#তাসের_ঘর
#নীরা_আক্তার
#পর্ব-২
বাড়ির সবার অগোচরে কাজী অফিসে গিয়ে হুট করেই বিয়ে হয়ে যায় তনু রূপের।
সেদিন ছিলো ঘন বর্ষনের দিন।তনু আর আন্জুআড়া বানুর মাঝে বেশ ঝগড়া চলছিলো।তিনি চান তনুকে বিয়ে দিতে।নিজের পছন্দের কারো সাথে।কিন্তু তনু বিয়ে করতে চায় না।সে সরাসরি মা কে জানিয়ে দেয় সে রূপকে ভালোবাসে।মনে প্রাণে ভালোবাসে।
তনুর কথা শুনে আন্জুআড়া বানু চোখমুখ লাল করে তনুকে জানিয়ে দেয়
“রূপের সাথে তার বিয়ে সে দেবে না। কিছুতেই না।সে তনুর জন্য ভালো ছেলে দেখে রেখেছে।রূপকে সে তনুর হতে দেবে না.. কিছুতেই না”
কিন্তু তনু তো কিছুতেই মানবে না।
এমন পরিস্থিতিতে রূপের মা ডেকে পাঠায় রূপকে।তনুকে ছেলের বউ হিসেবে মানতে তার কোনো সমস্যা নেই।
আন্জুআরা বানু কড়া গলায় শেফালি বেগমকে বলে উঠে
-রূপকে ডাকার কি আছে।আমি তো জানি রূপ তাকেই বিয়ে করবে যাকে আমি পছন্দ করবো।তনু তো শুধু ওর ভালো বন্ধু।ছোটবেলার খেলার সাথী।জীবন সঙ্গী নয়,কখনো হবেও না।
শেফালী বেগম আর তনু দুজনই রূপের মুখের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে,সে হয়তো বলবে… “বলবে তার তনুকে চাই জীবন সঙ্গী হিসেবে”
কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে রূপ কিছুই বলে না।মাথা নিচু করে সেখান থেকে চলে যায়। আন্জুআড়া বানু এবার একটা বিজয় হাসি হেসে
তনুকে জানিয়ে দেয় সে যেন আর জেদ দেখিয়ে না বসে থাকে।হয় সে মায়ের পছন্দ মতো কাউকে বিয়ে করবে নয় তো যে এক্ষুনি বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যা।
তনু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে মায়ের দিকে।
আন্জিয়ারা বানু একটু দম নিয়ে, সব রাগ ক্ষোভ একসাথ করে তনুর দিকে তাকায়।নিজের অজান্তেই বলে উঠে
“তনয়া তুই একদম তোর মায়ের মতো,একরোখা,জেদ্দী…আমার সব কষ্টের কারণ”
তনু মায়ের কথা কিছু বোঝে না। মা মাঝে মাঝেই এমন অনেক কথা বলে।যা তনু বোঝে না মাও বোঝাতে চায় না।
মাকে তেমন কিছু না বললেও শুধু একটা কথায় বলে
-তুমি আমায় কেন ভালোবাসো না মা? কেন চাওনা আমি ভালো থাকি?আমি তো তোমার মেয়ে।
আন্জুআড়া বানু বেশ শান্ত গলায় জবাব দেয়
-আমি চাই তুমি ভালো থাকো তবে রূপের সাথে নয়!তুমি রূপের যোগ্য নও।
তনু কিছু না বলেই বেরিয়ে যায় বাহিরে! আর কথা বলে লাভ নেই।
আন্জুআড়া বানু কিছু বলে না মেয়েকে।
আটকানোর চেষ্টাও করে না।
প্রায় সন্ধ্যে হয়ে এসেছে।বাহিরে টিপ টিপ বৃষ্টি পড়েছে। তনু বাড়ির পেছনের দোলনায় বসে আছে।সারা শরীর চুয়ে চুয়ে পানি পড়ছে।
সেই সকাল গড়িয়ে সন্ধ্যে হলো।তনু এখনো সেখানেই বসে আছে।হটাৎ সে অনুভব করে কেউ তার কাধে হাত রেখেছে।তনু উঠে দাড়িয়ে পেছন ফিরতেই দেখে রূপ।রূপ দুম করে তনুকে জড়িয়ে ধরে।
তনুকে কিছু বলতে না দিয়েই সে বলে উঠে
-আমাকে বিয়ে করবি তনয়া?আমি তোর সাথে থাকতে চাই।সারা জীবন থাকতে চাই।
তনু রূপের গালে হাত রেখে রূপকে জিঙ্গেস করে
-আমায় ভালোবাসো?
রূপ একটু থেমে উওর দেয়
-তোর ভালোবাসায় যে আমাকে বড্ড পুড়াবে।আমি তো পুড়তে চাই না।কিন্তু…..তনয়া চল বিয়েটা করে ফেলি।
আর পেছন ফেরে তাকায়নি তনু শক্ত করে রূপের হাতটা ধরে নেয় সে।
****
এসব ভাবতে ভাবতে বেশ দ্রুত গাড়ি ছুটিয়ে চলছে রূপ।সামনে দেখা যাচ্ছে অন্তরের গাড়িটা।রূপ দুম করে অন্তরের গাড়ির সামনে এসে নিজের গাড়িটা দাড় করিয়ে দেয়।একটুর জন্য গাড়ি দুটি পরস্পরকে ধাক্কা দেয় নি।
অন্তর রূপকে দেখে বেশ রেগেই গাড়ি থেকে নামে
-আর ইউ ক্রেজি?ঠিক সময় ব্রেক না করলে কি হতো ম্যান?তুই তো মরতিস সাথে আমি আর তনুও….
রূপ গাড়ি থেকে বেড়িয়ে বেশ ঠান্ডা গলায় উওর দেয়
-মরে যেতাম তো যেতাম।এমনি তেও তুই আমার প্রানটাই নিতে চাস!ইভেন সেটা নেওয়ার ট্রাইও করছিস।
অন্তর রূপের কথার আগা মাথা বুঝে না।
রূপ অন্তর কে হাগ করে।কুশল বিনিময় করে নেয়।সে রূপের বেশ ছোটবেলার বন্ধু।
অন্তরকে হাগ দিয়ে সে তনুর দেকে তাকায়।তনু মনে মনে এমন কিছু একটা আন্দাজ করছিলো।
তনু গুটিশুটি মেরে গাড়িতে বসে আছে।রূপের তনুর কাছে গিয়ে গাড়ির দরজা খুলে দেয়
-আমার সাথে যাবি চল।
-থাক না তুমি কেন আবার কষ্ট করবে?আমি আর অন্তর ভাইয়া যাই।আর তো একটু রাস্তা আছে।
মাঝে অন্তর বেশ বিরক্তির সাথে বলে উঠে
-আরে আশ্চর্য তো।আমি তনুকে নিয়ে পালিয়ে যাবো নাকি?ক্যাম্পাসেই তো যাবো
-তুই কেন যাবি?
সার্প্রাইজ ব্রো।
রূপ বেশ বিরক্তের সাথে উওর দেয়
-তোর সার্প্রাইজ তোর কাছেই রাখ।আমি চললাম।
রূপ কিছুটা রেগে ধমকে দেয় তনুকে।কারন তনু এখনো গাড়ি থেকে বার হচ্ছে না।
তনু কিছু না বলে হাসে।শুধু হাসে….
অন্তর রূপের কাজে বেশ বিরক্ত হয়।
রূপ কেন যে তাকে তনুর আসে পাশে ঘেঁষতে দেয় না তা সে বুঝে না।একদম বুঝে না।
সব ভাইরা বোধয় এমনই হয়
কথা বলে অন্তর মনে মনে হাসে।
***
রূপ আর তনু পাশাপাশি গাড়িতে বসে আছে।রূপ ড্রাইভ করছে আর তনু তাকিয়ে আছে রূপের দিকে।
রূপ একরকম বিরক্ত হয়ে তনুকে জিঙ্গেস করে
-কি দেখছিস?
-ভালোবাসি
-কাকে?
-কি বলো,আবার কাকে তোমাকে
রূপ কিছু বলে না।
-কি হলো বলো না একবার তুমিও আমায় ভালোবাসো
-(…..)
তনুর মন খারাপ হয়ে যায়।জন্মের পর থেকে সে রূপকে দেখছে।সব আকর্ষন ভালো লাগা মন্দ লাগা সবটা রূপকে ঘিরেই ছিলো।
তবে রূপ কখনো নিজেকে উজার করে দেয় নি তনুকে।
দুজনই চুপ।
হুট করেই তনু খেয়াল করে রূপ তাকে তার ক্যাম্পাসে নিয়ে যাচ্ছে না।এই রাস্তা তো তার ভার্সিটির রাস্তা নয়।
-কোথায় যাচ্ছি আমরা
-(…)
-বলবে তো কোথায় যাচ্ছি!ক্লাসে যাবো না আমি?আমার তো ইম্পরট্যান্ট…
রূপ তনুকে কিছু বলতে না দিয়েই বলে উঠে
-তনয়া আমি যদি তোকে গোটা পৃথিবীর থেকে আলাদা করে নিজের কাছে রেখতে চাই তুই কি আসবি আমার সাথে?
তনু মুচকি হাসে
রূপের গাড়ি একবারে থামে একটা রেস্টুরেন্টের সামনে
রূপ তনুকে ভেতরে বসিয়ে খাবার অর্ডার করে দেয়।তনু যে সকালে কিছু খায়নি তা তার বেশ মনে আছে।
তনু খাবারটা মুখে নেবে তখনই রূপের ফোনে কল আসে আন্জুআড়া বানুর..
রূপ ফোনটা ধরতেই তিনি বেশ উত্তেজিত বলে উঠে
-রূপ তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে আয়। কে এসেছে দেখ।এবার বোধয় আমার মনের আশা পূর্ণ হবে।
রূপ ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করে
-কে এসেছে মামনি?
-এক্ষুনি বাড়ি আয়।প্লিজ বাবা দেরি করিস না…..
তনু খাবারটা একবার মুখে নিয়ে প্লেটে রেখে দেয়।
-বাড়ি চলে যাও।আমার কথা ভাবতে হবে না আমি বন্ধুর বাড়ি চলে যাবো।আর হ্যা আমি একাই চলে যাবো পৌছে দিতে হবে না তাতে দেরী হয়ে যাবে…..
রূপ শুধু অসহায় দৃষ্টিতে তনুর দিকে তাকিয়ে আছে।।।
তনু রূপকে কিছু না বলেই রেস্টুরেন্টে থেকে বেরিয়ে আসে….
তার যে ভিষণ কান্না পাচ্ছে।
সে জানতো মায়েরা পৃথিবীর সব সুখ সন্তানকে উজার করে ঢেলে দেয়।কিন্তু তার মা যে শুধ তাকে কষ্টই দিয়ে গলো।শুধু মাত্র কষ্ট।
চলবে….