তিক্ত প্রতিশোধ পর্ব-০৫

0
729

#তিক্ত_প্রতিশোধ
#পর্ব৫
#Raiha_Zubair_Ripte

অন্ধকার আচ্ছন্ন এক কক্ষ, থেকে থেকে লাইট গুলো জ্বলছে আর নিভছে, তার সাথে যুক্ত হয়েছে কারো গলা ফাটানো চিৎকার,বাঁচার জন্য আকুল হয়ে মিনতি করছে কেউ। তার এই অসহায়তা দেখে একজন ক্ষনে ক্ষনে ঘর কাঁপাচ্ছে তার হাসিতে। সেই হাসি দেখে কক্ষে থাকা প্রতিটি মানুষ এক শুখনো ঢোক গিলে সবাই জানে তার এই হাসির মানে।

কালো হুডি পড়া লোকটি পাশ থেকে সদ্য আগুনে পুড়ানো রড এনে বেঁধে রাখা লোকটার গায়ে আবার চেপে ধরে। বেঁধে রাখা লোকটির গায়ে রডটা চেপে ধরতেই চিৎকার করে উঠে, পঞ্চাশ বছরের লোকটির এমন চিৎকার শুনে পাশে থাকা লোকগুলো ভয়ে গুটিয়ে যায়।

সবাই পঞ্চাশ বছরের লোকটির দিকে তাকিয়ে দেখে লোকটির দেহে জায়গায় জায়গায় রড চেপে ধরার কারনে শরীরের মাংস গুলো গর্ত হয়ে গেছে, পুরো শরীর রক্তে ভেজা।

এমন বিভৎস শরীর দেখে কক্ষের ভেতরে থাকা এক বাইশ বছরের ছেলের উল্টি চলে আসে। সেটা কালো হুডি পড়া লোকটি দেখে বলে,,

” আহ হাসান, আমার সাথে কাজ করছো প্রায় দু বছর হতে চললো,তবুও এসব এখনো দেখতে পারো না আশ্চর্য আমি! নেক্সট টাইম এমন করলে তোমার ও সেম পরিনতি হবে কথাটা মাথায় রেখো।

হাসান নামের লোকটি মাথা নত করে বলে,,,

” সরি বস আর এমন হবে না।

পাশ থেকে রনি নামের এক ছেলে বলে উঠে,,

” বস এখন আমরা এর কি করবো।

লোকটি গা ছাড়া ভাব নিয়ে বলে,,

” গরম ফুটন্ত পানিতে আস্ত সিদ্ধ করো,আমি নিজ চোখে দেখতে চাই গরম পানিতে কিভাবে ওর সেই দেহটা ছটফট করতে থাকে,আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করার ফল এটা।

রনি আর হাসান নামের লোকটি সহ আরো দুইজন লোক এসে লোকটিকে তুলতে নিলে লোকটি অনেক কষ্টে মুখ থেকে আওয়াজ বের করে বলে,,

” এবারের মতো ছেড়ে দিন আমায় প্লিজ আমি আর কখনো আপনার কথার অবাধ্য হবো না।

কালো হুডি পড়া লোকটি চেয়ারে আরাম করে বসে বলে,,

” টাইম ইস ওভার মিস্টার জামাল,আপনার সাহস দেখে আমি জাস্ট অবাক হয়েছিলাম,আপনাকে আমি বলেছিলাম আমার কথার অবাধ্য হলে তার পরিণাম ভয়ংকর হবে। আর তোমরা চেয়ে দেখছো কি, যা বললাম তাই করো।

লোকগুলো মিস্টার জামাল কে ধরে পাশে রাখা এ ফুটন্ত কুয়োর পানিতে ফেলে দেয়,সাথে সাথে লোকটির শরীর ঝলসে যায়,তার আর্তনাদে পুড়ো ঘর কাঁপিয়ে তোলে।

হুডি পড়া লোকটি চেয়ার ছেড়ে এগিয়ে এসে কুয়োর দিকে তাকিয়ে দেখে জামালের দেহটা পুরো সিদ্ধ হয়ে গেছে। লোকটি কুয়ো থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে রনি নামের লোকটিকে বলে,,

” রনি এর লা’শ টা পাশের রুমে শিকলে আটকানো হায়নাকে দিয়ে আসো,আজকে ওর খাবারের জন্য এটাই বেস্ট।

কথাটা বলে লোকটা চলে যায়।

রনি,হাসান আর দুই টা ছেলে জামালের লা’শ টা উঠানোর ব্যাবস্থা করে পাশের কক্ষে আটকানো হায়নার সামনে গিয়ে রেখে আসে। হায়নাটা মাংসের গন্ধ পেয়েই ছুটে এসে খেতে থাকে, সেটা হাসান দেখে বলে,,

” ইশ মানুষ কি আদৌও এমন হয়? আমি যদি পারতাম তাহলে এই জগৎ থেকে দূরে চলে যেতাম,টাকার লোভে পড়ে কখনোই এ দুনিয়াই আসতাম না। লোকটার কাজ কর্ম কি ভয়ংকর দেখলেই গায়ের লোমগুলো খাঁড়া হয়ে যায় ভয়ে। কবে না লোকটা আমাদের সাথে এমন করে ফলে।

রনি মুখের উপর এক আঙুল দিয়ে বলে,,

” হুসস আস্তে বলো হাসান এখানকার দেওয়ালের ও কান আছে,মনের কথা মনেই রেখে দাও,তুমি তো দু বছর ধরে এখানে আর আমি পাঁচ বছর যাবৎ এখানে। এ জগতে আসলে জীবনের মায়া সব ত্যাগ করে আসতে হয়,বস আর কিছু সহ্য করলেও যারা তার কথার অবাধ্য হয় বা তিনি কোনো কিছুর জন্য বারন করলে সেটা না শুনলে বস ভয়ংকর রূপ নেয়,একজন হিংস্র হায়নার সমান তার রাগ।

” সে না হয় বুঝলাম,আচ্ছা তিনি যতোবারই এখানে এসেছে ততোবারই এমন হুডি পড়ে,মুখ শরীর ঢেকে এসেছে কেনো।

” সেটা আমিও জানি না, সে যাই হোক চলো এখান থেকে যাওয়া যাক।

______________________

কাল রাতে রিসিপশনের অনুষ্ঠানের সময়টা অহনা ভয়ে শুভ্রের হাত এক মূহুর্তের জন্য ও ছাড়ে নি,অনুষ্ঠানের শেষের দিকে চার জন মহিলা এসেছিলো যারা শুভ্রর দূর সম্পর্কের কাকি আর তার তিন মেয়ে তারা এসে অহনার সাথে কিছুটা সময় কাটিয়েছে,, তাদের থেকে জানতে পেরেছিলো শুভ্রর মা নাকি কারো সাথে পরকীয়ায় জড়িয়েছিলো শুভ্রর বাবা বিদেশ থাকা কালিন ,সেখান থেকে একদিন শুভ্রর মা জানতে পারে তিনি প্রেগন্যান্ট , সেই কথাটা তিনি তার প্রেমিক কে বললে তিনি সেটা অস্বীকার করনে,সেই ট্রমা থেকে এটা করে।

এ কথা অহনা শুনে পাল্টা শুভ্রর কাকীকে জিজ্ঞেস করে,,

” তা আন্টি উনার সেই প্রেমিক কি শাস্তি পায় নি।

” সে তো পুলিশের হাতে শাস্তি পায় নি,কারা যেনো তাকে কুঁপিয়ে হ’ত্যা করে।

” সেটার তদন্ত হয় নি?

” তা তো জানি না মা, আমরা তো তখন এ দেশে ছিলাম না বাহিরে ছিলাম।

” আচ্ছা আন্টি আপনাদের আমি বিয়েতে তো দেখি নি।

” সে দেখবে কি করে আমরা তো আজই সিঙ্গাপুর থেকে এলাম,এয়ারপোর্ট থেকে সোজা এখানে চলে এসেছও,আমার শুভ্রর বউ টা কে দেখবো বলে।

” ওহ এ বুঝি আপনার দুই মেয়ে।

” হ্যাঁ এটা হচ্ছে আমার বড় মেয়ে সাইফা আর ও হচ্ছে সইমা।

অহনা দুই মেয়েকে পর্যবেক্ষণ করে দেখে,,দুটো মেয়েরই গায়ের রং ধবধবে ফর্সা, দেখতে কোনো পরীর চাইতে কম না,বিদেশিনী ও বলা যেতে পারে বটে। অহনা মেয়ে দুটোর সাথে কথা বললো,মেয়ে দুটির ব্যাবহারে অহনা খানিক অবাক হয়। অহনা ভেবেছিলো হয়তো মেয়ে দুটি অহংকারী বা দাপটের সাথে কথা বলবে কিন্তু না মেয়ে দুটি একদম নরমাল বিনয়ের সাথে কথা বলেছে,কথা বলার স্টাইল কোনো ছেলেকে ঘায়েল করতে যথেষ্ট।

রাতে আর অহনা তাদের যেতে দেয় নি, এই ফাঁকা বাড়িতে অহনা এমন তিনজন মেয়ে সঙ্গী পেয়ে তাদের বলে কয়েকদিন এখানে তাদের থাকতে হবে। তারা প্রথমে রাজি না হলেও পরে অহনার জোরাজুরিতে রাজি হয়।

শুভ্র তাদের থাকার জন্য সেই বন্ধ দরজাটি খুলে দেয়,অহনা সে ঘরে ঢুকতে নিলে শুভ্র টেনে নিয়ে যায় দরকারি কাজ আছে বলে।

অহনা আর শুভ্র নিজেদের ঘরে আসলে বলে,,

” কি ব্যাপার কি দরকারি কাজ তোমার।

শুভ্র ঘরের দরজাটা আটকিয়ে নেশালো চোখে ধীর পায়ে অহনার দিকে আগাতে থাকে,শুভ্রর আগানো দেখে অহনা পিছোতে নিলে খাটের উপর পড়ে যায়। শুভ্র এগিয়ে অহনার সামনে দাঁড়িয়ে অহনার উপর ঝুঁকি দেয় দু হাত দু দিকে দিয়ে। অহনা শুভ্রর সেই চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,,,

” কি দরকারি কাজ বললে না।

” আমি বললে কি শুনবে।

” শুনবো না কেনো বলে তো দেখো।

” আমি তোমাতে বিলিন হতে চাই, আই মিন…

” তোমার কি আজই দরকার।

” তুমি রাজি না হলে অবশ্যই না।

” কে বললো রাজি না।

” তারমানে আমি তোমার সাথে…

” হুমম, কথাটা বলতেই শুভ্র নিজের সমস্ত শরীরের ভর ছেড়ে দেয় অহনার উপর, অহনার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়, অহনার ও রেসপন্স পেয়ে শুভ্র এক হাতে অহনার শাড়ির কুঁচি গুলো টেনে খুলে ফেলে, ঠোঁট থেকে মুখ সরিয়ে এবার গলায় মুখ ডুবিয়ে দেয়,ভেসে যায় দুজনে এক অন্য জগতে।

ধিরে ধিরে রাত গভীর হয় কিন্তু শুভ্রর পাগলামি থামে না,অহনা আর না পেরে এবার বলে উঠে,,

” শুভ্র হয়েছে তো এবার ছাড়ো না,আমি আর পারছি না।

কিন্তু অহনার কথা মনে হয় শুভ্রর কানে যায় নি,সে তার মতো করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে, শুভ্র কে দেখে অহনার এখন একজন সাইকো ছাড়া কিছুই লাগছে না, যে যার চাহিদা পূরন করতে ব্যাস্ত। অহনা ও চুপ করে থাকে।

প্রায় শেষ রাতের আগ দিয়ে শুভ্র অহনা কে ছেড়ে দিয়ে পাশে গিয়ে শুয়ে পড়ে শুভ্র, অহনার সারা শরীর ব্যাথা, কোনোরকম ব্যাথা চেপে ঘুমের উদ্দেশ্যে পারি দেয়,পেছন থেকে শুভ্র অহনাকে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে। দু’জনে চলে যায় ঘুমের দেশে।

রাত সাড়ে চারটার দিকে অহনার খুব পানি পিপাসা পায়। ব্যাথা শরীর নিয়ে পাশে থাকা গ্লাসটা খেয়াল করতেই দেখে এক ফোটাও পানি নেই,বিছানা ছেড়ে উঠে শাড়িটা গায়ে জড়িয়ে গ্লাস টা হাতে নিয়ে আসে। সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে সিঁড়ির সাইডে খানিক টা দূরে ছোট্ট একটি রান্না ঘর আছে সেখানে থাকা বেসিন থেকে অহনা গ্লাস টা ভরে পানি খেতে নিলে হঠাৎ কিছু হাসির আওয়াজ আসে। অহনা ভয় পেয়ে যায়। হাসিটা কোথা থেকে আসছে সেটার শব্দ অনুসরণ করে যেতে নিলে দেখে সেটা ডাইনিং টেবিলের ওখান থেকে ভেসে আসছে।

অহনা কাঁপা কাঁপা পায়ে ডাইনিং টেবিলের সামনে যেতেই দেখতে পারে আবছা আলোয় টেবিলটাতে ছয়জন লোক বসে আছে সবারই পুড়ো শরীর ঢাকা তাদের মুখ দেখা যাচ্ছে না, ঘটনা টা দেখা মাত্রই অহনা দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে শুভ্র কে ভয়ার্তক কন্ঠে ডেকে বলে,,

” এই শুভ্র উঠো না, এই শুভ্র,

শুভ্র অহনার এমন ভয়ার্তক কন্ঠ শুনে ঘুম থেকে তড়িঘড়ি করে উঠে বলে,,

” কি হয়েছে অহনা।

” শুভ্র দেখো ঐ ডাইনিং টেবিলের ওখানে কারা, পুরো শরীর ঢাকা ছিলো,আমার খুব ভয় লাগছে এ বাড়ি তে থাকতে।

কথটা বলেই অহনা ভয়ে কাঁপতে থাকে। অহনার এমন অবস্থা দেখে শুভ্র বলে উঠে,,

” এটা কি বলছো অহনা এটা কখনোই পসিবল না আমার অনুমতি ছাড়া একটা পাখি ও এ বাড়ি প্রবেশ করতে পারবে না আর সেখানে কি-না মানুষ,এটা নিশ্চয়ই তোমার ভ্রম।

” এটা কখনোই আমার ভ্রম হতে পারে না শুভ্র তোমার বিশ্বাস না হলে তুমি নিজে গিয়ে দেখে আসো।

শুভ্র বিছানা ছেড়ে উঠে বের হতে নিলে অহনা শুভ্রর হাত ধরে। শুভ্র ইশারায় বোঝায়, কি?

অহনা শুভ্রর দিকে চেয়ে বলে,,

” আমিও তোমার সাথে যাবো প্লিজ একা রেখে যেয়ো না।

” আচ্ছা চলো।

কথাটা বলে অহনার হাত ধরে ডাইনিং টেবিলের সামনে গিয়ে দেখে পুরো ডাইনিং টেবিল টা ফাঁকা, কেউ নেই। শুভ্র এগিয়ে গিয়ে চারপাশ টা ভালো করে দেখে বলে,,

” এই যে দেখলে কেউ নেই হয়তো তখনকার ভয়টার জন্য এসব কল্পনা করে ফেলছিলা।

অহনা এগিয়ে এসে বলে,,,

” আমি সত্যি দেখেছি এই চেয়ার গুলোতে বসে ছিলো কয়েকজন।

শুভ্র মেন গেটের দিকে হাত উঁচু করে বলে,,

” ঐ দেখো মেন গেট ভেতর থেকে লাগানো। তারা যদি এসেও থাকতো তাহলে বাহিরে যেতে হলে তো তাদের দরজা খুলতে হতো তাহলে এটা লাগানো কেনো।

অহনা দরজার দিকে তাকিয়ে বলে,,

” হ্যাঁ সেটা তো ঠিক।

” চলো এবার ঘরে যাওয়া যাক।

কথাটা বলেই শুভ্র অহনাকে নিয়ে ঘরে চলে যায়,ডাইনিং টেবিলের নিচ থেকে ছয় জোড়া চোখ তাদের যাওয়ার পানে চেয়ে রয়।

#চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে