গল্পের নামঃ- #তার_শহরের_প্রেম😍
লেখিকাঃ- konika Islam sanju
part:01
চাচাতো বোনর জায়গায় বাসর ঘরে বউ সেজে বসে আছি,,, আজ আয়ন ভাইয়া আর আরিফা আপুর বিয়ে ছিল,, কিন্তু বিয়ের ঠিক কিছু সময় আগেই আরিফা আপু হাওয়া,,, মানে তার প্রেমিকের সাথে পালিয়েছে। আর তার বদলে বুলির পাঠা হতে হয়েছে আমার। এতে অবশ্য আমার বিন্দু মাত্র আফসোস নেই কারণ আয়ন ভাইয়ার প্রতি আমি বরাবরই ক্রাশিত,, একবার বলেছিলাম,,,,যে তাকে আমি লাইক করি,,
তখন সবে মাত্র ক্লাস টেনের ছাত্রী ছিল আয়াত,,, সারাদিন স্কুল করে বিকেল ৫ টা নাগাত বাসায় ফিরি,,, তখনই দেখি ড্রয়িং রুমে আড্ডায় মতে ছিল, আয়ন ভাইয়া,,, সাদী ভাইয়া,আরিফা আপু,, আরো অনেকে,,, তারপরের দিন ছিল আরিফা আপুর জন্মদিন। আর আমারও ছিল পরীক্ষার ব্যাপক চাপ,,,,সামনেই বোর্ড পরীক্ষা,,, আপুর জন্মদিনের দিন জানতে পারি,,, আয়ন আর আরিফা আপুর বিয়ে,,, আরিফা আপুর অর্নাস কম্পিলিট হলেই তাদের বিয়ে। মানে এক বছর পর। কথাটা শুনা মাত্র মনটা ভেঙে গিয়েছিল। নিজের সেই অবাধ্য অনুভূতি গুলোকে আর দমিয়ে রাখতে পারেনি। সেদিন রাতে ছাঁদে দাড়িয়ে আয়ন ভাইয়া দাড়িয়ে সিগারেট টানছিল,,,,,,তখনই আমি ছাঁদে যাই,,,,, আয়ন ভাইয়া আমাদের বাসায় আসলে,,, এক মাত্র এই ছাঁদেই বেশি পাওয়া যায়,,, আমাকে দেখে সিগারেট টা ফেলে বলেছিল
—- কিরে তুই এখানে?? কিছু না ভাবেই ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলাম
—- আই লাভ ইউ ভাইয়া,, তুমি বিয়েটা ভেঙে দাও। তোমাকে নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন। আমি তোমাকে লাইক করি । আয়ন ভাইয়া আমাকে ছাড়িয়ে বলে
—- পাগল হয়েগিয়েছিস? আমার আর আরিফার বিয়ে ঠিক,, আমি আরিফাকে লাইক করি। আর তুই এইসবের কি বুঝিস? বেশি পেকে গিয়েছিস না,,, কানের নিচে দুইটা পরলে ঠিক হয়ে যাবি। মামা-মামী কে বলব??? সেদিন অনেক ভয় দেখিয়ে পাঠিয়ে দেয়,,, কিন্তু আমি আর আমার অবাধ্য মন সব মানতে নারাজ ছিলাম। পরীক্ষার রেজাল্ট ও আহামরি ভালো হয়নি।।। ভাইয়ার প্রতি আরো দূর্বল হয়ে যাই৷ বিয়েটা যেন আমি মানতেই পারছিলাম না। অনেক কল্পনা জল্পনা করেও কোনো রাস্তা পেতাম না,, হঠাৎ করে আরিফা আপুই সেটা তৈরি করে দেয়।
_________
।আয়াতের অতীতের ভাবনায় ছেদ ঘটে যখন রুমে কেউ প্রবেশ করে,,, দেখে আয়ন হাতে বিয়ারের বোতল।
আয়াত মনে মনে বলে আল্লাহ বাঁচাও যেই রাগ এই ব্যাটার এই বোতল ভেঙে আমার পেটে ঢুকিয়ে না মেরে দেয়। রক্ষা কর আল্লাহ রক্ষা কর। আয়াত মনে মনে এইসব বলছে,,, অনেক সময় হওয়ার পরও আয়াত কোনো সারা শব্দ পায়না। তাই ঘোমটা তুলে দেখে আয়ন কোথায়,,, চোখ মেলে তাকাতেই দেখে আয়ন তার সামনে দাঁড়ানো। কেমন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। বোতলটা সাইডে রেখে,,, আয়াতের দিকেই আগাচ্ছে,,, ভয়ে আয়তাের হার্ট বেচারা লাফালাফি শুরু করে দিয়েছে,,,
এখন না বলে এইটা আমার প্লান আমি আরিফা আপুকে পালাতে বলছি,, আর দুই চারটা চড় বসিয়ে দেয় গালে। কিন্তু না অবাকে করে আমার ঠোঁটে লেগে থাকা লিপস্টিক টা নিজের বৃদ্ধা আঙুল দিয়ে মুছে মুখটা কাছে নিয়ে বলে
—- আই লাভ ইউ। বলে কি!! আমাকে লাভ করে,,, ওএমজি,,, ভাবা যায়,,, খুশিটা আর বেশি সময় থাকল না আমার মুখে। আয়াতের কপালে চুমু দিয়ে বলে
—- আই লাভ ইউ আরিফা। মুহূর্তেই মেজাজটা বিগরে যায়৷ ভুলেই গিয়েছিলাম বেটা আয়রন (নিক নেম আরকি) নেশায় নিজের মধ্যে নেই। আমি কিছু বলতে যাব তখনই আমার উপর ঢলে পড়ে। আল্লাহ এইবার বাঁচাও আমাকে,, নয়তো এই লোহার বস্তার ভারে নিশ্চিত মারা পরব। মাবুদ। কোন রকম নিজেকে আয়নের থেকে ছাড়িয়ে নেয় আয়াত,,,, বড় বড় কয়েকটা নিশ্বাস ফেলে বলে
—– কোন পাগলের পাল্লায় পরলাম আমি!!! তারপর নিজের মাথার দোপাট্টা টা খুলে ফেলে, আয়াত,, তারপর আয়নের পরনের সেরয়ানি,,, আর পায়ের জুতা। জুতা খুলতে গিয়ে আয়তা নাক ছিটকে বলে
—- ইয়াকককক ছিঃ,,, কি বাজে গন্ধ। তারপর খুজে পারফিউম মেরে দেয় আয়নের পায়ে। তারপর একটা শান্তির নিঃশ্বাস ফেলে লাগেজ থেকে জামা কাপড় দিয়ে চলে যায় ওয়াশরুমে,, সুতির একটা থ্রিপিস পরে ওযু করে বেড়িয়ে আসে। নিজের পছন্দের মানুষটাকে পেয়েছে তাই চার রাকাত নফল নামাজ আদায় করে আল্লাহকে ধন্যবাদ জানায় আয়াত।।।। ভাবতেই পারেনি যে আয়াত আয়নকে পাবে। আয়াত হলো আয়নের বড় ফুপির বড় ছেলে,,, তাদের কাজিনদের মধ্যে তাকে সবাই চকোলেট বয় বলত। কিন্তু আয়াতের কাছে ছিল সে আয়রন,, কারণ বরাবরই সে দূর দূর করত। আজকে সে শুধু বারবার বলছিল আল্লাহ একটা মিরাকেল করে দাও,, সে ভাবতেই পারেনি এমন কিছু হবে,, আরিফা চলে যাবে৷ যখন বউকে আনতে যাওয়া হয় দেখে একটা চিরকুট লেখা
বাবা – মা আমাকে খুজ না,, আমি ভালোই আছি বিয়েটা আমি করতে পারব না সেটা বলার সাহস আমার কাছে ছিল না,,, তাই তোমাদের অমতেই পালিয়ে গেলাম,, সৌরভের সাথে,,, ভালো থেকে ইতি
আরিফা❤️
__________
আপুর চিঠি পাওয়ার পর বাসায় তখন হরতগল লেগে যায়,, পরে সবার মতে আয়ন আর আমার বিয়েটা হয়। এখন থেকে আয়নই বলব ভাইয়া আর বলব না কারণ এখন সে আমার পাতী হাস ইয়ে মানে,, হাসবেন্ড। দেখ কি বাচ্চাদের মতো ঘুমাচ্ছে। তখন তো আমার কপালে একটা কিস করেছিল যদি আরিফা আপু ভেবে,, কিন্তু আমকেইত করেছে,, আমি এবার কার ঋন রাখি না। একটু ভয় ভয় লাগছে যদি জেগে যায়?! জাগুক আমারই তো হাসবেন্ড।
এই লম্বা নাকটা,,, এই ঘন কালো বড় পাপড়ি ওয়ালা চোখ গুলা আনার,, এই মানুষটাই আমার ভাবতেই কেমন কেমন ফিল হচ্ছে। ইশশশশ মনে হচ্ছে আজকের দিনটা ছিল আমার লাইফের বেস্ট ডে যদিও চাচা চাচির জন্য খারাপ লেগেছে। কিন্তু আমি খুশি৷ খুব খুশি।
ধীর পায়ে আয়নের দিকে এগিয়ে যায় আয়াত।।।। কোপালে সিল্কি চুলগুলো লেপ্টে আছে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আছে মাথায়। ইশশ আয়াত তাড়াতাড়ি করে এসির পাওয়ারটা বাড়িয়ে দেয়।
আর ওড়না টা দিয়ে আয়নের মাথার ঘাম গুলো মুছে দেয়। তারপর আয়নের দিকে ঝুকে একটা কপালে কিস করে,,, আয়ন একটু নড়েচড়ে উঠে,, আয়াত ঘাবড়ে গিয়ে উঠতে চাইলে আয়ন ঘুমের ঘোরে জড়িয়ে ধরে আয়াতকে।
কি থেকে কি হয়ে গেলো?!!!! এখন কি হবে,, যে ভাবেই হোক আমার এখান আয়নের বাহুডোর থেকে বেড় হতে হবে,, যদিও ইচ্ছে নেই। কিন্তু ঘুমাতে সমস্যা হবে। আয়তারে বাজে অভ্যাস আছে কেউ তাকে জড়িয়ে ধরলে ঘুম আসে না। এত চেষ্টা করেও নিজেকে ছাড়াতে পারলাম না। পরে বাধ্য হয়ে সেখানেই শুয়ে থাকি ঘুমও আসছে না। কি করি কি করি!!! এইসব ৬/৯ ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে যাই তাও জানিনা।
____________ ♪ ♪ ♪ ♪
সকাল ৭ টায় ঘুম ভাঙে আয়নের মাথাটা সম্পূর্ণ ধরে আছে। বিছানা ছেড়ে উঠতে যাবে তখনই বুকে ভারি কিছু অনুভব করে। তাকিয়ে দেখে তার বুকে মুখ গুজে শুয়ে আছে এক যুবতী। এক চিলতি হাসি চলে আসে ঠোঁটের কোনে । কিন্তু যখনই মনে পরে এটা আরিফা না আয়াত সাথে সাথে,, তাকে বালিশে নামিয়ে দেয় ।।। কিছু সময় চোখ বুঝে মাথার চুলগুলো টেনে ধরে। পাশে শুয়ে থাকা আয়াতের দিকে চোখ বুলিয়ে কাবার্ড থেকে জামা কাপড় নিয়ে চলে যায় ওয়াশরুমে। শাওয়ার নিয়ে বেড়িয়ে আসে দেখে আয়াত উঠে হাই তুলছে,, এলো মেলো চুল,, ফোলা মুখ,, আয়াত আয়নকে দেখেই নিজের মুখ বন্ধ করে নিয়ে মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে
—– গুড মর্নিং। আয়াত রেগে তার হাতের তোয়ালেটা আয়াতের দিকে ছুড়ে দিয়ে বলে
—- গুড মর্নিং মাই ফুট। আয়াত তোয়ালাটা নিয়ে গলায় পেচিয়ে,, আয়নের সামনে এসে বলে
—- খরুশ একটু সুন্দর করে কথা বললে কি হয়?, আয়ন নিজের চুল গুলো হেয়ার ড্রাই দিয়ে ড্রাই করছিল,, সাথে সাথে নিজের হাতে থাকা হেয়ার ড্রাই টা আয়াতের মুখের দিকে ধরে,,, বেচারি তাড়াতাড়ি নিজের মুখ হাত দিয়ে দূরে সরে যায় আর বলে
—- আপনি এমন কেন? এখন আমি আপনার বিয়ে করা বউ। দেখ নিব আপনাকে,,, মি.আয়ন। আয়ন বলে
— কি বললি তুই? আয়াত রেগে বলে
—- কানে কম শুনতে পান? আল্লাহ সব ছেড়ে একটা বয়রাকে আমার বর বানালা!!! শুনতে পান নাই কি বলছি?? আয়ন বলে
—- না আরেক বার বল!দেখ কি করি! এক ভ্রু উচু করে,, দাঁত চেপে চেপে আয়াত তোয়ালেটা নিয়ে দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে বলে
—- বলেছি আপনাকে আমি দেখে নিব,, এর বদলা আমি ঠিকই নিব। আয়ান গিয়ে বাইরে থেকে দরজা লক করে দিয়ে বলে
—- তোকে বউ মানে কে?? আর এটা তোর শাস্তি বেশি বেশি বউ সাজার জন্য,, সারাদিন এই বাথরুমে কাটাবি তুই,,, বলেই বেড়িয়ে যায়,,, আয়াত ভাবে,,আয় কি কখনোই তাকে স্ত্রী হিসেবে মানবে না?? কি হবে এখন “! যাক আগে গোসলটা সেরে নেই পরে দেখা যাবে
চলবে?