তবে ভালোবাসো কী পর্ব-১৪ এবং শেষ পর্ব

0
1012

#তবে_ভালোবাসো_কী
#Mehek_Enayya(লেখিকা)

#পর্ব ১৪(অন্তিম পর্ব)

অতঃপর ছবি তোলার পর্ব শেষ। এখন মাহানুরকে স্টেজে নিয়ে যাওয়া হবে। মাহানুরের কথা মতো তার ছয় ভাই মিলে তাকে নিয়ে যায়। আয়াস আর তন্দ্রা ধরে ধরে মাহানুরকে স্টেজে বসিয়ে দেয়। আয়াস নিচে বসে মাহানুরের লেহেঙ্গা ঠিক করে দেয়। হলুদ ছোঁয়াতে সর্বপ্রথম স্টেজে উঠে হামযা খান। মাহানুরের ললাটে আদরের ছোঁয়া বসিয়ে দেয়। একটু হলুদ নিয়ে মাহানুরের হাতে দিয়ে দেয়। তারপর আসে মেহরাব খান। খুশিতে চকচক করছে তার মুখ। মাহানুরের দুইহাত নিজের হাতে নিয়ে বলে,

-মা খুশি তো তুই?

-হ্যাঁ বাবা অনেক খুশি আমি।

-এতেই যে আমার শান্তি মা।

বড়দের ও আত্মীয় স্বজনদের হলুদ দেওয়া শেষ। এখন ছোটদের পালা। উঁচু আওয়াজে গান বাজছে। সিয়াম, ইয়াসিন, তন্দ্রা গানের তালে তালে নাচতে নাচতে স্টেজে উঠে। মাহানুর তাঁদের নাচ দেখে হাসতে হাসতে শেষ। দুষ্ট হাসি দিয়ে তারা মাহানুরের পাশে বসে পরে। ইয়াসিন মুঠি করে হলুদ নিয়ে আচমকা মাহানুরের পুরো মুখে লেপ্টে দেয়। হঠাৎ আক্রমণে মাহানুর ভড়কে যায়। কিছু বলার জন্য মুখ খুলবে তখনই আবার তন্দ্রা হলুদ মাখিয়ে দেয়। মাহানুর কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলে,

-আমাকে হলুদ ভুত বানিয়ে দিলো রে! তোদের তিনটারে আমি ছাড়ুম না কু’ত্তার দল। (মাহানুর)

-ছি মাহানুর নিজের বিয়ের সময়ও গালি দিচ্ছিস!(সিয়াম)

-চোপ সা*লা! (মাহানুর)

তাঁদের কথার মাঝে হঠাৎই আয়াস চেঁচিয়ে বলে,

-ভাই তোরাই তো পুরো মাখিয়ে দিলি এখন আমরা কী করব!(আয়াস)

-ভাই আইইয়া পরো সুযোগ আছে। (ইয়াসিন)

আয়াসও তাঁদের সাথে তাল মিলিয়ে স্টেজে উঠে যায়। বাকি গুলো পিছিয়ে থাকবে নাকি! তাই সাদি, আবির, সামি, আসীনও উঠে পরে। অনেক বড় করে স্টেজ বানানো হয়েছে। কিন্তু এখন এতো মানুষের জন্য স্টেজটা ছোট হয়ে যায়! আয়াসও হলুদের ভরিয়ে দেয় মাহানুরের মুখ। এখন মাহানুরের মুখে মেকআপ এর ছিটফোঁটাও দেখা যাচ্ছে না। আয়াস মুচকি হেসে তন্দ্রার গালেও একটু হলুদ লাগিয়ে দেয়। ধীরে ধীরে বলে,

-ব্রাইডের গায়ের হলুদ অবিবাহিত মেয়েদের লাগলে তাঁদের জলদি বিয়ে হয়ে যায়।

সরমে লাল হয়ে গেলো তন্দ্রা। পছন্দের মানুষের প্রত্যেকটি কথায়ই পছন্দের হয়! তন্দ্রাও শয়তানি করে আয়াসের গালে হলুদ লাগিয়ে দেয়। আর কী শুরু হয়ে যায় হলুদ মাখামাখি করা। সবাই একে অপরকে লাগিয়ে দিচ্ছে। তারসাথে নাচগান তো আছেই! অনেক হাসিখুশি আর মজার মধ্য দিয়ে মাহানুরের হলুদের ফাঙ্কশন শেষ হয়।

রাতে মাহানুরের রুমে মাহানুরের চুল খুলে দিচ্ছে তন্দ্রা। এখন রাত তিনটা। পুরো বাড়ি নিশ্চুপ। সবাই নিদ্রায় তলিয়ে আছে। অনুষ্ঠান শেষে হাজেরা এসে মাহানুরকে খাইয়ে দিয়ে গিয়েছে। মাহানুর তাকে জোর করে ঘুমাতে পাঠায়। কাল সারাদিন তাঁদের অনেক কাজ আছে এখন যদি না ঘুমায় তাহলে অসুস্থ হয়ে পরবে। মাহানুরের জোরাজোরিতে বাধ্য হয়ে হাজেরা চলে গিয়েছে।
মাহানুর ফোন টিপতে টিপতে বলে,

-কতদিন ধরে চলছে এইসব?

-মাহানুরের কথার আগামাথা কিছুই বুঝে না তন্দ্রা। তাই অবুঝের মতো জিজ্ঞেস করে,

-কী?

-আয়াস ভাইকে পছন্দ করিস?

তন্দ্রা নিশ্চুপ হয়ে যায়। সরম আঁকড়ে ধরে তাকে। নিচু স্বরে বলে,

-অনেক বছর আগের থেকেই।

-আমাকে বলিসনি কেনো?

-ভয়ে বলতে পারিনি।

-ভয়ের কী আ*বাল! ভাইয়া জানে তুই তাকে পছন্দ করিস?

-হয়তো না।

-বলিসনি নিজের মনের কথা?

-না সাহস হয়ে উঠেনি।

-ভাইয়ার মনেও হয়তো তোর জন্য ফিলিংস আছে।

-না হয়তো নেই।

-আমার বিয়েটা হয়ে নেক তারপর আমি নিজ দায়িত্বে তোর লাইফ সেটেল করছি। আমি একদম সরাসরি ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করুম।

-না ভাই, আমার সরম করে।

-তোকে বলতে বলেছি নাকি! ইসসস কত মজা হবে তুই আমার ভাবী হবি। গোড়ার ডিম আমার দুইটা বোন থাকলে আমি তাঁদের সাথে ইয়াসিন আর সিয়ামের বিয়ে দিয়ে দিতাম।

-হো সবার ঘটক তুই-ই হতি!

শব্দ করে হেসে দেয় মাহানুর। সাথে তন্দ্রাও হাসতে থাকে। মাহানুরকে অবাক করে দিয়ে তন্দ্রা সহসা মাহানুরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। মাহানুরও একদম নিজের সাথে আঁকড়ে ধরে। তন্দ্রা বলে,

-আমার জীবনের অন্যতম সুন্দর একটি অধ্যায় তুই। আম্মুর পর তুই আমার ভীষণ আপন একজন। বাবা মারা যাওয়ার পর এক কালো ছায়ায় ঘেঁরে ধরে আমাকে। সেই কালো ছায়ার থেকে ছয় বছর আগে তুই আমাকে বের করেছিস। আমার অভিশপ্ত জীবনটা আনন্দে ভরে দিয়েছিস! আমি কখনই তোকে ফ্রেন্ড ভাবি না। তুই আমার বোন। আই লাভ ইউ দোস্ত।

-ভাই তুই কী লে*সবি*য়ান হয়ে গিয়েছিস?
মেয়েকে মেয়ে হয়ে লাভ ইউ বলছিস!

তন্দ্রা রাগ দেখিয়ে মাহানুরের পিঠে একটা কিল দেয়। মাহানুর হাসতে হাসতে বলে,

-লাভ ইউ টু এন্ড সো মাচ বনু। যা তোর জিজুর আগে তোকেই প্রপোজ করে দিলাম!

__________________🖤

কোমরে হাত দিয়ে বিছানার সামনে দাঁড়িয়ে আছে তন্দ্রা। চোখ মুখে তার বিরক্তি। সকাল দশটা বাজে এখন। মাহানুর ঘুম থেকে উঠছে না। তন্দ্রা এতোবার ডাকছে সেদিকে তার খবরই নেই। কিছুক্ষন পর পার্লারে যাবে ফেসিয়াল করাতে। কিন্তু এই মেয়ে তো পরে পরে ঘুমাচ্ছে। তন্দ্রা এবার রেগে মাহানুরকে ঝাঁকিয়ে বলে,

-দোস্ত উঠ দেখ অনেক বেলা হয়ে যাচ্ছে।

-,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,।

-কু*ত্তা ছেড়ি তুই কী বিয়ে করবি না?

-করুম না যা। আমাকে ঘুমাতে দে।

-উঠ অলস মেয়ে!

-যা তো কালকে বিয়ে করুম। কালকে সবাইরে আসতে বলিস।

তন্দ্রা মাথায় হাত দিয়ে মেঝেতে বসে পরে। তন্দ্রার এইরকম চিৎকার চেঁচামেচি শুনে রুমে প্রবেশ করে হাজেরা আর লুৎফা। হাজেরা মাহানুরকে মরার মতো ঘুমিয়ে থাকতে দেখে বুঝে যায় কী হয়েছে। এই মেয়ে আবার একটু বেশিই ঘুম পাগল। সে এগিয়ে গিয়ে মাহানুরের মাথার কাছে বসে আদরে স্বরে বলে,

-মা উঠ দেখ অনেক বেলা হয়ে গিয়েছে।

ঘুমের মধ্যেই বিরক্ত হয় মাহানুর। কপাল কুঁচকে ফেলে। রুক্ষ কণ্ঠস্বরে বলে,

-ঘুমাতে দেও না বড় মা। তোমরা সবাই এইরকম কেনো করো?

লুৎফা হেসে একগ্লাস পানিয়ে ঢেলে দেয় মাহানুরের মুখে। মুখে পানি পরায় লাফ দিয়ে বিছানায় উঠে বসে। তিনজনের রাগী মুখ দেখে মেকি হাসি দেয়। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বলে,

-ওমা কত লাট হয়ে গেলো! তোমরা আরো আগে ডাক দেবে না? আমি দ্রুত ফ্রেশ হয়ে আসছি।

মাহানুর ওয়াশরুম চলে গেলো। রুমে উপস্থিত তিনজন আহস্মকের মতো মাহানুরের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। নাস্তা করে তন্দ্রা আর সায়রিন মাহানুরকে নিয়ে পার্লার যায়। সকল ধরণের রূপ চৰ্চা করে দুপুরে বাসায় আসে তারা। খাওয়া দাওয়া করে নিজের রুমে আসে মাহানুর। বিছানায় মাহানুরের বিয়ের শাড়ী আর জুয়েলারি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তিন দিন ধরে সে আরহামের সাথে কথা বলে না। অন্যমনস্ক হয়ে মাহানুর ধীরে ধীরে শাড়ীটা ছুঁয়ে দেয়। আজ তার বিয়ে তাও আবার তারই প্রিয় মানুষটির সাথে! খুশিতে মন ভরে উঠে মাহানুরের।

জুয়েলারি গুলো হাতড়ে দেখছিল মাহানুর। কয়েকটা ইউনিক ডিজাইনের নাকফুল পাঠিয়েছে তার শাশুড়ি। হঠাৎই মাহানুরের কিছু একটা মনে পরে যায়। আলমিরার দরজা খুলে আরহামের দেওয়া নাকফুলটা বের করে। আয়নার সামনে যেয়ে বসে সযত্নে নাকফুলটা নাকে পরে নেয়। নাকের চকচকে সাদা পাথরটা তার পুরো মুখশ্রীকে লাবণ্যময় করে দেয়। সরমে দুইহাত দিয়ে নিজের মুখ নিজেই ঢেকে ফেলে।

____________________🌸

পার্লারের মেয়েরা এসেছে মাহানুরকে সাজাতে। আজ যেহেতু বউ সাজছে তাই একটু বেশিই সময় লাগবে। মাহানুর তাঁদের বার বার বলছে একদম সিম্পল সাজ দিতে। তন্দ্রা, ইফতি, সায়রিনও সাজতে বসেছে। বরযাত্রী আসবে রাতে এখন আত্মীয় স্বজনদের খাওয়ানো হচ্ছে। রামিশা এসে জোর করে মাহানুরকে খাইয়ে দিয়ে গিয়েছে। দুই ঘন্টা হয়ে গেলো এখনও সাজানো হচ্ছে না। বিরক্ত হয়ে মাহানুর বলে,

-আপু আর কত সময় লাগবে? (মাহানুর)

-এইতো আর কিছুসময়। (পার্লারের মেয়ে)

-তোর এতো তাড়া কিসের? চুপচাপ বস না। (তন্দ্রা )

-আমার কোমর, পিঠ ব্যাথা করছে বা*ল। (মাহানুর)

-সমস্যা কী ননদী? রাতে জামাইকে বলবে সে মালিশ করে দেবে। (সায়রিন)

-ভাবী ভালো হয়ে যাও সময় আছে। (মাহানুর)

-দোস্ত কাল কিন্তু বলবি তোর বাসররাতের কাহিনী? আমি আশায় থাকবো। (তন্দ্রা)

-তোর মুখে কিন্তু জুতা ফিক্কা মারুম কু*ত্তা। (মাহানুর)

কথার মাঝেই সম্পূর্ণ বউ রূপে তৈরি হয়ে যায় মাহানুর। কোমর ধরে উঠে দাঁড়ায়। তন্দ্রা, ইফতি ও সায়রিন মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে। আয়নায় নিজেকে দেখে একটা চিৎকার দেয় মাহানুর। চেঁচিয়ে বলে,

-আমারে দেখি মেকআপ দিয়ে হলিউডের ভুত বানাইয়া দিসে! এতো ফর্সা লাগতাসে কে ভাই!

-গাধী ভুত না বল নায়িকা লাগতাসে। কারো নজর না লাগুক। (তন্দ্রা)

-ওরে আমার দাদি আম্মা!(মাহানুর)

হঠাৎই বাহির থেকে হৈচইয়ের আওয়াজ আসে। বেলকনি দিয়ে আতশবাজির আলো এসে পরে মাহানুর রুমে। সবাই চিৎকার চেঁচামেচি করছে। সায়রিন বেলকনি দিয়ে দেখে বরযাত্রী এসে পড়েছে।

-বর এসে পড়েছে। চলো আমার গেট ধরতে যাই। (সায়রিন)

-হ্যাঁ হ্যাঁ জলদি চলো। (মাহানুর)

-তুই কথায় যাবি? (তন্দ্রা)

-কেনো? গেট ধরবি না? (মাহানুর)

-তুই ধরবি? (ইফতি)

-হুম। (মাহানুর)

-শা*লী থাপ্পড় দিয়ে দাঁত ফেলে দেবো। বউ হয়ে গেট ধরবি হুম! রুমেই বস। আমি বড় চাচীকে বলছি আসতে। (তন্দ্রা)

মুখ ছোট করে বিছানায় বসে পরে মাহানুর। তন্দ্রারা বেরিয়ে পরে। গেট ধরার পর্ব ঠুকিয়ে আরহামকে স্টেজে নিয়ে যায়। গম্ভীর মুখে বসে আছে আরহাম। আজ তাঁদের আবার বিয়ে পড়ানো হবে। কাজীও এসে পরেছে। হাজেরা আর তন্দ্রা মাহানুরকে নিতে ওপরে আসে। হাজেরা মাহানুরের কপালে চুমু দিয়ে বলে,

-মা কাজী যা যা বলবে সুন্দর মতো করবি।

-ঠিক আছে।

আরহামের পাশে বসানো হয় মাহানুরকে। সরমে মাহানুর আরহামের দিকে তাকাচ্ছে না। আরহামও তাকায়নি। অবশেষে তাঁদের দ্বিতীয়বার বিয়ে হয়ে যায়। আরহামদের পরিবারের সবাই মাহানুরকে দেখতে আসে। এরই মধ্যে খাওয়া দাওয়াও হয়ে যায়। এখন পর্যন্ত আরহাম তার বিয়ে করা স্ত্রীর দিকে তাকায়নি। সে একবারে সময় হলেই তাকাবে। এসে পরলো বিদায়ের সময়। আনন্দে মেতে উঠা বাড়ি ভুতিয়া বাড়ির মতো নিশ্চুপ হয়ে যায়। শুধু ভেসে আসছে কান্নারত্ব আওয়াজ। তার বাবা, চাচা-চাচী, ভাইদের দল, ফ্রেন্ড সবাই কান্না করছে। আয়াস নিজেকে শক্ত রাখার চেষ্টা করেও পারছে না। মাহানুরের কান্না দেখে তার চোখ দিয়েও অশ্রু পরছে। মাহানুর একে একে সবাইকে জড়িয়ে ধরে। কান্নারা জানো আজ আর থামছে না! মেহরাব খান আর হামযা খান মিলে মাহানুরের হাত আরহামের হাতে দিয়ে দেয়।

-বাবা আজ আর কিছু বলবো না শুধু আমার আদরের মেয়েকে দেখে রেখো। (মেহরাব)

-ইনশাআল্লাহ বাবা। মাহানুরের চোখে কখন পানি আসতে দেবো না আজই তার শেষ কান্না। (আরহাম)

জোর করে গাড়িতে বসিয়ে দেওয়া হয় মাহানুরকে। এবার আরহাম শক্ত করে বুকে চেপে ধরে মাহানুরকে। সান্তনা দিয়ে মাহানুরের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। কান্না করতে করতে একসময় জ্ঞান হারায় মাহানুর।

__________________🌸

গভীর রাতে জ্ঞান ফেরে মাহানুরের। মাথা ভীষণ ব্যাথা করছে তার। আবছা আলোয় সে বুঝতে পারে এখন সে আরহামের রুমে আছে। বিছানায় উঠে বসে। তখনই শাওয়ার নিয়ে মাথা মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে আরহাম। রুমে বাতি ধরিয়ে মাহানুরের পাশে যেয়ে বসে। মাহানুর ধীর কণ্ঠে বলে,

-আমি কী ঘুমিয়ে পড়েছিলাম?

-না অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলে।

-আপনাদের ফ্যামিলির সবাই নিশ্চই আমাকে নিয়ে উল্টোপাল্টা কথা বলেছে?

-এটা কোনো বড় বিষয় নয়। আর যদিও কেউ কিছু মনে করে তাতে আমার কোনো আসে যায় না। আম্মু অনেকক্ষণ তোমার পাশে বসে ছিল। আমি তাকে জোর করে রুমে পাঠিয়েছি।

-ভালো করেছেন।

-উঠো ফ্রেশ হয়ে খাবার খাবে।

মাহানুর কিছু না বলে বিছানা থেকে উঠতে নেবে তখন আরহাম টান দিয়ে আবারও মাহানুরকে বসিয়ে দেয়। নিজেই মাহানুরের গহনা ধীরেসুস্থে খুলে দিতে থাকে। কাজল লেপ্টে চোখের নিচ পুরো কালো হয়ে গিয়েছে। আরহামের নজর পরে মাহানুরের নাকের ওপর। দুই ঠোঁটে প্রসারিত হয়।
মাহানুর কাঠের পুতুলের মতো বসে রইলো। আরহাম সযত্নে সব কিছু খুলে দিয়ে মাহানুরকে বলে,

-এখন ড্রেস চেঞ্জ করে এসো। তারপর চুল খুলে দেবো।

-ঠিক আছে।

চুল না ভিজিয়ে শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে আসে মাহানুর। রিলেক্স ফীল করতে থ্রি পিস পরেছে। প্রথমে ভেবেছিল শাড়ী পরবে কিন্তু পরে মত পাল্টে সিম্পল ড্রেসই পরে। আরহাম মাহানুরকে বিছানায় বসিয়ে একটা থালিতে খাবার বেড়ে নেয়। মাহানুর মুখ কুঁচকে বলে,

-আমি এখন কিছু খাবো না।

-খেতে হবে।

আরহাম জোর করেই মাহানুরকে নিজ হাতে খাইয়ে দিতে থাকে। মাহানুর আরহামকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে আর খাবার চিবুচ্ছে। খাওয়া শেষ হলে আরহাম মাহানুরের চুল খুলে দিতে থাকে। ভরাট কণ্ঠস্বরে বলে,

-জ্বর জ্বর লাগছে?

-না ঠিক আছি এখন।

-সত্যি?

-জি।

-এতো তেজি মাহানুর একটু কান্না করেই অজ্ঞান হয়ে গেলো!

-অপমান করছেন নাকি?

-না ভাবছি জাস্ট।

-বেশি ভাবাভাবি ভালো নয়।

আরহাম মাহানুরের চুল আঁচড়ে স্মুখীন এসে বসে। মাহানুরের গালে হাত দিয়ে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে। হঠাৎই মাহানুরের নাকফুলের ওপর প্রগাঢ় ভাবে নিজের অধর ছুঁয়ে দেয়। সরমে আঁখিজোড়া ঝুঁকে যায় মাহানুরের।

-ভীষণ সুন্দর লাগছে তোমায়। একদম আমার বউ বউ।

সরমে মাহানুর আরহামের দিকে তাকালো না। আরহাম মুচকি হেসে বলে,

-ভীষণ ভালোবাসি আমার একমাত্র স্ত্রীকে।

মাহানুর সরমে লাল হয়ে যায়। আরহামের বলিষ্ঠ বুকে নিজের মুখ লুকায়। আরহাম শব্দ করে হেসে জড়িয়ে ধরে। মাহানুর আস্তে আস্তে বলে,

-আমিও অনেক বেশি ভালোবাসি তোমাকে স্বামীমহাশয়।

______সমাপ্ত______

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে