তাসের ঘর পর্ব-০৩

0
2858

#তাসের_ঘর
#নীরা_আক্তার
#পর্ব-৩
বাড়িতে বিয়ে বিয়ে সাজ। বাড়ি ভর্তি লোকজন।রূপ তখন তনুকে একা একা বন্ধুর বাড়িতে যেতে দেয়নি।
একবারে সঙ্গে নিয়ে ভার্সিটিতে যায়। এসাইনমেন্টটা জমা দিয়ে সঙ্গে করে নিয়েই বাড়ি ফিরে।
তনু আর রূপ বাড়ির ভেতরে ঢুকতেই আন্জুআড়া বানু আর তার ছোট চাচী তাদের পথ আটকে দাড়ায়।তনু আর রূপ ছোট চাচীকে দেখে বেশ অবাক হয়।তার তো আর বেশ কিছুদিন পর ফেরার কথা ছিলো।সে বাপের বাড়ি গিয়েছিলো তার বড় ভাইয়ের মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে হটাৎ আজই ফিরে এলো!

তনু আর রূপকে কিছু না বলতে দিয়ে তিনি একা একাই বলে উঠেন
-নিজের বাড়ির বিয়ে রেখে কি আর অন্যের বাড়ির বিয়ে খেয়ে বেড়াবো।আগে তো…নিজের সংসারের কাজ সারি পরে না হয় বাবার সংসারের কাজ!

তাকে কথার মাঝে থামিয়ে দেয় আন্জুআড়া বানু।ধমকের সুরে বলে উঠেন
-তনুকে ঘরে নিয়ে যা তো।কথা তো পরেও বলা যাবে।আগে তো সব ঠিক ঠাক হোক। খাটে উপর সব রাখা আছে একটু সাজিয়ে গুছিয়ে নিয়ে আসিস।আর কোনো সমস্যা হলে আমাকে ডাকবি

কথাটা বলে তিনি রূপকে টেনে নিয়ে যান ড্রইংরুমে।আর তনুকে নিয়ে যায় তার ছোট চাচী।

রূপ আর তনু বাড়ির ভেতরে পা দিতেই খেয়াল করে অন্তর এসেছে।অন্তর একা নয়, অন্তরের বাবা-মা বড় ভাই ভাবি আর সঙ্গে তার দাদী ও এসেছে।একরকম অন্তরে গোটা পরিবার উপস্থিত।

রূপকে আন্জুআড়া বানু ড্রইং রুমে তাদের সামনে একটা সোফায় বসিয়ে দেয়।শেফালি বেগম সবাইকে নাস্তা দিচ্ছিলো।
রূপ একটু আবাক হয়। তবে নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে অন্তরের বাবা মা কে সালাম দেয়…
-আসসালামু আলাইকুম আন্টি আঙ্কেল।কেমন আছেন আপনারা?
তারা দুজনই সালাম নেয়।অন্তরের মা বেশ আদুরে কন্ঠে জবাব দেয়
-হ্যা রে রূপ তুই কি আমাদের ভুলে গেলি।আগে কতো আসতিস বলতো এখন তো খোঁজও নিস না।
রূপ ছোট্ট একটা হাসি দিয়ে অন্তরের দাদীর পাশে গিয়ে বসে পড়ে।
দাদীর হাত চেপে ধরে
-কি সুইট সিক্সটিন কেমন আছো?
অন্তরের দাদী রূপের গালে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়
-তোমার মতো বর ছাড়া কিভাবে ভালো থাকি বলোতো।তাই তোমার মার সাথে কথা বলতে এসেছি।তোমার মা আর মামনি অনুমতি দিলেই ভাবছি আজই শুভ কাজ সেরে নেবো।তোমাকে বিয়ে করে নিয়ে যাবো।কি গো বর মহাশয় তুমি কি রাজি এই বুড়োকে বিয়ে করতে?

এবার রূপের সাথে সাথে সবাই হেসে উঠে…..
-খুব রাজি।তোমার মতো সুইট বউ পেলে রাজি না হয়ে কি পারা যায়।

***
রূপ বেশ সিরিয়াস ভঙ্গিতে অন্তরকে জিঙ্গেস করে।
-কি রে অন্তু হটাৎ তুই এভাবে…কোনো সমস্যা হয়েছে?
অন্তর মুচকি হাসে
-কেন কোনো সমস্যায় ফেলে দিলাম নাকি?
-না তেমন কিছুনা হটাৎ এভাবে এলি তাই আর কি
-বলেছিলাম না সারপ্রাইজ আছে?
-মানে?কিসের সারপ্রাইজ?

-তুইতো মাঝে মাঝে বোনের প্রোটেকটিভ ভাই হয়ে যাস তাই ভাবছিলাম এবার বাহিরের লোক থেকে সোজা পার্মানেন্ট লাইসেন্সটা ধারী ঘরের লোক হয়ে যাই যাতে করে তুই আর মাঝরাস্তায় হিরো হিরোইনের মাঝে ভিলেন না হয়ে যাস।ঐ যাকে বলে কাবাব মে হাড্ডি।

কথাটা বলেই সে হেসে উঠে….

আন্জুআড়া বানু মাঝেই বলে উঠে
-আসলে অন্তরের বাবা মা অনেক আগেই অন্তর আর তনুর বিয়ের ব্যাপ্যারে বলেছিলো আমায়।তাদের তনুকে বেশ পছন্দ অন্তরের জন্য।আমিই বলেছিলাম আর কয়েকটা দিন যাক।আজকে হটাৎ আবার বললো আমিও আর না করলাম না শুভ কাজে বেশি দেরী করতে নেই।
-কিন্তু মামনী
-রূপ অন্তরকে তো ছোটবেলা থেকে দেখছি।চেনা পরিচিত এমন ভালো ছেলে।অন্তর চাকরি পেয়েছে তনুর ভার্সিটিতেই।দুজন দুজনের চোখের সামনে থাকবে…মিলমিশও হবে……না বলার প্রশ্নই উঠে না।

রূপ কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায় সেখান থেকে উঠে সোজা তনুর রূমে যায়।তনু বিছানায় বসে কাঁদছে।আর রূপের ছোট চাচী বার বার তনুকে বোঝানোর চেষ্টা করছে যাতে সে রাজি হয়ে ‌ যায়। এমন গো ধরে না থেকে তারাতারি তৈরী হয়ে নেয়…

রূপ চাচীকে বাহিরে যেতে বলে।তিনিও সেখান থেকে চলে যান।কারন সে জানে তনু বাড়িতে কারো কথা না শুনলেও রূপের কথা ঠিক শুনবে

ছোট চাচী বের হতেই তনু রূপের বুকে আছড়ে পরে।সে কাঁদছে হাউ মাউ করে কাঁদছে।এখন কি হবে।
রূপ কিছু বলছে না চুপ করে আছে।
-চলোনা আমরা সবাইকে বলে দিই আমরা তো এলরেডি বিয়ে করেই ফেলেছি।আমি কিভাবে আবার অন্তর ভাইয়াকে বিয়ে করতে পারি?

রূপ চুপ করে আছে।তনু আবারও রূপকে জড়িয়ে ধরে।শক্ত করে জড়িয়ে ধরে…
-আমি তো তোমায় সত্যিকরে ভালোবেসেছি।এভাবে কি করে ভুলে যাবো তোমায়?চলো না পালিয়ে যাই।সব কিছুর থেকে দূরে।

কথার মাঝেই আগমন ঘটে আন্জুআড়া বানুর।
তিনি বেশ হুংকারের সাথে তনুকে বলে রূপকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য।
তনু এখনো রূপকে ধরেই রেখেছে।সে তো কোনো কিছুরই পরোয়া করে না।তার তো শুধু রূপকে চাই।
তবে রূপ নিজেকে সামলে নিয়ে তনুকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নেয়।

আন্জুআড়া বানু রূপকে নিচে যেতে বলে।অন্তরের পরিবারকে সামলাতে হবে।আজ তারা তো এ বাড়ির মেহমান।এইসব খেয়াল রূপকেই রাখতে হবে,
কারণ বর্তমানে রূপই এইবাড়ির একমাত্র পুরুষ মানুষ।সব দায়িত্ব তো তাকেই নিতে হবে।

রূপ মামনীর কথার কোনো প্রতিবাদ করেনা।সেখান থেকে চলে যেতে থাকে…
তবে যাওয়ার আগে তনুকে বলা তার শেষ কথা ছিলো,
“তনয়া, আমায় বিশ্বাস করিস”
রূপের কথায় তনুর মুখে হাসি ফুটলে ও আন্জুআড়া বানুর বুকটা যেন ধক করে উঠে।
“তবে কি রূপ বদলে যাচ্ছ।সব কি তার হাতের বাহিরে চলে যাবে…..”

আন্জুআড়া বানুর ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে তনু বলে উঠে
-মা কেন তুমি আমার ভালোবাসো না?
তিনি বেশ বিরক্তের সাথে বলে উঠে
-বার বার এক কথা বলোনাতো যাও মুখ হাত ধুয়ে আসো।আজ আমি নিজে তোমায় সাজিয়ে দেবো।তুমি তো আমার মেয়ে।আর আমিই তোমার মা!
-আমি রূপকে ভালোবাসি!
-রূপ তোমায় ভালোবাসে না।
-মা প্লিজ!
-তনু এটা আবেগ।রূপ যা করছে সব আবেগের বশে করছে এর বেশি কিছুই নয়।

তনুর মাথাটা হুট করেই যেন গরম হয়ে গেলো।বেশ জোড় গলাই বলতে ইচ্ছে করছে…
“একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ কি শুধু আবেগের বসেই কাওকে বিয়ে করে নিতে পারে?না পারে না।আবেগ মায়া ভালোবাসা সব কিছু মিলেই তো একটা মানুষ আর একজন মানুষকে নিজের জীবনে আমন্ত্রন জানায় জীবন সঙ্গী হিসেবে।রূপ তাকে নিজের জীবনে জায়গা দিয়েছে।স্ত্রী হিসেবে গ্রহন করেছে।এটা কি করে শুধু আবেগ হয়?এটা কি ভালোবাসা নয়?”

তবে তনু কিছু বলতে পারছে না।
আন্জুআড়া বানু তনুর এতো শত ভাবনার মাঝে বলে উঠে
-কি ভাবছো?রূপ কি কখনো তোমায় নিজের মুখে বলেছে সে তোমায় ভালোবাসে?না তো? তাহলে?

তনু মাথা নিচু করে আছে।
“সত্যিই রূপ কখনো তাকে বলেনি সে তনুকে ভালোবাসে।তবে সব ভালোবাসার কথা কি মুখ দিয়েই বলতে হয়??”

তিনি এবার বেশ শান্ত গলায় বলেন
-তনয়া আমি তোমায় বলছি যাও তৈরী হয়ে নাও।এখানে আমার, আর এই পরিবারের সন্মান জড়িয়ে আছে।কোনো সিন ক্রিয়েট করো না।আমি কথা দিচ্ছি আজই কোনো সিদ্ধান্ত নেবো না।সময় দেবো তোমাকে।নয়তো আমি তোমায় জোড় করবো।আর তুমিও তো জানো রূপ আমার মুখের উপর কথা বলবে না…….. যাও।

***
তনুকে সাজিয়ে গুছিয়ে নিচে আনা হয়েছে।অন্তরের পরিবারের সামনে।তারা অবশ্য তনুকে আগে থেকেই পছন্দ করেন।সবচেয়ে বড় কথা অন্তর চায় তনুকে। তাতে তার পরিবারেরও কোনো আপত্তি নেই।
অন্তরের ভাবি হুট করেই তনুর খোপায় কয়েকটা ফুল গুজে দেয়।এগুলো অন্তর এনেছে।সে নিজে দিতে পারবে না বলে ভাবিকে বলেছিলো তনুকে দেওয়ার জন্য।।।
রূপ দূরে বসে সব দেখছে কিন্তু কিছু বলছে না।
যেন সে মৌন ব্রত রেখেছে।

এবার সেই বিশেষ সময় যখন পাত্র পক্ষ তাদের হবু কনেকে রিং পড়াবে।

চলবে……

(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে