তারারাতেরসন্তান ২য় পর্ব
.
#Masud_Rana
.
মিলি যেই বিছানা থেকে উঠতে যাবে দেখল অনিক তার ঘরের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে কিছু একটা বলতে এসেছে সে। মিলি প্রশ্ন করল, কিরে কিছু বলবি? অনিক ধীরে ধীরে মিলির বিছানায় এসে বসে। আমতা আমতা করে বলে, আপু একটা কথা কিছুদিন ধরেই তোমাকে বলবো বলবো ভাবছি। কিন্তু কথাটা বেশ অদ্ভুত। তাই কথাটা বলে উঠতে পারছি না। কয়েকদিন ধরেই হঠাৎ মাঝরাতে হাড় কামড়ে খাওয়ার মতো কটমট শব্দ শুনে আমার ঘুম ভাঙে। শব্দটা আসে তোমার ঘর থেকে। আমি ধীরে ধীরে তোমার ঘরে আসি। আলো জ্বালাই। এরপর কী হয় সকালে আমার মনে থাকে না। বিষয়টা কী স্বপ্ন নাকি বাস্তব এটাই বুঝতে পারছি না!
.
অনিকের কথা শুনে মিলি ভেতরে ভেতরে বেশ চমকে উঠে। তবে বাহিরে তা প্রকাশ করে না। মিলির সাথেও যে ঠিক একই রকম ঘটনা ঘটে এটা সে অনিককে জানাতে চাচ্ছে না। তাহলে মিলির মত অনিকও বিষয়টা নিয়ে গভীর চিন্তায় জড়িয়ে যাবে। মিলি মুখে কিছুটা বিদ্রুপের হাসি ফুটিয়ে অনিককে বলে, কী যাতা বলছিস! আমার ঘর থেকে ওরকম শব্দ আসবে কেন? তুই স্বপ্নই দেখেছিস। না হলে বাকি অর্ধেক ঘটনা মনে থাকবে না কেন?
.
অনিক একমত পোষন করল এবং ঘর থেকে বের হয়ে গেল। মিলির চিন্তা কিছুতেই কাটছে না। ঘটনাটা মোটেও স্বাভাবিক কিছু না। এটা স্বপ্ন হোক বা বাস্তব। এর পেছনে একটা বড় রহস্য রয়েছে। মিলি হাত-মুখ ধুয়ে সকালের নাস্তা শেষ করে তার ঘরে আসে। ঘরের জানালা ঘেঁসে দাঁড়িয়ে রাতের ঘটনাটা নিয়ে গভীর চিন্তায় ডুবে যায় সে। হাতে একটা কলম ছিল তার। অন্যমনষ্ক হয়ে এটাই কামড়াচ্ছিল সে। হঠাৎ হাত ফসকে কলমটা জানলা দিয়ে বাইরে পড়ে যায়। কলমটা মিলির অনেক পছন্দের ছিল। মিলি দ্রুত ঘর থেকে বের হয়ে বাড়ির পেছনে জানালার পাশটাতে গেল কলমটা আনতে। মিলি মাথা নিচু করে যেই কলমটা তুলতে যাবে, দেখল কলমটার পাশে একটা গুলটি করা কাগজ পড়ে রয়েছে। মিলি স্বাভাবিক ভাবেই কলমটার সাথে কাগজটাও তুলে নিল। কাগজটার গুলটি খুলল কিসের কাগজ দেখতে। কাগজটাতে যা লেখা রয়েছে তা পড়ে মিলি স্তম্ভিত হয়ে গেল। তার চোখ কপালে উঠে যাওয়ার জোগাড়। কাগজটিতে লেখা, “এখন মধ্যরাত। ঘড়িতে ৩টা ২১ বাজে। আমি অনিকের ঘরে যাচ্ছি।” এই লেখাটাইতো সে গতরাতে লিখেছিল। তার মানে রাতের ঐ ঘটনাটা মিথ্যা বা স্বপ্ন না। তার ভাই অনিকের সাথেও এই ঘটনা ঘটে এটাও সত্য! রহস্য ক্রমশ জট পাকিয়ে যাচ্ছে মিলির কাছে। তাদের সাথে হঠাৎ করে এমন কেন হবে! মিলির এখন কিছু করার আছে কিনা সে বুঝতে পারছে না। অনিককে বলে অনিকও সমাধান করতে পারবে না বিষয়টার উল্টো সেও আরও ধাধায় পড়ে যাবে।
.
মিলি বেশ দুঃশ্চিন্তাগ্রস্থ মুখ নিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ে গেল। মিলিদের ক্লাশ শুরু হয়েছে অনেক আগে থেকেই। মিলি ক্লাশে যায়নি। মাঠের ঘাসের উপর উদাসীন হয়ে চুপচাপ বসে রয়েছে। হঠাৎ পেছন থেকে কেউ একজন এসে তার চোখ চেপে ধরে বলল, বলতো আমি কে? দেখি তোর কন্ঠ শুনে মানুষ চেনার ক্ষমতা কতটা? মিলি বেশ চমকে উঠে বলল, মিথিলা! তুই? বলেই তার চোখ থেকে মিথিলার হাত সড়িয়ে নিল। মিথিলাকে জড়িয়ে ধরল। মিলি বেশ উত্তেজিত হয়ে মিথিলাকে বললঃ
-তুই কয় মাস পর আজ ক্যাম্পাসে এলি?
-বেশিদিন তো হয়নি। মাত্র ৬ মাস।
-এটা মাত্র! তোর বাসা থেকে কিছু বলে না?
-বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে ৬ মাস আগেই। এখন এই-ওই আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে বেড়িয়ে, নানান জায়গায় ঘুরে সময় কাটাচ্ছি।
-মানে? তোকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে কেন?
-যাদুবিদ্যা চর্চা করছি। কালো যাদু। পরিবারের কাছে ধরা পড়ে গেলাম। তাই তাদের ধারণা আমি ডাইনী হয়ে যাচ্ছি এবং পরামর্শ করে বাড়ি থেকে বের করে দিল।
-কালো যাদু মানে?
-শয়তানের উপাসনা।
-তার মানে তুই শয়তানের পূজা করিস?
-ছি! আমি ওসব করি না। তবে আমি যখন স্কুলে পড়ি তখন থেকে এই বিদ্যার প্রতি আমার তীব্র নেশা কাজ করত। তাই এই বিদ্যা নিয়ে দীর্ঘ একটা গবেষণা করেছি। অনেকগুলো ডাকিনী বিদ্যা, কালোযাদু বিদ্যার পুস্তিকা পড়েছি। অনেক তান্ত্রীকের সাথে আশ্রমে সময়ও কাটিয়েছি। এই পৃথিবীতে অনেক বড় বড় শয়তান পূজারী রয়েছে। এরা প্রকাশ্যে শয়তানের পুজা করে না বলে এ বিষয়ে আমাদের কোনই ধারণা নেই। অথচ তাদের জন্য আমাদের অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। তারা অনেক নিষ্পাপ আত্মাকে ফাঁদে ফেলে শয়তানের কাছে বিক্রী করে। নিজেদেরকেও উৎসর্গ করে শয়তানের কাছে। আমি মূলত এদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে চাচ্ছি। কালো যাদু নিয়ে শয়তান যেমন তার পুজারীদের দিয়ে বই রচনা করিয়েছে। আমিও তেমন গবেষণা করে এই যাদুর বিপরীতে গবেষণা করে একটা বই লিখছি। যেই বইটা পড়ে মানুষ কালো যাদু ও শয়তানের মায়া থেকে বাঁচতে পারবে।
-বই? কী বই?
-বইটা লেখা প্রায় শেষ। দীর্ঘ অনেক বছরের গবেষণা। বইয়ের
নাম এখনও ঠিক করি নি। তবে, “তারা রাতের সন্তান” নামটা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।
-বাহ! এতকিছু নিয়ে গবেষণা করলি কবে?
-কলেজ থেকেই শুরু করেছি। বিভিন্ন কাজিনদের ম্যানেজ করে তাদের দিয়ে বাসায় মিথ্যা কথা বলাতাম। সেই সময়টাতে বিভিন্ন তান্ত্রিক বা কালো যাদুকরদের সঙ্গে কাটাতাম। তাদেরকে সন্তুষ্ট করে এই বিদ্যার দুর্বলতা, গোপনীয়তা সব জেনে নিতাম। অনেক গোপন বইও তাদের থেকে নিতাম। সেইগুলো বাড়িতে নিয়ে পড়তাম। তবে আমি শয়তানের উপাসক না। আমি এসব একটা ভালো উদ্দেশ্য নিয়ে করে এসেছি। এখন আমি শয়তানের উপস্থিতী অনুভব করতে পারি। ৬মাস আগেও এক নতুন বড় কালো যাদুকরের আশ্রমে গিয়েছিলাম। তারা কোনো একটা বইয়ের মাধ্যমে লুসিফারকে পৃথিবীতে আনার প্লান করছিল। আফসোস বাসায় তখন আমার সব তথ্য ফাস হয়ে যায়। আশ্রম থেকে মামারা আমাকে বাড়িতে নিয়ে যায়। বাড়িতে কালো যাদুর সব বইই তারা খুঁজে পায়। এবং আমাকে ডাইনী যাদুকর বলে বাড়ি থেকে বের করে দেয়।
-তুই শয়তানে বিশ্বাস করিস?
-কেন করব না? ঈশ্বর যেমন সত্য শয়তানও তেমন সত্য। ঈশ্বর ইতো আমাদের শয়তানের বিষয়ে সতর্ক করেছেন। শয়তান ধ্বংস হবে ঈশ্বর অবিনশ্বর।
-বাদ দে। শয়তানের কথা শুনতে ভালো লাগছে না। অন্য কিছু বল। এখন তাহলে কী করবি?
-সেইটাই ভাবছি। কিছুদিনের জন্য থাকার মতো একটা জায়গা খুঁজছি।
-আমাদের বিশাল বাড়ি। থাকি কেবল ৪জন। তুই চাইলে আমার সাথে আমাদের বাড়িতে থাকতে পারিস।
-দেখ, বাঙালী রীতি হিসেবে আমার প্রথম প্রস্তাবে না করা উচিত। কিন্তু আমার আর কোনো উপায় নেই। তাই নির্লজ্জের মতো তোর প্রস্তাবে রাজি হলাম।
.
.
মিলি এবং মিথিলা হাসতে হাসতে গল্প করতে করতে তাদের বাড়ির দিকে এগিয়ে গেল। মিথিলা মেয়েটির সাথে মিলির পরিচয় সেই ভার্সিটির প্রথম দিন থেকেই। মিথিলা মেয়েটি অনিয়মিত ক্লাশে আসে এবং কারও সাথে মিশে না। মিলির সাথে এত ভাব কী করে হলো এটা মিথিলাও যানে না। তবে মিথিলাকে মিলি অসম্ভব রকমের পছন্দ করে। মিথিলা মেয়েটি মুগ্ধ হওয়ার মতোই একটা মেয়ে এবং একটা রহস্য জাল দিয়ে নিজেকে সর্বদা আবৃত করে রাখে। মিলি মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয় বাড়িতে পৌছালে রাতের পুরো ঘটনাটা সে মিথিলাকে খুলে জানাবে।
.
মিলি বাড়িতে ফিরে দেখে ঘর বাহির থেকে তালা দেওয়া। যদিও এই তালার চাবি মিলির কাছে আছে তবুও মিলি চিন্তিত হয়। বাড়ির সবাই গেল কোথায়? সে ভার্সিটি যাওয়ার আগে দেখেছে অনিক, তার মা এবং বাবা ৩ জনেই বাড়িতে। অনিক কোনো এক অজানা কারণে নিয়মিত কলেজ কামাই দিচ্ছে। বাবা আজ ঠান্ডা-জ্বরের কারণে অফিস যাননি। তাহলে এখন সবাই কোথায়?
.
মিলি তালা খুলে মিথিলাকে নিয়ে বাড়িতে ঢুকে। বাড়িতে ঢুকতেই মিথিলার হাব-ভাব কেমন যেন বদলে গেল। সে কুকুরের মতো মিলির গাঁ শুকতে শুরু করল। মিলি বেশ ভয় পেয়ে গেল। মিথিলা এবার কুকুরের মতো মেঝে শুকে শুকে অনিকের ঘরের দিকে চলে গেল। মিলিও গভীর বিষ্ময়ে তার পিছুপিছু ছুটল। অনিকের ঘরে গিয়ে মিথিলা ঘরের মাঝখানে কয়েকটা পাক দেয়। কুকুরের মতো নাক ছিটকায়। এরপর মিলিকে বলে, এই ঘরে কে থাকে রে? মিলি কিছুই বুঝতে না পেরে আমতা আমতা করে বলে, আমার ছোট ভাই থাকে। এইবার কলেজে পড়ে। মিথিলা কথাটা শুনে একটা বিদঁঘুটে হাসি দেয় আর জানতে চায়, তোর বাড়ির বাকি সবাই কোথায়? মিলি আবার সেই আগের চিন্তায় ফিরে আসে। আসলেইতো বাকি সবাই কোথায়? মিলি অনিককে কল দেয়। প্রথম বার অনিক কলটা ধরে না। দ্বিতীয়বারে কল ধরতেই :
-হ্যালো অনিক, কোথায় তুই?
-আপু, আমি হাসপাতালে।তোমাকে একবার. . .
. .
-হাসপাতালে! মানে! কেন? কী হয়েছে?
-আপু তুমি হাসপাতালে চলে আসো। আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। বাবা আর মা হঠাৎ করে খুব অসুস্থ হয়ে পড়লেন। কয়েকজন প্রতিবেশীদের সাহায্য নিয়ে আমি তাদের হাসপাতালে নিয়ে এলাম। এখন খালাও এসেছেন। ডাক্তার বলছেন , তারা দুজনেই নাকি একসাথে প্যারালাইসড হয়ে গেছেন।
-প্যারালাইসড! এতো কিছু হয়ে গেল, তুই কী মহা পন্ডীত হয়ে গেছিস? আমাকে একটা কল দেওয়ার প্রয়োজন মনে করলি না? (কাঁদতে কাঁদতে)
-আমি তখন এতকিছু ভাবিনি। তুমি প্রোগ্রেস ভিউ হাসপাতালে চলে আস।
.
মিলি কল কেঁটে কাঁদতে কাঁদতে মিথিলাকে বাবা-মায়ের ঘটনাটা বলে। মিথিলা হাই তুলতে তুলতে বলে, তুই যা তাহলে হাসপাতালে। আমার খুব ক্লান্ত লাগছে। আমি তোর ঘরে বিশ্রাম নেই। খাওয়ার মতো কিছু থাকলে দিয়ে যা।
.
মিলি মিথিলাকে একা বাড়িতে রেখেই হাসপাতালে চলে গেল। অনিক বেশ চিন্তাযুক্ত মুখ নিয়ে তার খালা আর খালাতো বোনদের সাথে হাসপাতালের বারান্দায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। মিলি সেখানে গিয়েই কেঁদে ভেঙে পড়ে। তার খালা তাকে স্বান্তনা দেন। ডাক্তারের কাছ হতে তারা জানতে পারেন মিলির বাবা এবং মা কোনো একটা কিছু দেখে প্রচন্ড ভয় পেয়ে প্যারালাইসড হয়ে গেছেন। হাত-পা নাড়াতে পারছেন না এবং কথাও বলতে পারছেন না। মিলি অবাক হয়, বাড়িতে কী এমন আছে যেটা দেখে তার বাবা-মা এতটা ভয় পেতে পারে! অনিকের কাছে জানতে চাইলে সে বলে, আমি কিছুই জানি না। আমি ঘরে বসে বই পড়ছিলাম। হঠাৎ মায়ের বিকট চিৎকার শুনতে পাই। ঘরে গিয়ে দেখি বাবা-মা দুজনেই মেঝেতে পড়ে রয়েছেন। তাদের শরীর কাপছে।
.
মিথিলাকে যে বাড়িতে একা রেখে এসেছে দুঃশ্চিনায় মিলি কথাটা প্রায় ভূলেই গেল। দেখতে দেখতে রাত ৯টা বেজে গেল। ডাক্তার বললেন, তাদের বাবা-মায়ের দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠার সম্ভাবনা ক্ষীণ। সপ্তাহ খানেক হাসপাতালে রাখতে হবে তাদের। পরবর্তীতে সুস্থতা সাপেক্ষে বাড়িতে পাঠাবেন।
.
মিথিলা আগে মোবাইল ব্যবহার করত না। এখন করে কিনা মিলি জানে না। তাই নাম্বারটা তার কাছে নেই। হাসপাতাল থেকে আর মিথিলার সাথে যোগাযোগ করা হয়নি। মিলির খালাতো বোনরা নিজেদের বাড়িতে চলে গেল। হাসপাতাল মিলি, অনিক আর তাদের খালা রয়ে গেলেন। হাসপাতালে থাকার তেমন ভালো ব্যবস্থা নেই। তাই তাদের খালা তাদের বাড়িতে চলে যেতে বললেন। অনিক চলে গেল তবে মিলি রাজি হলো না। সে তার বাবা-মা আর খালার সাথে হাসপাতালেই রয়ে গেল। মিলি অনিককে বলল, বাড়িতে বোধ হয় রান্না হয়নি কিছু। তুই দুই প্যাকেট খাবার নিয়ে যা। আমার বান্ধবী মিথিলা আছে বাড়িতে। ওর সাথে খেয়ে নিস। অনিক বাড়িতে চলে গেল।
.
সারারাত হাসপাতালে থাকার পর সকাল ৯টার দিকে খালাকে হাসপাতালে রেখে মিলি বাড়িতে চলে আসে। রান্না করতে হবে।
বাড়িতে এসে মিথিলাকে খুঁজে পায় না সে। অনিক বলে সে নাকি সকাল হতেই তার ব্যাগ নিয়ে কোথায় চলে গেছে। মিলি অবাক হয় মিথিলা তাকে না জানিয়েই কেন চলে গেল! সে কী মিলির পরিস্থিতী বুঝতে পারেনি! অবহেলা সহ্য করতে না পেরে চলে গেছে!
.
মিলি রান্নাঘরে গিয়ে দেখল দুটি খাবার প্যাকেট একটা ন্যাট ব্যাগে রাখা রয়েছে। তাহলে কী রাতেও মিথিলা বা অনিক কেউই খায়নি! মিলি যেই অনিকের ঘরের দিকে যাবে হঠাৎ তার মোবাইলে একটা অচেনা নাম্বার থেকে কল এল। কল ধরতেই ওপাশ থেকে মিথিলার কন্ঠ:
-কিরে দোস্ত, তোকে না বলে চলে এসেছি তাই বুঝি রাগ করেছিস?
-আরে মিথিলা! তুই? আমার নাম্বার পেলি কোথায়? আর তুইতো বুঝতেই পারছিস আমার বর্তমান পরিস্থিতিটা। বাড়িতে আনার পর তোর আর কোনো খোঁজ নেই নি। ভাবলাম তাই হয়তো রাগ করে চলে গেছিস।
-আরে ধুর! না। আমার পরিবার আবার আমাকে মেনে নিয়েছে। কল করেছিল। তাই সুযোগ বুঝে বাড়িতে ফিরে এসেছি। এখন রাখি। তোর সাথে পরে দেখা করব।
.
ওপাশ থেকে কলটা কেটে দিল মিথিলা। মিলি ভুলেই গেল অনিকের ঘরে সে কেনো যাচ্ছিল। সে আবার রান্নাঘরে ফিরে এসে রান্না চড়ায়।
.
দিনের বাকিটা সময় মিলি হাসপাতালে কাটায়। তার খালাও তার সাথে ছিল। অনিক সারাদিনে তার মা বাবাকে একবারও দেখতে আসেনি। মিলি এ বিষয়ে চিন্তিত নয়। হয়তো হঠাৎ করে এত বড় একটা ধাক্কা সামলে উঠতে পারছে না ছেলেটি। রাত হয়। রাতে মিলি হাসপাতালে থাকতে চায়। তার খালা তাকে জোর করে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। বলেন, হাসপাতালে থাকলে তোর দুঃশ্চিন্তা আরও বাড়বে। তুই বরং অনিকের সঙ্গে বাড়িতে গিয়ে থাক। চিন্তা করিস না। আমরাতো আর মরে যাইনি।
.
মিলি বাড়িতে আসে রাত সাড়ে ৯টায়। অনিক রাতের খাবার না খেয়েই তার ঘরের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করে শুয়ে আছে। মিলি খাবার জন্য ডাকলে সে বলে, আমার মাথা ব্যথা করছে। তুমি খেয়ে নাও। আমি এখন ঘুমাব।
.
মিলি খাবার শেষে তার ঘরে এসে শুয়ে পড়ে। শরীর ক্লান্ত থাকায় কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়ে সে। মধ্যরাতে একটা মেয়েলি কন্ঠের চাপা কান্নার আওয়াজে তার ঘুম ভাঙে। কান্নার শব্দটা বেশ ভয়ংকর। আরও ভয়ংকর বিষয় হচ্ছে কান্নার শব্দটা আসছে তার ঘরের খাটের নিচ থেকে। ভয়ে মিলির শরীরের রক্ত যেন জমে বরফ হয়ে যাচ্ছে। গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। ভয়ংকর কান্নার শব্দটা সে স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে। কী ভয়ানক কান্না! মিলি ভয়ে ভয়ে বিছানায় বসে মাথা ঝুকিয়ে দিচ্ছিল খাটের নিচের দিকে এটা দেখতে যে খাটের নিচে কে! মিলি যেই খাটের নিচে উকি দিবে হঠাৎ মিলিকে হতভম্ব করে দিয়ে খাটের নিচ হতে অবিকল মিথিলার কন্ঠে ভেসে আসল:
-খাটের নিচে উকি দিস নে মিলি। আমি মারা গেছি অনেক্ষণ আগে। আমাকে খুন করা হয়েছে। আমার ভয়ংকর কুৎসিত চেহারা দেখে তুই ভয় পাবি। …………………………………………………………………………………………
.
.
. . . . . . . . . . চলবে . . . . . . . . .