তার_ইচ্ছে
পর্ব_৬
#মাসুদ_রানা_তাসিন
ডাক্তার : কেমন করে যে বলব আরাভ সাহেব। আপনার বোনের একটা অপারেশন করাতে হবে এবং তা এখনি।
আরাভ : তো করুন এত দেরী করছেন কেন।
ডাক্তার : তাতে সমস্যা আছে। তার জন্য তো বলছি।
আরাভ : এতেও সমস্যা, পুরোপুরি খোলাশা করে বলুন।
ডাক্তার : আপনি জানেন মেয়েদের বয়ঃসন্ধি কালের সময়। কিছু সমস্যা দেখা দেয়। আবার কারো তা পরেও দেখা দেয়। এই মেয়েটার শারীরিক, যে জিনিসটা মেয়েদের হয় তা নিয়মিত হত না। সেজন্য সেখানে ইনফেকশন হয়ে গেছে। তাই অপারেশন করাতে হবে। তাই হয়তো পড়ে বেবী নাও হতে পারে। আবার আল্লাহর রহমতে হতেও পারে। এবার বুঝতে পারছেন। অপারেশন না করালে পরে তা ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই বন্ড সই করুন। যদি পরে সমস্যা হয় তাহলে আমরা বা কতৃপক্ষ দায়ী নয়।
আরাভ : হে আল্লাহ মেয়েটাকে আর কত কষ্ট দিবে। এই সমস্যা থেকে মুক্তি দিও আল্লাহ। আচ্ছা আপনারা অপারেশন ব্যবস্থা করুন।
ডাক্তার আচ্ছা ঠিক আছে। বলেই ওটি রেডি করতে বলল।
******
সাবিত পাগলের মত বের হয়েছে। পাগলের মত খুঁজে যাচ্ছে কিন্তু পায়না। সাবিতের মনে হচ্ছে সময় ও যেন ওর সাথে খেলা করছে। কোথায় পাব আলো কে আল্লাহ তুমি সহায় হও। মা তো বলল ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে আমিও যাব। সেখানের অফিসে যোগ দেব।
রাতের বেলা সাবিতের মনে শুধু বারবার খেলে যাচ্ছে তার মাঝে কি পেলাম। তাইতো কবিতার শব্দ গুলো আওড়াতে থাকে।
পথ চলতে চলতে
কি জানি কি কথা ভেবে থমকে দাঁড়িয়ে গেলাম,
রাতে ঘুমাতে ঘুমাতে
কিজানি কি স্বপ্ন দেখে এ বুকে ব্যাথাই পেলাম ।
তোমায় ভেবে ভেবে
মনের অজান্তেই আমার দুচোখে পানি আসে,
আমি ভুলে গেলেও
এ মনটা তোমাকে আজও যে কত ভালবাসে ।
ঐ চাঁদ দেখতে গিয়ে
আমি তোমার ঐ চাঁদ মুখ দেখে ফেলেছিলাম,
ফুলের ঐ মধু নিতে
আমি ভ্রমর হয়ে উড়ে যেতে ডানা মেলেছিলাম ।
জীবনটা বয়ে বয়ে
আজওতো ফিরে যাই তোমার চোখে মুখে বুকে,
চোখের জলে জলে
আমিযে নীরবে নিভৃতে কেঁদে মরি গভীর দুখে ।
শুধু আমার জন্য
তোমার ঐ মনের কোথাও একটু জায়গা রেখ,
কাছে নাইবা আস
শুধু ঐ দূর হতে দয়া করে আমাকে একটু দেখ ।
আমি কি দেখেছি
তোমার মধ্যে কি পেয়েছি কখনও ভেবে পাইনা,
মনে ও প্রাণে ভাবি
তোমাকে ছাড়া এ জীবনে আর কিছুই চাইনা।
কাল সকালে বের হব। সকালেই ঘুম আসবে না। আলো তুমি কোথায়
***********
পুরো দশ ঘণ্টা পর ডাক্তার অটি থেকে বেরিয়ে বলল যে অপারেশন সাকসেসফুল। আল্লাহ তাআলা সহায় ছিলেন যেইটা ভয় পেয়েছিলাম সেটা হয় নি। রোগীকে বেডে দেওয়া হয়েছে জ্ঞান ফিরলে দেখা করবেন।
এমন সময় আবার আরাভের ফোন বেজে উঠলো ওহ তোরা এসে গেছিস। সিটি হাসপাতালে আয় তাড়াতাড়ি। এসে বাকিটা শুনবি।
ইলমা : আদি আর আহির কি চলে এসেছে। কতক্ষন লাগবে ওদের আসতে।
আরাভ : চলে আসছে। রিয়া সহ কিছুক্ষণের মধ্যেই। আমার খুব ভয় করছে ইলমা। যখন আলো শুনতে পাবে তার ভবিষ্যৎ এর কথা কি হবে তখন কেমনে সামলাব।
ইলমা : জানো আরাভ একজন নারী, তখনই পরিপূর্ণ, যখন সে মা হয়। এই দেখো আমার দিকে। কত চেষ্টা করছি তবুও মা হতে পারছি না।
আরাভ : দেখ ইলমা সবার ভাগ্যে তো সব সুখ হয় না। আলোকে দেখ কত কষ্ট সহ্য করেছে। তবুও তো বেঁচে আছে। কষ্ট সবার সামনে প্রকাশ করে না।
ইলমা : কষ্ট জান কষ্ট সহ্য হয় না। বলেই বিড়বিড় করে বলতে শুরু করল। আমি জানি তুমি কষ্ট প্রকাশ কর না। কিন্তু কষ্ট পাও তো।
********
সাবিত ঘুমের ঘোরে স্বপ্নে দেখে আলো ওকে বলছে।
আমাকে কষ্ট দিতে চাও?
দাও!
আমি কষ্ট নিতেই এসছি।
আমাকে কাঁদাতে চাও?
কাঁদাও!
আমি কাঁদতেই এসেছি।
আমাকে হারাতে চাও?
হারাও!
আমি হারতেই এসেছি।
আমাকে সাগরে ভাসাতে চাও?
ভাসাও!
আমি ভাসতেই এসেছি।
আমাকে পোড়াতে চাও?
পোড়াও!
আমি পুড়তেই এসছি।
আমাকে বুকে টেনে নাও
নিবে না?
আমি সবকিছু সয়েই এসছি
সাবিত ঘুমের ঘোরে চিৎকার দিয়ে উঠলো। বাড়ির সবাই চমকে উঠে সাবিতের ঘরে আসলো। এসে দেখে সাবিত কান্না করছে। আর কিছু বলছে না। আলো আলো বিলাপ করছে।
রাবেয়া খাতুন স্বামীর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললেন হয়েছে শান্তি তোমার। এই বাড়িতে এসে ভাইয়ের মত দেবর হারিয়ে ছি হারিয়ে ফেলেছি আরেক বাবা কে। ছেলে হারানোর মত শোক নিতে পারব না। আমার ছেলেটা এমন করতে থাকলে পাগল হয়ে যাবে।
সাবিত এবার হাসতে শুরু করলো। কিছুক্ষণ পর কান্না। আলো আয় কই তুই জানিস না তুই বুকে মাথা না দিলে ঘুম আসে না। আয় তাড়াতাড়ি আয় বলে পাগলের মত আচরণ করতে লাগলো।
আবির : সাবিত এই সাবিত এমন কেন করছিস। আলো কে খুঁজতে হবে।
সাবিত : হাহা হা কোথায় খুঁজে পাবি তাকে একটু আগে ও আমাকে বলে গেছে। আমি হারিয়ে যাব হারাব। শান্তি তে থাকুন।
যাই বল তাই আলো আমার নাই। কোথায় গেলে পাব তারে বলে যাওনা ভাই। এভাবেই বিলাপ করতে লাগলো।
******
সাবিত দা বলেই চিৎকার করে উঠল আলো।
আরাভ দৌড়ে এসে বলল কি হয়েছে বোন।
ভাইয়া আমার সাবিত দা কে এনে দাও ওকে ছাড়া থাকতে পারবো না।
চলবে,,,,,,