তবু ভালো আছি পর্ব-০৩

0
587

#তবু_ভালো_আছি
#রাজেশ্বরী_দাস_রাজী
#পর্ব_৩

গভীর নিস্তব্ধ রাত, বাড়ির সকলে গভীর ঘুমে মগ্ন হয়তোবা। শ্রুতি নিজের ব্যাগটা নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। কয়েকটা জামাকাপড় এবং তার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস আছে ব্যাগে। টাকা-পয়সা তেমন নেই, গয়নাও সব খুলে রেখে এসেছে সে ঘরেই। শ্রুতি জানতো সকালে আবার রণজয়ের এবং তার মা-বাবা তাকে বোঝানোর চেষ্টা করবে। শ্রুতি যদি তাদের সামনে বেরিয়ে আসতো তবে তারা শ্রুতিকে বাঁধা দিতো, তাই এই মধ্যরাতে সকলকে না জানিয়েই চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে এই বাড়ি ছেড়ে। এখানে আর একমুহুর্ত থাকতেও সে রাজি নয়। তাই এখনই এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে। আসার আগে অবশ্য ড্রেসিং টেবিলের ওপর একটা চিঠি লিখে রেখে এসেছে সে, তাতে সে স্পষ্টভাবেই বুঝিয়ে দিয়েছে যে সে বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছে। তাকে খোঁজার চেষ্টা না করাটাই তাদের জন্য শ্রেয়, কারণ সে ফিরবে না। নিজের সিদ্ধান্ত থেকে এক চুলও নড়বে না সে। আর সঠিক সময় এলে ঠিকই রণজয় ডিভোর্সটা পেয়ে যাবে। কিন্তু নিজের অথবা নিজের সন্তানের জীবনে তাদের হস্তক্ষেপ আর বরদাস্ত করবে না শ্রুতি।

শ্রুতি ব্যাগ হাতে নিঃশব্দে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে। রাস্তায় এসে একপাশ দিয়ে সোজা হাঁটা ধরে সে কোন এক অজানা গন্তব্যে। অনেকটা সময় হাঁটার পর অত্যন্ত ক্লান্ত লাগে শ্রুতির নিজেকে। সামনেই রাস্তার একপাশে একটি বড় গাছের নীচে সান বাঁধানো বসার জায়গা দেখতে পায় শ্রুতি। শ্রুতি সেখানে গিয়ে বসে। জলতৃষ্ণা পাচ্ছে তার কিন্তু নিজের সাথে তো জল আনেনি সে। পেটে হালকা মোচড় দিতেই শ্রুতির মাথায় আসে গতকাল রাত থেকেই তেমন কিছু খাওয়া হয়নি তার ঠিকঠাক। আজ রাতেও কেউ খাওয়ার কথা জিজ্ঞাসা পর্যন্ত করেনি তাকে। ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে নিজের পেটের ওপর আলতো হাত রাখে সে। এইমুহুর্তে কোথায় যাবে কী করবে কিছুই জানে না শ্রুতি। সে শুধু জানে নতুন এক অধ্যায় শুরু হয়েছে তার জীবনে, এখন তাকে লড়তে হবে, কঠিন একটা লড়াই। এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে নাকি লড়ে যেতে হয় প্রতিনিয়ত! তাকেও লড়তে হবে, তার জন্য, তার সন্তানের জন্য, বাঁচার লড়াই, তাদের ভালো থাকার লড়াই। আর নিজের সন্তানের জন্য হলেও এই লড়াই লড়তে প্রস্তুত সে। শ্রুতি গভীর শ্বাস টানে। একদফা আশেপাশে তাকায় সে। অন্ধকার রাস্তায় কৃত্রিম আলো জ্বলছে। মানুষজন খুব একটা নেই। মাঝে মাঝে অবশ্য গাড়ি চলতে দেখা যাচ্ছে রাস্তায়। গা সামান্য শিউরে উঠে শ্রুতির। না চাইতেও মনে ভয় এসে বাসা বাঁধেই। এইমুহুর্তে রাস্তায় বসে থাকা শ্রুতির জন্য সুরক্ষিত নয় মোটেও। কিন্তু কোথায় যাবে শ্রুতি এখন? কিছুই তো মাথায় আসছে না তার। হাতে টাকাও আছে খুবই কম। কী করবে সে এখন? শ্রুতি চিন্তিত মুখে নিরবে বসে থাকে সেখানেই।

.
.

রাস্তা দিয়ে হাঁটছে মৃন্ময় আর রুশা। রুশা মৃন্ময়ের কাজিন বোন, প্রায় সমবয়সী হওয়ায় আগাগোড়াই খুব ভালো বন্ধুত্ত্বের সম্পর্ক তাদের দুজনের। পেশায় রুশা একজন ডাক্তার। এতগুলো বছর পর শ্রুতির সাথে ওভাবে দেখা হওয়ার পর থেকেই মনটা আনচান করছিল যেন মৃন্ময়ের। না চাইতেও এত কাজের মাঝে সবকিছুকে ছাপিয়ে গিয়ে শ্রুতির কথাই মাথায় ঘুরাফিরা করছিল তার সবসময় আজ। সন্ধ্যের দিকে কিছু কাজে বাইরে গিয়েছিল মৃন্ময় সেটা শেষ করতে করতে রাত হয়ে যায় তার। অন্যদিকে রুশা তাকে জানায় হসপিটালে একটা এমারজেন্সি কাজে আটকা পড়েছে সে, তার কাজ শেষ হতে হতে মাঝরাত হয়ে আসে প্রায়। মৃন্ময় তাকে জানায় সে হসপিটালে আসবে দেখা করতে। তাই এই মাঝরাতেই শেষে সে হসপিটালে এলে সেখান থেকে একসাথে কথা বলতে বলতে হাঁটা ধরে রুশা আর মৃন্ময়। শ্রুতির সাথে দেখা হওয়ার সকল কথা খুলে বলে মৃন্ময় রুশাকে। তাকে নিয়ে কথা বলতে বলতে হাঁটার মাঝেই হুট করে রাস্তার একপাশে একটা মেয়েকে বসে থাকতে দেখে তারা, তারা থমকে দাঁড়ায়, সামান্য লক্ষ্য করতেই তারা বুঝতে পারে সেটা শ্রুতি। এই মাঝরাতে শ্রুতিকে এভাবে রাস্তার পাশে বসে থাকতে দেখে প্রচন্ড অবাক হয় রুশা, মৃন্ময়। রুশা বলে,

“শ্রুতি এখানে এইসময় একা কী করছে এভাবে? ব্যাগও তো আছে সাথে। সবকিছু ঠিক আছে তো!”

“বুঝতে পারছি না। তবে আমার মনে হচ্ছে না সবকিছু ঠিক আছে। তুই গিয়ে দেখ ওকে একটু।”

“কেন? তুই যাবি না?”

মৃন্ময় মাথা নেড়ে বলল,

“না। আমি কিছুটা দূরেই দাঁড়িয়ে থাকবো। আমাকে দেখলে ও হয়তো কিছু বলতে চাইবে না, কারণটা নিশ্চয় তোর অজানা নয়। তাই তুই প্লীজ গিয়ে ওকে দেখ।”

রুশা সম্মতিসূচক মাথা নেড়ে এগিয়ে গেলো শ্রুতির কাছে, মৃন্ময় কয়েক পা এগিয়ে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো তাদের থেকে সামান্য দূরেই। শ্রুতি বসেছিল চুপচাপ, রুশা গিয়ে কাঁধে হাত রাখলো তার। হুট করে এইসময় কাঁধে কারোর স্পর্শ পেয়ে চমকে উঠে সেদিকে তাকালো শ্রুতি। রুশাকে দেখামাত্রই যেন সকল ভয় কেটে গেলো তার। রুশাকে সে চেনে, অনেকগুলো বছর পূর্বে তাদের পরিচয় হয়েছিল যদিও মৃন্ময়ের সূত্রেই। এতোগুলো বছর পর রুশাকে দেখে ঠোঁটে মৃদু হাসি ফুটে উঠলো শ্রুতির। সে নরমস্বরে বলল,

“রুশা দি তুমি!”

রুশা মুচকি হেসে শ্রুতির পাশে বসে বলল,

“হ্যাঁ আমি। কতগুলো বছর পর দেখা তোমার সাথে! কিন্তু তুমি এখন এভাবে এখানে কী করছো শ্রুতি?”

শ্রুতি প্রথমটাই কী বলবে বুঝে উঠতে পারলো না ঠিক, করুণ চোখে রুশার মুখপানে চেয়ে চুপ করে রইলো সে। রুশা শ্রুতির গালে আলতোভাবে হাত রেখে বলল,

“শ্রুতি! কী হয়েছে? তুমি কেমন আছো বলো তো? সব ঠিক আছে তো? সত্যি করে বলো, তুমি ভালো আছো তো?”

কথাটুকু শুনেই রুশাকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠলো শ্রুতি। মনের ভেতর জমাট বেঁধে আসা কান্নাগুলো বাঁধ মানলো না আর তার কিছুতেই। শ্রুতি কান্নারত কণ্ঠেই বলল,

“কিছু ঠিক নেই রুশা দি, কিচ্ছু না। আমার সাথেই সবসময় এমন কেন হয় বলো না? কী দোষ আমার?”

রুশা আড়চোখে একবার মৃন্ময়ের দিকে তাকালো। শ্রুতিকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে তাকে সামলানোর চেষ্টা করলো সে। কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি তোলার মতো অবস্থা প্রায় শ্রুতির। কোনমতে নিজের কান্না আটকে শ্রুতি সোজাভাবে বসলে রুশা নিজের ব্যাগ থেকে একটা জলের বোতল বের করে শ্রুতিকে দিলো। শ্রুতি সামান্য জল খেয়ে পুনরায় জলের বোতলটা তাকে ফিরিয়ে দিলো।

“শ্রুতি, কী হয়েছে বলো আমায় প্লীজ। তুমি এত রাতে এখানে কী করছো একা?”

রুশার প্রশ্নে শ্রুতি ধীরকণ্ঠে উত্তর দিলো,

“আমি বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছি রুশা দি।”

রণজয়ের এবং অতিদির সম্পর্কের কথা, রণজয়ের তার সন্তানকে মে*রে ফেলতে চাওয়ার কথা, শ্রুতির সকলের আড়ালে বাড়ি ছেড়ে চলে আসার কথাসকল ধীরে সুস্থে রুশাকে বলল শ্রুতি। শ্রুতি এবং রুশার প্রায় সকল কথাই শুনতে পেলো মৃন্ময়। সবটা শুনে রুশা প্রশ্ন করলো,

“এখন কোথায় যাবে ভেবেছো কিছু?”

শ্রুতি দুদিকে মাথা নাড়িয়ে বলল,

“জানি না।”

রুশা সামান্য ভেবে বলল,

“তুমি আপাতত তবে আমার সাথে চলো শ্রুতি। আমি যেহেতু এখানে ফ্ল্যাটে একাই থাকি তাই তোমার অসুবিধে হবে না সেখানে কোন আশা করি।”

শ্রুতি দ্বিধান্বিত স্বরে বলল,

“কিন্তু…”

“যা ভাবার না হয় পরে ভেবো, সকালে ভেবো। মাঝরাতে এভাবে রাস্তায় বসে থাকাটা কি তোমার জন্য সেইফ বলো? তাই কোন কিন্তু নয় শ্রুতি, তুমি আমার সাথে যাবে এখন। এটা ঠিক যে মৃন্ময়ের সাথে বর্তমানে তোমার আর কোন সম্পর্ক নেই, তবে আমার সাথেও কি নেই? আমি যে তোমায় নিজের বোন মেনেছিলাম শ্রুতি, তোমাকে বন্ধুর মতোই স্নেহ করেছিলাম, ভুলে গেলে তুমি সব? প্লীজ শ্রুতি, আমার সাথে চলো এখন।”

শ্রুতি শেষে বলল,

“ঠিক আছে।”

শ্রুতি আর রুশা উঠে দাঁড়ালো, আশেপাশে তাকাতে গিয়েই মৃন্ময়কে দেখতে পেলো শ্রুতি। দুজনের চোখে চোখ পড়তেই চোখ সরিয়ে নিলো মৃন্ময়, শ্রুতি চোখ ফিরিয়ে মাথা নত করলো। রুশা পরিস্থিতির সামাল দিয়ে বলল,

“আসলে মৃন্ময় আর আমি একসাথেই বাড়ি ফিরছিলাম, রাত হচ্ছিল তো তাই আরকি।”

মৃন্ময় কিছুটা এগিয়ে এলো তাদের দিকে। রুশা শ্রুতিকে উদ্দেশ্য করে বলল,

“সামনে কিছুটা গেলেই আমার ফ্ল্যাট, তোমার হেঁটে যেতে কোন অসুবিধে হবে না তো?”

শ্রুতি দুদিকে মাথা নেড়ে জানালো যে তার কোন অসুবিধে হবে না।

“রাত হয়েছে অনেক, আমি বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিচ্ছি তোদের।”

মৃন্ময়ের কথায় রুশা সম্মতি জানিয়ে বলল,

“হ্যাঁ।”

কিছুটা পথ হেঁটে যেতেই রুশার বাড়ি তথা ফ্ল্যাটে এসে পৌঁছলো তারা। মৃন্ময়, রুশা আর শ্রুতি বাড়ির ভেতরে এলো। রুশা শ্রুতিকে নিজের ঘরে নিয়ে এলো। তার ফ্ল্যাটে বেডরুম দুটো, কিন্তু একটা তেমন গুছানো নেই এখন। তাই শ্রুতিকে নিজের রুমেই ঘুমোতে বলল সে আজ তার সাথে। মৃন্ময় ঘরের দরজার কাছে এসে রুশাকে উদ্দেশ্য করে বলল,

“রুশা আমি আসি এখন, রাত হয়েছে অনেক। আবার আগামীকাল কথা হবে। তোরা নিজেদের খেয়াল রাখিস।”

রুশা “ঠিক আছে।” বলে চোখের পলক ফেলে আশ্বস্ত করলো মৃন্ময়কে। মৃন্ময় চলে গেলো। শ্রুতি একবার তাকালো তার যাওয়ার পানে। রুশা হাত মুখ ধুয়ে এসে শ্রুতিকে ফ্রেশ হয়ে আসতে বলে রান্নাঘরে গিয়ে হালকা-ফুলকা কিছু খাবার নিয়ে এলো তাদের দুজনের জন্য। শ্রুতির সত্যিই খিদে পেয়েছিল, তাই বাক্যব্যয় না করেই খাবারটুকু খেলো সে। খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ করে বিছানা ঠিকঠাক করে শ্রুতিকে ঘুমোতে বলে বিছানার একপাশে শুয়ে পড়লো রুশা। শ্রুতি বালিশে মাথা রেখে চেয়ে রইলো সিলিংয়ের দিকে। পুরনো স্মৃতিগুলো আজ ভেসে উঠছে তার চোখের সামনে যেন। শ্রুতি আর মৃন্ময়ের যখন পরিচয় হয়েছিল তখন শ্রুতি স্কুলে পড়তো। মৃন্ময় ছিল তাদের থেকে বেশ অনেকটাই সিনিয়ার। স্কুলের সত্তর বছর পূরণ হওয়ার উপলক্ষে স্কুলে একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তখন শ্রুতি কেবল ক্লাস নাইনে উঠেছে আর মৃন্ময়রা ছিল ক্লাস টুয়েলভের ছাত্র, সেটা ছিল মৃন্ময়দের স্কুলে শেষের দিক প্রায়। মৃন্ময়ের গানের গলা ছিল অত্যন্ত সুন্দর। সেই অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার কথা ছিল মৃন্ময়ের। সেই উদ্দেশ্যেই একদিন হলঘরে বাকিদের পাশাপাশি গান প্রাকটিস করছিল সে। তখনই কৌতুহলবশত হলঘরে আসায় মৃন্ময়ের গলায় গাওয়া “তুমি রবে নিরবে” গানটা শুনেছিল শ্রুতি। সেইসময় শ্রুতি ছিল একদম প্রাণোচ্ছল একটি মেয়ে। শ্রুতি তার গান শুনে কী ভেবে যেন একটা পেন নিয়ে মৃন্ময়কে গিয়ে বলেছিল,

“তোমার গানের গলা অনেক সুন্দর, আমি তোমার ফ্যান হয়ে গিয়েছি। একটা অটোগ্রাফ হবে প্লীজ?”

শ্রুতির কথা শুনে “কী?” বলে মৃন্ময় হেসে উঠেছিল। সেটাই ছিল শ্রুতি আর মৃন্ময়ের প্রথম কথা বলা। একই স্কুলে থাকা সত্বেও এর আগে কোন কথা-বার্তা হয়নি তাদের কখনো। তবে এরপর থেকেই তাদের মধ্যে এই কথাবার্তা চলতে থাকে, ভালো বন্ধুত্ব তৈরি হয় তাদের মাঝে। মৃন্ময় স্কুলের পড়া শেষ করে চলে যায় স্কুল থেকে, তবে তাদের বন্ধুত্ব গাঢ় হয় দিনের পর দিন, সেই বন্ধুত্ব থেকেই তৈরি হয় ভালোবাসা। কতো সুন্দর স্মৃতি আছে তাদের দুজনের! কত হাসি! কত ঠাট্টা! একসাথে গল্প করতে করতে পাশাপশি রাস্তা দিয়ে হাঁটা! আরো কত কী! এভাবে একটা সময় শ্রুতি স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে কলেজে পা রাখে। সবকিছু তো ঠিকই চলছিল কিন্তু এর মাঝে হুট করেই শ্রুতির জন্য ছেলে দেখা শুরু করে শ্রুতির বাড়ি থেকে। শ্রুতি বাড়ির সবাইকে জানায় তার আর মৃন্ময়ের সম্পর্কের কথা। শ্রুতির বয়স তখন উনিশ হবে, কলেজের অনার্স ফার্স্ট ইয়ারের স্টুডেন্ট সে আর মৃন্ময়ের ইঞ্জিয়ারিং পড়া তখন শেষের দিকে প্রায়, তখনো কোন চাকরি করেনা সে। শ্রুতির বাড়ির কেউ সন্তুষ্ট হয়না তাদের সম্পর্কের কথা শুনে। শ্রুতি তাদের বলেছিল যে মৃন্ময়কে ছাড়া সে অন্যকাউকে বিয়ে করতে পারবে না কিন্তু তার বাড়ির লোক শোনেনি তার কোন কথা। তাদের বক্তব্য ছিল ভালো পরিবারের ছেলে, ভালো চাকরি করে, এমন ছেলে সহজে পাওয়া যাবে না তাই সেখানেই বিয়ে দেবেন তারা শ্রুতিকে। অনেক বুঝিয়েও কোন লাভ হয়নি তাদের। বরঙ দ্রুত বিয়ের ব্যবস্থা শুরু করেছিল তারা। শেষে শ্রুতিই তাই মৃন্ময়কে ফোন করে বলেছিল যে সে পালিয়ে যাবে মৃন্ময়ের সাথে। মৃন্ময় প্রথমে তো রাজিই ছিল, তবে সত্যিই যখন বাড়ি থেকে পালিয়ে তাদের ঠিক করে রাখা সেই নির্দিষ্ট স্থানে মৃন্ময়ের কাছে আসে সে তখন মৃন্ময় তাকে বলে,

“তুমি বাড়ি ফিরে যাও শ্রুতি। আমি তোমায় নিয়ে এভাবে পালাতে পারবো না।”

শ্রুতি অবাক হয়ে বলেছিল,

“কী বলছো এইসব তুমি? কেন বলছো?”

মৃন্ময় উত্তরে বলেছিল,

“আমি ঠিক বলছি। ব্যপারগুলো যতটা সহজ তোমার মনে হয় ততটা সহজ নয়। তুমি কখনো সুখী হবে না আমার সাথে। তুমি বরঙ তোমার মা-বাবার কথামতোই সেই ছেলেকে বিয়ে করো। আমাকে ভুলে যাও। আমি জানি তুমি সুখে থাকবে। তুমি প্লীজ জেদ কোরো না। চলে যাও এখান থেকে, ফিরে যাও বাড়ি। আমি পারবো না তোমায় নিয়ে এভাবে পালিয়ে যেতে। আমাকে ভুলে যেও তুমি। সম্ভব হলে ক্ষমা করে দিও আমায়। ভালো থেকো।”

মৃন্ময় কথাটুকু বলেই চলে গিয়েছিল সেই স্থান থেকে। শ্রুতি নির্বাক চেয়েছিল কেবল মৃন্ময়ের যাওয়ার পানে। শেষ পর্যন্ত উপায়ন্তর না পেয়ে ভগ্ন হৃদয়ে বাড়ি ফিরে আসতে হয়েছিল তাকে। নিজের ইচ্ছে, ভালোবাসা সবকিছুকে গলা টি*পে হ*ত্যা করে শেষে বাবা-মায়ের পছন্দ করা ছেলে অর্থাৎ রণজয়কে বিয়ে করতে হয় তাকে। তারপর মাঝে এতগুলো বছর মৃন্ময়ের সাথে সাক্ষাৎ যোগাযোগ কিছুই হয়নি কখনো তার।

চলবে,..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে