তালা চাবি পর্ব-০৫ এবং শেষ পর্ব

1
1302

#তালা_চাবি
#অন্তিম_পর্ব

” বিয়া নিয়া। সামনের হপ্তায় তো স্যারের বিয়া। ”

দারোয়ানের অশুদ্ধ উচ্চারণের উত্তরটি সিঁথির কর্ণকুহরে বোমার মতো আঘাত করল বুঝি! বিস্ফারিত নেত্রে স্থির চেয়ে থেকে আপনমনে বিড়বিড় করল, ‘ আরশাদ বিয়ে করবে! অসম্ভব। ‘ তারপরেই ছুটল বাড়ির মূল দরজার দিকে। দারোয়ানের পিছু ডাক সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে একতালে ছুটে যাচ্ছিল। হঠাৎ ধাক্কা খেল কারও সাথে। টাল হারিয়ে পড়ে যেতে গিয়েও নিজেকে সামলে নিয়ে সামনে তাকাতে দেখে স্বয়ং আরশাদ। মাথার চুলগুলো বেশ মসৃণ ও সংযমী; চাহনী তীক্ষ্ণ ও নিগূঢ়; ঘন দাড়িতে ঢাকা শক্ত চোয়াল; উন্নত স্বাস্থ্য ও উজ্জ্বল দেহ চামড়ায় মানুষটাকে একদমই অন্যরকম লাগছে। পরিচিতির মাঝেও অপরিচিত, চেনার মাঝেও অচেনা! সিঁথির ভ্রম বলে বোধ হলো। হাত দিয়ে চোখ কচলে নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো তাকিয়েও কোনো পরিবর্তন না পেয়ে বিস্মিত স্বরে বলল,
” তোকে তো চেনাই যাচ্ছে না! ”

তারপরে চোখদুটো চারপাশে ঘুরিয়ে এনে বলল,
” গেইটের দাড়োয়ান, বাড়ির রঙ, লন এমনকি নিজের বেশভূষাও বদলে ফেলেছিস। এক বছরের মধ্যে এই অসাধ্যটা সাধন করলি কী করে রে? নিজের ইচ্ছে করেছিস নাকি আংকেলের ঝাড়ি খেয়ে? ”

আরশাদ নিরুত্তর। হাতদুটো বুকে বেঁধে দাঁড়ানোভঙ্গিতে সামান্য পরিবর্তন আনল শুধু। সিঁথি তখনও কৌতূহলী চোখে এক বছরের পরিবর্তন দেখছে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে। অতঃপর দৃষ্টি আটকাল সেই খোলা জায়গাটায়, যেখানে ফুল দিয়ে সাজানো হচ্ছে। সেই অচেনা ছেলেটি নেই। সে চট করে দৃষ্টি ফিরিয়ে আনল আরশাদের দিকে। পরনের শার্টটার দিকে তাকিয়ে বলল,
” তুই ফুল সাজাচ্ছিলি? আমি তো চিনতেই পারিনি! ”

মন্তব্যটুকু প্রকাশ করতেই মনে পড়ল দারোয়ানের শেষ কথাটি। মুহূর্তেই মুখের রঙ বদলে গেল। আন্তরিকতা ভুলে সভয়ে জিজ্ঞেস করল,
” তুই আবার বিয়ে করছিস? ”

পূর্বের মতো আরশাদ এবারও নিরুত্তর আছে। দেহ ভাবেও কোনো অভিমত প্রকাশ করছে না দেখে সিঁথির ভেতরটা কেঁপে ওঠল। হাত-পা ক্রমশ ঠাণ্ডা হচ্ছে। অধৈর্য্য হয়ে ক্ষীণ স্বরে সুধাল,
” আমার শাস্তি এটা? ”

আরশাদ হাতের বাঁধন খুলল। তাকে ফেলে বাড়ির ভেতরে ঢোকার জন্য হাঁটা ধরলে সিঁথি দৌড়ে সামনে আসল। পথরোধ করে বলল,
” নিশ্চয় আমাদের বিয়ের ব্যাপারে আংকেল-আন্টিকে বলিসনি। সেজন্যে এই বিয়েটা হচ্ছে। জানলে কিছুতেই হতো না। তুই জানিস, তারা আমাকে কতটা ভালোবাসে। ”

তার চোখ-মুখে অস্থিরতা, ভয়। গলার স্বর চওড়া করে পুনরায় বলল,
” তুই বলিসনি তো কী হয়েছে? আমি বলব। তারপরে তোর দ্বিতীয় বিয়ে করার স্বাদ একদম মিটিয়ে দিবে। ”

তার এই হুমকিতে আরশাদ সামান্যতম ভয়ও পায়নি। মুখেরভাব নিরুদ্বেগ, বড্ড স্বাভাবিক। তাকে ডান দিকে সামাম্য সরিয়ে নীরবে হেঁটে চলে গেল বাড়ির ভেতরে। সিঁথিও পিছু নিল। ভেতরে ঢুকতেই দেখা মিলল আংকেল-আন্টির সাথে। চারপাশে ছোট-বড় বিচিত্র রঙের শপিং ব্যাগ সরিয়ে কী যেন হিসেব করছিল। তার উপস্থিতি টের পেয়ে সামনে তাকাতেই সে বলল,
” আমরা এক বছর আগে কাজী অফিসে বিয়ে করেছি। ”

দুজন সমস্বরে প্রত্যুত্তর করল,
” আমরা জানি। ”
” এরপরও আবার বিয়ে করাচ্ছ? ”

সিঁথির কণ্ঠে বিস্ময়, চাপা ক্রোধ। আন্টি এগিয়ে এসে বললেন,
” প্রথমবার অভিভাবক ছাড়া বিয়ে করেছিস, দ্বিতীয়বার অভিভাবক নিয়ে করবি। এতে সমস্যা কোথায়? ”
” দ্বিতীয় বিয়ে আমি না তোমার ছেলে করছে, তাই সমস্যা। ”
” আরশাদের দ্বিতীয় বিয়ে হলে তো তোরও দ্বিতীয় বিয়েই হওয়ার কথা। ”

সিঁথি চটজলদি উত্তর দিতে গিয়েও থামল। মনে মনে হিসেব মিলিয়ে জানতে চাইল,
” আরশাদ আবার আমাকে বিয়ে করবে? ”
” তো আর কাকে করবে? ”

প্রশ্নখানা তাকে স্তম্ভিত করে দিয়েছে যেন। বোকা চোখে নির্মল চেয়ে থাকলে আংকেল বললেন,
” ছেলের বউ যখন নিজ পায়ে শ্বশুরবাড়ি চলেই এসেছে, রেখে দেও। এখন আর যেতে দিও না। বিয়ের অনুষ্ঠানটা শেষ হলে একেবারে নাইওর যাবে। ”

সিঁথিকে সত্যি সত্যি রেখে দেওয়া হলো। ফোন করে তার বাবা-মাকেও ডেকে আনা হলো। বিয়ের বাকী কার্যলাপ তার সামনেই সম্পন্ন হচ্ছিল। সেই মুহূর্তে চুপিচুপি বাবাকে জিজ্ঞেস করল,
” বিয়ের কথা আমাকে বলোনি কেন? ”

মেয়ের মতো তিনিও ফিসফিস করে বললেন,
” আরশাদ মানা করেছিল। ”
” কেন? ”
” বলেছিল, তোকে সারপ্রাইজ দিবে। ”

বাবার কাছ থেকে সামান্য সরে এসেই চিন্তায় পড়ে গেল। এমন বুক কাঁপানো সারপ্রাইজের আয়োজন করতে পারছে অথচ তার সাথে কথা বলতে পারছে না। মনে হচ্ছে ঠোঁট জোড়ায় আজীবনের জন্য তালা ঝুলিয়ে চাবি হারিয়ে ফেলেছে।

_________
আরশাদের নিজ হস্তে সাজানো স্টেজেই গায়ে হলুদ হয়েছে দুজনের। বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়স্বজনের সাথে তাল মিলিয়ে হাসি-তামাশায় অংশ নিলেও আলাদা করে দুজনের মধ্যে কোনো কথা হয়নি এখন পর্যন্ত। এ নিয়ে আরশাদের মধ্যে কোনোরূপ খারাপ লাগা কাজ না করলেও সিঁথি আকাশ মাপের মনখারাপ নিয়ে দ্বিতীয় বারের মতো রেজিস্ট্রি পেপারে সাইন করেছে, কবুল পড়েছে। অতঃপর বধূসাজে স্বামীর ঘরের খাটটিতে বসে আছে। আগেরবারের মতো স্বামী পিছ পিছ না আসায় অপেক্ষাও করতে হচ্ছে। অপেক্ষার সময় এত দীর্ঘ হলো যে সে ধরেই নিল আরশাদ এ ঘরে আসবে না; তার মুখ দেখবে না; কাছে টেনে নিবে না; আদর-সোহাগও করবে না। কিন্তু এমনটা তো হতে দিতে পারে না সে। তাই স্বামীর খোঁজে বের হওয়ার জন্য উদ্যত হতে চাইল সেই সময় দরজার পাল্লা মেলে ভেতরে ঢুকল কেউ। সিঁথি চমকে মানুষটার দিকে তাকিয়েই ভ্রূদ্বয় কুঁচকে ফেলল। পরক্ষণেই শঙ্কিত স্বরে জিজ্ঞেস করল,
” দরজায় তালা মারছিস কেন? কোনো সমস্যা? ”

আরশাদ পুরো আটদিন, আট রাত অতিবাহিত করে প্রথমবারের মতো কথা বলল,
” শাস্তির প্রথম ভাগ শেষ হয়েছে। এবার দ্বিতীয় ভাগ শুরু হবে। ”

সিঁথি হতভম্ব গলায় সুধাল,
” শাস্তি শেষ হয়নি এখনও? ”
” এক চিমটিও না। ”
” আমার অপরাধটা কী? ”
” আমাকে ছেড়ে যাওয়া। ”
” তোর অনুমতি নিয়েই তো গেছিলাম। ”
” অনুমতি দিতে বাধ্য করেছিলি। ”

সিঁথি খাট থেকে নেমে এলো। আরশাদের দিকে এগুতে ধরতেই সে দ্রুত বলল,
” কাছে আসবি না। ওখানেই দাঁড়া। শাস্তি সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত এই দূরত্ব বজায় থাকবে। ”

সে সত্যিই দাঁড়িয়ে পড়ল। দূর থেকেই আরশাদের গম্ভীর ও কঠিন মুখটায় চেয়ে থেকে ভাবছে, এই মানুষটা তার জীবনের সাথে এমনভাবে জড়িয়ে পড়েছিল যে, নিজের জন্য কোনো স্বপ্ন দেখেনি। ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তা করেনি। পড়াশোনা সম্পন্ন করার পরও বেকার হয়ে ঘুরেছে, বাবার টাকা নষ্ট করেছে। একমাত্র ছেলে হওয়ায় মুখ ফুটে কিছু না বললেও মনে মনে ঠিকই দুঃখ করতেন, চিন্তা করতেন। এই দূরে যাওয়ার পেছনের কারণ শুধু সিঁথির স্বপ্ন পূরণের জন্য ছিল না। আরশাদ যাতে নিজেকে নিয়ে ভাবে, বাবা-মায়ের গোপন দুঃখটা বুঝে সেই সুযোগ তৈরিও করতে চেয়েছিল। যা সে করতে পেরেছে। সিঁথিকে ভুলে থাকার জন্য রাত-দিন বাবার শো-রুমে ব্যস্ত থেকেছে। পুরোনো অভ্যাস বদলেছে। বাইরে পড়ে থাকা মনটাকে ঘরে বন্দি করতে সফল হয়েছে। আরশাদ কি এই পরিবর্তনের মূল কারণটি ধরতে পারেনি? হয়তো পারেনি। যদি পারত তাহলে সিঁথিকে শাস্তি দেওয়ার বদলে পুরস্কৃত করত।

আরশাদের হাতে একটি লাল রঙের ছোট্ট ব্যাগ। সেখান থেকে একটি সুতির শাড়ি ও পুলিশের ইউনিফর্ম বের করল। খাটের উপর দুটো পাশাপাশি রেখে বলল,
” সেই দিন তুই আমার পরীক্ষা নিয়েছিস, আজ আমি নেব। দেখি তোর কাছে কোনটা অধিক সম্মানীয়, তোর স্বপ্ন নাকি আমার চাওয়া? আজ প্রমাণ হয়ে যাক তাহলে! ‘

কথাটা বলেই বিছানায় শুয়ে পড়ল সে। কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে থেকে বলল,
” দাঁড়িয়ে না থেকে একটা তুলে নে। পরীক্ষাটা শেষ করে ঘুমাব। ”

সিঁথি বেশ কিছুক্ষণ দুটো ভিন্ন ধরনের পোশাকে চেয়ে থেকে একটা তুলে নিল। বেনারশি বদলে সেটি পরে এসে স্বামীর উদ্দেশ্যে বলল,
” দেখ তো পরীক্ষায় পাশ করলাম নাকি? ”

আরশাদ চোখ মেলে মৃদু হাসল। শোয়া থেকে উঠে বসে বলল,
” আয়, বউ একটু ভালোবাসা দিই। ”

স্বামীর আদুরে ডাক পেয়ে পাশে গিয়ে বসতেই আরশাদ গভীরভাবে জড়িয়ে ধরে মুক্তস্বরে একনাগাড়ে বলতে লাগল,
” সিঁথি, সিঁথি, সিঁথি….”

প্রথম দিকে ভালো লাগলেও একসময় বিরক্ত হয়ে পড়ল সিঁথি। আরশাদের মুখ চেপে ধরে বলল,
” রাগ ভাঙতে না ভাঙতেই বিরক্ত করা শুরু করেছিস? ”

সে হাত সরিয়ে বলল,
” তুইও তো বিরক্ত হওয়া শুরু করেছিস, সিঁথি। ”
” আবার? ”
” আবার মানে কী? যতদিন কণ্ঠ থেকে শব্দ বের হবে ততদিন সিঁথি ডাকটাও বেরুবে। আগে বান্ধবী ছিলি এখন বউ হয়েছিস। সেই হিসেবে তো প্রতি বাক্যের শেষে না শব্দের শেষে উচ্চারণ করা উচিত। এই যে এমন করে, তোকে সিঁথি খুব সিঁথি সুন্দর সিঁথি লাগছে সিঁথি। ”

সিঁথি দুম করে দুটো কিল বসিয়ে দিল আরশাদের পিঠে। জোরজবরদস্তিতে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,
” তোর সাথে থাকা অসম্ভব! আমি বাড়ি যাব। চাবি দে। ”

আরশাদের মধ্যে কোনো ভাবান্তর নেই। নিরুদ্বেগে বলল,
” খুঁজে নে। ”

বাধ্য হয়ে সিঁথিকেই চাবি খুঁজতে হচ্ছে। বিছানা ওলট-পালট করে আরশাদের পাজামা ও পাঞ্জাবির পকেটেও খুঁজল। না পেয়ে তার মাথার নিচের বালিশের তলায় হাত ঢুকাতেই আটকা পড়ে গেল স্বামীর দুই হাতের বাঁধনে। ছুটতে চাইলে সে এক চোখ টিপে দুষ্টু স্বরে বলল,
” স্বামীকে খুশি কর, চাবি এমনি পেয়ে যাবি। ”

___________
ভোরবেলা প্রথমে ঘুম ভাঙে সিঁথির। সাবধানে আরশাদকে নিজের কাছ থেকে সরিয়ে উঠে বসে। বিছানা থেকে নেমেই স্বামীর কাভার্ডের দিকে এগোয়। পাল্লা মেলে তার কাপড়ের পাশে মেয়েলি কোনো কাপড় না পেয়ে ফিরে আসে বিছানায়। স্বামীকে আলতো করে ডেকে ঘুম ভাঙিয়ে নরম স্বরে বলল,
” আমার কাপড় কোথায় রেখেছিস? ”

সে ঘুম চোখেই ভারী স্বরে উত্তর করল,
” তোর লাগেজে। ”
” লাগেজ কোথায়? ”
” তোর বাসায়। ”
” লাগেজ ওখানে গেল কিভাবে? ”
” আমি রেখে আসছি। ”
” কী আশ্চর্য! আমি এখানে লাগেজ ওখানে। এখন কি আমি তোর কাপড় পরে ঘুরে বেড়াব? ”

আরশাদ চোখ কচলে উঠে বসতে বসতে বলল,
” না। তোরটাই পরবি। ”
” কোথায় পাব? ”

সে ভাঁজ করে রাখা পুলিশের ইউনিফর্মটা সামনে ধরে বলল,
” এই তো। ”
” বাসার মধ্যে এটা পরে ঘুরে বেড়াব? ”
” উহু, থানায় গিয়ে ডিউটি করবি। আজ তোর জয়েনিং ডেট না? ”

সিঁথির সবকিছু তালগোল পাকিয়ে গেল বুঝি! অবোধের মতো বলল,
” জানি না। ”
” তুই না জানলেও আমি জানি। যা, এটা পরে তৈরি হ। এবার রিকশায় না বাসে তুলে দিয়ে আসব। ”
” কী উল্টা-পাল্টা বলছিস! ”
” উল্টাপাল্টা না, ঠিক বলছি। ”
” এমন করছিস কেন? ”
” ভয়ে। তুই পরীক্ষায় পাশ করে আমাকে যে সম্মানটা দিয়েছিস সেটা হারিয়ে ফেলার ভয়ে। তাছাড়া, তোর এই স্বপ্ন পূরণের জন্য আমিও কম খাটিনি। এত সহজে সব জলে ভাসিয়ে দিই কী করে বল তো! ”

সিঁথি বুঝানোর চেষ্টা করল। সে বুঝল না। নিজের সিদ্ধান্তে অটল থেকে সত্যি সত্যি মানিকগঞ্জের বাসে তুলে দিল। বাস স্ট্যান্ড থেকে ফিরে আর বাড়ি গেল না। বাবার শো-রুমে ঢুকতেই সবকিছু বিরক্ত ঠেকল। আফসোসে শরীর ও মনে ক্লান্তি চলে আসছে। বার বার একটা কথাই ভাবছে, কেন এই আটদিন সিঁথির সাথে কথা বলেনি? তাকে শাস্তি দিতে গিয়ে নিজেই শাস্তি পাচ্ছে এখন।

অন্য সময় সন্ধ্যার পরপর বাড়ি ফিরলেও আজ ফেরার কথা মনেই পড়েনি আরশাদের। ঘড়ির কাঁটা কখন যে এগারোটা ছুঁয়েছে বুঝতেও পারেনি। এগারেটা পার হতেই মায়ের কল এলো ফোনে। রিসিভ করতেই শুনল,
” এখনও বাড়ি ফিরছিস না যে? মেয়েটা না খেয়ে তোর জন্য অপেক্ষা করছে। ”
” কোন মেয়ে? ”
” কোন মেয়ে জানিস না? আমার বাসায় কয়টা মেয়ে আছে? ”

আরশাদ একটুক্ষণ চুপ থেকে সুধাল,
” সিঁথি আমার জন্য অপেক্ষা করছে, মা? ”
” তো করবে না? স্বামীকে রেখে নতুন বউ খেয়ে ফেলবে নাকি? ”

আরশাদ তখনই বাসায় পৌঁছাল। খাবার রুমে সিঁথির দর্শন পেতেই প্রশ্ন করে বসল,
” তুই যাসনি? ”
” না। ”
” কেন? ”
” ভয়ে। পরীক্ষায় পাশ করে তুই আমাকে যে সম্মান দিয়েছিলি সেই সম্মান হারিয়ে ফেলার ভয়ে। তাছাড়া, তোকে ছাড়া এক দিনের জন্য আলাদা থেকেছি কখনও? ”
” এক বছর থেকেছিস। ”
” তার শাস্তিও তো পেয়েছি। শুধু কি তুই, আমার স্বপ্নও আমাকে শাস্তি দিয়েছে। সারা শরীরের চামড়া ছিঁড়ে দাগ করে এনেছি। মেয়েদের শরীরে কি দাগ মানায়? এখন তো ভয় হচ্ছে, আমার দুইবার বিয়ে করা স্বামীর নজর না অন্য কোথাও পড়ে যায়! ”

শেষ কথাটা মজা করে বললেও আরশাদ বেশ রেগে গেল। কঠিন স্বরে বলল,
” তোর সাথে থাকা অসম্ভব! বাড়ি ফিরে যা। এখনই। ”

সে সত্যি সত্যি বাসা থেকে বেরিয়ে গেল। মিনিট কয়েক পর আরশাদের নাম্বারে কল করে বলল,
” বাসায় তো তালা মারা। মা কি তোর কাছে চাবি রেখে গেছে? ”

সমাপ্ত ❤️

1 মন্তব্য

  1. অসাধারণ লাগছে রাত 1.56 ঘুম আসচ্ছিল না তাই পড়লাম কিন্তু ভাবিনি এতো সুন্দুর লাগবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে