তিক্ত প্রতিশোধ পর্ব-০২

0
931

#তিক্ত_প্রতিশোধ
#পর্ব২
#Raiha_Zubair_Ripte

শুভ্র, মোশারফ হোসেন, সুমন রিয়ার লা’শ টা নিয়ে পুলিশদের সাথে আসে। সায়েম নামের অফিসার টা দুজন কনস্টেবল দিয়ে লা’শ টা ফরেনসিক ল্যাবে পাঠায়। সায়েম হাতে থাকা ফোনটা দিয়ে ডাক্তার মামুনকে ফোন দেয়,মামুন ফোন ধরলে সায়েম বলে,,

” হ্যালো মামুন একটা লা’শ পাঠানো হয়েছে সেটার পোস্টমর্টেম করে ইমিডিয়েটলি রিপোর্ট গুলো পাঠান আর সাথে প্রতিবেদনে সব ঘটনা লেখা আছে।

” ওকে স্যার।

কথাগুলো বলে সায়েম ফোন রেখে দেয়। শুভ্র কে উদ্দেশ্য করে বলে,,

” মিস্টার শুভ্র আপনারা এখন নিশ্চিন্তে বাসায় যান কাল সকালে আমরা রিপোর্ট গুলো হাতে পেলে আপনাদের জানাবো,আর হ্যাঁ আপনার বিয়ের লোকের তালিকা টা আমায় দিবেন,আই মিন কাদের কাদের ইনভাইট করেছেন সাথে ঠিকানা সহ।

শুভ্র মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়,যাওয়ার আগ দিয়ে মোশারফ হোসেন বলে,,

” বলছিলাম কি রিয়ার বডি টা আমরা কবে পেতে পারি,বুঝতেই তো পারছেন ওর বাবা মায়ের কি অবস্থা, এক মাত্র মেয়ের এমন করুন অবস্থায় তারা অনেক টা ভেঙে পড়েছে,একটু চেষ্টা করবেন খুব শীগ্রই যেনো আসল ঘটনা উদঘাটন হয়।

” অবশ্যই মিস্টার মোশারফ আমরা সেই চেষ্টাই করবো।

শুভ্র, মোশারফ, সুমন চলে আসে থানা থেকে।

ফরেনসিক ল্যাবে মামুন রিয়ার বডিটা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে,বডির শরিরের তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণ করে,একজন জীবিত মানুষের শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা সাধারণত ৯৮.৬ ডিগ্রী ফারেনহাইট এর মতো এবং মৃত্যুর পর তা ধীরে ধীরে কমতে থাকে (সাধারণত প্রতি ঘণ্টায় ১-২ ডিগ্রী) যতক্ষণ পর্যন্ত কক্ষের তাপমাত্রার সমান না হয়ে যায়।মামুন বুঝে ফেলে মৃত ব্যাক্তির মৃত্যু পাঁচ ঘন্টা আগে হয়েছে।

রিয়ার নখ টা ভালো করে দেখতেই চোখের সামনে আসে রিয়ার বাম হাতের অনামিকা আঙুলে কিছুটা শরীরের চামড়া জাতীয় কিছু লেগে আছে, হয়তো ধস্তাধস্তির সময় ওপর ব্যাক্তির শরীর থেকে উঠে এসেছে। চামড়ার অংশ টুকো উঠিয়ে সেটা রিয়ার বডির সাথে ম্যাচ করে দেখে সেটা রিয়ার বডির সাথে ম্যাচ করছে না। তারমানে তার ধারনাই ঠিক। এবার রিয়ার পুরো বডি টাকে খুতিয়ে খুতিয়ে দেখতেই চোখ যায় ঘাড়ে, ছোট একটি জায়গা লাল হয়ে আছে যা খালি চোখে দেখে বোঝার উপায় নেই,তাই মামুন পাশ থেকে ম্যাগনিফাইং গ্লাস টা নিয়ে সেই ক্ষতর উপর রেখে দেখলো, মৃ’ত দেহের ঘাড়ে কোনো সুই জাতীয় কিছু পুশ করা হয়েছে,তার মানে বডি টাকে মে’রে ফেলার আগে চেতনানাশক ইনজেকশন ব্যাবহার করা হয়েছে।

বডি টা আবার পরীক্ষা নিরীক্ষা করে মামুন আরো কিছু তথ্য জানতে পারে যা খু’নিকে খোঁজার জন্য অধিক গুরত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবে।

পাশ থেকে ফোনটা নিয়ে ইন্সপেক্টর সায়েম কে ফোন করতে নিলে মামুনের একটি ম্যাসেজ আসে। ম্যাসেজ ফাইল অন করতেই দেখে একটা ভিডিও, ভিডিওটা অপেন করতেই দেখতে পায় ভিডিও টাতে তার স্ত্রী আর তিন বছরের বাচ্চাকে দেখানো হচ্ছে যাদের দিকে কেউ বন্দুক তাক করে আছে। ভিডিও টা দেখে মামুন তড়তড় করে ঘামতে শুরু করে,এর মধ্যে একটা নাম্বার থেকে ফোন আসে তার ফোনে,তার চেনা নাম্বার নয়,অর্থাৎ অপরিচিত নাম্বার থেকে কল এসেছে। ফোনটা কাঁপা কাঁপা হাতে রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ভেসে আসে,,

” ডক্টর আপনি যা জেনেছেন,দেখেছেন সব ভুলে যান,এমন রিপোর্টে বানান যেখানে স্পষ্ট বুঝা যাবে এটা আত্ম’হত্যা।

” না আমি এটা করতে পারবো না,এটা অন্যায়।

লোকটা হেঁসে বলে,,

” এই সামান্য অন্যায়ে তো আপনার কোনো ক্ষতি হবে না। আপনি আমার কথা না শুনলে বাড়ি ফিরে বউ বাচ্চা কাউকেই জীবিত দেখতে পারবেন না। তখন ফরেনসিক ল্যাবে এই লাশের পাশাপাশি আপনার বউ বাচ্চার ও পোস্টমর্টেম করতে হবে।

কথাটা বলেই আগন্তুক লোকটি গুলি ছুঁড়ে।

গুলির শব্দ শুনে ডক্টর মামুন চিল্লিয়ে বলে উঠে,,

” এই না প্লিজ ওদের কিছু করবেন না,আমি আপনার কথা মতোই কাজ করবো।

” গুড এবার সব প্রমান গুলো মুছে রিপোর্ট আমার বলা মতো বানিয়ে ইন্সপেক্টরের কাছে জমা দিন,এমন ভাবে বলবেন আর রিপোর্টে দেখাবেন যাতে তাদের এটা আত্ম’হত্যা বলা ছাড়া আর কোনো ওয়ে না থাকে,আপনি যদি চালাকি করার চেষ্টা করেন তাহলে আপনার স্ত্রী বাচ্চা শেষ তাই বি কেয়ার ফুল।

” আচ্ছা আমি আপনার কথা মতোই কাজ করবো প্লিজ ওদের ছেড়ে দিন।

আগন্তুক লোকটি কিছু না বলেই ফোন রেখে দেয়।

ডাক্তার মামুন এমন রিপোর্ট বানায় যেখানে ক্লিয়ার ভাবে বোঝায় যে এটা সুই’সাইড। রিপোর্ট টার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে সেটা নিয়ে অফিসার সায়েম কাছে যায়।

সায়েম ডাক্তারের বানানো রিপোর্ট টা দেখে অবিশ্বাস চাহনি নিয়ে ডাক্তারের দিকে তাকায়,এটা কখনোই সম্ভব নয়।

সায়েম রিপোর্ট টা টেবিলের উপর রেখে ডাক্তার মামুন কে বলে,,

” আর ইউ শিওর ডক্টর মামুন,এটা সত্যি আত্ম’হত্যা!

” আমার রিপোর্ট কি কখনো ভুল হয়েছে অফিসার,আমি পোস্টমর্টেম করে তবেই রিপোর্ট এনেছি। এখানে স্পষ্ট লিখা আছে,মেয়েটি ডিপ্রেশনে বা কোনো কিছু নিয়ে চিন্তায় ছিলো আর সেই থেকে মেয়েটি নিজের উপর অত্যা’চার করে প্রথমে তারপর ওড়না বেঁধে আত্ম’হত্যা করে, শরীরের চিহ্ন গুলো মেয়েটির নিজেরই,আর মেয়েটি পাঁচ ঘন্টা আগে মা’রা গেছে।

সায়েম কথাটা শুনে বেশ চিন্তায় পড়ে যায়,লা’শের ফ্যামিলি কে এটা বললে তারা আদৌও বিশ্বাস করবে না।

ডক্টর মামুন পকেটে থেকে আলগোছে একটা কাগজ বের করে সায়েমের পায়ের নিচে ফেলে খুব সতর্কতার সঙ্গে। মামুন টেবিলের উপর থেকে একটা কলম ফেলে দেয় ইচ্ছে করে, সায়েম কলম টা উঠাতে নিলে দেখে তার পায়ের নিচে একটা কাগজ। কাগজ টার উপরে লেখা আছে,

” আমায় কিছু জিজ্ঞেস করবেন না, বাসায় যাওয়ার পর একান্তে বসে কেউ যেনো আশেপাশে না থাকে তখন এই কাগজ টা খুলে দেখবেন।

সায়েম কাগজ টা উঠিয়ে হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে,,

” আচ্ছা তাহলে ডাক্তার আপনি আসুন,অনেক তো রাত হলো,কাল এই কেস টা ক্লোস করবো যেহেতু আত্মহ’ত্যা এটা।

মামুন মাথা নাড়িয়ে চলে যায়। সায়েম রিপোর্টের ফাইল টা ড্রয়ারে রেখে উঠতে নিলে এক কনস্টেবল এসে বলে,,

” স্যার আজ ও পাশের এলাকা থেকে এক মেয়ে গায়েব হয়ে গেছে।

কথাটা শুনে সায়েম চিল্লিয়ে বলে উঠে,,

” হোয়াট! আজ তিনদিন পর আবার এই নিউস এই থানায়।

চিন্তায় পড়ে গেলো সায়েম প্রায় কয়েক মাস যাবৎ এই ঘটনা ঘটছে, এক একটা জেলা থেকে কয়েকদিন পর পরই মেয়ে উধাও হয়ে যায়,এখনো পর্যন্ত তারা মেন কালপ্রিট কে ধরতে পারে নি,এর আগে এক পুলিশ অফিসার এই সব কাজের সাথে যুক্ত এক চেলাকে ধরেছিলো,কিন্তু কিছুতেই মুখ দিয়ে বের করছিলো না এগুলোর পেছনে কে,শেষ পর্যন্ত লোকটা মা’র খেতে খেতে ম’রেই গেলো কিন্তু তবুও বললো না কে আছে এসবের পেছনে,শুধু লাস্টে এক টা কথাই বলে ছিলো সেটা হলো ” আপনারা যাকে খুঁজছেন সেই এই সব মেয়েদের উঠিয়ে নিচ্ছে,এসবের পেছনে লোক একজনই,এতো জায়গা থেকে মেয়ে উধাও তিনিই করছেন।

এই ছিলো শেষ কথা।

এর পর আর কাউকে ধরতে পারে নি পুলিশ। সায়েম ভাবনা থেকে বেরিয়ে বলে,,

” আপনি যান আমি অন্য অফিসার কে পাঠাচ্ছি,কাল যাবো আমি সেই জায়গায়।

কনস্টেবল মাথা নাড়িয়ে চলে যায়। সায়েম উঠে বাসায় চলে যায়। বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে ঘরের দরজাটা আটকিয়ে বিছানায় বসে কাগজ টা খুলে। কাগজে লেখা আছে,,

” অফিসার এটা আত্মহ’ত্যা নয়,এটা পরিকল্পিত একটা খু’ন,আমি যখন ফরেনসিক ল্যাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে আপনাকে ফোন করে জানাতে যাচ্ছিলাম তখন কেউ আমায় ফোন করে আমার স্ত্রী বাচ্চা কে ব্যাবহার করে আমায় থ্রেট দেখিয়ে এই সব মিথ্যা রিপোর্ট বানাতে বলে,, আমি চাইছি এই কেসটার ইনভেস্টিগেশন টা আপনি লুকিয়ে করুন, লোকটা হয়তো সারাক্ষণ আপনার আমার উপর নজর রাখবে,যা করবেন গোপনে করবেন,আর লা’শ টা আমি পোস্টমর্টেম করে জানতে পেরেছি,মেয়েটি কে প্রথমে কেউ পেছন থেকে মুখ চেপে ধরেছিলো যার ফলে মেয়েটির মুখে আঙুলের দাগ আছে,তখন হয়তো ধস্তাধস্তি করার জন্য ঐ লোকটির শরীরের কিছু অংশ চামড়া উঠে আসে মেয়েটির নখে,এটা আমি শিওর হয়েছি মেয়েটির চামড়ার সাথে ম্যাচ করতে গিয়ে,অর্থাৎ এটি মেয়েটির চামড়া নয়,এটি একটি পুরুষের চামড়া। তারপর মেয়েটির ঘাড়ে চেতনানাশক ইনজেকশন পুশ করা হয়েছে মেয়েটিকে অজ্ঞান করার জন্য, এর পর মেয়েটিকে গলা টি’পে হ’ত্যা করা হয়,এখানেও টুইস্ট আছে যে গলাটা টি’পে ধরেছিলো সে অন্য কেউ মানে মুখ চেপে ধরা লোক নয়। যে গলা টি’পে ধরেছিলো সে কোনো ২৭-২৮ বছরের পুরুষ হবে, খুবই পারদর্শী হয়তো জানতো ঠিক কিভাবে চেপে ধরলে খুব সহজেই মৃ’ত্যু ঘটবে, গলায় থাকা হাতের দাগ গুলে মুখ চেপে ধরা হাতের থেকে খানিকটা বড় ওটার সাইজের সাথে এটা মিলে না,এর পর খু’নিরা তাকে ধরে সিলিং ফ্যানে ঝুলিয়ে দেয়। আর আসল রিপোর্টের একটা কপি আমি আলাদা করে লুকিয়ে রেখেছি,সেটা সুযোগমতো দিয়ে দিবো আপনায়। কোসটা খুবই জটিল আর রহস্য ঘেরা আপনাকে খুব সতর্কতার সাথে এবং ধীরে ধীরে আগাতে হবে।

সায়েম কাগজ টা পড়ে গোপন একটি স্থানে রেখে দেয়।

_________________

অহনা প্লিজ আমায় বাঁচা, আমার খুব ভয় লাগছে,এই অন্ধকার রুমে থাকতে পারছি না,দম বন্ধ লাগছে,তুই আয় না আমায় নিয়ে যা,আমার কষ্ট হচ্ছে অহনা আ আ…

শোয়া থেকে লাফিয়ে উঠলো অহনা বিছানা থেকে নেমে দৌড়ে ড্রয়িং রুমে এসে চেঁচিয়ে বলে,,

” এই রিয়া কই তুই, আমার রিয়া কই মামি,ওর খুব কষ্ট হচ্ছে ও আমায় ডাকছে, আমায় যেতে হবে।

কথাটা বলেই অহনা দরজা দিয়ে বের হতে নিলে রিয়ার মামি অহনাকে জড়িয়ে ধরে,অহনার চেঁচামেচি শুনে অহনার মামি বের হয়েছে ঘর থেকে এতোক্ষণ অহনার মায়ের পাশে বসে ছিলো,,

” অহনা শান্ত হও রিয়া এখানে নেই ওর বডি পোস্টমর্টেমের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

অহনা তার মামি কে নিজের থেকে সরিয়ে চিল্লিয়ে বলে উঠে ,,,

” পাগল নাকি তোমরা, কেনো নিতে দিছো ওরে তোমরা,তোমরা জানে না আমার রিয়া ব্যাথা সহ্য করতে পারে না, আমি এখনই যাবো রিয়ার কাছে।

কথাটা বলে আবার দরজার বাহিরে যেতে নিলে শুভ্র এসে অহনার হাত ধরে ফেলে।

#চলবে

( ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন, আর গল্পটা কেমন লাগছে মন্তব্য করে জানাবেন, হ্যাপি রিডিং)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে