তান্ডবে ছাড়খার পর্ব-০৮

0
543

#তান্ডবে_ছাড়খার
#পর্ব_৮
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর

বন্যা আজকাল ইচ্ছে করেই তাহসানকে এড়িয়ে চলে তাছাড়া ভার্সিটির পরিক্ষা চলছে সে খুবই ব্যস্ত সময় পার করছে এই অবস্থায় তাহসানের সামনে পড়লেও পাশ কাটিয়ে দ্রুত পায়ে চলে যায়।তাহসানের ফোন নাম্বার ইতোমধ্যেই ব্লাকলিস্টে রেখে দিয়েছে।তার কেনো জানি মনে হচ্ছে সেদিন ছাদে তাহসানের বলা কথাগুলো সত্যি কিন্তু আবার মনে হয় তাহসান তার শর্ত অমান্য করে তাকে রাগাতে চেয়েছে,তার রাগ করা একদম উচিত হচ্ছে না।তারপরেও বন্যা যথাসম্ভব তাহসানকে এড়িয়ে চলছে।তাহিয়াকে পড়াতে গেলে তাহসান বাচ্চাদের মতো আশেপাশে ঘুরঘুর করে,এটা সেটার বাহানায় কথা বলতে চায়; বন্যা শীতল দৃষ্টি মেলে সব দেখে কিন্তু কথা বলেনা।সে ছেলেদের চোখের ভাষা বুঝেনা কিন্তু তাহসানের চোখের ভাষায় যেনো কি আছে যা বন্যাকে নাড়িয়ে দেয়,তার চোখের দৃষ্টির তোপে বন্যার বুকে কেমন ঝিমঝিম অনুভূতি নেচে বেড়ায়।সে সব উপেক্ষা করতে চায় তাহসানের এই মায়াময় চোখের দৃষ্টিও।

তাহসান সোফায় বসে আছে।তাহিয়ার রুম থেকে বন্যার কর্কশ গলার শব্দ আসছে।মেয়েটার নরম গলার স্বর শুনার ভাগ্য সবার হয় না কিন্তু তার হয়েছে ছাদে বন্যা নরম পাখি হয়ে গিয়েছিলো আর সেই নরম পাখির আশকারায় সে প্রেমের কথাটা মুখ ফসকে বলে ফেলেছে যা কিনা এখন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।কতদিন হলো মেয়েটা তার সাথে কথাই বলেনা,ছাদে আসেনা এমনকি ফোনেও ব্লাকলিস্টে রেখে দিয়েছে।একটা মেয়ে এতোটা শক্ত মনের কি করে হয়?বাসায় আসলেও যে কথা বলে রাগ অভিমান শেষ করবে তার সুযোগ নেই তার আম্মু বন্যা আসার পর সারাটাক্ষন গোয়েন্দার মতো পিছুপিছু ঘুরে।তাহসান বিরক্ত হয়ে রুমে চলে যায়।
বন্যার সাথে কোনোভাবেই দেখা কিংবা কথা বলতে না পেরে শুক্রবার তাহসান বন্যাদের বাসায় যায়।তার মনের ভাব শুক্রবার বন্যা বাসায় থাকবে।

তাহসানকে দেখে বন্যার মা রেনু বেগম খুবই খুশী হয়।হাসিমুখে সোফায় নিয়ে বসায়।রেনু মনে মনে তাহসানকে খুব পছন্দ করে।এমন ছেলেকে অপছন্দ করার কোনো কারন নেই।মনের সুপ্ত বাসনা হলো বন্যার জন্য যদি এমন একটা ভালো ছেলে পাওয়া যেতো তাহলে কতোই না ভালো হতো কিন্তু মনের ভাবনা কি সত্যি হয়?হয় না।রেনু বেগমের ইচ্ছাও পূরণ হবার না কিন্তু উনি মনে মনে তাহসানকে বন্যার বর হিসেবে চায়।সব মা ‘ই চায় মেয়েরা ভালো বর পাক।তাহসানকে নাস্তা দিয়ে তার সাথে বসে।তাহসান এদিক ওদিক তাকিয়ে বন্যাকে খুঁজে।রেনু বেগমের সাথে অনেকক্ষণ কথা বলার পরেও যখন বন্যার দেখা পেলো না তখন বাধ্য হয়ে বললো,
“আন্টি বন্যা বাসায় নেই?”

রেনু মাথা নেড়ে বললো,
“থাকবেনা কেনো?বাসায়ই তো।দাঁড়াও ডাকি।”

উনি দ্রুত পায়ে বন্যাকে ডাকতে গেলেন।বন্যা তখন এসাইনমেন্ট করায় ব্যস্ত।রেনু বেগম বন্যার কাছে গিয়ে বললো,
“বাড়িওয়ালার ছেলেটা এসেছে।”

বাড়িওয়ালার ছেলে!তারমানে তাহসান!বন্যার হাতের চলন থেমে যায়।মায়ের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টি মেলে তাকালে রেন বেগম বললো,
“তুই বাসায় আছিস কিনা জিজ্ঞেস করছিলো আমি বলেছি আছিস।এখন চল দেখা করবি।”

বন্যা বিরক্ত হয়ে ফিসফিস করে বললো,
“আশ্চর্য আমি কেনো দেখা করবো দেখোনা কাজ করছি।”

” না গেলে খারাপ দেখায়।”

বন্যা সশব্দে চেয়ার ঠেলে উঠে দাঁড়ায়।ধুপধাপ পা ফেলে তাহসানের পাশের সোফায় বসে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে থাকে।তাহসান বন্যার এই দৃষ্টি গায়ে মাখে না সে বন্যার এলোমেলো রূপ চোখের পলকে গেথে নেয় তারপর আস্তে করে বললো,
“সমস্যা কি ম্যাডাম?”

বন্যা তাহসানের চোখের দিকে তাকায় পরক্ষণেই দৃষ্টি সরিয়ে নেয় এই ছেলের চোখে তাকানো যাবে না,কেমন যন্ত্রণাময় চোখের দৃষ্টি।গলার স্বর যতোটা সম্ভব কঠিন করে বললো,
“সমস্যা থাকার কথা ছিলো নাকি?”

“না থাকলে আমার সাথে এই অবিচারের কারণ কি?”

বন্যার চোখে বিরক্ত ফুটিয়ে বললো,
“অবিচার! কিসের কথা বলছেন?”

তাহসান আশেপাশে তাকালো রেনু বেগমকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না।
“তুমি নিজেও জানো কিসের কথা বলছি।”

“আপনি শর্ত অমান্য করেছেন।”

তাহসান নিশ্চুপ।বন্যাই আবার বললো,
“আমি চাইনা আমাদের আর কথা হোক।”

তাহসান বন্যার দিকে তাকিয়ে বললো,
“আর কোনো শর্ত ভঙ্গ হবেনা।একবার ছাদে আসো।প্লিজ বন্যা।”

“আসবো না।”

তাহসান বন্যার চোখের দিকে তাকায়।ফিসফিস করে বললো,
“একবার আসলে কিছুই হবেনা।প্লিজ।”

বন্যা মাথা নেড়ে বললো,
“আচ্ছা।”

তাহসান দাঁড়িয়ে বললো,
“রাতে। রাতে ছাদে থাকবো।”

হেটে চলে যায়।বন্যা তাহসানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।তাহসান যে তার সাথে দেখা করতেই এসেছে এটা সে বুঝতে পেরেছে।

রাত গভীর।বন্যা দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকায়।রাত এগারোটা বেজে সাতান্ন মিনিট।সে এসাইনমেন্ট করা বন্ধ করে ছাদের দিকে পা বাড়ায়।ছাদে এসে দেখে তাহসান সিমেন্টের বেঞ্চে বসে চুপচাপ আকাশের দিকে তাকিয়ে কিছু দেখছে।বন্যা কোনো কথা না বলে তাহসানের কাছে গিয়ে যথেষ্ট দুরূত্ব রেখে বসে।বন্যার উপস্থিতি টের পেয়ে তাহসান বন্যার দিকে তাকায়।তাহসানের চোখের দিকে তাকিয়ে বন্যা থমকে যায়।ছেলেটার চোখ লাল মনে হচ্ছে কেনো?বন্যা কিছু বলার আগে তাহসান উঠে ছাদের কার্নিশে চলে যায়।নিঃশব্দে দম ফেলে নিজেকে স্বাভাবিক করতে চায়।তাহসানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বন্যাও তার পিছনে যায়।
“ডেকেছিলেন।”

তাহসান গম্ভীর অথচ আস্তে করে বললো,
“আমার সাথে কথা বলছোনা কেনো?”

“আপনি তা জানেন।”

তাহসান বন্যার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বললো,
“তাহলে আবার জানাই?”

“কি?”

তাহসান পেন্টের পেছনের পকেট থেকে একটা সাদা গোলাপ হাতে নিয়ে বললো,
“আমি জানিনা কিভাবে কি হলো কিন্তু এটা জানি আমি তোমাতে হারিয়েছি,আমাকে হারাতে দাও প্লিজ ।”

বন্যা বিষ্ময়ে কথা বলতে পারেনা।তাহসান বন্যার হাত ধরে বললো,
“তুমি আমাকে ফিরিয়ে দেবে বন্যা?”

বন্যার গলার স্বর কেঁপে ওঠে।মাথা নেড়ে প্রতিবাদ করে বললো,
“আপনার মাথা ঠিক আছে?পাগল নাকি!”

তাহসান হাসে।গোলাপটা বন্যার হাতে গুজে দেয়।বন্যার কথার প্রতুত্তর না করে বন্যার হাতে আলতো চাপ দিয়ে বললো,
“রাজী?”

বন্যার চোখে পানি টলমল করে উঠে।
“কিসের রাজী?”

তাহসান ফিসফিস করে বললো,
“আমার রাজকুমারী হতে রাজী?”

বন্যা মাথা নেড়ে বললো,
“আমার অতীত জানেন?”

“না।”

“জানলে এসব মুখেও আসবে না।ফিরে তাকান কিনা সন্দেহ
আছে।”

তাহসান বন্যার হাত ছেড়ে দেয়।
“মানে?”

বন্যা ফিসফিস করে বললো,
“আমি খুব খারাপ মেয়ে তাহসান।”

তাহসান পুনরায় বন্যার হাত ধরে বললো,
“তাতে আমার কোনো সমস্যা নেই।তুমি শুধু আমার হয়ে যাও তোমাকে খুশী করার দায়িত্ব আমার।প্লিজ।”

তাহসানের কাতর গলার স্বর বন্যার বুকে তান্ডব বয়িয়ে দেয়।খুব আস্তে ফিসফিস করে বললো,
“আমি অপবিত্র,নোংরা,ধর্ষিতা।”

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে