#তিক্ত_প্রতিশোধ
#পর্ব৩
#Raiha_Zubair_Ripte
অহনা দরজার বাহিরে পা রাখতে গেলে শুভ্র এসে ধরে ফেলে অহনার হাত। অহনা কে ভেতরে এনে বলে,,,
” অহনা তুমি পাগলের মতো বিহেভিয়ার করছো কেনো,বাস্তবতা মেনে নাও রিয়া আর নেই,কাল সকালে অফিসার রিপোর্ট নিয়ে আসবে,তখন জানা যাবে সব সেই সময় পর্যন্ত শান্ত থাকো।
অহনা বোকার মতো চেয়ে থাকে শুভ্রর দিকে। শুভ্র অহনার মামিকে চোখের ইশারায় জানায় সে বাকিটা সামলে নিবে।
অহনার মামি ভরসা পেয়ে রুমে চলে যায়। শুভ্র অহনা কে নিয়ে ঘরে যায়। ঘরে এসে অহনার আলমারি থেকে একটা পাতলা শাড়ি বের করে অহনার হাতে দিয়ে বলে,,
” এটা নিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো,চুপচাপ ঘুমাবে দিনের আলো ফুটতে বেশি সময় নেই।
অহনাকে নড়তে না দেখে শুভ্র দীর্ঘ শ্বাস ফেলে ঘর থেকে বের হয়ে অহনার মামি কে ডেকে আনে অহনার কাপড় বদলিয়ে দেওয়ার জন্য।
অহনার মামি এসে অহনার জামাকাপড় পাল্টিয়ে চলে যেতে নিলে শুভ্র বলে উঠে,,
” মামি বলছিলাম কি আপনি একটু কষ্ট করে স্যুপ বানিয়ে দিতে পারবেন,আসলে অহনা তো অসুস্থ তার উপর ঘুমের ইনজেকশন দিয়েছিলাম স্যুপ টা খেলে একটু বেটার ফিল করবে।
অহনার মামি আচ্ছা বলে চলে যায় রান্না ঘরে। শুভ্র ঘরে ঢুকে দেখে অহনা বিছানার এক প্রান্তে বসে আছে কিছু একটা ভাবছে।
শুভ্র এসে অহনার পাশে বসে বলে,,
” এভাবে বসে আছো কেনো,কিছু ভাবছো নাকি।
অহনা কিছু না বলে বিছানা ছেড়ে উঠে ল্যাপটপে কিছু একটা খোঁজে কাঙ্ক্ষিত জিনিসটা খুঁজে না পেয়ে হতাশ হয়।
এর মধ্যে অহনার মামি স্যুপ নিয়ে চলে আসে,শুভ্র এগিয়ে স্যুপের বাটিটা নিয়ে দরজাটা আটকিয়ে দেয়। স্যুপ টা এনে পকেট থেকে কিছু একটা বের করে স্যুপের সাথে মিশিয়ে দেয়। স্যুপের বাটিটা অহনার সামনে নিয়ে রাখে। অহনা স্যুপ টা দেখে শুভ্রর পানে চায়। শুভ্র স্যুপ টা খেতে বললে অহনা না করে সে খাবে না,শুভ্র এক প্রকার জোর করেই খাইয়ে দেয় স্যুপটা। স্যুপটা খাওয়ার পর থেকেই অহনার প্রচুর ঘুম পায়,এলোমেলো পায়ে হেঁটে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে।
অহনার দিকে তাকিয়ে শুভ্র বলে উঠে,,
” সরি অহনা এ ছাড়া আর কোনো উপায় ছিলো না।
কথাটা বলে লাইট নিভিয়ে অহনার পাশে গিয়ে শুয়ে পড়ে শুভ্র।
___________________
এক লোক তড়িঘড়ি করে কাউকে ফোন দেয় সতর্কতার সাথে বলে,,
“তোকে বলেছিলাম মেয়েটাকে মে’রে ফেলিস না,মেয়েটাকে উঠিয়ে পাচার করে দে অন্যসব মেয়ের সাথে তা-না করে মেয়েটাকে মে’রে ফেললি,
ফোনের ওপাশ থেকে এক লোক বলে উঠলো,,
” ওকে মে’রে ফেলবো না তো কি করবো,ও আমাদের মুখ দেখে ফেলছিলো আর কথোপকথন গুলোও শুনে ফেলছিলো,ওকে মে’রে ফেলা ছাড়া আর কোনো ওয়ে ছিলো না,আর আমরা বিয়ে বাড়িতে গিয়েছিলাম ই মেয়ে উঠাতে সেখানে একজন ম’রলে আমাদের সমস্যা কি?আমাদের তো আর কেউ সন্দেহ করবে না।
” তোর এই ভুলের জন্য ওকে কতো সাফার করতে হচ্ছে তুই জানিস।
লোকটি গা ছাড়া ভাব নিয়ে বলে,,
” আই ডোন্ট কেয়ার,এমন কাজে দু একটা এমন ভুল হবেই এতে এতো রিয়াক্ট করার কি আছে,এমন তো না যে আমরা এটা প্রথম করলাম এর আগেও তো এর চেয়েও ভয়ানক খু’ন করেছি আমরা।
” তুই শুধু একবার ওর সামনে আয় দেখ তোকে ও কি করে,ও বারবার করে বলে দিয়েছিলো কোনো ভুল যেনো না হয় আর তুই সেই ভুলই করে ফেলছিস।
” উফ রাখো তো ফোন এতো ভয় পাও কেনো ওকে,ভয় পাওয়ার কিছু নেই সব ক্ষমতা শুধু ওর একার নেই আমাদের ও আছে।
” এবার ও তোকে কিছু বললে আমি আর বাঁচাতে আসবো না বলে রাখলাম।
কথাটা বলেই ফোন রেখে দেয়।
______________________
সকাল নয়টা,,
সায়েম পোস্টমর্টেমের রিপোর্ট গুলো দেখিয়ে অহনাদের বাড়ির প্রত্যেক সদস্যদের সামনে বলে দেয় এটা একটি সুই’সাইড কেস। এটাও বলে উঠে,,
” এই রিপোর্টে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে রিয়া কোনো কারন নিয়ে ডিপ্রেশন থেকে নিজের শরীরে আঘাত করে,এবং ওড়না বেঁধে গলায় ফাঁ’শ নেয়।
কথাটা সবার কর্ণকুহর হতেই অবাক চাহনি নিয়ে তাকায় অফিসার সায়েমের দিকে, শুভ্র এগিয়ে এসে বলে,,
” আর ইউ ম্যাড অফিসার,হাউ ইস পসিবল! আমরা দেখেছি ওর শরীরের অবস্থা ওটা কোনো মতে মনে হচ্ছিলো না নিজের শরীরে নিজের করা আঘাত।
” তো মিস্টার শুভ্র আমি কি তাহলে ভুল বলছি,ফরেনসিক রিপোর্ট কি তাহলে ভুল!
অহনা এগিয়ে এসে বলে,,,
” অফিসার আপনি যেটা বলছেন এটা কি আদৌও বিশ্বাসযোগ্য! এতো গুলো মানুষের ধারনা কি তাহলে ভুল?
অফিসার সায়েম একবার অহনা কে পর্যবেক্ষণ করে বলে,,
” বাহ! আপনি দেখি সুস্থ হয়ে গেছেন,কাল তো পাগলামি করে কান্না কাটি করে পুড়ো বাড়ি মাথায় করে নিয়েছিলেন,তা আজ হঠাৎ শান্ত যে।
অহনা ভ্রু কুঁচকে বলে,,
” হোয়াট ডু ইউ মিন?
” না আমি কিছুই মিন করতে চাচ্ছি না আপনারা বিকেলে গিয়ে বা দুপুরে গিয়ে লা’শ নিয়ে আসতে পারেন।
” তা আপনি কি তাহলে এই রিপোর্টের ভিত্তিতেই তদন্ত করা ছেড়ে দিবেন।
” আমাদের হাতে আর কিছু নেই,যেখানে ফরেনসিক রিপোর্ট বলছে এটা আত্মহ’ত্যা সেখানে আমরা আর কি করতে পারি।
কথাটা বলে সায়েম চলে যেতে নিলে বাহিরে দরজা দিয়া কেউ ভেতরে প্রবেশ করলে তার দিকে একবার চেয়ে বাড়ির সদস্যদের উদ্দেশ্য করে বলে
” ইনি কে?
শুভ্র ছেলেটির দিকে তাকিয়ে বলে,,
” এ আমার ভাই।
” তো ওকে তো কাল দেখলাম না এই বিয়ে বাড়িতে, ও কি ছিলো না না-কি?
” মিস্টার অফিসার আমি এ বাড়িতেই ছিলাম,আপনি হয়তো খেয়াল করেন নি।
” ওহ আচ্ছা বলে সায়েম বেড়িয়ে যায় বাড়ি থেকে।
অহনা সায়েমের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হেঁসে উঠে।
সায়েম বাড়ির বাহিরে এসে এক কনস্টেবল বলে” আসলাম এ বাড়ির প্রত্যেকটা মানুষের দিকে নজর রাখবে,কে কোথায় গেলো, কি করলো এ টু জেট সব।
কনস্টেবল মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানায়।
শুভ্র অহনাকে কিছু ভাবতে দেখে অহনার কাছে এসে বলে,,
” অহনা আমার মনে হয় পুলিশ অফিসার সত্যি কথাটা বলে নি,আমরা অন্য পুলিশ অফিসার কে দিয়ে তদন্ত করাতে পারি।
অহনা শুভ্রর কথায় সায় জানিয়ে বলে,,
” হ্যাঁ আমার ও সেটাই মনে হচ্ছে।
অহনা আর কথা না বাড়িয়ে স্টোর রুমটার কাছে যায়। স্টোর রুম টা খুতিয়ে খুতিয়ে দেখে যদি কোনো সূত্র পায়,কিন্তু না কোনো কিছু পেলো না। রুমটা তালা মেরে চাবিটা নিজের সাথে করে রেখে দেয়।
শুভ্র উপর মহলের সাথে কথা বলতে নিলে তড়িঘড়ি করে বাসার ভেতর ঢুকে পড়ে রিয়ার বাবা মোখলেস খান। মোখলেস খানকে দেখে শুভ্র সব বলে অফিসার কি কি বলেছে। শুভ্র এটাও বলে সে এখন উপর মহলের সাথে কথা বলবে যাতে কেসটা তদন্ত করে দেখা হয়। কথাটা মোখলেস খানের কর্ণকুহর হতেই সে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলে,,
” এই না না এটার আর দরকার নেই,তারা তো বলছে এটা আত্মহ’ত্যা আর রিপোর্ট তো ভুল আসবে না,এটা নিয়ে আর ঘাঁটার দরকার নেই। আমি দুপুরেই রিয়ার লা’শ আনতে যাবো।
কথাটা শুনে শুভ্র ভ্রু কুঁচকে বলে,,
” আঙ্কেল আপনি এটা কি বলছেন,আপনি চান না রিয়ার কেসটা সল্ভ হোক।
” রিপোর্টে তো জানানোই হয়েছে রিয়া সুই’সাইড করেছে তাহলে এটার আর কি তদন্ত হবে। তোমরা এটা নিয়ে জাল ঘোলা করো না,আমার মেয়ে আমাকেই বুঝতে দাও।
কথাটা বলেই মোখলেস খান ঝড়ের বেগে বেরিয়ে যায় বাড়ি থেকে। বাহিরে এসে গাড়িতে উঠেই একটা নাম্বারে ফোন দিয়ে বলে,,
” আমি আপনাদের কথা মতো কাজ করেছি প্লিজ আপনি আমার স্ত্রীর কিছু করবেন না,আমি তাদের কে বলে দিছি তারা এই বিষয় নিয়ে আর ঘাঁটবে না,এখন তো আমার স্ত্রী কে ছেড়ে দিন।
ওপাশ থেকে ভেসে আসে,,
” বাসায় গিয়ে দেখুন আপনার স্ত্রী গেটের সামনে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে।
কথাটা শুনেই তাড়াতাড়ি করে গাড়ি স্টার্ট দিয় মোখলেস খান। আজ সকালেই হসপিটালে তার।স্ত্রী কে রেখে সকালে নাস্তা করতে যায়,কাল থেকে পেটে কিচ্ছুটি পড়ে নি,নাস্তা শেষে কেবিনে আসলেই দেখতে পারে তার স্ত্রী কেবিনে নেই,সেটা দেখে নার্স ডক্টর ডাকতে গেলে তখনই একটা কল আসে তার ফোনে। কলটা রিসিভ করলেই ওপাশ থেকে বলে উঠে,,
” হ্যালো মিস্টার মোখলেস আপনার স্ত্রী আমাদের কাছে বন্দী, মেয়েকে তো হারিয়েছেন এবার কি স্ত্রী কেও হারাতে চান।
” কে বলছেন আপনি? আর আমার স্ত্রী আপনাদের কাছে বন্দী মানে কি বলছেন।
” হ্যাঁ আপনার স্ত্রী আমাদের কাছে বন্দী, আপনি জাস্ট একটা কাজ করলেই আপনার স্ত্রী কে আমরা ছেড়ে দিবো।
” কি কাজ করার কথা বলছে?
” বেশি কিছু না আপনি শুধু আপনার মেয়ের কেসটা ক্লোজ করে দিবেন,আপনি বলবেন আপনি আর এটার তদন্ত করতে চান না,আর কাউকেও দিবেন না করতে। যদি না মানেন বা না করেন তাহলে আপনার স্ত্রী সোজা উপরে আপনার মেয়ের কাছে চলে যাবে।
” এই না না আমি মেয়েটাকে হারিয়েছি আমার স্ত্রী কে হারাতে চাই না প্লিজ আপনারা কিছু করবেন না আমি আপনাদের কথা মতো কাজ করবো।
মোখলেস খান বাসার সামনে আসতেই দেখে গেটের সামনে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে তার স্ত্রী, স্ত্রী কে ধরে বাড়ির ভেতরে নিয়ে যায় মোখলেস খান।
_________________
শুভ্রর বাবা আমজাদ হোসেন শুভ্রর কাছে এসে বলে,,
” শুভ্র বাপ এবার তো বাসায় চল,উনারা তো বললো এটা আত্মহ’ত্যা আর তোরা যদি ইনভেস্টিগেশন করতে চাস তাহলে ও বাড়ি গিয়ে না হয় করিস,বাড়ির বউ বাড়ি নিয়ে যেতে চাই।
পাশ থেকে শুভ্রর ভাই অভ্র বলে উঠে,,
” ভাই আমাদের এখন বাড়ি ফেরা উচিত। আই হোপ কি বোঝাতে চাইছি তুমি বুঝছো।
শুভ্র মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানিয়ে অহনার কাছে যায়। আমজাদ হোসেন যায় অহনার বাবা মোশারফ হোসেনের কাছে।
মোশারফ হোসেন স্ত্রীর পাশে বসে আছেন,কাল শরীর খারাপের রেশ টা এখনো আছে। আমজাদ হোসেন ঘরের দরজায় কড়া নাড়ে। মোশারফ হোসেন কে বললে আমজাদ হোসেন জবাব দিয়ে বলেন আমি বেয়াই,মোশারফ হোসেন ভেতরে আসতে বললে আমজাদ হোসাইন ভেতরে ঢুকে বলেন,,
” বেয়াই ছেলের বউকে তো এবার শশুর বাড়ি নিয়ে যাওয়া উচিত কি বলেন আপনি।
” হ্যাঁ তা তো পাঠাতেই হবে।
” তো আমি আজই নিয়ে যেতে চাচ্ছি।
” যা ভালো মনে করেন।
” হুম তাহলে দুপুরেই রওনা হবো আমরা।
” ঠিক আছে।
আরো টুকটাক কথাবার্তা বলে আমজাদ হোসেন বেরিয়ে আসে ঘর থেকে।
শুভ্র ঘরে এসে দেখে অহনা আবার ও কিছু ভাবছে যা দেখে শুভ্র ভ্রু কুঁচকে ফেলো,অহনার সামনে দাঁড়িয়ে বলে,,
” আমরা আজ বাড়ি ফিরছি দুপুরে রেডি হয়ে থেকো।
অহনা একবার শুভ্রর দিকে চেয়ে বলে,,
” আমি আবার কবে আসতে পারবো এ বাসায়।
” এটা কেমন কথা,তোমার যখন মন চাইবে তখনই আসতে পারবে।
দুপুরে,,,
দুপুরে খাওয়া দাওয়া শেষে অহনা, শুভ্র,আমজাদ হোসেন,আর শুভ্রর ভাই অভ্র ওরা বেরিয়ে পরে ও বাড়ির জন্য অহনার বাবার বাড়ি থেকে কেউ যায় নি সাথে। প্রায় এক ঘন্টা জার্নির শেষে অহনারা এসে পৌঁছোয় শুভ্রদের বাড়ি। অহনা গাড়ি থেকে বেড়িয়ে দেখে বিরাট বড় একটা দু তালার দালান,আমজাদ হোসেন চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে ঘরের লাইট অন করে দেয়। শুভ্র অহনার হাত ধরে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে।
কিন্তু আশ্চর্য হবার বিষয় এই যে এ বাড়ি বাহিরে থেকে যতোটা বিশাল বড় দেখা গিয়েছিলো কিন্তু ভেতরে ততোটাও বড় না,আর তার চেয়ে আরো বেশি অবাক হয় অহনা এ বাড়িতে তারা চারজন ছাড়া আর একজন মানুষ ও নেই। পুরো শুনশান বাড়ির ভেতরটা।
#চলবে?