তান্ডবে ছাড়খার পর্ব-১৫

0
514

#তান্ডবে_ছাড়খার
#পর্ব_১৫
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর

বন্যা খিলখিল করে হাসে।তাহসানের কাধে মাথা রেখে ফিসফিস করে বললো,
“আপনি খুব দুষ্টু।”

তাহসান বন্যার হেলানো মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,
“আমি মোটেই দুষ্টু না শুধুমাত্র তোমার কাছে আসলেই আমার যতো দুষ্টুমি করতে ইচ্ছে করে।”

বন্যা তাহসানের গালে হাত রাখে।বন্যার হাতের স্পর্শ পেয়ে তাহসান বন্যার দিকে তাকিয়ে থাকে।দুজনের চোখে ভালোবাসার মৃদু মিষ্টি কথার আদান-প্রদান হয়।বন্যা আস্তে করে বললো,
“নামিয়ে দিন না।”

তাহসান মাথা নেড়ে বললো,
“কেনো?”

“এমনিই।”

তাহসান বন্যাকে নামিয়ে দেয়।বন্যা আকাশের তারার দিকে তাকিয়ে থাকে।তার কোনো যানি মনে হচ্ছে এই আকাশ ভরা তারা তাকে ভালোবাসার জন্য শুভকামনা জানাচ্ছে।বন্যা আর তাহসান ছাদের ফ্লোরে পিঠে পিঠ লাগিয়ে বসে।বন্যা পরম আবেশে চোখ বন্ধ করে রাখে।তাহসান বললো,
“বন্যা…”

বন্যা চোখ খুলে তারার মেলা দেখে।মিহি গলায় বললো,
“হুম।”

“আজকের আকাশটা খুব সুন্দর তাই না?”

“হ্যাঁ।ভিষণ উজ্জ্বল।”

বন্যা সিরিয়াস গলায় বললো,
“এই তোমাকে তারা দিয়ে একটা মালা বানিয়ে দেই?”

বন্যা শব্দ করে হাসে।
“পাগলের মতো কথাবার্তা।

“তোমাকে আমি পৃথিবীর সর্বোচ্চ সুখ এনে দেবো।”

বন্যা তাহসানের মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,
“যদি মিলন হয় তো।”

তাহসান ভ্রু কুঁচকে বললো,
“মিলন হবে না কেনো?”

“আমাদের সম্পর্কটা অন্য সব সম্পর্কের মতো না।আপনি একজন শুদ্ধ পুরুষ আর আমি খারাপ।আপনার সাথে আমাকে কেউই মানতে চাইবে না।তাই সবসময় ভ,য় কাজ করে।”

তাহসান হেসে বললো,
“তুমি এসব নিয়েই চিন্তা করো নাকি?বললাম না যে ঝড়ই আসুক না কেনো আমরা দুজন মিলে মোকাবিলা করবো।”

বন্যার কন্ঠ কেমন অসহায় শোনায়,
“সবাই কি করবে জানি না কিন্তু আন্টি বোধহয় মানবে না।উনি যে আমাকে পছন্দ করে না সেটা আমি বুঝি।”

বন্যার কথায় তাহসান কোনো কথা বলে না।তার আম্মু যে বন্যাকে পছন্দ করেনা এটা সেও জানে।তাহসান বন্যাকে স্বান্তনা দেয়ার জন্য বলো,
“সব সম্পর্কই প্রথমে কেউ মানে না কিন্তু পরে সবাই মেনে নেয়।আম্মুও রাজী হবে দেখো।”

“রাজী হলেই ভালো।”

তাহসান বন্যার মন খারাপ টের পায়।সে বন্যার মন খারাপ দূর করতে বললো,
“চাঁদের মুখে আমাবস্যা মানায় না পূর্ণিমার আলোই শোভা পায়।এই কথাটা তুমি জানো তো?”

বন্যা মাথা নেড়ে বললো,
“জানি।”

“তাহলে আমার চাঁদের মুখে আমাবস্যার অন্ধকার কেনো?”

বন্যা তাহসানের বলার ধরনে হেসে ফেলে।বন্যার মুখের দিকে তাকিয়ে তাহসান বললো,
“এভাবেই হাসবে বন্যা।”

বন্যা তাহসানের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে চোখের নজর সরায় না।তাহসান বললো,
“কি দেখো?”

“আপনাকে।শুনেন আমার একটা ইচ্ছা আছে।”

“কি ইচ্ছা শুনি।”

“আমাদের যেদিন বিয়ে হবে সেদিন সারারাত আমি আপনাকে জড়িয়ে ধরে রাখবো।”

গম্ভীরমুখো প্রেয়সীর মুখে এমন আহ্লাদী আবদার তাহসানের প্রত্যাশার বাহিরে ছিলো সে যারপরনাই অবাক হয় কিন্তু বন্যার সামনে তা প্রকাশ না করে বললো,
“তুমি যেমন চাইবে তেমনি হবে।”

প্রেমের মিষ্টি সময়গুলো যেনো তুলোর মতো নিঃশব্দে উড়ে উড়ে যাচ্ছিলো যা কেউ টের পাচ্ছিলো না।মাসের পর মাস কেটে যাচ্ছিলো।তাহসান অবাক হয়ে ভাবছে একটা মানুষ এতোটা জড়িয়ে যাচ্ছে কি করে?এতোটা শান্তি কেনো এই মেয়েটার মাঝে?তার মনে হয় বন্যা বিহীন সে একদিনও বাঁচতে পারবেনা মেয়েটা যেনো দিনকে দিন তার অক্সিজেন এর মতো হয়ে যাচ্ছে।

এক সন্ধায় দুজন একসাথে বাসায় ফিরে।রিক্সা থেকে নেমে তাহসান আলগোছে বন্যাকে চুমু দেয়।সে ভেবেছিলো অন্ধকারে কেউ এতোটাও খেয়াল করবে না।বাসায় আসার পরে বুঝতে পারে যে ইতোমধ্যেই আগুন লেগে গেছে।আফিয়া বেগম কেঁদেকেটে একাকার।তাহসান যতোই তার আম্মুকে বুঝাতে চায় ততোই তিনি রেগে যায়।আফিয়া বেগম বললো,
“এই জন্যই তোকে এতো কষ্ট করে মানুষ করেছিলাম?”

তাহসান সোফায় চুপ করে বসে আছে তার সামনে মোবারক সাহেব বসে আছে।বাবার সামনে এই প্রসঙ্গে কথা বলতে অসস্থি লাগছে।সে গম্ভীর গলায় বললো,
“আম্মু কি শুরু করলে?”

তার এই কথায় যেনো আফিয়া বেগম আরো তেতে উঠে।
“আমি কি শুরু করলাম!আর তুই যে ভরা রাস্তায় বন্যাকে চুমু দিলি।অসভ্যর সাথে চললে তো অসভ্য হবেই।”

মোবারক সাহেব ছেলের দিকে তাকিয়ে আছে।তাহসান কখনো ভাবেনি এমন বিশ্রী পরিস্থিতিতে পরতে হবে।সে বললো,
“কি উল্টো পাল্টা বলছো।”

“আমি যা দেখেছি তাই বলছি।দেশে কি মেয়ের অভাব? আর মেয়ে খুঁজে পাসনি?”

“এসব কি বলছো?”

আফিয়া বেগম রেগে ফুপিয়ে উঠে।
“আচ্ছা কিচ্ছু না বললাম।এটা বল ওর সাথে তোর কিসের সম্পর্ক?”

তাহসান মাথা নিচু করে রাখে।আফিয়া বেগম আরো তেতে উঠে,
“কি রে কথা বল।”

মোবারক সাহেব ছেলের দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বললো,
“তোমার আম্মু যা বলছে তা কি সত্যি?”

তাহসান নিঃশব্দে নিঃশ্বাস ফেলে।সব প্রেমিক প্রেমিকার কাছেই বোধহয় এই মুহূর্তটা দম বন্ধ করা কঠিন হয়।সে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো,
“হ্যাঁ। আমি বন্যাকে ভালোবাসি,বিয়ে করতে চাই।”

তাহসানের কথা শুনে আফিয়া বেগম আর মোবারক সাহেব দুজনেই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।
আফিয়া বেগম মোবারক সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললো,
“খুব তো ছেলে নিয়ে বড়াই করতে এখন?বলেছিলাম কিছু করো।”

মোবারক সাহেব ছেলের দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বললো,
“কতোদিন ধরে তোমরা সম্পর্কে?”

তাহসান বললো,
“প্রায় দশ মাস।”

আফিয়া বেগমের মাথা ঘুরে উঠে।এতোদিন উনি ক্ষুনাক্ষরেও টের পায়নি।
“এতোদিন যা হইছে তা বাদ,এসব চিন্তা মাথা থেকে নামিয়ে ফেল।”

আস্তে আস্তে যেনো তাহসানের লজ্জা কমছিলো সে তার বাবার সামনেই সাবলীল গলায় বললো,
“বিয়ে করবো।”

“অসম্ভব।এমন নষ্ট মেয়েকে বিয়ে করে ছেলের বউ বানাতে আমি ইচ্ছুক না।”

“বারবার একটা কথা বলবেনা,বন্যা ইচ্ছাকৃত ভাবে নষ্ট হয়নি।এই অসুস্থ সমাজ তাকে অপবাদ লাগিয়েছে।”

“যাই হোক।আমি এই সম্পর্ক মানি না।”

তাহসান চিবিয়ে চিবিয়ে বললো,
“আমি জীবন কাটাবো সম্পর্কটা আমাকেই মানতে দাও।”

আফিয়া বেগম রেগেমেগে বললো,
“আমি কালকেই এই ফ্যামিলিকে বাসা থেকে বের করে দেবো।”

তাহসান উঠে দাঁড়ায়।বাবার দিকে পূর্ণদৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
“আব্বু শুনে রাখুন আমি বন্যাকেই বিয়ে করবো।”

তাহসান আর সেখানে দাঁড়ায় না।হনহন করে রুমে চলে যায়।আফিয়া বেগম স্বামীর দিকে তাকিয়ে বললো,
“আমি এখনি ওই বাসায় যাবো।মেয়ে যে লেলিয়ে দিয়েছে তা কি আর বুঝি না।আমার ছেলের বাড়ি আছে দেখেই হাত করেছে।লোভী।”

চলবে……

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে