গল্পের নামঃ- #তার_শহরের_প্রেম😍😍
লেখিকাঃ- konika Islam sanju
part:08
রাত ২ টা বাজতে ৪ মিনিট বাকি,, খুদায় আয়াতের ঘুম ভেঙে যায়, এটা আয়াতের ছোট বেলার স্বভাব,,, না খেয়ে থাকতেই পারে না। তাই বাধ্য হয়ে নিচে নেমে আসে দেখে ড্রয়িং রুমে কে যেন বসে আছে?? আল্লাহ ভূত না তো। আয়াত শুনেছে রাত ২ টা থেকে নাকি ভূতের উত্তাপ শুরু হয়। মনে মনে আল্লাহ আল্লাহ করতে করতে সেই ছায়াটার কাছে যায় আর তখনই ছায়াটা আয়াতের দিকে ঘুরে। আর আয়াত চিৎকার দিয়ে বলে
— ভূত ভূত,,,,, আল্লাহ বাঁচাও আমাকে খেয়ে ফেলবে,, ঘাড় মটকে দিবে। আল্লাহ,, আর কিছু বলতে যাবে তখনই আয়ান আয়াতের মুখ চেপে ধরে বলে
— আমি আমি,,, চিৎকার করছিস কেন,,??আমি হাত সরিয়ে নিচ্ছি কিন্তু চিৎকার করবি না। আয়াত এখনো ভয়ে আছে,, তার মনে হচ্ছে ভূত আয়ানের কন্ঠে তার সাথে কথা বলছে। আয়ান মুখে থেকে হাত সরিয়ে নিতেই,, আয়াত পিছিয়ে যেতে যেতে বলে
—- ভূত তুই জানিস না এই বাসায় তোর থেকেও একটা বড় ভূত থাকে,,,,রাক্ষস,,,,বড় বড় চোখ,, দাঁত তার নাম আয়ান চৌধুরী,,, আর তোকে যদি দেখে তুই তার কন্ঠ নকল করছিস তোকে গিলে খাবে,,,।। আয়ান তো আয়াতের কথা শুনে অবাক+রাগ। আয়ান রেগে গিয়ে ধমক দিয়ে বলে
—- ননসেন্স,,, একটা দিব কানের নিচে,,, রাতদুপুরে কিসব উল্টা পাল্টা বকছিস?? মাথা ঠিক আছে তো??
আয়াত এইবার সিউর হলো এটা আয়ান,, আর তখনই আয়ান ড্রয়িং রুমের লাইট জালায়। কিন্তু আয়াতকে দেখে আয়ানের ভিতরটা মুচর দিয়ে উঠে,, চোখগুলো ফুলে আছে,, নাকটা লাল। আয়াত বলে
— আপনি এখানে?? আয়ান বলে
— হ্যা আমি এখানে তো?? আয়াত বলে
— নাহ,, কিছু না। বলেই কিচেনে চলে যায়। ফ্রিজ খুলে দেখে,,, খিচুড়ি তুলে রাখা আছে,,, সাথে গরুর মাংস ভুনা,, আয়ান বলে
— আমিও খাবো,,, খুদা লেগেছে।
আয়াত মনে মনে ভাবছে,, সে এখনো খায়নি!? এইসব ভাবছে তখনই আয়ান,, আয়াত কে সরিয়ে বলে
— তোর খাবার বের করতে করতে ১০দিন লাগবে।
বলেই আয়াত কে সরিয়ে খাবার গুলো গরম করতে দিয়ে,, দেয়। আয়াত এখনো সেখানেই দাড়িয়ে আছে। আয়ান আয়াতের কাছে এসে টুপ করে কোলে নিয়ে পাশে থাকা ফাকা জায়গাটায় বসিয়ে দেয়,, আর আয়াতের গালে কিস দিয়ে বলে
— ওয়েট বেইবি,,,, আয়াত তো অবাকের শীর্ষ পর্যায় যেখান থেকে পরলে মৃত্যু নিশ্চিত। কি হলো!! আয়ান কি ড্রাংক??? কই তেমন কোন বাজে গন্ধতো পায়নি!! নাকি ঘুমের ঘোরে সব করছে??? তখনই আয়ান বলে
— খাবি না নাকি?? আয়াত বলে
— আপনার শরীর ঠিক আছেতো? আয়ান আয়াতের মুখের সামনে খাবর ধরে বলে
— কেন কি মনে হয়?? আয়াত বলে
— না মানে,, আয়ান বলে
— মানে টানে পরে হবে,, আগে খেয়েনে। আয়াতও খাবারটা খেতে লাগে,,, কিছু দিন যদি আর সে আয়ানের সাথে থাকে তাহলে,, নিশ্চয়ই আবার সেই৷ মায়াতে জড়িয়ে যাবে। আর এটা হয়তো আয়ান এর জন্য করেছে,, কারণ আয়াত বলেছে সে আর তার শহরে আসবে না। কথাগুলো মনে পরতেই চোখ বেয়ে পানি গরিয়ে পরে। তা দেখে আয়ান বলে
—- চোখ দিয়ে আরেক ফোটা জল বের হলে। তোর চোখ খুলে ফ্রিজে রেখে দিব। আর মুখেরটা শেষ হতে এতো টাইম লাগে? আয়াতের হুশ আসতেই কয়েক বার খেয়ে বলে
—- আমার খাওয়া হয়ে গেছে,,, আয়ান বলে
— ওয়েট আগে আমি ফিনিস করি,,,, আয়াত একমনে তাকিয়ে আছে আয়ানের দিকে,, কি সুন্দর মানুষটা,,,,, আয়াতকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আয়ান বলে
—- জানি আমি সুন্দর তাই বলে এভাবে তাকিয়ে থাকিস না আমার লজ্জা করে। আয়াত আয়ানের কথায় হেসে দেয়।
__________
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে যায় আয়াত,,, সকালের আবহাওয়াটা তার খুব ভালো লাগে। কিন্তু আজকে কালকের মতো বৃষ্টি না থাকলেও,, আকাশ কালো মেঘে ছায়া,, নিচে দেখে আলভিরা আর আরবি গাছে পানি দিচ্ছে। তা দেখে আয়াতও নিচে চলে আসে,,,,,, আয়াত ভাবে আলভিরার সাথে একটু দুষ্টামি করা যাক। তাই সে পানির পাইপে পা রাখে আর পানি আসা বন্ধ হয়ে যায়,, আলভিরা বলে
—- এটার আবার কি হলো পানি আসে না কেন? যেই না পাইপটা নিজের দিকে ঘুরিয়েছে তখনই আয়াত পা সরিয়ে ফেলে আর সাথে সাথে পানি গিয়ে পরে আলভিরার মুখে। তা দেখে আরবি আর আয়াত হেসে দেয় বেচারি ভিজে-নেয়ে একাকার।।
আলভিরাও কম না সেও আরবিকে ভিজিয়ে দেয়,, তারপর শুরু হয় তাদের পানি খেলা,, আর আয়াত মানে মানে কেটে পরতে চাইলে আলভিরা ভিজিয়ে দেয় কিন্তু ভুলবশত পানিটা গিয়ে লাগে আয়ানের গায়ে,, সকাল সকাল জগিং করে বাসায় ফিরছে আয়ান আর আরিয়ান। আয়াত আর আলভিরা তো ভয়ে শেষ,,, আরবিকে আয়ান কিছু বলবে না সেটা সবাই জানে। আরিয়ান আয়ানের এই অবস্থা দেখে ফিক করে হেসে দেয়,, হাসতে হাসতে মাটিতে বসে পরে,,, আয়ান সেটা দেখে আলভিরার হাত থেকে পাইপটা নিয়ে আরিয়ানকে ভিজেয়ে দেয়। আর আরিয়ান লাফিয়ে ওঠে দাড়ায় আর বলে
—- বিগ বি কি করছ!! ভিজে গেলাম,,, আরবিও কম কিসে সে সময় বুঝে আয়াতকে ভিজিয়ে দেয়,, সবাই মজা করছে,,,,, সবাই একসাথে কিছু ভালো সময় কাটিয়ে যে যার রুমে চলে যায়,, ফ্রেশ হয়ে খেতে আসে সবাই,,, কিন্তু আয়াত চুপচাপ বসে আছে। কিছু খাচ্ছে না,,, তা দেখে আয়ানের মা বলে
— কিরে,, কি হয়েছে?? আয়াত বলে
— না তেমন কিছু না,, আসলে খেতে ইচ্ছে করছে না। আয়ান রেগে বলে
—- প্লেটে যদি একটু খাবার অবশিষ্ট থাকে তাহলে তো বুঝিসই,,,,, আয়াত ও কিছু না বলে খেতে লাগে। সেটা দেখে সবাই মিটমিট করে হাসছে। আয়াত নিজের মতো চুপচাপ খাচ্ছে আসে পাশে কারো দিকে তাকাচ্ছেও না। তা দেখে আয়ান মনে মনে রাগ করছে একেতো চুলদিয়ে ফেস ঢাকা তার উপর একবার তাকাচ্ছে না অব্দি। আর আয়াতের মাথায় চলছে অন্য কিছু। ,,, ব্রেকফাস্ট শেষে যে যার মতো চলে,, যায়।
আরিয়ান,, আয়াত আর আলভিরা কলেজে পৌছে যায়। চারদিকে হৈ চৈ ছাত্র ছাত্রীদের আনাগোনা,,, সব মিলিয়ে অসহ্য লা গছে সব আয়াতের কাছে।
আয়রিয়ান আলভিরাও বকবক করছে,, আয়াত এবার আর সহ্য করতে না পেরে বলে
— দু’জনই চুপ,,, নয়তো পিটাব দুইটাকে। আলভিরা আর আরিয়ান চুপ হয়ে যায়।
_______
বিকেলে ছাঁদের দোলানয় আধো হয়ে শুয়ে শুয়ে গান শুনছে আয়াত,,, আর আরিয়ান,, আলভিরা আরবি ঝগড়া করছে।। আরিয়ান আলভিরার চুল টেনে ধরে বলে
— বাজে বকবি তো তোরে থাপ্পড় দিব। আলভিরা বলে
—- বাজে কি বকলাম সত্যি কথা বললাম তো তাই।। গিটার বাজাতে পারোনা তো বাজাও কেন? আরবি বলে
—- তোরা দুইটাই চুপ কর নয়তো,, তোদের বুড়িগঙ্গার পানিতে ফেলে দিয়ে আসব। আলভিরা বলে
—- তাহলে এত ভাব নেয় কেন?? আয়ান ভাইয়া কত সুন্দর করে গিটার,, বাজায়..। আয়াত ওদের কথা শুনে হাসছে,, সত্যি আয়ান খুব ভালো গিটার বাজায়৷ তখনই ছাঁদে আসে আয়ান। আয়ান এসেই আয়াতের পাশে বসে পরে আর বলে
—- আয়ান মানে আমাকে নিয়ে কি বলছিলি?
( তোকে নিয়া আর কি বলব! তুইতো তুই হুদাই আয়াতকে কষ্ট দিস) আলভিরা বলে
—- তুমি খুব ভালো গিটার বাজাতে পারো সেটাই বলছি। আয়ান বলে
—- বললেও কাজ হবে না,, হাতে ব্যাথা। আর আয়াত এটা তোর জন্য বলেই নিজের নিজের পেন্টের পকেট থেকে দুইটা কিট-কেট,, আর ডেয়ারি মিল্ক সিল্ক বের করে দেয়। চকলেট জিনিসটা বরাবরই পছন্দ করে। আয়ান চোখ দিয়ে ইশারা করে চকলেট নিতে। আর আয়াত তো হা হয়ে আছে,, মনে মনে ভাবছে
—- এতো জলদি কিভাবে ভালো হলো! নাকি তার থেকে দূরে সরে যাচ্ছে তাই এত কিছু।আয়াত একটা চকলেট খুলে মাত্রই মুখে দিয়েছে৷ তখনই আলভিরা রাগ করে বলে
—- শুধু বউকে দিলে হবে? আমরা কি দোষ করেছি?
আয়ান বলে
—- তো তুই আর বউ কি এক নাকি? উপস্থিত সবাই অবাক,, সাথে আরবিও। আয়াত তো চকলেট মুখে নিয়ে মূর্তি হয়ে বসে আছে। আয়ান তা দেখে বলে
— তুই খাবি না? ওকে আমি খেয়ে ফেলি,, বলেই হাত থেকে চকলেট টা নিয়ে চলে যায়
চলবে