ডুমুরের ফুল
৮.
জাদিদের এক পলকে তাকিয়ে থাকাটা হেমলতা খেয়াল করেনি। সে ব্যস্ত ছিলো অন্য জগতে। জাদিদ হেমলতার চুল গুলো হাতের মুঠো দিয়ে ধরে বলল
– কাকরা বা অন্যকিছু আছে?
– ছিলো কিন্তু আন্টি চুল বাধার সময় কোথায় যেন রাখছে। আসার সময় তো মনেও ছিলো না।
– হুম।
তারপর জাদিদ চুলে গিট মেরে দিয়ে বলল
– এতো বড় মেয়ে কিছুই পারো না?
– না, তা তো দেখছোই।
একজন ছেলে যে তার চুল বেধে দিয়েছে তাতে তার কিছুই মনে হচ্ছে না। বরং তার মনে হচ্ছে এটা স্বাভাবিক।
দুজনের মাঝে হঠাৎ অনেক বড় পরিবর্তন হয়ে গেলো কিন্তু দুজনের কেউ কিছুই বুঝতে পারলো না।
রিক্সা রেল লাইন পার হওয়ার সাথে সাথেই হেমলতা বলল
– এখানে নামিয়ে দিলে ভালো হয়। নানী যদি দেখেন আমি কোনো ছেলের সাথে রিক্সায় একসাথে এসেছি। তাহলে ঝামেলা হয়ে যাবে।
– কিন্তু আমরা তো ফ্রেন্ড তাই না?
– হ্যা কিন্তু সে তো বুঝবে না।
জাদিদ কিছুক্ষণ চুপ রইলো তারপর বলল
– আচ্ছা নামো।
তারপর রিক্সাওয়ালা কে বলল
– মামা এখানে একটু রাখেন।
রিক্সা থামানোর সাথে সাথেই হেমলতা নেমে গেলো।
কিছু না বলেই হেমলতা তার বাসার উদ্দেশ্যে হাঁটতে শুরু করলো।
জাদিদ একদৃষ্টিতে হেমলতার চলে যাওয়া দেখছিলো।
রিক্সাওয়ালা মামা বলল
– ভাইগ্না গাড়ি স্টার্ট দিমু?
প্রশ্ন শুনে জাদিদের সৎবিত ফিরে এলো।
– হ্যা মামা দেন।
হেমলতা বাসায় ঢোকার সময় একজন ব্যাগ হাতে ভদ্রলোক বের হলেন।
হেমলতাকে ঢুকতে দেখে লাইলী বানু দৌড়ে এসে বলল
– তোর নানীর শরীর ভালো না। এতক্ষণ কই ছিলি?
– ডাক্তার ডাকা হয়েছে?
– হ, কেবল গেলো।
– কী বলেছে?
– আমি তো জানি না। আমাকে বলে নাই। তোর নানী জানে।
হেমলতা নানীর রুমে গিয়ে চেয়ার টেনে বসলো।
মিসেস জয়নব চোখ বুজে আধশোয়া অবস্থায় ছিলেন। নাত্মীর আসাতে সে চোখ খুললো।
হেমলতা বলল
– কী হয়েছে?
– আরে তেমন কিছু না।
– মেডিসিন দিয়েছে?
– তা তো দিছেই।
– আমি এখন চা খাবো। তুমি খাবা?
– দে তবে কড়া লিকার হালকা মিষ্টি।
– আচ্ছা।
হেমলতা নিজ হাতে চা বানিয়ে নানীর রুমে নিয়ে এলো।
দুজনে চুপচাপ চা খেলো। হেমলতা চায়ের কাপ হাতে নিয়ে রুম থেকে যাবার সময় বলল
– রেস্ট নাও তুমি। যা লাগবে আমাকে বা লাইলী আপা কে বলবে।
মিসেস জয়নব চোখ বুজে মুচকি হেসে বলল
– আচ্ছা।
হেমলতা পড়তে বসলো।
জাদিদ বাসায় গিয়ে রুম এ গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।
ঘুমের ঘোরে একটা অচেতন ভাব রয়ে গেলো।
জাদিদ অনেকদিন পর স্বপ্ন দেখছে। সে নিজেও বুঝতে পারছে স্বপ্ন দেখছে সে। স্বপ্নের মাঝে মনে হচ্ছে তার – সে মাটির রাস্তায় হাঁটছে। চারপাশে প্রচুর গাছপালা। রাস্তার সাথে ঝোপের মতো ছোট ছোট গাছ। তাতে বিভিন্ন রঙের ফুল ফুটে আছে। স্বপ্ন তো সাদাকালো হয়। কিন্তু সে স্পষ্ট দেখছে যে ফুল গুলো রঙিন। সে আশেপাশে দেখছে। এতো সুন্দর পরিবেশ তার জীবনে প্রথম দেখলো। পাখির কলকাকলি কানে আসছে তার। কোনো একটা ছন্দ আছে তাতে। কিছুক্ষণ এভাবে হাঁটার পর তার কানে ঝুমুরের আওয়াজ আসলো। আওয়াজ টা তার পাশের ঘন গাছপালার ভেতর থেকে আসছে।
ঝুমুরের আওয়াজ এর আগেও সে শুনেছে। তাই আওয়াজটা যে ঝুমুরের সে সহজে বুঝতে পেরেছে।
ক্রমেই আওয়াজ টা তীব্র হচ্ছে। কিন্তু শব্দের তীব্রতা তাকে পীড়া দিচ্ছে না। কেন যেন তার শুনতে ইচ্ছে করছে। হুট করেই শব্দের তীব্রতা কমতে শুরু করলো। ওর মনে হলো ঝুমুরের আওয়াজটা দূরে চলে যাচ্ছে।
যেদিক দিয়ে আওয়াজটা ভেসে আসছে জাদিদ সেদিকে দৌড়াতে শুরু করলো। তার এই শব্দের উৎস টা দেখতে হবে। জানতে হবে। কে ঝুমুর পায়ে হাঁটছে? নাকি কেউ না? নাকি ওর ভ্রম? প্রশ্নগুলো জাদিদকে ভাবাচ্ছে এবং সে আবিষ্কার করলো বিন্দু বিন্দু ঘাম তার কপালে জমা হচ্ছে।
ক্রমশ শব্দ ক্ষীণ হয়ে যাচ্ছে। সে কিছুক্ষণ দৌড়ানোর পর তার থেকে বেশ দূরে সাদা ছায়া দেখা যাচ্ছে। ঝুমুরের আওয়াজ আর কানে আসছে না। ছায়াটা স্থির হয়ে আছে।জাদিদ আরো দ্রুত দৌড়াতে শুরু করলো।
ছায়াটার কাছাকাছি এসে সে বুঝতে পাড়লো দীর্ঘ কেশ নিয়ে সাদা শাড়িতে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে। তার পায়ে ঝুমুর। পিছন থেকে তাকে এতো আকর্ষণীয় লাগছে যে ফেস দেখার জন্য জাদিদ উন্মাদের মতো কেউ একজনের হাত ধরে টেনে নিজের কাছে নিলো।
চেনা হাতের স্পর্শ, চেনা ফেস সেই চেনা মানুষ টা তাকে এতদূর টেনে এনেছে। জাদিদ অবাক হয়ে গেলো একি এতো হেমলতা।
জাদিদের অবাক হওয়াতে হেমলতা অট্টহাসিতে মগ্ন হয়ে গেলো।
আজকে সন্ধ্যায় তো জাদিদ এই হাসির শব্দেই মুগ্ধ হয়েছিলো।
জাদিদ সাদা শাড়ীতে জড়ানো খোলা এলোকেশী এই মানবীকে দেখছে।
যেন সময় থমকে গেছে। এই সবুজে ঘেরা পরিবেশে প্রিয় মানুষ টার প্রিয় হাসিতে যেন ডুবে যেতে ইচ্ছে করছে জাদিদের।
চলবে….!