ডুমুরের ফুল ৩৬.
রাতের খাবার শাহীন আর জাদিদ একসাথেই করলো। শাহীনের হোস্টেলে যাবার কথা ছিলো কিন্তু জাদিদ যেতে দেয়নি। নোট খাতাটা হাতে নিয়ে জাদিদ শাহীনকে বলল
– সামনেই তো এক্সাম, তোর প্রিপারেশন কেমন?
শাহীন সিগারেটে একটা লম্বা টান দিয়ে বলল
– চলে আরকি। তোর তো ফাটাফাটি অবস্থা!
– আর ফাটাফাটি, দেখিস না সময় পেলেই হাওয়া হয়ে যাই।
– দোস্ত, এমন হাজারটা মেয়ে যাবে আসবে। আর তোর মতো ছেলের জীবনে ওরকম একটা মেয়ে না থাকলেও বা কী?
– না-ই তো!
– হেমলতা না কী নাম ছিলো, সে যাই নাম হোক। ওর তো বিয়ে হয়ে গেছে। বাচ্চাকাচ্চাও হয়ে গেছে মনে হয়। তিন বছর বিয়ের বয়স তার। তোকে তো বাসর রাতে জামাইয়ের আদরেই ভুলে গেছে। আর তুই তার শোকে ভার্সিটি লাইফ নষ্ট করছিস।
– আসলে বিষয়টা তেমন না। ভালো লাগেনা আমার আজকাল।
– তোর এই আজকাল আমি তিন বছর যাবত শুনছি।
জাদিদ মুচকি হাসলো শাহীনের কথায়। শাহীনের গা জ্বালা ধরে গেলো। এই ছেলে এমন ভাবে হাসছে যেন সে মজা করতেছে।
শাহীন সিগারেটের ছাই ফ্লোরে ফেলে দিয়ে বলল
– মাইয়াটা তোর মতো ছেলেকে ছ্যাকা দিলো ক্যামনে বুঝি না।
জাদিদ নোট খাতা টেবিলের উপর রেকে বলল
– হেম ছ্যাকা দেয়নি আমাকে। আমিই ছেড়ে দিছিলাম ওকে।
শাহীন ভ্রু কুঁচকে বলল
– হইছে ওকে আর ভালো বানাতে হবেনা।
– সিরিয়াসলি দোস্ত, আমিই ছাড়ছি ওকে।
– তাই নাকি? তো কারণটা জনাব বলা যাবে আমাকে?
– হ্যাঁ যাবে, তবে আজকে না। আজকে আমার ড্রিংক করতে ইচ্ছা করতেছে। ওসব কাহিনী শুনাতে গেলে ড্রিংক করার মুড থাকবেনা।
– শুদ্ধ ভাষায় বলার দরকার আছে? বল যে মাতাল হবি।
– ওই হইলো একটা।
– দেশি না বিদেশি জিনিস?
– Jack-danil নাম শুনেছিস তো?
শাহীন অবাক হয়ে বলল
– সবচেয়ে দামী মদ? সিরিয়াসলি দোস্ত?
– হ্যাঁ, বাবার লাগেজ থেকে এবার সরিয়ে রাখছিলাম। বাবা অবশ্য বুঝতে পেরেছে কিন্তু কিছু বলে নাই।
– তোর শুরু করা যাক।
জাদিদ হাসতে হাসতে রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে গেল। বুয়াকে চিকেন ফ্রাই আর পাকোড়া ভাজতে বলে গেছিল। এসব না হলে আড্ডা জমে নাকি!
মিম্মা চলে যাবার পর হেম নানীকে রাতের খাবার খাওয়াল। মেডিসিন খাইয়ে দিয়ে নিজের রুমে আসলো৷ আজকে রাতে তার খাওয়া হয়নি। পেটে এক রাজ্য পরিমাণ খুদা কিন্তু গলা দিয়ে এক লোকমা ভাত নামানোর উপায় নেই তার। মিম্মা আসাতে আজকে হঠাৎ করে জাদিদের কথা খুব বেশি করে মনে পড়ছে।
জাদিদ তার চুল গুলো খুব পছন্দ করতো। বিশেষ করে ভেজা চুল। যদিও জাদিদ একবারই তার ভেজা চুল দেখেছিল। সেদিনকার স্মৃতি ভুলবার নয়। মনের অজান্তেই নিজের শুকনো ঠোঁটে হাত দিয়ে ভাবতে লাগলো, জাদিদ তার এই ঠোঁটেই একবার ডুব দিয়েছিল। ছাদে সন্ধ্যা নামা দেখছিল দুজনে। জাদিদের হাতে নিজের হাত গলিয়ে দিয়ে মুগ্ধ হয়ে সন্ধ্যার আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলো হেম। হঠাৎ জাদিদের কী যেন হয়ে গেলো। হেমকে বাহুডোরে আবদ্ধ করে হেমের ঠোঁটে নিজের ঠোঁট জোড়া টুপ করে ডুবিয়ে দিলো৷ ঘটনার আকস্মিকতায় হেম প্রথমে কিছু ধরতে না পারলেও পরে অনেক চেষ্টা করেও নিজেকে ছাড়াতে পারেনি। জাদিদের পুরুষালী ঠোঁটের স্পর্শে নিজেকেও হারিয়ে ফেলল হেম। জাদিদের গলা জড়িয়ে ধরে হেমও ডুব দিলো সেই অনুভূতির জোয়ারে।
আশেপাশে কী হচ্ছে জানার কোনো ইচ্ছাই ছিলো না তখন।
এখন এই ঠোঁটে আর জাদিদের একার স্পর্শ নেই৷ এই ঠোঁটে, শরীরে মনির তো কয়েক বছর যাবত তার পুরুষত্ব খাটিয়েছে। বিয়ের রাত থেকে শুরু করে যতদিন ওই বাসায় থেকেছে ততদিন সহ্য করতে হয়েছে তাকে।
অসহ্যকর যন্ত্রণায় ছটফট করেছে কিন্তু না বলার সাহসও তার ছিলোনা। আর মনির তার হা না এর অপেক্ষায় কখনো থাকেনি।
মিম্মার কথামতো হেম আবার পড়াশোনা শুরু করলো। যদিও জুনিয়র দের সাথে ক্লাস করতে প্রথমদিকে তার লজ্জা হতো। ক্লাসের স্যাররাও তার দিকে বিরক্ত চোখে তাকাত।
আস্তে আস্তে হেম নিজেকে মানিয়ে নিলো। মিসেস জয়নাবের অসুস্থতা আর কমেনি উল্টো বাড়ছে৷ মিম্মা একটা টিউশন খুঁজে দিয়েছে। মাস গেলে কিছু টাকা হেমের জমা হয়। সবসময় হাত খরচের জন্য বাবা, নানীর কাছে চাইতে তার ভালো লাগেনা। মনোজ হেমের ডিভোর্সের পরে বেশি একটা কথা বলেনা হেমের সাথে। মেয়েকে তার কাছে এখন বোঝা মনে হয়। চরিত্রহীনা মেয়ের জন্য তার একটা পয়সাও খরচ করতে ইচ্ছা হয়না।
জাদিদের থার্ড ইয়ারের এক্সাম শেষ হলো। টিএসসিতে সবাই মিলে প্ল্যান করছে কীভাবে ছুটিটা কাটানো যায়। জাদিদ তার স্বভাবতই চুপচাপ শুনছিল।
দুই ঘণ্টা কথা কাটাকাটি, টুকটাক ঝগড়ার পরে ঠিক হলো, সবাই সাজেক যাবে ঘুরতে। হালকা ঠাণ্ডাও পড়তে শুরু করেছে। এসময় সাজেক যাওয়ার প্ল্যান হবে দারুণ কিছু।
চলবে……
~ Maria Kabir