#তিক্ত_প্রতিশোধ
#পর্ব ৭
#Raiha_Zubair_Ripte
ক্যাফেতে মাস্ক পড়ে বসে আছে সায়েম,বারবার হাতে থাকা তার হাতঘড়ি টার দিকে তাকাচ্ছে, ঘড়ির থেকে চোখ সরিয়ে ক্যাফের দরজার দিকে তাকাতেই দেখতে পায় কালো বোরকা পড়া একটি মেয়ে তড়িঘড়ি করে ক্যাফের ভেতরে আসছে,সায়েমের আর বুঝতে বাকি নেই এটা কে।
অহনা ক্যাফেতে ঢুকে সোজা সায়েমের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়, চেয়ার টেনে বসার সময় সায়েম বলে উঠে,,
” কি ব্যাপার আপনি আসতে এতো দেরি করলেন যে?
অহনা চেয়ার বসে হাতে থাকা ব্যাগ টা টেবিলের উপর রেখে বলে,,
” আর বলো না আসার পথে এক রিকশা চালকের সাথে আরেক রিকশা চালকের তুমুলঝগড়া বেঁধে গিয়েছিলো সেটা এগিয়ে গিয়ে থামাতেই দেরি হয়ে গেছে।
” ওহ তা কিছু কি পেলেন ফোনে?
অহনা হতাশ মন নিয়ে বলে,,
” আরে পাবো কিভাবে ফোনটার তো ডিসপ্লে নষ্ট, ফোনটা কোনো ফোন সার্ভিসের থেকে আগে সারাতে হবে।
” দেখি দিন তো ফোন টা।
অহনা ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে সায়োমের হাতে দেয়। সায়েম ফোনটাকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখে।
” ফোনটা আমি নিয়ে যাচ্ছি আমার পরিচিত এক মেকানিক আছে তার কাছে সারাতে দিবো নি।
” সে তোমার ইচ্ছে।
” তা ডিউটিতে জয়েন করছেন কবে, ফ্যালির কেউ কেই তো মনে হয় না জানিয়েছো তুমি যে গোয়েন্দা সংস্থা তে জয়েন হচ্ছো।
” হ্যাঁ খুব শীগ্রই জয়েন হবো,এ ব্যাপার টা তো শুধু রিয়া আর আমি জানতাম আর সেদিন তুমি জেনেছিলে যেদিন আমি অফিসে দেখা করতে গিয়েছিলাম স্যারদের সাথে ,আর আমি ডিউটিতে থাকা কালিন সিনয়র হলেও আমি তোমার জুনিয়র কিন্তু, তাই বলছি আপনি করে না বলে তুমি করে বললেই ভালো হয়।
” হুমম সে না হয় করলাম কিন্তু তোমার খবর কি বিয়ে নতুন সংসার কেমন কাটছে?
” হ্যাঁ আলহামদুলিল্লাহ ভালোই আছি,আচ্ছা রিয়ার খু’নের ব্যাপারের তদন্ত টা নিয়ে কতো দূর এগোলে তুমি?
” এই তো চলছে,কিন্তু এর মাঝে আরো একটা লা’শ পেয়েছি আমরা। আর সেটার ও তদন্ত চলছে।
” ওহ গ্রেট তাহলে আমাকে প্রতি মূহুর্তে আপডেট দিতে থেকো,যে করেই হোক সেই ব্যাক্তির নিকট আমাদের পৌঁছতে হবে।
” রিয়ার ব্যাপার টা তদন্ত করে একটা জিনিস আমি বুঝলাম।
” কি বঝলে?
” রিয়ার খু’নি আমার মনে হয় তোমার চেনাজানা কেউই।
” হোয়াট কি বলো!
” হ্যাঁ আমার সেটাই মনে হচ্ছে, তোমার দেওয়া বিয়ের ইনভেনশনের লিস্ট গুলো আমি দেখছি ইভেন তোমার বাসার পাশে রাস্তায় যে সিসিটিভি আছে সেটার ফুটেজ ও চেক করে দেখেছি তেমন কোনো সন্দেহ বাচক কিছু দেখা যায় নি,যা হয়েছে বাড়ির ভেতরেই ভেতরের কেউই।
” ফুটেজ টা আমায় পাঠিয়ো তো, আর যতদ্রুত পারো ফোন টা ঠিক করা-ও। আমি এখন উঠি বুঝলে।
” হুম সাবধানে যাও।
অহনা বেরিয়ে আসে ক্যাফে থেকে, একটা রিকশা দাঁড় করিয়ে সেটায় উঠে সায়েমের বলা কথা গুলো ভাবছে অহনা,যদি সত্যিই আমার চেনাজানা কেউ এ কাজ করে থাকে তখন!
এসব ভাবতে ভাবতেই বাড়ির সামনে এসে পড়ে অহনা,রিকশা থেকে নেমে ভাড়া দিয়ে বাসায় ঢুকে। বসার ঘরের সামনে দিয়ে ঘরে ঢুকতে নেবার সময় সোফায় বসা এক লোকের উপর চোখ যায় অহনার,লোকটাকে খুব চেনা চেনা লাগছে কোথাও হয়তো দেখেছে তাকে। অহনা নিজের ঘরে আর না গিয়ে লোকটার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় অহনা।
” আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল,আমি মনে হয় কোথাও আপনায় দেখেছি ঠিক মনে পরছে না,আপনার কি মনে পরছে?
লোকটা সোফায় ভালো করে বসে আমতাআমতা করে বলে,,
” ন না মা, ক কোথায় দেখবে আ আবার আমায় হয়তো ভ্রম হচ্ছে তোমার।
” সত্যিই কি ভ্রম!
” হ্যাঁ ভ্রম নয় তো কি।
” ওহ তা আপনি এখানে আমাদের বসার ঘরে বসে আছেন যে?
” তোমার বাবার সাথে দেখা করতে এসেছি,নিজের পাওনাটা বুঝে নিতে এসেছি।
” কিসের পাওনা আঙ্কেল।
” ও তুমি বুঝবে না,ওসব বোঝার বয়স হয় নি তোমার।
অহনা কিছু বলতে নিবে এমন সময় মোশারফ হোসেন এসে বলে,,
” কি ব্যাপার অহনা তুমি কোথায় গিয়েছিলে।
” এই তো বাবা একটু বাহিরে গিয়েছিলাম।
” তা ঘরে না গিয়ে এখানে কি করছো? যাও ঘরে।
” হুম যাচ্ছি। কথাটা বলে অহনা নিজের ঘরে যাবার সময় আবার কি মনে করে যেনো পিছে ফিরে তার বাবার দিকে তাকালে দেখতে পায় তার বাবার হাতে দু বান্ডিল টাকা,আর সেই টাকাটা নিয়ে সেই লোকটিকে দিলো।
অহনা খানিক আড়াল হয় বিষয়টা ভালো করে দেখার জন্য। মোশারফ হোসেন টাকাটা লোকটার হাতে দিয়ে বলে উঠে,,
” এই নাও টাকা আর কখনো আমার সামনে আসবে না ইডিয়ট, একটা কাজ ও ঠিক মতো করতে পারো না।
লোকটা টাকার বান্ডিল টা নাকের সামনে নিয়ে ঘ্রাণ শুঁখে বলে,,
” বুঝলেন তো মোশারফ হোসেন টাকার ঘ্রাণের মতো এতো খারাপ কোনো ঘ্রাণ নেই,মানুষ এই টাকার জন্য কি-না কি করে বলুন তো। তবে সে যাই হোক আমি আমার পাওনা পেয়ে গেছি এবার আসি।
কথাটা বলে লোকটি চলে যায়। মোশারফ হোসন এক হাত কপালে দিয়ে একা একাই বিরবির করে,,
” না জানি সামনে কোন ঝড় আসতো যাচ্ছে, এই ঝড় সব চূর্ণবিচূর্ণ করে দিবে।
অহনা আড়াল থেকে সরে গিয়ে ঘরে ঢুকে বোরকা খুলে সায়েম কে ফোন দেয়। লোকটির একটা ছবি তুলে নিয়েছিলো অহনা,গোয়েন্দা তো সব কিছুতেই তার সন্দেহ হয়। সায়েম ফোন রিসিভ করলে সায়েম কে অহনা বলে,,
” হ্যালো সায়েম আমি তোমার ফোনে একটা ছবি পাঠাচ্ছি এক লোকের,তার ঠিকানা সে কি করে তার ফ্যামিলিতে কয় জন সেটা কালকের মধ্যে জানাবে আমায়।
” ঠিকাছে, তুমি ছবি টা পাঠাও আমি খোঁজ নিচ্ছি।
অহনা হুমম বলে ছবিটা সায়েমের ফোনে পাঠিয়ে দেয়। ফোন কলে গিয়ে গোয়েন্দার হেড অফিসারকে ফোন দেয় অহনা। গোয়েন্দার হেড শামসুল আলম ফোন রিসিভ করলে অহনা বলে,,
” আসসালামু আলাইকুম স্যার আমি অহনা বলছিলাম।
” অলাইকুম আসসালাম,কোনো দরকার?
” জ্বি স্যার আমি চাইছিলাম আমি দু এক দিনের মধ্যে জয়েন হতে।
” সে না হয় হও প্রবলেম নেই,তবে বুঝে শুনে এসো এ প্রফেশনে,জানোই তো এ প্রফেশনগুলো তে কতো রিস্ক থাকে,মৃ’ত্যু কে বাজি রেখে প্রতিটা মূহুর্ত চলতে হয়।
” জ্বি স্যার আমি জানি,মৃ’ত্যুর স্বাদ তো একদিন না একদিন গ্রহন করতেই হবে, মৃ’ত্যু নিয়ে ভয় নেই আমার।
” তা পরিবারের সবাই কে কি জানিয়েছো এটা।
” না স্যার আমি এটা সিক্রেট রাখতে চাচ্ছি, আই হোপ আপনারাও সিক্রেট রাখবেন এটা।
” ঠিক আছে রাখবো সিক্রেট।
” আচ্ছা স্যার রাখি এখন,ভালো থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।
কথাটা বলে অহনা ফোন রেখে দেয়।
_________________
অহনা ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং টেবিলে বসে আছে আর অহনার মা খাবার সার্ভ করছে। অহনা টেবিল থেকে একটা আপেল উঠিয়ে সেটায় কামড় দিতে দিতে বলে,,
” আচ্ছা মা আসার পর থেকে মামা কে দেখলাম না সে কই?
” তোর মামার কি যেনো একটা কাজ এসেছে তাই চিটাগং গেছে এক সপ্তাহের জন্য। তা জামাই বাবাকে ফোন দিয়েছিলি?
অহনা জিহ্বায় কামড় দিয়ে বলে,,,
” আমার একটু ও খেয়াল নেই তাকে ফোন দেওয়ার দাঁড়াও আমি এখনি একটা ফোন করে আসছি।
কথাটা বলে ডাইনিং টেবিল ছেড়ে উঠে ঘরে চলে আসলো। ফোনটা নিয়ে শুভ্রর নাম্বারে কল লাগায়। ওপাশ থেকে ফোনটা রিসিভ হলে অহনা হ্যালো বলার আগেই ওপাশ থেকে এক মেয়েলি কন্ঠ ভেসে আসে। অহনা মেয়েটির আওয়াজ শুনে বলে,,
” হ্যালো আপনি কে বলছে?
” আমি শুভ্র স্যার এর পিএ আপনি পরে ফোন করুন স্যার মিটিংয়ে ব্যাস্ত।
” উনার ফোন আপনার কাছে কেনো?
” স্যার মিটিংয়ে ফোনটা তার কেবিনে রেখে চলে গেছে, স্যারের ফোনটা বাজছিলো তাই রিসিভ করলাম।
” ওহ আচ্ছা তার মিটিং শেষ হলে বলবেন অহনা ফোন করেছিলো, সে যেনো তাড়াতাড়ি কল ব্যাক করে।
” হ্যাঁ জানিয়ে দিবো।
অহনা ফোনটা রেখে দিয়ে বেরিয়ে আসে ঘর থেকে, ডাইনিং টেবিলে বসে ফ্যাকাসে মুখ নিয়ে। অহনার মা মেয়ের মুখ দেখে বলে,,
” কিরে হলো না কথা?
” না মা সে মিটিংয়ে ব্যাস্ত।
” ওহ পরে কথা বল নিস। এই নে আগে খাবার টা খেয়ে নে।
অহনা খাবার টা খেয়ে রুমে চলে আসলো, রাত এখন নয়টা বাজে,ফোনের দিকে এক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে অহনা,প্রহর গুনছে কখন শুভ্র ফোন দিবে,কিন্তু অহনার প্রহর আর শেষ হয় না,ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকতে তাকতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লে অহনা নিজেও বুঝতে পারে নি।
হঠাৎ দরজা ধাক্কানোর শব্দে অহনা ঘুম থেকে এক প্রকার লাফিয়ে উঠে,ফোনটা অন করে দেখে ২ঃ৪৫ বাজে। ওড়নার টা গলায় ভালো ভাবে জড়িয়ে নিয়ে দরজা খুলে দেখে শুভ্র দাঁড়িয়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে খুব ক্লান্ত। অহনা তড়িঘড়ি করে দরজা থেকে সরে দাঁড়ায় শুভ্র কে ভেতরে আসতে দেবার জন্য।
শুভ্র এলোমেলো পায়ে ঘরে ঢুকে বিছানায় বসে পড়ে। অহনা দরজা টা লাগিয়ে এসে শুভ্রর পাশে বসে। শুভ্র গলার টাই টা খুলতে নিলে অহনা শুভ্র কে থামিয়ে নিজে খুলে দিতে থাকে শুভর সামনে উঠে দাঁড়িয়ে। টাই টা খুলতে খুলতে অহনা বলে উঠে,,
” এতো রাতে এলে যে?
” শুনলাম তুমি ফোন দিয়েছিলে।
” হুমম দিয়েছিলাম তো, কিন্তু সেই মানুষটার সময় হয় নি আমাকে একটা ফোন দেওয়ার।
” সরি আসলে মিটিংটা অনেক ইম্পরট্যান্ট ছিলো,আর মিটিং শেষ হতে হতেই একটা বেজে গেছে,তোমার ফোন দেওয়ার কথা শুনেই তো ছুটে চলে আসলাম।
” সে না হয় বুঝলাম মুখ দেখে তো মনে হচ্ছে কিছু খাওয়া হয় নি। আপনি ফ্রেশ হন আমি খাবার নিয়ে আসতেছি।
কথাটা বলে অহনা চলে যায় রান্নাঘরে, ফ্রিজ থেকে খাবার বের করে সেটা গরম করে প্লেটে সাজিয়ে ঘরে নিয়ে আসে।
অহনা ঘরে ঢুকে দেখে শুভ্র এখনো ওয়াশরুমে তাই অহনা খাবারটা বিছানার উপর রেখে শুভ্রর জন্য অপেক্ষা করে।
শুভ্র ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে,অহনা শুভ্র কে বের হতে দেখে বলে,,,
” এবার খাবার টা খেয়ে নিন।
শুভ্র অহনার পাশে এসে বলে,,,,
” আমায় খাইয়ে দাও না, শরীর আর চলছে না।
” আচ্ছা আপনি হা করুন আমি খাইয়ে দিচ্ছি।
অহনা ভাত মাখিয়ে শুভ্রর মুখের সামনে তুলে ধরে,শুভ্র চুপচাপ খাবার খেতে থাকে।
খাওয়া শেষ হলে অহনা এঁটো প্লেট টা টি-টেবিলের উপর রেখে দেয়। শুভ খেয়েই বিছানায় এক প্রান্তে শুয়ে পড়ে,অহনা সেটা দেখে খানিক হেঁসে লাইট নিভিয়ে অপর পাশে শুয়ে পড়ে। অহনা শুতেই শুভ্র এক হাত দিয়ে অহনাকে জড়িয়ে ধরে গলায় মুখ গুঁজে দেয়,অহনা আলতো করে শুভ্রর কপালে চুমু খেয়ে ঘুমের দেশে পাড়ি দেয়।
#চলবে?