ডুমুরের ফুল ৪০.

0
1939
ডুমুরের ফুল ৪০. জাদিদ রিসোর্টের রুমে শুয়ে আছে। জাদিদ বাদে সবাই আশেপাশে ঘুরতে বের হয়ে গেছে। রেহান হাজার চেষ্টা করেও জাদিদকে নিতে পারেনি। ঘুমও আসছেনা যে ঘুমিয়ে পার করে দিবে। মোবাইল ঘাটতেও ভালো লাগছে না। এখানে গ্রামীণফোন, বাংলালিংক সিমের কোনো নেটওয়ার্ক নেই। রবি, টেলিটক সিমের নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়। হেমলতার মোবাইল নাম্বার জিপি সিমে সেভ করা। জিপি সিম বাসায় রেখে এসেছে। রবি সিমে হেমলতার নাম্বার সেভ করা হয়নি। যে মানুষটা এখন অতীত তার সিম নাম্বার রাখার প্রয়োজনীয়তা নেই ভেবেই রাখা হয়নি। হেমলতার সাথে কথা বলার লোভও ছাড়তে পারছেনা জাদিদ। মিম্মার মোবাইল নাম্বার থাকলেও কাজ হতো। ধুর, মেয়েটা ওকে দেখেও কথা বলেনি সেখানে তাকে ফোন দেয়ার কোনো মানে হয়না। আর হেম তো একা আসেনি সাথে তার স্বামী এসেছে। হেমকে বিব্রতকর অবস্থায় ফালানোর বিন্দুমাত্র ইচ্ছা তার নেই। সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে জাদিদ গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলো। ঘুম ভাঙলো ফোনের রিংটোনে। ফোন রিসিভ করে ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বলল – হ্যালো।
ফোনের ওপাশ থেকে শাহীন বলল – আর কতো ঘুমাবি? সাজেক কেউ ঘুমাতে আসে? – আরে ভালো লাগতেছিলো না তাই রুমে ছিলাম। – আমরা হোটেল পেদা টিং টিং – এ আড্ডা দিচ্ছি। দ্রুত আয়। – আচ্ছা। জাদিদ মোবাইল বালিশের পাশে রেখে ফ্রেশ হয়ে বাহিরে বের হলো। দুপুরের দিকে হালকা ঠাণ্ডা ছিলো। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে বেশ ঠান্ডা। নীল রঙের হুডিটা গায়ে দিয়ে বের হয়ে পড়লো। মাথা থেকে অতীতটাকে ঝেড়ে ফেলতে হবে। সে তো আর কম চেষ্টা করেনি হেমকে পাবার জন্য। কিন্তু ভাগ্য সহায় না হলে কী আর করার। নিজেকে কঠোরভাবে শাসন করে বলল – লতাকে তার স্বামীর সাথে দেখতেও হতে পারে তোর। তখন নিজেকে কন্ট্রোল করবি। তোর লাইফে কি মেয়ের অভাব? শাম্মীর মতো মেয়ে থাকতে ওরকম বিবাহিত মেয়ের জন্য উতলা হবার কিছুই নেই। জাদিদ আড্ডায় জয়েন করলো। সবাই হাসি ঠাট্টা করছে। জাদিদের আস্তে আস্তে খারাপ লাগাটা কমে যেতে শুরু করলো। মিম্মা ঘুম থেকে উঠে হেমলতাকে রুমে না পেয়ে ফোন দিলো। ফোন সুইচড অফ। উঁহু এখানে জিপি সিমের নেটওয়ার্ক নেই। আর হেমলতা তো সিম চেঞ্জ করেও আসেনি। এখন ওকে কোথায় খুঁজে পাবো? বিরক্তি আর ভয় নিয়ে রুম থেকে বের হলো মিম্মা। মেয়েটা আবার সুইসাইড করে বসলো নাকি? হোটেল প্যারাডাইজ সাজেকের দোতলার হাতের ডান পাশের রুমটা মিম্মা আর হেমের জন্য। মেয়ে দু’জন হওয়াতে একদিকে সুবিধাই হয়েছে। দুটো বেডের রুমটা দুজনে শেয়ার করতে হচ্ছে। দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিল হেম। নীরবে কাঁদছে সে। পাশে রাখা টেবিলে তিন জন ছেলে জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে। হেম তাদের দিকে পেছন ফিরে রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে। মিম্মা দেখতে পেয়ে বিরক্ত হয়ে বলল – এখানে কী করিস? একটু ঘুমালেই তো পারতি। হেম যথাসম্ভব কণ্ঠ স্বাভাবিক করেই বলল – ঘুম আসছিল না। – চল, চা খেয়ে আসি। এখানে বাঁশের মধ্যে বানানো স্পেশাল চা পাওয়া যায়। হেম, মিম্মাকে অনুসরণ করলো। হেমলতা বাঁশের চা খেতে গিয়ে বিপদে পড়লো। চুমুক দিবে কীভাবে? বাঁশের একটা অংশ চোখা আর ধারালো। কোনোভাবে খোচা লাগলেই রক্তারক্তি অবস্থা হয়ে যাবে। রক্ত শব্দটাতে হেমের ভীতি কাজ করে। খুব সাবধানে চুমুক দিয়ে হেম চোখ মুখ কুঁচকে ফেললো। এমন তিতা আর গন্ধটাও যেন কেমন। মিম্মা হেমকে জিজ্ঞেস করলো – অনেক টেস্ট না? হেম বিরক্ত নিয়ে বলল – মোটেও না। – ধুর তোর আবার চয়েজ আছে নাকি? – অবশ্যই আছে। চয়েজ না থাকলে তোকে বেস্ট ফ্রেন্ড বানাতাম না। মিম্মা হাসতে হাসতে বলল – তুই তো ক্যাচ আউট করলি আমাকে। – ট্রিট দে আমাকে। – বল কী খাবি? – জাদিদের হাতের কফি। মিম্মা হাসি থামিয়ে দিল। হেমও কিছুটা আহত স্বরে বলল – ভুলে বলে ফেলছি। আজকে ওর সাথে দেখা হয়ে যাবার পর থেকে শুধু ওর কথা মাথায় ঘুরতেছে। মিম্মা অবাক হয়ে বলল – আমাকে আগে বলিসনি কেনো? – ইচ্ছা করছিলো না তাই। – কথাবার্তা কিছু হয়েছে? – হয়েছে বৈকি! কেমন আছো? হাজবেন্ড সাথে আসছে নাকি? এসব কথা আরকি। – তুই কি বলেছিস? – আমার কিছুই বলা লাগেনি। ওই উত্তর দিয়ে দিছে। ডিভোর্সের কথা বলিনি। বলেও বা লাভ কী বল? ও নিজের জীবনটাকে সাজিয়ে গুছিয়ে নিয়েছে হয়তোবা। এখন আমি যদি সেধে গিয়ে জানাই তাহলে ও চাইবে কিছু একটা। মিম্মা কঠোরভাবে বলল – তুই কি ভাবছিস ও তোকে আবার ফিরে পেতে চাইবে? – ভাবছিনা তবে হতেও তো পারে। ওর চোখের দিকে তাকিয়ে আমার জন্য কিছু একটা দেখেছি আজকেও। – ওটা থাকলেই যে চাইবে এমন তো কথা না। শোন হেম, ও তোকে চাইলেও আগের মতো কিছুই হবেনা। বড়জোর এক থেকে দেড় বছর বা কিছু বেশি তার বেশি টিকবে না সম্পর্ক। তুই ডিভোর্সি আর ও অবিবাহিত। এটা সমাজ যেমন মানবেনা তেমন জাদিদের ফ্যামিলিও মানবেনা। হেম মুচকি হেসে বলল – যখন অবিবাহিত ছিলাম তখনই মানল না ওর ফ্যামিলি। আর তো এখন। যাইহোক বাদ দে এসব। ভালো লাগছেনা মিম্মা। আমার এখানে আসাটাই ঠিক হয়নি। ওর মুখোমুখি হয়ে আবার…. হেম আর একটা শব্দ উচ্চারণ করতে পারলোনা। কান্না আটকে রাখতে ব্যস্ত হতে হলো তাকে। আশেপাশে অনেক মানুষ। এভাবে কাঁদতে দেখলে হাজারটা প্রশ্ন নিয়ে তাকিয়ে থাকবে। অনেকে তো জিজ্ঞেসও করে বসতে পারে। জাদিদ আর শাহীন পাশাপাশি হাঁটছে। এখানটায় বেশ অন্ধকার। একটু আগেও বৃষ্টি হয়েছে। যার দরুন রাস্তা ভিজে আছে। শাহীন বলল – রাতে বিবিকিউ চিকেন আর সাথে চুয়ানি। পাহাড়ি খাঁটি জিনিস দিতে বলেছি। ভেজাল হলে খবর আছে। – হেমের সাথে দেখা হয়ে গেছে আমার। – ও কি সাজেকে এসেছে? – হ্যাঁ, হাজবেন্ডের সাথে। – কথা বলছিস নাকি? – হুম। চুয়ানি কয়টা আনতে বলছিস? – তিন বোতল হলেই এনাফ। – ছয় বতোল আনতে বল। আজকে আমার এক বোতলে হবেনা। – বাসায় থাকতি তাহলে খেতে পারতি। কিন্তু এখানে খাওয়া যাবেনা। – আমার আজকে খেতেই হবে। তা নাহলে আমি খারাপ কিছু করে বসতে পারি৷ হেমের হাজবেন্ডের সামনেই ওকে টেনেও নিয়ে আসতে পারি৷ – তোর মাথা খারাপ নাকি? – হ্যাঁ আমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। ওকে আমার এক্ষুনি দরকার। – জাদিদ, ও বিবাহিত। আর এখানে একা আসেনি যে কথা বলিয়ে দিবো। – তাহলে ৬ টা আনতে বল। শাহীন বাধ্য হয়ে ছয় বোতল চুয়ানির অর্ডার করলো। যদিও এখানে বেশ গোপনীয়তা ধরে রাখতে হয়। রাতে ব্যাম্বু চিকেন, সাদা ভাত, আলু ভর্তা, পাতলা ডাল, ভাজি। হেমলতা পেট ভরেই খেলো। খাওয়া দাওয়া শেষে হেম আধা লিটারের সেভেন আপ কিনলো। মিম্মা নাচতে নাচতে হেমের কানে কানে বলল – দোস্ত চুয়ানি খাবি? হেম বলল – এটা আবার কী? হেম জোরে বলাতে মিম্মা বলল – আরে আস্তে বল। এটা এক পাহাড়ি মদ। – ছিঃ ওসব খেতে যাবো কেনো? খাবার জিনিসের অভাব আছে কি? – আরে দোস্ত ওরকম একটু আকটু না খেলে মজা হয় নাকি? – দ্যাখ ওসব খাওয়ার কোনো দরকার নেই। – তুই না খাইলি আমি খাবো। তাহলে এক বোতল অর্ডার করলাম। – খবরদার না মিম্মা। – উঁহু হেম। চলবে…..
~ Maria Kabir

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে