তিক্ত প্রতিশোধ পর্ব-০৮

0
710

#তিক্ত_প্রতিশোধ
#পর্ব ৮
#Raiha_Zubair_Ripte

সকালে অহনা ঘুম থেকে উঠতেই শুভ্র বলে উঠে আজই তারা ও বাড়ি যাবে। অহনা খানিকটা মন খারাপ করলেও সেটা পোষণ করলো না,বিছানা ছেড়ে উঠে ফ্রেশ হয়ে তারা দু’জনে এক সাথে ব্রেকফাস্ট করে সবার থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে যায়।

আসার আগে অহনার মা খুব বলেছিলো অহনা আর কয়েকটা দিন থাকুক না কিন্তু শুভ্র ডিরেক্ট না করে দিয়েছে। অহনার বাবা শুভ্রর হাত ধরে কিছুটা দূরে নিয়ে গিয়ে বলে,,

” শুভ্র মেয়েটাকে চোখে চোখে রেখো,কোনো ভুল যেনো না করে সেদিকে খেয়াল রেখো।

” হুম চিন্তা করবেন না অহনার কিছু হবে না আই মিন,,,

” হ্যাঁ বুঝতে পেরেছি সাবধানে যাও তোমরা।

শুভ্রদের বাসায় এসেছে প্রায় ঘন্টাখানেক হলো,অহনাকে বাসায় নামিয়ে দিয়েই চলে যায় অফিসে শুভ্র, অভ্র আর আমজাদ হোসেন কোথাও একটা গিয়েছে,এখন পুরো বাড়িতে একা অহনা। অহনা ফোনটা নিয়ে সায়েম কে ফোন দেয়,ওপাশ থেকে সায়েম ফোন রিসিভ করলে অহনা বলে উঠে,,

” সায়েম কালকে পাঠানো সেই লোকটার ব্যাপারে কি কিছু জানতে পােরেছো।

” হ্যাঁ পেরেছি লোকটা ছোটখাটো চুরি করতো আগে এখন তার এলাকার লোকেদের থেকে জানতে পারলাম নিজেকে সে এখন ভালো করে ফেলছে আই মিন চুরি টুরি আর করে না। কিন্তু লোকটা কি কাজ করে সেটা কেউ বলতে পারে নি। আর লোকটার পরিবারে একটা বাচ্চা আর তার বৃদ্ধ মা থাকে।

” কিছু একটা গন্ডগোল আছে লোকটাকে উঠিয়ে আনো তুমি।

” কিন্তু কিসের জন্য কোন ভিত্তিতে তাকে তুলে আনবো?

” এক কাজ করো দেখো তো কোনো চুরির কেস আছে নাকি।

” ওয়েট, সায়েম এক কনস্টেবল কে ডেকে জিজ্ঞেস করে কোনো চুরির কেস আছে নাকি, কনস্টেবল বলে,,

” জ্বি স্যার একটা আছে কেস, কয়েকদিন আগে মার্কেট থেকে এক মহিলার কানের দুল চুরি করে নিয়ে গেছে কেউ।

” ও আচ্ছা তুমি যাও তাহলে,কনস্টেবল চলে গেলে সায়েম অহনাকে বলে,, হ্যাঁ আছে একটা কেস।

” এটার ভিত্তিতেই তাকে তুলে আনো,তার পর কি করতে হবে সেটা আমি বলছি।

” ঠিক আছে।

অহনা ফোন টা বিছানায় রেখে পুরো বাড়ি ভালে করে দেখতে থাকে, অহনা তাদের তিন ঘর বাদে চার নম্বর ঘরের সামনে এসে দাঁড়ায়, এ ঘরে তাকে ঢুকতে দেয় না কেউ। অহনা দরজাটা ধাক্কা দিয়ে দেখে দরজাটা তালা মা’রা, কিন্তু এটার চাবি কই, কার কাছে?

অহনা চাবির কথা মনে আসতেই অভ্রর কাছে দেখা চাবিটার কথা মনে পড়ে যায়,হন্তদন্ত হয়ে অভ্রর ঘরের দিকে ছুটে অহনা,আলমারি খুঁজে ভাগ্য ক্রমে পেয়েও যায় চাবি। চাবিটা নিয়ে বেরিয়ে আসে ঘর থেকে, বন্ধ দরজার সামনে এসে চাবি দিয়ে তালা ঘুরাতেই দরজাটা খুলে যায়।

অহনা দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে বেশ অবাক হয় সুন্দর একটা রুম তাদের রুমের থেকেও অনেক বেশি সুন্দর এ রুমটা, ঘরের এক-একটা আসবাবপত্র দেখে বুঝাই যাচ্ছে এর মাধুর্য যেন চোখ জুড়িয়ে যাওয়ার উপক্রম।

অহনা আসবাবপত্র গুলো হাতের স্পর্শে ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখতে লাগলো। ঘরটার মধ্যে কিছুতো একটা আছে যা অহনাকে খুব টানছে। ঘরটা থেকে ছড়াচ্ছে এক সুগন্ধি সুবাস যা অহনাকে আরো মাতোয়ারা করে তুলছে।

কোথা থেকে যেনো থেকে থেকে এক দমকা হাওয়া আসছে কিন্তু এখানে তো কোনো জানালা বা বেলকনি নেই তাহলে এই ঠান্ডা শীতল বাতাস কোথা থেকে আসছে!

এ ঘরের এক কোনায় একটা বড় একটা আয়না লাগানো, অহনা সেই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে একবার নিজেকে পরখ করে দেখতে নেয় আশ্চর্য আয়নায় অহনাকে দেখা যাচ্ছে না,অহনার সেদিকে খেয়াল নেই,অহনা সেই আয়নাতেই নিজেকে দেখতে ব্যাস্ত।

অহনা আয়না থেকে সরে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো, সব ক্লান্তি যেনো এক নিমিষেই শেষ,বেশ কিছুক্ষণ শুয়ে থেকে উঠে বসতেই দেওয়ালে থাকা এক পেইন্টিং এ চোখ যায়। আহ!কি সুন্দর দেখতে পেইন্টিং এর এই রমণী টা, রূপের বর্ননা ও দিতে গেলে ভাষা হারিয়ে যাবে।

অহনা পেইন্টিং এর সামনে দাঁড়িয়ে পেইন্টিং টাকে হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেয়, পেইন্টিং এ থাকা রমণীর মুখের দিকে তাকাতেই পেইন্টিং টা মুচকি হেঁসে উঠলো,রমণীর হাসি দেখে অহনাও হেঁসে ফেললো।

অহনা একা একাই নিজ থেকে পেইন্টিং এর সাথে কথা বলতে লাগলো,,

” আপনার হাসি তো অনেক সুন্দর, আপনার রূপের বর্ননা কিভাবে করা যায় সেই শব্দ গুলো আমার জানা নেই।

কথাটা বলে অহনা পেইন্টিং এর সামনে থেকে সরে আলমারি কাছে যায়,আলমারি খুলে দেখে পুরো আলমারি জুড়ে মেয়েলি পোষাক। অহনা একটা একটা করে সব পোষাক খুলে দেখে,পোষাক গুলোর সৌন্দর্য ও ভাষাহীন নজর কাঁড়ার মতো। একটা পোষাকে অহনার চোখ আঁটকে যায়,সেটা আলমারি থেকে বের করে নিজের গায়ে জড়িয়ে ধরে। খুব আকৃষ্ট করছে এই পোষাক টা তাকে একবার পড়ার জন্য, অহনা আর দেরি না করে পোষাক টা পড়ে ফেলে।

পোষাক টা পড়ে খুতিয়ে খুতিয়ে দেখে নিজেকে। এবার আলমারি টা আটকাতেই অহনার চোখ যায় আলমারিতে থাকা একটা বক্সের মধ্যে, অহনা কৌতূহল নিয়ে বক্সটা খুলতে নেয়। বক্সটা খুলে দেখে এখানে কতোগুলো মানুষের ছবি।

অহনা ছবি গুলো দেখতে দেখতে একটা ছবিতে গিয়ে অহনার চোখ আঁটকে যায়,এই ছবিগুলোর মধ্যে একটা তার বাবার ও ছবি, আশ্চর্য এখানে তার বাবার ছবি কেনো?অহনার যেনো এবার টনক নাড়া দিলো এতোক্ষণ যেই ভ্রমের মধ্যে ছিলো সেটার থেকে বেরিয়ে আসলো, একবার নিজের দিকে তাকাতেই অহনা চমকে উঠে তার গায়ে এ পোশাক আসলো কোথা থেকে।

বিছানার পাশে নিজের পোষাক দেখে তড়িঘড়ি করে নিজের পোষাক পড়ে সেটা আলমারিতে রেখে দেয়, বিছানা থেকে ফোনটা নিয়ে ছবিগুলোর ছবি উঠিয়ে নিলো ফোনটায়।

ছবি গুলো বক্সের মধ্যে রেখে হন্তদন্ত হয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে রুম টা তালা মে’রে চাবিটা অভ্রর ঘরে রেখে নিজের ঘরে চলে আসে।

সায়েম কে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করে ফোনটা ঠিক করা হয়েছে না-কি, সায়েম ওপাশ থেকে বলে,

” হ্যাঁ ঠিক করা হয়েছে।

” কিছু পেলে ফোনটায়।

” হ্যাঁ একটা ভিডিও আছে, তুমি তাড়াতাড়ি চলে আসো।

” ঠিক আছে আমি আসছি।

কথাটা বলেই অহনা হন্তদন্ত হয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে বাসার বাহিরে তালা মে’রে বেরিয়ে পড়ে।

___________________

একটা ভিডিও লোকটিকে দেখা যাচ্ছে না, লোকটি পেছন ফিরে রয়েছে যার ফলে লোকটি কে পেছন থেকে দেখা যাচ্ছে। লোকটি কারো সাথে কথা বলছে কিন্তু কথাগুলো শোনা যাচ্ছে না। লোকটা কান থেকে ফোন নামাতেই অহনার হাত যায় লোকটার হাতের দিকে। অহনা কিছুটা জোরে বলে উঠে,,

” সায়েম হাতটা জুম করো তো।

সায়েম হাতটা জুম করতেই দেখতে পায় লোকটার হাতে একটা ট্যাটু।

” সায়েম আমি কোথাও একটা এই ট্যাটু দেখেছি ঠিক মনে করতে পারতেছি না।

” হোয়াট আর ইউ শিওর?

” ইয়াহ আ’ম শিওর।

” একটু মনে করার চেষ্টা করো কোথায় দেখেছো।

” ট্রাই করছি তো,তুমি বরং পুরো ভিডিও দেখাও।

ভিডিও টায় দেখা যাচ্ছে লোকটা কান থেকে ফোন নামাতেই খানিক পিছু ঘুরতে নিলেই ফোনটা নিচে নেমে পড়ে যায়,হয়তো রিয়ার হাত থেকে ফোনটা পড়ে গেছে ভয়ে আতঙ্কে বা অন্য কিছু একটায় এর পর আর কিছু দেখা যাচ্ছে না,ভিডিও শেষ।

অহনা চেয়ার ছেড়ে উঠে থানা থেকে বের হয়ে থানার পাশে বট গাছের নিচে রাখা বেঞ্চ টাতে বসে ভাবতে থাকে কোথায় দেখেছে এই রকম ট্যাটু।

এর মধ্যে অহনা লক্ষ করে থানার জিপে করে সেই লোকটাকে আনা হচ্ছে যাকে অহনা তাদের বাড়ির ড্রয়িং রুমে দেখেছিলো। লোকটাকে এক কনস্টেবল গাড়ি থেকে নামাতেই অহনার চোখ যায় লোকটার হাতের দিকে, সরসা অহনার মনে ভয় ঢুকে যায়, না না এটা কিছুতেই হতে পারে না, রিয়ার মৃ’ত্যুর পেছনে কি তাহলে সে, এটা কি করে হতে পারে? না এটা ভুল আমি ভুল ভাবছি এটা কেবলই আমার ভ্রম মাত্র।

পরমুহূর্তেই অহনার আরেক সত্তা বলে উঠে,,আচ্ছা আমার করা ধারনাই যদি সত্যি হয় তখন কি হবে, কিভাবে আমি তার মুখোমুখি দাঁড়াবো কিভাবে তাকে নিজের চোখের সামনে শাস্তি পেতে দেখবো।

না না আগে থেকেই এতোটা ভাববো না আগে দেখি কি হয় কথাটা বলেই মুখে মাস্ক পড়ে থানার ভেতরে ঢুকে পড়ে অহনা

# চলবে

( ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন, হ্যাপি রিডিং)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে