বাহ! তা কোথায় তোমার সেই প্রমান,তোমার ঐ ফোনে? গিয়ে দেখো তো ওসব সো কোল্ড ভিডিও আছে কি-না।
কথাটা শোনামাত্র ই অহনা রুমে ছুটে চলে যায়। রুমে ঢুকে ফোন খুঁজে দেখে কোনো প্রমান নেই তার ফোনে।
শুভ্র বিছানাতেই বসে ছিলো,অহনার এসব কার্যকলাপ দেখে শুভ্র বলে,,
” আবার কি হলো তোমার অহনা কি খুঁজছো আবার ফোনে।
” না কিছু খুঁজছি না।
” তাহলে কি বলতে চাইলা তখন বলে।
” না কিছু না ঘুমাও।
কথাটা বলে অহনা বিছানার এক প্রান্তে গুটিশুটি হয়ে শুয়ে পড়ে।
শুভ্র একবার অহনার দিকে চেয়ে মনে মনে বলে,,
” এ মেয়ের আবার কি হলো।
কথাটা বলে নিজেও শুয়ে পড়ে অহনার পাশে।
অহনা শুয়ে শুয়ে ভাবছে অভ্রের বলা কথা গুলে,,
শুভ্র কে বললে সত্যিই শুভ্র বিশ্বাস করবে না,কেই বা মানবে তার বাবা ভাই এসব করে বেড়ায়। যা করার কাল আমাকেই করতে হবে এ ব্যাপার টা নিয়ে সায়েমের সাথে কথা বলতে হবে,এরমাত্র সায়েমই পারবে আমায় হেল্প করতে। আর আমার বাবা সে কি করে এসব করতে পারলো,তার কি একবার ও এসব করতে আমার আর মায়ের কথা টা মনে পড়লো না। বাবা টাকার লোভে এতোই অন্ধ হয়ে গেছে, বাবার সাথে আগে আমায় আলাদা করে কথা বলতে হবে।
কথাগুলো ভেবেই অহনা চেষ্টা করলো খানিক ঘুমের জন্য,হয়তো একটু ঘুমোতে পারলে মাথাটা ফ্রেশ হবে।
# চলবে