তিক্ত প্রতিশোধ পর্ব-০৯

0
696

#তিক্ত_প্রতিশোধ
#পর্ব ৯
#Raiha_Zubair_Ripte

চেয়ারে বেঁধে রাখা হয়েছে এক লোককে,একের পর এক লাঠির বারি লোকটি কে কাবু করতে পারছে না,লোকটির পিঠে মুখে পুরো শরীরে অহনা সমান তালে মারছে কিন্তু লোকটির গলায় চিৎকার ছাড়া আর কিছুই বের হচ্ছে না। অহনা মা’রতে মা’রতে ক্লান্ত হয়ে গেছে, হাতের লাঠিটা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে লোকটির চুল গুলো টেনে ধরে পেছন থেকে,,

” বল কি করছিলি সেদিন ঐ মোশাররফ হোসেনের বাড়িতে যেদিন রিয়া নামের মেয়েটার খু’ন হলো।

লোকটা বরাবরের মতোই এবারও হেঁসে জবাব দিলো,,

” বিয়ে খেতে গিয়েছিলাম।

” ওহ রিয়েলি! তা মোশারফ হোসেনের সাথে তোর কিসের সম্পর্ক? মোশাররফ হোসেন তোকে এতো টাকা কেনো দিলো?

লোকটা কথাটা শুনে খানিক ঘাবড়ে যায় আমতাআমতা করে জিজ্ঞেস করে,,

” আ আপনি কে? এই কথা আপনি জানলেন কিভাবে?

অহনা খানিক হেঁসে মাস্ক টার উপর হাত বুলিয়ে বলে,,

” তোকে যা জিজ্ঞেস করা হয়েছে সেটা বল,আমি কে সেটা তোর না জানলেও চলবে। বল মোশাররফ হোসেন কেনো তোকে এতো গুলো টাকা দিলো?

” জানি না কেনো দিয়েছে এতো গুলো টাকা।

অহনা এবার আর সহ্য করতে না পেরে বলে

” বলবি না তাহলে এতোগুলা টাকা কেনো দিলো, ওকে নো প্রবলেম, সিয়াম এর এতে কাজ হবে না তুমি আগুনে রড পুড়িয়ে আনো কুইক।

সায়েম মাথা নাড়িয়ে এক কনস্টেবল কে বলে রড গরম করে আনে।

অহনা রডটার দিকে তাকিয়ে এগোতে এগোতে বলে,,

” তুই তো মুখ খুলবি না তাহলে তোকে বাঁচিয়ে রেখে কি লাভ। তোকে ধুঁকে ধুঁকে মরন যন্ত্রণার স্বাদ পেতে সাহায্য করি।

” যা করার করুন আমি জানি না কেনো উনি টাকা দিলেন।

অহনা তেঁড়ে এসে আগুনে পুড়ানো রড টা লোকটার হাতে চেপে ধরে। লোকটা গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে উঠে। অহনা হাত থেকে রড সরিয়ে লোকটার পিঠে চেপে ধরে এবার ও লোকটার আর্তনাদ ছাড়া আর কিছুই বের হয় নি মুখ থেকে, অহনা এবার আশা ছেড়ে দিয়ে বললো,,

” সায়েম এ মুখ খুলবে না, এ যতোক্ষণ না মুখ ফুটে কিছু বলবে ততোক্ষণ একে এক ফোঁটা জল খাবার কিছুই দিবে না, এভাবেই পড়ে থাকতে দাও, খিদের যন্ত্রণায় তখন ঠিকই মুখ খুলবে।

আর শোনো আমায় এখন বেরোতে হবে, আমি আসি পরে দেখা হবে।

সায়েম হ্যাঁ জানালে অহনা বেরিয়ে যায়। অহনা বাসায় এসে ড্রেস চেঞ্জ করে সেটা একটা শপিং ব্যাগে ভরে খাটের নিচে রেখে দেয়।

দুপুর হয়ে গেছে আমজাদ হোসেন ফোন করে বলে দিয়েছে আজ তাদের আস্তে রাত হবে অহনা যেনো খেয়ে দেয়ে শুয়ে পড়ে তাদের জন্য বসে না থেকে।

এর মধ্যে সদর দরজার কলিং বেল বাজে অহনা গিয়ে দরজা খুলে দেখে খাবার এনেছে সেই বৃদ্ধ লোক,অহনা খবারের প্যাকেট টা নিয়ে বলে,,

” চাচা ভেতরে আসুন।

” না আম্মা আমার তো ভেতরে ঢুকা নিষেধ।

” কেনো চাচা ভেতরে ঢুকা নিষেধ কেনো আপনার?

” ও তুমি বুঝবে না মা,আমি বরং আসি।

” ওয়েট চাচা আপনার বাসা টা কোথায়?

” এই তো মা সোজা গিয়ে ডানে গিয়ে ছোট্ট একটা জঙ্গল পেরোলেই আমার ছোট্ট কুঁড়ে ঘর।

” চাচা আপনার ছেলে মেয়ে নেই?

” ছিলো তো এখন আর নেই।

” এখন আর নেই মানে?

” ও মেলা কাহিনী বলেও শেষ করা যাবে না।

” চাচা আপনার তো ভেতরে ঢুকা নিষেধ তাই না, বাহিরে তো বসতে নিষেধ নেই,আপনি একটু দাঁড়ান আমি মোড়া নিয়ে আসছি।

কথাটা বলে অহনা ঘরের ভেতরে ঢুকে মোড়া এনে বলে,,

” চাচা এখানে বসুন,কথাটা বলতেই অহনা আশেপাশে ভালো করে দেখে বৃদ্ধ লোকটি নেই।

অহনা বাড়ি থেকে বেরিয়ে এদিক ওদিক খুঁজে দেখে উনার ছায়াও নেই এ বাড়ির ত্রিসীমানায়।

অহনা আর না খোঁজা খুঁজি করে বাসার ভেতরে ঢুকে সদর দরজা বন্ধ করে দেয়। খাবার টা নিয়ে ডাইনিং টেবিলের উপর রেখে নিজের জন্য খাবার বেরে খেতে লাগলো অহনা,ভাতের মধ্যে নুন নিতেই নুনের কৌটো টা নিচে পড়ে যায়।

অহনা কৌটো টা একটু ঝুকি নিয়ে উঠাতে গেলে ওহনার চোখ আটকে যায় ডাইনিং টেবিলের নিচে। আকস্মিক অহনা চেয়ার ছেড়ে উঠে টেবিলের নিচে বসে পড়ে।

এর আগে কখনো সেভাবে খেয়াল করে নি অহনা, ডাইনিং টেবিলের নিচে কিছু একটা আছে। অহনা ডাইনিং টেবিলের চারপাশ টা ঘুরে হাতিয়ে বুঝতে পারলো এটা একটা গোপন দরজা।

তার মানে সেদিন রাতে অহনা ভুল দেখে নি ছিলো এই ডাইনিং টেবিলের চেয়ারে বসে লোকগুলো,অহনা সোজা উঠে দাঁড়িয়ে একা একাই বলতে লাগলো,,

” তার মানে আমি যখন লোকগুলোকে দেখে শুভ্র কে ডাকতে গিয়েছিলাম তখন তারা এই দরজা দিয়েই ভেতরে চলে গেছিলো। নিশ্চয়ই কিছু একটা আছে এই দরজার ভেতরে আমায় ঢুকতে হবে যে করেই হোক। কিন্তু এটা খুলে কিভাবে এটা যে চাবি দিয়ে খুলবে না এটা নিশ্চিত আমি, তাহলে কি দিয়ে খুলবে?

অহনা এদিক সেদিক বারবার পায়চারি করছে আর ভাবছে কি দিয়ে খুলবে এই দরজা উপায়ন্তর না পেয়ে অহনা খাবার গুলো ফ্রিজে রেখে টেবিলের নিচে মোবাইল টা নিয়ে বসে পড়লো।

টেবিলের নিচের অংশ টুকু হাতিয়ে হাতিয়ে দেখলো আচমকা মাথা ঘুরাতেই অহনার চোখ যায় টেবিলের নিচ পিঠে কিছু একটা লাগানো,অহনা মোবাইলের টচটা জ্বালিয়ে হাত দিয়ে বুঝতে পারে গোল কিছু একটা যেটা ঘুরানো যায়,অহনা সেই জিনিসটা ঘুরাতেই আচমকা ঠাস করে পড়ে যায়।

ওটা ঘুরানোর সাথে সাথেই দরজাটা খুলে গিয়ে ছিলো আর অহনা দরজার উপরেই বসে ছিলো যার ফলে অহনা নিচে পড়ে যায়।

নিচে পড়ে যাওয়ার ফলে অহনা চিৎকার করে উঠে,হাতের কনুই ছিলে গেছে, খুব একটা নিচে পড়ে যায় নি অহনা। অহনা নিজেকে ঠিক করে উঠে দাঁড়ায় এখানে একটা সিঁড়ি আছে অহনা সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতেই আশপাশটা দেখতেই চমকে উঠে।

অন্ধকারে আচ্ছন্ন পুরো জায়গা,আচমকা ভয়ে গুটিয়ে যায় অহনা। চারিদিকে মানুষের হাড় এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, জায়গা টা খুবই ভয়ংকর। ভাগ্যিস ফোন সহ নিচে পড়েছিলো অহনা।

অহনা ফোনটার টচ নিয়ে সামনের দিকে এগোতে থাকে। সামনে যতোই এগোচ্ছে ততোই অহনার গা ছমছম করছে ভয়ে, আর কি বিশ্রী গন্ধ হয়তো কিছু একটা পঁচে এমন গন্ধ আসছে , আশেপাশে তাকাতে তাকাতে এগোতে আচমকা অহনা কিছুর সাথে বেঁধে পড়ে যায় ফোনটা ছিটকে দূরে পড়ে,আকস্মিক এমন পড়ে যাওয়ায় অহনা আহহ করে উঠে।

হাত দিয়ে ফোনটা উঠিয়ে নিজে উঠে দাঁড়িয়ে কিসের সাথে বেঁধে পড়ে গেছে সেটা দেখতেই অহনার সারা শরীরের লোম গুলো খাঁড়া হয়ে যায়। পঁচে যাওয়া একটা মেয়েলি লা’শ যার থেকে গন্ধ আসছে,অহনা আর গন্ধ সইতে না পেরে পাশেই বুমি করে ফেলে।

বুমি করতে করতে অহনা ক্লান্ত, সামনে আর এগোনোর সাহস পাচ্ছে না, না জানি আরো কতো কিছু আছে সামনে।

বেশ কিছুক্ষণ সময় নিয়ে নিজেকে ধাতস্থ করে সামনে এগোনোর জন্য সাহস বাড়ায়।

প্রত্যেক টা জিনিস অহনা ভিডিও করে নিচ্ছে, হয়তো কোনো কাজে লাগবে,যাতোই সামনে এগোচ্ছে ততোই সুরঙ্গ টা আরো গভীর হচ্ছে আরো লা’শের পরিমান বাড়ছে।

হাঁটতে হাঁটতে অহনা ক্লান্ত হয়ে ফোনের দিকে তাকাতেই অহনার চোখ থমকে যায়,সেই দুপুর থেকে অহনা শুধু হেঁটেই যাচ্ছে এখন বাজে সাড়ে পাঁচ টা মানে চার টা ঘন্টা অহনা হেটেই চলেছে, তবুও এই রাস্তা শেষ হচ্ছে না।

অহনা সিদ্ধান্ত নেয় আর গভীরে যাবে না,যে পথ দিয়ে এসেছিলো সে পথ দিয়ে ফিরে যাবে। কথাটা মনে মনে বলেই উল্টো ঘুরে আসতে যাবে এমন সময় এক মেয়েলি চিৎকারে অহনা থমকে যায়। চিৎকার টা কোথায় থেকে আসছে সেটার উৎস খুঁজতে থাকে অহনা।

আওয়াজ টা আরো সামনে থেকে আসছে,অহনা কাঁপা কাঁপা পা নিয়ে সামনে এগোতে থাকে, অহনা যতোই সামনে এগোচ্ছে ততোই ভয়েরা তার মধ্যে জেঁকে বসেছে।

অহনা খানিক সামনে এগোতেই অহনার চোখ যায় এক সিঁড়ির দিকে। অহনা সিঁড়ির কাছে এসে সেটা বেয়ে নিচে নামতে লাগলো।

নিচে নেমে দেখে নিচে আবছা আলোয় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে হয়তো এটা কোনো গোপন আস্তানা, অনেক রহস্যের উত্তর হয়তো এখানেই পাওয়া যাবে। অহনা ধিরে পায়ে নিচে নামে এর মধ্যে মেয়েলি কন্ঠ টা আবার ভেসে আসে, অহনা আওয়াজ টা শুনে ডানে যেতেই পাশে থাকা একটা ঘরে অহনার চোখ যায় সামনে থাকা মানুষটার দিকে, মানুষ টাকে দেখে অহনা চমকে যায়।

মেয়েটাকে খুবলে নরপিশাচের মতো খেতে চাইছে, নিজের শারীরিক চাহিদা মেটাতে, মেয়েটা বাঁধা দিলেই মানুষটা মেয়েটাকে এলোপাতাড়ি চড় থাপ্পড় দিচ্ছে। অহনা অবিশ্বাস্য চাহনি নিয়ে অজান্তেই আরো একটু সামনে এগোতে নিলে পাশে থাকা ফুলদানি টা অহনার হাতে লেগে পড়ে যায়।

আকস্মিক মানুষটা মেয়টাকে ছেড়ে দেয়। অহনার যেনো হুশ আসে। অহনা দৌড়ে সেখান থেকে চলে এসে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে পড়ে আবার সেই অন্ধকার আচ্ছন্ন সুরঙ্গয় ঢুকে দৌড়াতে লাগে।

ঘরে থাকা মানুষটা দরজা খুলে বাহিরে এসে দেখে ফুলদানি টা মাটিতে পড়া, মানুষটা হুংকার দিয়ে লোক ডাকে। তার হুংকার শুনে লোকগুলো আসলে মানুষটা বলে,,

” এখানে কে এসেছিলো,নিশ্চয়ই কেউ এসেছিলো, যে এসেছিলো তাকে খুঁজে নিয়ে আসো এক্ষুনি।

লোকগুলোর মধ্যে এক লোক বলে উঠে,,

” স্যার এখানে কারো আসা সম্ভব নয় আপনি জানেন তো সেটা।

লোকটা দাঁতে দাঁত চেপে বলে,,

” তাহলে কি আমি মিথ্যা বলছি,এই ফুলদানি টা কি তাহলে ভুতে এসে ফেলে গেছে।

” স্যার ফুলদানি টা আমার হাতে লেগে পড়ে গেছিলো।

লোকটা ভ্রু কুঁচকে বলে,,

” সত্যি বলছিস তুই?

” হ্যাঁ স্যার আমি সত্যি বলছি।

” আমি তো এটা পড়ার সাথে সাথেই বের হলাম তাহলে তোকে দেখলাম না কেনো।

আমতা আমতা করে জবাব দেয়,,

” আসলে স্যার আপনি আমায় দেখলে রাগ করতেন দেখে আমি তাড়াতাড়ি করে চলে গেছি।

” পরবর্তী সময়ে যদি এমন ভুল করতে দেখি তাহলে তোর সেদিনই শেষ দিন।

কথাটা বলে লোকটা ভেতরে চলে যায়। লোকগুলো চলে গেলে এক লোক সিঁড়ির দিকে চেয়ে বলে,,

” আমি থাকতে আপু আপনায় ধরা পড়তে দিবো না, আমি সাহায্য করবো আপনায়,এতে যদি আমার প্রান ও চলে যায় তবে চলে যাক।

কথাটা বলে লোকটাও চলে যায়।

অহনার বিশ্বাস ই হচ্ছে না এই মানুষটাকে সে এখানে দেখবে,তার মানে এই মানুষটাই তাহলে এসব করে বেড়াচ্ছে।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে