গল্পের নামঃ- #তার_শহরের_প্রেম😍😍
লেখিকাঃ- konika Islam sanju
part:03
আয়াত ছবি তুলে আয়ানকে পাগল করে দিয়েছে। ক্যামেরা মেন তো প্রায় হাঁপিয়ে উঠেছে। আয়ান আয়াতের কানে কানে বলে
—- দেখ,,, এখন ইস্টপ যা,,, যা ছবি তুলেছিস তোর নাতি নাতনিও দেখে শেষ করতে পারবে না। আয়াত বলে
—- দেখুন আমি কোনো ভেজাল চাই না,,,, খুব সুন্দর করে সেজেছি,, আয়ান বলে
—- সুন্দর না ছাই,,, পেত্নীর মতো লাগছে। আয়াত বলে
—- আয়রনের (আয়ান) বাচ্চা চুপ করে পিক তুলেন নয়তো,,, আবার আপনাকে বিয়ে করব,,, আয়ানও দাঁত চেপে চেপে সব সহ্য করে। বউ ভাতের অনুষ্ঠান শেষ। আয়ানের না চাওয়া সত্ত্বেও যেতে হচ্ছে আয়াতদের বাড়ি৷ সারাদিন ক্লান্তির ফলে আয়াত ঘুময়ে যায়, আয়ানের কাঁধে। আয়ান বিরক্ত হয়ে আয়াতের মাথাটা গাড়ির সিটে হেলান দিয়ে দেয়,,, আয়াত আবার সেই আয়ানের কাঁধে ঢলে পরে,,, কিছু বলতেও পারছে না সহ্য করতেও পারছে না। আয়াতের ঘুম ভাঙলে দেখে সে বাসায় পৌঁছে গিয়েছে,, সবাই স্বাভাবিক থাকতে চাইলেও কেউ পারছে না। আয়ান রুমে ঢুকে দেখে আয়াত বিছানায় বসে আছে চারদিকে ফুল দিয়ে সাজানো। আয়ান রেগে বলে
—- এমন সং সেজে বসে থাকার মানে কি!!!আয়াত রেগে বলে
—- কেন জানেন না!! আর এটা আমার রুম,, যেমন খুশি বসে থাকব,, দরকার হলে গরাগরি খাবো আপনার কি হুমমমম!!! আয়ান বলে
—– আজ কাল জবান তোর বেশি চলে,,,, আয়াত বলে
—- মাই জবান ইজ মাই জবান নট ইউর জবান,, আপনার এত সমস্যা কেন? আয়ান বলে
— আর একটা কথা বলবি,,, রুম থেকে বেড়িয়ে যাবো। আয়াত রেগে গিয়ে উঠে দাড়ায় আর বড় বড় কদম রেখে আয়ানের সামনে গিয়ে দাড়িয়ে বলে
—- আপনি একটা,,, আপনি একটা বন হাতি।।। যা খুশি করেন,, আর এত সমস্যা হলে বিয়ে কেন করেছেন?? আয়ান তাচ্ছিল্যর হাসি দিয়ে বলে
— সেটা তুই ভালো করেই জানিস,,,, আমি তোকে না আরিফাকে লাইক করি। আয়াত এবার রেগে গিয়ে বলে
—- আরিফা আপুর মধ্যে কি এমন আছে যা আমার মাঝে নেই!!! কোন দিক দিয়ে কম্তি!! আপনার কি চাই হ্যা,,,নিজের বউ থাকতে,,,, আরেকটা মেয়ের কথা ভাবেন কি করে!!! আর এই সব দোষ আরিফার কেন যে গেলো,,,,, অসহ্য,, সাথে সাথে একটা চড় বসিয়ে দেয় আয়ান আয়াতের গালে। আয়াত চুপ গালটা গরম হয়ে গেছে,, চোখ দিয়ে পানি পরছে।।।৷ আয়ান বলে
—- সমস্যা তুই!! কারণ তুই আরিফা না,,, তোর আর আরিফার মাঝে অনেক তফাত,, সে তোর মতো লাফায় না,,, বড় গলায় কথা বলে না। আর নিজেকে বউ দাবি করলেই কেউ বউ হয়না নিজের লিমিটে থাকবি। বিয়েটা আমি চাপে পরে করেছি। নয়তো তোর মতো মেয়েকে কেই বা বিয়ে করবে!! আরিফার সাথে নিজেকে তুলোনা করিস,, ওর নোখের যোগ্যতা তুই রাখিস!!! আর রূপের কথাতো বাদেই দেই,, তোর ওর মতো দুধে আলতা গায়ের রং,, লম্বা চুল,, নীলমণির চোখ কোনটা আছে তোর!!! আয়াত আর কিছু শুনতে চায় না তাই সোজা রুমে থেকে বেড়িয়ে আসে আর চলে যায় ছাঁদে,,,,, রাত অনেক হয়েছে সবাই ঘুমে,, আয়াত মেঝেতে বসে চিৎকার করে কান্না করছে,, কিছু সহ্য হচ্ছে না তার। আয়ান রেগে দরজায় নক দিয়ে বলে
—– এমন নাটক করার মানে কি!! কি বুঝাতে চাস নিচে আয়। আয়াত তখন কান্না করছে,, আয়ান রেগে চলে যায় । আয়াত কান্না করতে করতে বলে
—– কেন পরলাম “তার শহরের প্রেম” এর মায়ায়,, কেন, ,,,,,৷ সবইতো ঠিকঠাক ছিল,, আরিফা আপুর সাথে বিয়েটা হলেও পারতো,, হয়তো আমার কষ্ট হত তবে এতটা না,,,,,, একসময় ঠিক সামলে নিতাম নিজেকে কিন্তু এখন,, সে আমার হয়েও অন্যের নাম জপে।।। সারা রাত নির্ঘুমে কান্না করতে করতে কাটিয়ে দেয় আয়াত ভরের আযান কানে আসতেই নিচের দিকে পা বাড়ায়।।। রুমে গিয়ে দেখে আয়ান ঘুমচ্ছে,, কেমন নিষ্পাপ লাগছে তাকে। কিন্তু কালকের কথা মনে পরতেই আয়াত মন খারাপ করে চলে যায়। জামা বদলে সে নামাজ পরে নেয় মাথাটা প্রচুর ব্যাথা করছে। সে চুপচাপ বেলকনিতে এসে দাঁড়ায়,, ব্যস্ত শহর,,, ব্যস্ত মানুষের আনাগোনা হঠাৎ করেই সব কেমন অন্ধকার অন্ধকার লাগছে কোনো রকম দোলনা টায় বসে সে। আস্তে আস্তে ঘুমিয়ে পরে। তীব্র রোদ চোখে পড়তেই ঘুম থেকে উঠে বসে আয়াত ,,, তাকিয়ে দেখে সে বিছানায়,, সে তো বারান্দায় ছিল। পাশে তাকিয়ে দেখে আয়ান ফোনে কিছু করছে। আয়াতের দিকে তাকিয়ে থমকে যায় আয়ান,,, চোখ মুখ ফুলে একাকার,, চোখ গুলো লাল হয়ে আছে। আয়ান বলে
—- সরি আসলে কাল রাতে বেশি বেশি,, আয়াত কিছু না বলেই ওয়াশরুমে চলে যায়,, কান্না আসছে তার। আর অন্য দিকে আয়ান বলে
— এত রাগ,, যা খুশি করুক আমার কি!! পরপর দুইদিন কেটে যায়,, আয়াত আয়নের সাথে কথা বলে না এক রুমে থাকলেও যে যার মতো। রাতে সোফায় ঘুমায় আয়াত আর আয়ান বেডে। আজ সকালে সবাই একসাথে নাশতা করছে। তখনই আয়ান ডাকে
— আয়াত,,,।। আয়াত খুশি হয়ে যায় হয়তো নিজের ভুলটা বুঝতে পারছে আয়ান,, কিন্তু না আয়ান বলে
—- দেখ তোকে আমি ভালে রাখতে পারবো না,, তাই আমাদের সম্পর্কটা এখানেই শেষ করা উচিত।। সবার গলায় খাবার আটকে যায়,, আয়ানের বাবা বলে
—- এইসবের মানে কি আয়ান!! আয়ান বলে
—- বাবা তুমি বেশ ভালে করেই জানো,, আমি বিয়েটা কেন করেছি। আর ডিভোর্স হলেই ভালো থাকব আমরা দুজন। আয়াত সাথে সাথে খাবারের টেবিল ছেড়ে উঠে যায়,,, তা দেখে আলভির আর আরবিও পিছু পিছু আসে আয়াতের। কিন্তু রুমে আসার আগেই মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দেয় আয়াত।। সেটা দেখে আলভিরা বলে
—- আপু দরজা খুলো,, এই আপু।। আরবি বলে
— আয়াত দরজা খুল,,সব ঠিক হয়ে যাবে। এই আয়াত।।। সবাই খাবার ছেড়ে চলে আসে আয়ান বলে
—- আবার!!! আয়ানও যায় আয়ান গিয়ে বলে
—- আয়াত এইসব নাটক আর ভালো লাগছে না বেরহ রুম থেকে। তোর আর আমার জন্য এটাই ঠিক। আয়ানের বাবা বলে
—-চুপ,,৷ আরিয়ান (চাচাতো ভাই),, রুমের ডুবলিকেট চাবিটা নিয়ে আয়। আরিয়ান বলে
—- জ্বি চাচ্চু,,, রুমের ডুবলিকেট চাবি এনে দরজা খুলে যা দেখে সবার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পরে। আয়াতের হাত দিয়ে গলগল করে রক্ত পরছে,, পাশেই পরে আছে ফলকাটার সেই ধারালো ছুরি। রক্তে লেপ্টে আছে তার হাত,, আলভিরা আর আরবি তো কান্নাই করে দিয়েছে। আয়ানের মা গিয়ে তারাতাড়ি করে বলে,,
—- কেউ রুমাল কিছু দাও,, আয়ানের চাচি নিজের শাড়ির আচল ছিড়ে তারাতাড়ি হাত বাঁধে আয়াতের। আয়নের চাচা হসপিটালে কল দেয়,, আর আয়নের বাবা বলে আরিয়ান জলদি গাড়ি বের কর। আয়ানের সম্পূর্ণ শরীর মনে হচ্ছে জমে বরফ হয়ে গেছে। সে জানতো আয়াত তার জন্য পাগল,, কিন্তু এমন কিছু করবে ধারনার বাইরে ছিল।। আয়ানের বাবা বলে
— তোর জন্য মেয়েটা এই অবস্থা,,,৷ আজ যদি ওর কিছু হয় তোকপ জেলে দিব। তখনই আরিয়ান দৌড়ে আসে আর বলে
—- চাচ্চু তাড়াতাড়ি আসো,, এই বলে আয়াতকে কোলে তুলে নিল। আয়ান এখনো সেই জায়গায় ঠাই দাড়ানো,,, আরবি আয়ানের কাছে গিয়ে বলে
—- এক জন তোকে ছেড়ে যেতে দুইবার ভাবেনি,, আর অন্য জনকে তুই ছাড়ার কথা বলতেই, সে দুনিয়ার মায়া ছাড়তে চেয়েছে ,,, আজ যেমন আয়াত তোর জন্য কাতরাচ্ছে,, সেইদিন বেশি দূরে না যখন তুই ওর পিছু ঘুরবি তুই ওর জন্য পাগল,, থাকবি এই চেনা শহরেই তোদের দেখা হবে,,, মাথায় নাড়া দিয়ে উঠবে হাজারো স্মৃতি কিন্তু হয়তো তোরা আর এক থাকবি না।। বলেই চলে যায়।।
চলবে
ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে।।।