ডুমুরের ফুল ৩৮.
১৯ জনের টিম নিয়ে মির্জা ভাই রওনা হলেন সাজেকের উদ্দেশ্যে। ফরিদপুর হয়ে প্রথমে ঢাকায়। ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ির দীঘিনালাতে। দীঘিনালা থেকে সাজেক। মিম্মা অন্যদের সাথে পরিচয় পর্ব সেড়ে নিচ্ছে। হেম চুপচাপ ফেরিতে দাঁড়িয়ে নদী দেখছে। তার আসার কোনো ইচ্ছা ছিলো না। মিম্মার জোরাজোরিতে আসা হলো। আসার আগে নানী তার হাতে এক হাজার টাকার তিনটা নোট গুঁজে দিয়েছিলেন নিঃশব্দে। হেম অবাক হয়ে নীরস গলায় বলল
– লাগবেনা নানী। আমার যা আছে তাতেই হবে।
জয়নাব কোনো উত্তর দেননি। তার চোখমুখের দিকে তাকানোর সাহস হেমলতা পেলোনা। আজকাল বেশ খেয়াল রাখছে হেমের সে। পড়াশোনা থেকে শুরু করে হেমলতার গোসল পর্যন্ত।
হেমলতা আকাশের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলছে
– জাদিদ, কেমন আছো? আমার কথা মনে পড়ে তোমার?
বিয়ের পর থেকে এক মুহুর্ত সময় পায়নি জাদিদকে প্রাণখুলে মনে করার। জাদিদের সাথে বিচ্ছেদের শোক প্রকাশ করারও সুযোগ হয়নি তার। একটার পর একটা কষ্টের স্রোত এসে ভীড় জমিয়েছে তার জীবনে। বিয়ের রাতেই অজানা, অচেনা একজন মানুষের সাথে শারীরিক সম্পর্কে জড়াতে হয়েছে। ভাবতেই হেমলতার গা গুলিয়ে আসে। কষ্ট হচ্ছিলো অনেক কিন্তু মানুষটার সেদিকে খেয়াল ছিলোনা। আর কয়টা দিন অপেক্ষা করলে তো তার কোনো ক্ষতি হয়ে যেতোনা। জাদিদের সাথে তার সম্পর্কের কথা জানার পরে তো আরো বাজে ভাবে শারীরিক ভাবে মিলিত হতো সে। লজ্জাস্থানে এখনো সিগারেটের পোড়া দাগ রয়ে গেছে। এমন হাজারটা পোড়া দাগ তার শরীরের বিভিন্ন জাগায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। সিগারেটের জ্বলন্ত অংশটা শরীরে ছুইয়ে দিয়ে পৈশাচিক হাসি মুখে নিয়ে বলত
– জাদিদকে এখন দেখাবি এই শরীর। ঘেন্নায় ও তোর কাছে আসবেনা।
নিজের অজান্তেই টপটপ করে কয়েক ফোঁটা নোনা পানি গড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে হেম বাম হাতের উল্টো পাশ দিয়ে মুছে ফেললো। যতদিন নিশ্বাস চলবে ততদিন এই ক্ষত নিয়েই বাঁচতে হবে।
জাদিদ আর শাহীন পাশাপাশি সিটে বসলো। শাহীন জাদিদকে জিজ্ঞেস করল
– দোস্ত, বিদেশী জিনিসটা এনেছিস তো?
জাদিদ চশমাটা মুছে চোখে দিয়ে বলল
– পাহাড়ে আলাদা জিনিস পাওয়া যায়। ওটার স্বাদ আলাদা। যদিও আমি এখনো খাইনি। তবে শুনেছি।
শাহীন কিছু একটা বলতে যাবে সামনে রেহান এসে দাড়ালো। রেহান আবার এলকোহল জাতীয় কিছু পছন্দ করে না। নাম শুনলেই বারোটা বাজাবে ওদের।
রেহান শাহীনকে বলল
– তোর হেডফোনটা দে তো। আমারটা আনতে ভুলে গেছি।
জাদিদ শাম্মী ডেকে বলল
– রিসোর্ট বুক করেছো? তা নাহলে ওখানে গিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা লাগবেনে।
শাম্মী বলল
– আমি তোমার মতো ভুলো মনের মানুষ না।
– আমি কিন্তু রুম শেয়ার করতে পারবোনা। আমার জন্য একটা রুম বুক করবা।
– আমি জানি আর সেটাই করেছি।
– গুড গার্ল।
– আর শুনো খুদা লাগলে বইলো আমাকে। তোমার জন্য আমি রান্না করে এনেছি।
শাহীন বলল
– আমার জন্য আনিস নাই?
শাম্মী বলল
– না।
শাহীন নালিশের সুরে রেহানকে বলল
– আমরা কি মানুষ না? আমাদের জন্য খাবার আনতে ওর সমস্যা কোথায়? সারাদিন খালি জাদিদ আর জাদিদ।
রেহান কড়া মেজাজে বলল
– দুনিয়ায় খাবারের অভাব পড়ে নাই শাহীন যে শাম্মীর খাবারের জন্য তোর এমন ছ্যাচড়ার মতো করতে হবে।
শাহীন দমে গিয়ে বিড়বিড় করতে লাগলো। রেহান হেডফোন নিয়ে নিজের সিটে গিয়ে বসলো।
শাম্মী আর সূচি পাশাপাশি সিটে বসেছে। সূচি কানে হেডফোন গুঁজে গান শুনতে ব্যস্ত। শাম্মী জাদিদের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চোখ ফিরিয়ে নিল। যদি ওর নজর লেগে যায়?
মিম্মাদের বাস ছাড়তে চল্লিশ মিনিটের মতো লেইট হলো। জ্যামে আটকে থাকার দরুন আরো এক ঘণ্টা লেইট হলো। যেখানে সকাল ৬ টায় পৌঁছানোর কথা সেখানে সাড়ে সাতটায় গিয়ে দীঘিনালাতে পৌঁছলো। জাদিদ দের বাস ঠিক ৬ টায় এসে থেমেছে দীঘিনালাতে। লেট না হলে দুজনের খাবার হোটেলেই দেখা হয়ে যেতো। জাদিদরাও দরবার হোটেলে নাস্তা করেছে, মিম্মারাও তাই।
সকালের নাস্তা করে চান্দের গাড়িতে করে আবার রওনা হলো সাজেকের পথে।
মাঝপথে দুটি আর্মি ক্যাম্পে গাড়ি থেমেছিল এক থেকে দেড় ঘণ্টার জন্য। অন্যান্যরা আশপাশ দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। লং জার্নি করার কারণে হেম গাড়ি থেকে নামেনি। মিম্মার অবশ্য ক্লান্তিতে এতোটা কাহিল অবস্থা হয়নি। একইসাথে চার পাঁচটা চান্দের গাড়ি এখানে দাঁড়িয়ে আছে। একদম সামনের টা জাদিদের আর লাস্টের টা মিম্মাদের।
আট থেকে দশ বছরের দুজন বাচ্চা মাথায় ঝুড়ির মধ্যে টসটসে পেয়ারা নিয়ে বিক্রি করছে। মিম্মা হেমলতার জন্য কিনতে গিয়ে থমকে গেলো। জাদিদ বাচ্চা দুটোর সাথে গল্প করছে আর পেয়ারা খাচ্ছে। জাদিদ অবশ্য খেয়াল করেনি মিম্মা তার সামনে দাঁড়িয়ে।
বাচ্চা দুটোর একজন বলল
– আপা পেয়ারা কয়টা নিবেন?
বাচ্চাটার কথায় জাদিদ তাকালো মিম্মার দিকে৷ জাদিদ সাথে সাথেই চোখ নামিয়ে নিল।
মিম্মা চারটা পেয়ারা কিনে টাকা মিটিয়ে দিয়ে দ্রুত পায়ে তাদের গাড়ির দিকে পা বাড়ালো।
যাই হয়ে যাক দুজনের দেখা যেন না হয় সেই ব্যবস্থা করতে হবে। হেম এমনিতেই অনেক ডিপ্রেসড আর যদি জাদিদের সাথে কোনোভাবে দেখা হয়ে যায় তাহলে কেয়ামত ঘটে যাবে।
চলবে…..
~ Maria Kabir
Apu apnar likhoni sotti e osadharon onk opekkhai thaki ei story tar jonno…