#তিক্ত_প্রতিশোধ
#পর্ব ৬
#Raiha_Zubair_Ripte
সায়েম তার সিক্রেট ডক্টরের কাছে এসেছে,ডক্টর সায়েম কে দেখেই বলে,,,
” মিস্টার সায়েম এই মেয়েটা হচ্ছে সেই মেয়ে যার মিসিং হওয়ার কমপ্লেন এসেছে আপনাদের কাছে।
সায়েম ভ্রু কুঁচকে বলে,,
” আর ইউ শিওর মিস শিলা।
” ইয়া আ’ম শিওর। আপনার আনা মেয়েটির ব্যাবহৃত ব্রাশ টার সাথে তার ম্যাচ হয়েছে। মেয়েটাকে পরপর চার-পাঁচ জন ধ’র্ষণ করেছে,মেয়েটির মৃ’ত্যু হয়েছে ২৪ ঘন্টা হয়েছে।
” আর কিছু জানা যায় নি?
” আর তেমন কিছু জানা যায় নি,তবে এই মেয়েটার মুখে ভারি জিনিস আই মিন পাথর বা এমন জাতীয় জিনিস দিয়ে মেয়েটার মুখ থেঁতলে দেওয়া হয়েছে।
” ওহ আচ্ছা।
আরো কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে সায়েম চলে আসে।
__________________
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে ওহনা ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বের হয়। সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে রান্নাঘরের দিকে যেতে নিলে দেখে বেসিনের উপর একটা চিঠি। অহনা চিঠিটা নিয়ে দেখে শুভ্রর সেই কাকির চিঠি তারা চলে গেছে।
অহনা আবার সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে শুভ্র কে ডেকে তুলে,,
” এই শুভ্র তোমার কাকি আর তার মেয়েরা তো চলে গেছে।
” কিহ! তাদের তো আজ যাবার কথা না দাঁড়াও আমি ফোন করে জিজ্ঞেস করি।
শুভ্র ফোনটা নিয়ে তাদের ফোন করে,কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে শুভ্র বলে,,
” অহনা কাকির ইমপোর্টেন্স কাজ আসায় কাকি চলে গেছে বিডি তেই আছে,চিন্তা করো না আবার আসবেন তিনি।
কথাটা বলে শুভ্র ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে।
অহনা শুভ্রর যাওয়ার দিকে চেয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে, অন্য মনস্ক হয়ে নিচে নামছিলো অহনা এমন সময় অভ্রর সাথে ধাক্কা খায়। অহনা পড়ে যেতে নিয়েও নিজেকে সামলিয়ে অভ্র কে সরি বলতে নিলে দেখে অভ্র তড়িঘড়ি করে কিছু একটা নিচ থেকে উঠিয়ে প্যান্টের পকেটে ঢুকালো। হয়তো ধাক্কা লাগার সময়ই সেটা পড়েছে। অহনা কিছু বলতে নিলে সেটা না শুনেই অভ্র সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে যায়।
অভ্রর এমন ব্যাবহারে অহনা আশ্চর্য হয়,কৌতুহল নিয়ে অভ্রর পেছন পেছন যায় অহনা। ততক্ষণে অভ্র তার রুমে ঢুকে পড়ে,অহনা দরজার কাছে আসে, অহনা ভেবেছিলো হয়তো দরজাটা ভেতর থেকে লাগিয়ে দিছে কিন্তু না দরজা টা হালকা ধাক্কা দিতেই দরজাটা একটু ফাঁক হয়ে যায়,অহনা মাথাটা এগিয়ে দেখে অভ্র পকেট থেকে একটা লাল কালারের ছোট বক্স বের করলো, অভ্র বক্সটা খুলে সেটা থেকে একটা চাবি বের করলো, চাবিটার দিকে তাকিয়ে অভ্র বাঁকা হেঁসে চাবিটায় চুমু খেয়ে বলে,,
” আমার সকল রহস্যের সঙ্গী।
কথাটা বলে অভ্র চাবিটা আবার বক্সে ভরে আমলারির ভেতরে রেখে দেয়। অহনা দরজাটা লাগিয়ে চলে আসে ড্রয়িং রুমে থাকা সোফায় বসে একা একাই বলতে থাকে
” আচ্ছা চাবিটা অভ্রর কিসের রহস্যের সঙ্গী, এই বাড়িতে যে কিছু একটা ঘটছে বা আছে সেটা আমি আন্দাজ করতে পেরেছি,কিছু তো রহস্য আছেই এই বাড়িতে,এটা আমায় খুঁজে বের করতেই হবে তার আগে আজ ও বাড়ি গিয়ে রিয়ার মৃত্যুর ব্যাপার টা নিয়ে এগোতে হবে।
কথাগুলো ভাবনার মাঝেই কেউ কলিং বেল বাজায়,অহনা উঠে দরজা খুলে দেখে এক বৃদ্ধ লোক দাঁড়িয়ে আছে।
অহনা লোকটিকে দেখে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে,,
” জ্বি বলুন কাকে চান।
বৃদ্ধ লোকটি তার পান খাওয়া লাল টকটকে দাঁত গুলো বের করে হেঁসে বলে,,
” আম্মা আমি আফনে গো লাইগা খাওন আনছি,শুভ্র বাবায় কইছে আনার লাইগা।
” ওহ আচ্ছা তো ভেতরে আসুন।
” না আম্মা আমার বউ বাড়িতে অপেক্ষা করতাছে,যাইতে হইবো,আমি আসি আফনেরা বরং খাইয়া নিয়েন,আমি দুপুরে আর রাতের খাওন একলগে নিয়া আহুম নি,
” ওহ আপনিই কি চাচা প্রতিদিন খাবার দিয়ে যান এভাবে।
” হ আম্মা,আমার বউ রান্ধে আর আমি নিয়া আহি খাবার,এই কাম কইরাই তো আমাগো সংসার চলে।
” প্রায় বাড়িতেই খাবার দেন নাকি?
” না খালি এই বাড়িতেই দেই,শুভ্র বাবায় যেই টেহা দেয় তাতে আমাগো সংসার চইলা ও মেলা টেহা বাঁইচা যায়। আচ্ছা আম্মা আমি তাইলে আহি।
” চাচা দাঁড়ান একটু।
” হ্যাঁ কও মা।
” আচ্ছা চাচা আপনি কতোদিন ধরে এই বাড়িতে খাবার দেন।
” এই তো বছর চারেক হইবো।
” আপনি তো তাহলে খুটিনাটি সব জানেন এ বাড়ির।
” সব না জানলেও কিছু কিছু জানি কিন্তু মা এসব তুমি জানতে যাইয়ো না ঘোর বিপদ ডাইক্কা আনবা।
” চাচা আমি সব জানতে চাই।
” না মা আমি এখন ও সময় হয় নি আস্তে আস্তে তুমি নিজেই জাইনা যাবা,আমি আহি।
কথাটা বলেই বৃদ্ধ চলে যায়। অহনা খাবারের ব্যাগ টা টি-টেবিলের উপর রেখে বাহিরে আসে। এ বাড়িতে ঢুকে আজই বের হলো অহনা,বাড়ির পেছনে জঙ্গলে ঘেরা,”আশ্চর্য এমন জায়গায় কেউ থাকে,সেদিন আসতে আসতে সন্ধ্যা হয়েছিলো দেখে অহনা তেমন ভাবে বুঝতে পারে নি যে বাড়ির পেছনেও এতো বড় জঙ্গল আছে। বাড়ির সামনে খুব একটা জঙ্গল না থাকলেও পেছন টা অনেক গভীর।
অহনা আর পেছন টায় না গিয়ে বাড়ির ভেতরে এসে পড়ে। ডাইনিং টেবিলে খাবার গুলো সাজিয়ে অহনা এক এক করে সবাই কে ডাকে,অভ্র শুভ্র আমজাদ হোসেন চলে আসে।
খাওয়া দাওয়ার একপর্যায়ে শুভ্র বলে,,
” অহনা রেডি হও তোমায় ও বাড়ি দিয়ে আসবো।
অহনা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানিয়ে খেতে খেতে অভ্রর দিকে চাইছে বারবার আর অহনার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে কিসের রহস্য হতে পারে?
খাওয়াদাওয়া শেষে অহনা রেডি হয়ে বাড়ি থেকে বের হতে নিলে আমজাদ হোসেন এগিয়ে এসে বলে,,
” সাবধানে যেয়ো তোমরা,আর শুভ্র তুই কি ও বাড়িতে থাকবি আজ?
” না কেনো?
” তাড়াতাড়ি ফিরিস তাহলে কথা আছে।
” ট্রাই করবো।
কথাটা বলেই শুভ্র অহনার হাত ধরে বেরিয়ে পড়ে।
____________________
প্রায় ঘন্টা খানেক হলো অহনা এসেছে,শুভ্র এ বাসায় দিয়েই তৎক্ষনাৎ চলে যায়,এ বাবার বাড়ি এসে থেকে ওখানে কি কি ঘটেছে তার সাথে সব খুলে বললো অহনা তার বাবাকে। অহনার বাবা সব শুনে বলে,,
” এসব নিয়ে ঘাটতে যেয়ো না অহনা,কিছু জিনিস আড়ালেই থাকতে দিয়ো সেটা আড়াল থেকে সামনে আনতে গেলে সব কিছু এলোমেলো হয়ে যেতে পারে।
অহনা অবাক হয় তার বাবার কথা শুনে তার বাবা নিশ্চয়ই জানে এই রহস্য সম্পর্কে তা-না হলে এইরকম টা বললো কেনো? অহনা তার বাবাকে আর জিজ্ঞেস না কে মনে মনে বলে,,
” সে যাই হয়ে যাক আমি তো এই রহস্য খুঁজে বের করবোই,এতে যা হবার হোক।
অহনা নিজ ঘরে এসে আলমারি থেকে স্টোর রুমের চাবি বের করে,চাবিটা নিয়ে স্টোর রুমের দরজা খুলে প্রত্যেক টা জিনিস ভালো করে খুঁজে, এ বাড়ি থেকে যাবার দিন অহনা চাবি টা সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলো আর আজ আসার সময় সেটা সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে।
অহনা প্রত্যেক টা কোনা খুঁজে, ভাঙা আলমারির টা খুলে খুঁজতে নিলে অহনার এক কানের দুল মাটিতে খসে পড়লে অহনা সেটা উঠানোর জন্য নিচে ঝুঁকি দিলে তার চোখ যায় ভাঙা আলমারির নিচে কিছু একটা ঝিলিক দিচ্ছে। অহনা হাত বাড়িয়ে সেটা আলমারির তলা থেকে বের করে দেখে একটা ভাঙা ফোন। ফোনটা এপাশ ওপাশ ঘুরিয়ে ফোনের মডেল দেখে অহনা বলে উঠে,,
” এটা তো রিয়ার ফোন, ফোনের এই অবস্থা কেনো, নিশ্চয়ই কিছু পাবো এই ফোনে।
কথাটা বলে ফোন অন করতে গেলে কিছুতেই অন হয় না,ডিসপ্লের একদম যাচ্ছে তাই অবস্থা। অহনা ফোনটা নিয়ে স্টোর রুম থেকে বেরিয়ে নিজের রুমে আসে।
রুমে এসে সায়েম কে ফোন দেয় অহনা ওপাশ থেকে সায়েম পোন রিসিভ করলে অহনা বলে উঠে,,
” হ্যালো সায়েম আমি রিয়ার ফোন পেয়েছি,তোমার সাথে দেখা করতে চাই,এটা রিয়ার খুনি কে ধরতে হয়তো হেল্প করবে,আর হ্যাঁ আমি এ বাসায় এসেছি তুমি বাসার পাশের ঐ ক্যাফে তে থেকো আর মাস্ক পড়ে আসবে যাতে কেউ না চিনল আমি বোরকা পড়ে বের হবো,এখন রাখি।
কথাটা বলেই অহনা ফোনটা রেখে দেয়। ভাঙা ফোনটার দিকে তাকিয়ে অহনা বলে,,,
” রহস্য উদ্ঘাটনের প্রথম সূত্র তুই।
#চলবে?