#তান্ডবে_ছাড়খার
#পর্ব_০৪
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর
রাতুল তন্নী আর বন্যা কেন্টিনে বসে চা খাচ্ছিলো তখন তাহসান অফিসের দিকে যাচ্ছে রাতুল একটু জোড়েই বললো,
“বন্যা;ওই দেখ তোর শালা।”
বন্যা চায়ের কাপ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে তাহসানের দিকে তাকায়।মুখের ভাব গম্ভীর করে রাখে কিন্তু কোনো কথা বলেনা।রাতুল বন্যার এমন চুপচাপ স্বভাব মানতে পারে না।মাথায় থাপ্পড় দিয়ে বললো,
“মামা;শালা চইলা যায় তো!ডাকো না কেনো?”
বন্যা ঠোঁট নেড়ে তিরতির করে উচ্চারণ করলো,
“ডাকার কি আছে?এই শালা একটা আস্ত খবিস।”
পেছনের টেবিল থেকে বন্যাদের এক ক্লাসমেট বললো,
“এই তাহসান স্যার যে আমাদের বন্যা ভাইয়ের সালা হয় আগে বললি না কেনো?”
ভরা কেন্টিনে কথাটা ছড়াতে বেশীক্ষণ সময় লাগলো না।বন্যা ঘোষণা না করলেও অঘোষিতভাবেই সবাই জেনে গেলো,রাগী,গম্ভীর তাহসান স্যার বন্যার সালা হয়;যেমন তেমন সালা না খবিস সালা।এই ব্যাপারটা তাহসানের কানে আসলো সাপ্তাহ খানেক পরে।ডিপার্টমেন্টের অন্যান শিক্ষকরা এই নিয়ে ফিসফাস করছে যদিও তাহসানকে কেউ কিছু জিজ্ঞাস করেনি কিন্তু সে বুজে আলোচনার মূল কেন্দ্রবিন্দু যে সেই তা তাদের কথায় বুজে।তাহসান গেইট দিয়ে প্রবেশ করে ভেতরে যাচ্ছে তখন এক মেয়ে আরেক ছেলেকে বলছে,
“বন্যার শালা নাকি রে??”
তাহসানের চলন্ত পা থেমে যায়,মুখ চোখ শক্ত করে মেয়েটির দিকে তাকায়।ছেলেমেয়েগুলো মুহূর্তেই চুপ হয়ে যায়।কলকাঠি কে নাড়ে বেশ বুঝতে পারছে।সে ভুলেও ভার্সিটিতে বন্যার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেনা।যেই মেয়ে কি থেকে কি বলে ফেলে তার কোনো ঠিক ঠিকানা নেই,সে লেকচারার মানুষ নিজের গাম্ভীর্য নিজে ধরে রাখতে হবে বাসায় এসে তাহিয়ার মোবাইল থেকে লুকিয়ে বন্যার নাম্বার নিজের ফোনে তুলে ছাদে চলে যায়।পূর্ণিমার চাঁদের আলোতে ছাদ ফকফকা।তাহসান তার হাত সামনে এনে দেখলো চাঁদের আলোয় হাত বেশ স্পষ্ট।বন্যার নাম্বারে ডায়াল করে লাউডস্পিকার দেয়।
বন্যা তখন হাত পা ধুয়ে ট্রাউজার আর গেঞ্জি পড়ে ঘুমানোর জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।ফোনে আননোন নাম্বার দেখে ভাবে কে হতে পারে।
“হ্যালো!কে বলছেন?”
তাহসানের ভ্রুজোড়া আপনা আপনি কুঁচকে যায়।মানে এভাবে কেউ কথা বলে?মেয়েরা একটু মিষ্টি না হলে মানায়?সে ও বন্যার মতোই কর্কশ গলায় বললো,
“আমি তাহসান।দুই মিনিটের মাঝে ছাদে আসো।”
বন্যা বুঝার চেষ্টা করে ছাদে কেনো যেতে বলছে।কোনো কারণ খুঁজে বা পেয়ে গম্ভীর গলায় বললো,
“কেনো?”
“আমি বলেছি তাই।”
“পারবোনা।”
তাহসান চিবিয়ে চিবিয়ে বললো,
“আসবে নাকি আমিই তোমার বাসায় আসবো।”
এই লোক ছাদে ডাকার কি অধিকার আছে?বন্যাও সমানতালে বললো,
“আপনি এতো খারাপ?”
“আরো বেশী খারাপ হবো যদি না আসো।”
বন্যা কিছু না বলে ফট করে ফোন কেটে দেয়।কাউকে কিছু না বলে ছাদে উঠে যায়,সে এই দুই পয়সার বেটাকে ভয় পায় নাকি!চাঁদের আলোয় তাহসানকে দেখা যাচ্ছে।সাদা গেঞ্জি পড়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।বন্যার হাটার শব্দে পেছন ফিরে তাকায়।দুজনের চোখের দৃষ্টি কিছুসময় এক হয়ে থাকে।বিব্রত পায়ে বন্যা হেটে কাছে যায়;গলার স্বর যত সম্ভব কঠিন করার চেষ্টা করে বললো,
“কি সমস্যা?”
তাহসান তখনো বন্যাকে দেখছে।রাতের বেলা এমন স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে বলে মনে মনে চাঁদকে ধন্যবাদ দিলো।বন্যার কথা শুনে এক পা এগিয়ে গলায় রাজ্যের রুক্ষতা এনে বললো,
“তোমার কি সমস্যা সেটা বলো,এসব কেনো করছো?”
“কি করেছি?”
“কি করোনি?বেয়াদব মেয়ে।মন চাচ্ছে থাপড়িয়ে গালের দাঁত ফেলে দেই।”
বন্যা ফুসে উঠে।তেড়ে এসে বললো,
“আজব!কি করেছি আমি?”
তাহসান আরো এক পা এগিয়ে এসে কাছাকাছি দাঁড়িয়ে বললো,
“আমি তোমার শালা হই?”
এমন কথায় বন্যা থমথম খেয়ে যায় কিন্তু গলার তেজ কমায় না।
“আমিতো তা বলিনি।”
“তুমি না বললে ভার্সিটির স্টুডেন্টরা জানলো কি করে?”
তাহসান আর বন্যা যেভাবে দাঁড়িয়ে আছে যে কেউ দেখলে মনে করবে প্রেমিক প্রেমিকা।তাহসান লম্বা হওয়াতে তার গরম নিঃশ্বাস বন্যার মুখে আছড়ে পড়ছে।সবসময় ছেলেদের এড়িয়ে চলা বন্যার অসস্তি হয়।বন্যা পিছিয়ে যায়।শালা বলেছে সেটা এক কান দুইকান থেকে সারা ক্যাম্পাস জেনে গেছে এতে বন্যার কি দোষ?সে কি ইচ্ছে করে করেছে?মাথা নেড়ে বললো,
“আমি জানি না।”
“তুমিই জানো,কথাটা তোমার মুখ থেকেই ছড়িয়েছে।”
বন্যা তাহসানের চোখে চোখ রাখে।
“ছড়িয়েছি বেশ করেছি।”
তাহসান হতভম্ব গলায় বললো,
“আমি তোমার স্যার হই!”
“হ্যাঁ জানি।আপনাকে শালা বলতে ভালো লাগে।তাই বলেছি।”
এটা বলে বন্যা দাঁড়ায় না,দ্রুত পায়ে সিড়ির দিকে ছুটে কিন্তু তাহসান লম্বা পা ফেলে বন্যার হাত টেনে ধরে জোড় গলায় বললো,
“আমার মান সম্মান নিয়ে টানাটানি পড়ে গেছে ইডিয়ট,আর তুমি চলে যাচ্ছো?”
চিলেকোঠার দেয়ালে বন্যাকে ঢেলে দাঁড় করিয়ে রেখেছে তাহসান।বন্যা দু’হাতে তাহসানের বুকে ধাক্কা দিয়ে সরাতে চায় কিন্তু শক্ত সামর্থ্য তাহসানকে এক ইঞ্চিও নড়াতে পারে না।সবসময় শক্ত মনের খোলস গায়ে মেখে ঘুরলেও বন্যা নিজে জানে সে কতোটা নরম।তাহসানের মুখোমুখি তার গায়ের গন্ধ নাসারন্ধ্র ছেড়ে ফুসফুসের মাঝে ছড়িয়ে গেছে।বিন্যার অসস্থি হয়,চোখ বন্ধ করে নিজেকে কঠিনে আনার চেষ্টা করে,বুকের ভেতর হাতুরিপেটা বস্তুটাকে মনে মনে দুনিয়াদারি ভুলে একটা বিশ্রী গালি দেয়।চোখ বন্ধ করে বন্যা নিজেকে সামলাচ্ছে আর তাহসান বন্ধ চোখের মেয়েটাকে দেখছে,বন্যা মেয়ে সেজে থাকলেও চেহারায় লাবন্যতা ধরা দেয়।বন্যা তাহসানের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বললো,
“আশ্চর্য! আপনি এতো কাছে এসেছেন কেনো?”
তাহসান মনে মনে হাসে।বাহিরে শক্ত খোলস পড়ে ঘুরলেও বন্যা যে পুরুষে ভয় পায় তা বুঝে।সে আরেকটু চেপে বললো,
“ভয় লাগে?”
বন্যা তিতু মুখে বললো,
“পুরুষদের ভ,য় পাওয়া আমার ধাতে নেই।”
তাহসান মাথা নেড়ে গম্ভীর গলায় বললো,
“আমাকে নিয়ে সবাই কতোটা তামাশা করছে তুমি জানো?”
বন্যা যাওয়ার বৃথা চেষ্টা করে বললো,
“জানতে চাই না।আর এখান থেকে যেতে পারলে আরো তামাশা লাগাবো।”
তাহসান গম্ভীর গলায় বললো,
“আমার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছ বললেই পারতে,এভাবে ভার্সিটি জুড়ে আমি যে তোমার এটা বুঝানোর কি দরকার ছিলো?”
তাহসানের কথায় বন্যা ফুসে উঠে।শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে ধাক্কা দিয়ে বললো,
“ধুরু বাল;কিসের প্রেম?কিসের কি?”
বন্যার মুখে এমন কথা শুনে তাহসান হতভম্ব।শিক্ষকের সাথে কেউ এমন কথা বলতে পারে?নাক কুঁচকে বললো,
“হোয়াট!এসব বা**আই মিন চুল টুল মুখে আসে কি করে?বেয়াদব!খারাপ মেয়ে।”
বন্যা ক্যাটক্যাট করে বললো,
“আমি খারাপই একদম আমার কাছে আসবেন না।”
তাহসান বড়ো বড়ো চোখ করে বন্যার মুখের দিকে ঝুঁকে বললো,
“একশো বার আসবো।”
বন্যা চুপচাপ তাহসানের দিকে তাকিয়ে ছাঁদ থেকে নামার জন্য পা বাড়ায়।তাহসান বন্যার যাওয়ার পানে তাকিয়ে ভাবে,
‘আশ্চর্য!মেয়েটার সামনে আরো রেগে যাওয়া উচিত ছিলো না? রেগে গালে ঠাস করে একটা থাপ্পড় দিয়ে গাল লাল করে ফেলা বাধ্যতামূলক ছিল।কিন্তু এসব করার বদলে তার বুকে কেমন ব্যথা হচ্ছে,ব্যথাটা চিনচিন করে সারা বুকে ছড়িয়ে যাচ্ছে।
চলবে……